somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

JSC ও আমার ছোটবোন

০৯ ই নভেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার ছোটবোন "অনিকা" এভার JSC-পরীক্ষার্থী । তার পরীক্ষার কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া ঐখান থেকে আনা এগুলো রীতিমত আম্মার দায়িত্ব । আমরা দুই ভাই কেউ এই ব্যাপারে আগ্রহ দেখাইনা । আজকে আম্মার ব্যাংককে নাকি কাজ ছিল,তাই অনিকাকে পরীক্ষার হলে দিয়ে আম্মার কাজে চলে গেছেন । আমার ছোট ভাইয়ের নাকি ক্লাস আছে, তাই ছোটবোনকে আনার গুরুদায়িত্ব পড়েছে আমার কাঁধে । বাধ্য হয়ে বোনকে আনতে গেলাম ।
কেন্দ্রের সামনে ১৫ মিনিট আগে পৌঁছে গেলাম । আমি আবার একটু পাঞ্ছুয়াল কিনা । স্কুলের সামনে কয়েকশত আভিভাবক দাড়িয়ে আছে, মেইন গেটের পাশে একটা ছোট গেট ছিল, ওইটা দিয়ে একজন- দুইজন করে বাহির হচ্ছিলো, আমি দূরের থেকে দেখছিলাম, এদের মাঝে আমার বোনকে খুঁজছিলাম । পরে ভাবলাম ভালো স্টুডেন্ট আবার সময় শেষ না হলে বাহির হয়না, আমার বোন আবার তাদের দলে ।
কিছুক্ষণ এর মাঝে বাজলো...... ডং...... ডং......ডং...... ঘণ্টা, পাখির মত কিচিরমিচির আওয়াজের সাথে হুড়মুড় করে ছোট গেট দিয়ে কতগুলা মেয়েরা দল বাহির হচ্ছিলো ।
তখনি আমার মাথায় বাঁশ পরল । একি, আমার কাছে দেখি সব মেয়ে একি রকম লাগে, সবার ড্রেস একি রকম, চেহারাও একি লাগছে, সবাইকে আমার কাছে অনিকা মনে হচ্ছে । দুইটারে অনিকা মনে করে সামনে গিয়ে দেখি অন্য মেয়ে । কিছু বোরকা পড়া মেয়েও দেখা যাচ্ছে, মনের মাঝে খটকা লাগলো, অনিকা কি বোরকা পরে, পকেট থেকে মোবাইল বাহির করে দিলাম আম্মাকে ফোন......

আমিঃ- আম্মা অনিকা কি বোরকা পড়ে???

আম্মাঃ- না, কেন কি হইচ্ছে?? অনিকা কই??

আমিঃ- অনিকারে চেহারা মনে পরতাচ্ছেনা, তুমি চিন্তা কইরনা ।

আম্মাঃ- গরুর কাজ কি ছাগল দিয়া হয় ।

আম্মার সাথে কথা শেষ না করতেই দেখি স্কুলের মেইন গেট খুলে দেওয়া হল, এক ঝাঁক ছেলেমেয়ের ঢল দেখে আমি ঘাবড়ে গেলাম, আর বুঝি আমি আমার ছোটবোনকে পাবোনা,আম্মাকে কি বলবো,সমাজকে কি জবার দিবো......এই কথাগুলা চিন্তা করতে করতে বাংলা ছবির কথা মনে পড়ে গেলো । বাংলা ছবিতে দেখছিলাম বোন হারিয়ে গেলে একটা গানের মাধ্যমে আবার ফিরে পায়, কিন্তু আমাদের ফ্যামিলির এমন কোন সংগীত নাই । না বড ভুল হয়ে গেলো, একটা পারিবাবিক সংগীত করার দরকার ছিল।

"আলম পরিবাবের এই অটুট বন্ধন
করবোনা কেউ কোনদিন কর্তন
হোক যত কষ্ট তারপর দিবোনা হতে স্বপ্ন নষ্ট
এক বোন,দুই ভাই আর আমাদের আম্মা...
লালা লা লা তুরু তুরু তুতুতুরতু"

পারিবারিক সংগীত যেহেতু নাই তাইলে বাংলা ছবির মত আরেকটা কাজ করা যায়, গলার যত জোর আছে সেটা দিয়া......অনিকা........অনিকাকাকা.....অনিকাকাকাকাকাকাকাক চিৎকার করলে খারাপ হয়না । আমি চিৎকার করার আগে দেখি আমার পিছনে কে জানি ভাইয়া ভাইয়া কইয়া চিৎকার করছে । পিছনে তাকাইয়া দেখি এইটা আমার ছোটবোন, এইতো এইতো এইটাই আমার বোন । এইপর আর কি দুই ভাইবোন আনন্দে আত্মহারা ।
কাহিনী এইখানে শেষ না ,মজার ব্যাপার আরো আছে । আমি আমার বোনের ফাইল,প্রশ্ন ও ইস্কেল আমার হাঁতে নিয়া রিক্সার জন্য দাঁড়িয়ে আছি । একলোক আমারে বলল, কেমন হইছে পরীক্ষা ??? আমি জবাব দিলাম, জি ভালো হইছে । আমার বোন পিছনে থেকে মুচকি মুচকি শব্দ করছে,আমি কইলাম এখানে হাসির কি পাইলি????
বোন বললঃ এই লোক মনে করছে তুমি পরীক্ষা দিচ্ছ।
আয়হায় কয়কি!!!! আমি ইউনিভার্সিটিতে স্নাতক ডিগ্রি জন্য পড়াশোনা করি আর এই লোক নাকি মনে করছে আমি JSC-পরীক্ষার্থী । আমি দেখতে একটু না মানে খানিকটা ছোট, তাই বলে এত ছোট না । নিজের দিকে তাকিয়ে দেখি আমি সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট পড়ে আছি,গতকাল আবার শেভ করছি তাই চেহারা চকচক করছে, ওভার অল একটা ছোট বাবু লাগছে, পরীক্ষার্থী না মনে করার কিছু নাই । তারপর রিক্সাতে উঠতে উঠতে আরো দুইজন জিজ্ঞাস করলো "বেটা পরীক্ষা কেমন হইছে??" আমিও ব্যাপারটা ইনজয় কলাম "না আঙ্কেল ভালোই হইছে, খালি কয়েকটা অবজেক্টিব কমন পড়ে নাই, দোয়া কইরেন"
অবশেষে দুই ভাইবোন মিলে রিক্সাতে করে আমাদের এইখানের বিখ্যাত "টেনশন ভাইয়ের আইসক্রিম"খেতে খেতে বাসার চলে এলাম ।

**রিক্সাতে অনেক মনোযোগ দিয়ে আমি আমার বোনের আইসক্রিম খাওয়াটা দেখছিলাম......। কি সুন্দর করে খাচ্ছিলো আইসক্রিম!!!যেন এইটা তার জীবনের শেষ আইসক্রিম, আর হয়তো কেউ তাকে এইভাবে আদর করে আইসক্রিমটা খাওয়াবেনা,এত মায়া হয়তো কেউ তার জন্য দেখাবেনা ।
বোনটা সতিই বড় হয়ে যাচ্ছে সাথে সাথে সুন্দরও হচ্ছে, কিন্তু এই বড় হয়ে উঠটা তার জন্য পাপ হয়ে দাঁড়াবে, তার অবুঝ মনটা হয়তো এত কিছু বুঝেনা,তার সুন্দর মনটা এখনও সমাজের রুগ্ন চেহারা দেখেনি , তার এই বড় হয়ে উঠা কিছুদিন পর তার কাছে অসহ্য মনে হবে ,যখন তার কাছে সামাজের আসল পরিচয় ফুটে উঠবে, তাকে প্রতিনিয়ত বলে বেড়াবে......

তুমি আগের মত ছোট নাই, তুমি বড় হয়ে গেছ, তোমার বিয়ের বয়স হয়েছে, চাইলে ঘর থেকে যখন তখন বাহির হতে পারবেনা,তোমার ইচ্ছা করলেই তুমি আইসক্রিম খেতে পারবেনা, মূলত তোমার ইচ্ছা বলতে কিছু নাই, তোমার মন বলতে কিছু নাই, তুমি আসলে একটা নারী, তুমি মানুষ না ।
১৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসরায়েল

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮

ইসরায়েল
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

এ মাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বাবাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
নিরীহ শিশুদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এই বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধাদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ ভাইক হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বোনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
তারা মানুষ, এরাও মানুষ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্রামের রঙিন চাঁদ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১২


গ্রামের ছায়া মায়া আদর সোহাগ
এক কুয়া জল বির্সজন দিয়ে আবার
ফিরলাম ইট পাথর শহরে কিন্তু দূরত্বের
চাঁদটা সঙ্গেই রইল- যত স্মৃতি অমলিন;
সোনালি সূর্যের সাথে শুধু কথাকোপন
গ্রাম আর শহরের ধূলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৭



পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষঃ
পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করছিলেন।১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরবাসী ঈদ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৩

আমার বাচ্চারা সকাল থেকেই আনন্দে আত্মহারা। আজ "ঈদ!" ঈদের আনন্দের চাইতে বড় আনন্দ হচ্ছে ওদেরকে স্কুলে যেতে হচ্ছে না। সপ্তাহের মাঝে ঈদ হলে এই একটা সুবিধা ওরা পায়, বাড়তি ছুটি!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×