কাল রাত সাড়ে ১১টায় আহসান ফোন দিয়ে খবরটা দিল। নিউজ চ্যানেলগুলো সম্প্রচার করেছে।
বেশ কিছুদিন ধরেই আমরা এ বিষয়টা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছিলাম। অনেকদিন বলতে রোজার মাসেই এক্টিভিটিস শুরু হয়, আর আমরা বলতে আমার অবদান এটাতে খুবই কম বা নগন্য ছিল অথবা ছিল না বললেই হয়। এর আগে প্রতিটি এরকম কাজ যেমন আমরা সবাই মিলে শুরু করেছিলাম (সিডর আক্রান্তদের সাহায্য , গাজায় সহযোগিতা প্রেরণ ), এবার সেরকম হয় নি; মূলত কামরুলই এর উদ্যোক্তা!
আমাদের এবারের প্রচারণাটা ছিল অশ্লীলতার বিরুদ্ধে। বিশেষ করে ইন্টারনেট পর্নোগ্রাফিকে নিরুৎসাহিত করা এবং এধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যে একই সাথে জনসচেতনতা এবং জনমত তৈরীর প্রচেষ্টা, পত্র-পত্রিকা, নিউজ, মিডিয়া, রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠনসহ সরকারের উচ্চমহলে অবহিত করা। মসজিদের ঈমাম এবং খতিবদেরকে এসম্বন্ধে বলা তারা যেন খুৎবায় বা যে কোন আলোচনায় মুসল্লিদের এ সম্পর্কে ধারণা দেন, সরকারের উপর প্রেশার ক্রিয়েট করা এবং সর্বশেষ আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়া। আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়া লক্ষ্যে বেশ ক'জন ল'য়ারের সাথে কথাও বলা হয়েছিল এবং তাঁরাও এব্যপারে যথেষ্ট তৎপরতা দেখিয়েছেন আদালতে সঠিক ভাবে ব্যপারটা উপস্থাপন করার জন্য।
ইন্টারনেট পর্নোগ্রাফী বা এ জাতীয় ওয়েবসাইটগুলো ব্যন করা উচিৎ, নাকি উচিৎ না, এ নিয়ে ব্লগে বা বিভিন্ন ফোরামে অনেক অনেক তর্ক বিতর্ক হয়েছে। এর বিপক্ষে যেমন অনেককেই পাওয়া যাবে আবার পক্ষের লোকেরও অভাব নেই। প্রতিটি পক্ষেরই ক্ষুরধার যুক্তি আছে। আমি এসমস্ত তর্ক-বিতর্কে যাব না। আমাদের কৃষ্টি-সংস্কৃকি, পারিবারিক ও ধর্মী মূল্যোবোধ এবং সামাজিক আচার ব্যাবস্থা আমাদেরকে সবসময়ই একটা অশ্লীলতা বিরোধী অবস্থানে দাঁড় করায়। আমাদের প্রেক্ষাপটে, একজন বাঙ্গালী এবং বাংলাদেশী মুসলিম কিংবা হিন্দু বা বৌদ্ধ-খ্রিস্টান অথবা নাস্তিক হিসেবে আমাদের উচিৎ হবে এ মূল্যোবোধকে লালন করা এবং এটা ধ্বংসের প্রচেষ্টায় বাধা দান করা। মুসলিম হিসেবে অশ্লীলতার বিরুদ্ধে কাজ করা তো রীতিমত ঈমানী দায়িত্ব আর এ দায়িত্ব পালন করা যে জিহাদের সমতুল্য এতে কোন সন্দেহ নেই। বিশেষ করে রমজান মাসে এ গুরুদায়িত্ব পালন করার গুরুত্ব অপরিসীম!
এসব বিষয় লক্ষ্য রেখেই প্রচারণার কাজটি শুরু হয় একেবারে রমজানের প্রথম দিন থেকেই এবং এ উদ্দেশ্যে উপরোল্লিখিত বিভিন্ন মহলে পত্র প্রেরনসহ ব্যক্তিগত যোগাযোগ অব্যহত ছিল। তাছাড়া সহজেই মতামত গ্রহণের উদ্দেশ্যে অনলাইন ভোটিংয়েরও ব্যবস্থা করা হয়। লিংকটি দেওয়া হল!
এ পর্যন্ত ঢাকা চট্গ্রামের প্রায় ২০টিরও বেশী মসজিদে, ফরিদপুর, ফেনী এবং আরও কয়েকটি জেলার প্রায় ৬-৭ টি মসজিদে বিভিন্ন জুম'আই খুৎবা প্রদান করার ব্যবস্থা করা হয়। পত্র-পত্রিকায়ও বিভিন্ন নিউজ আসতে থাকে।
অবশেষে সুখবরটি এল......
আমরা দাবি করব না যে এ কাজ আমাদের প্রচারণার ফলেই হয়েছে, তবে সরকারের উচ্চ মহলে যেহেতু এ বিষয়ে চিন্তা ভাবনা বা কার্যক্রম শুরু হয়েছে, তাতে করে আমাদের প্রচারণা শক্তিশালী হলে এ আন্দোলন আরও জোরদার হবে এবং বেশ তাড়াতাড়িই সুরহা হবে।
জানি, এটাই সবকিছু নয়। মাত্র কাজের শুরু। কেবলমাত্র একটি চিঠি চালাচালি হয়েছে পুলিশ সদরদপ্তর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে। এতেই সব কিছু হয়ে যাবে না। পারি দিতে হবে অনেক পথ। একজনের পক্ষে বা শুধুমাত্র একদল মানুষের পক্ষে এ কাজকে কোনমতেই সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এরজন্য দরকার আমাদের সকলেরই ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস। বিন্দু থেকে যেমন সিন্ধু, ঠিক তেমনি প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে এর বিরুদ্ধে কথা, লেখনি বা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে মোটিভেশন শুরু করি, তাহলে নিশ্চিত একদিন সফলতা আসবেই। আর এভাবেই আমরা, আমাদের প্রজন্ম এবং আগামী প্রজন্ম মুক্ত পাবে অশ্লীলতার কালো গ্রাস থেকে। শিশু-কিশোর ও তরুনদের জন্য নির্মল আনন্দ এবং অনাবিল সুখ ও সৌন্দর্য্যময় ভবিষ্যত গড়ার লক্ষে আমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে। সেটা করতে না পারলে মূল্যবোধের দেওয়ালে যে ফাটল দেখা দিয়েছে, সেটা ধ্বসে পরবে অচিরেই এবং নতুন একটি দেয়াল তৈরী করা তখন হবে প্রায় অসাধ্য একটি ব্যাপার।
আসুন, আমার ছোট বোনটি যেন শ্লীলতাহানীর শিকার না হয়, আমার ভাইটি যেন ধর্ষক হিসেবে দন্ডিত না হয়, আমাদের শিশুরা যেন একটা অশ্লীলতামুক্ত অন্তর্জাল পেয়ে তথ্য ও জ্ঞান সাম্রায্যে সাঁতড়ে বেড়ে উঠতে পারে সেটা নিশ্চিত করি।