somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুতীব্র উচ্চাশা, নস্টালজিয়ার আতংক...!

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ রাত ১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শীতকালে রাত যখন বাড়তে থাকতো, প্রতি ঘন্টার সময় ঘন্টা-ধ্বনির আওয়াজটা ক্রমশই স্পষ্ট হয়ে উঠতো। অনেক দূর থেকে ভেসে আসতো শব্দটা... ঢং ঢং ঢং। দিনের বেলা শোনা যেত না, গ্রীষ্মের রাতেও এত স্পষ্ট ছিল না। শীতে বাতাসের ঘনত্ব বেড়ে যেত বলেই এই অবস্থা। মাঝে মাঝে রাতে যখন ঘুম আসতো না, বিছানায় এ পিঠ ওপিঠ করতাম, আর প্রতি ঘন্টায় তীব্র শব্দে গুনতে থাকতাম কয়টা বাজে। আজ বেশ কবছর ঢাকায় চলে এলাম, নির্ঘুম রাতও কাটে না, ঘন্টা-ধ্বনিও শোনা হয় না।

পিসিতে গানটা চালানোর সাথে সাথেই কিছু বিদঘুটে ঘন্টা-ধ্বনি শুনলাম প্রথমে, নয়েজের মত। তীব্র বাতাসে কোন সুউচ্চ গীর্জার ঘন্টা যেমন ডিং ডং করে এলোমেলোভাবে বাজতে থাকে, সেরকমই হচ্ছিল। হঠাৎ পাখির কিচির মিচির শব্দ, যেন এই মাত্র ভোর হল। আমি তন্দ্রচ্ছন্ন হয়ে পড়ি, ভোরে ঘুম ভাঙ্গলে যেরকম ঝিমুতে থাকি, সেরকমই। হঠাৎ একটা মৌমাছি কোথায় যেন উড়ে গেল, আমি আশে পাশে তাকাই, কিন্তু কোথাও দেখি না, খেয়াল করলাম সেটা গানেরই একটি শব্দ। আমার তন্দ্রভাব কেটে যায়। একটানা নিরবিচ্ছিন্নভাবে গীর্জার ঘন্টা-ধ্বনি বেজে যায়। এরপর পিয়ানোর কী-তে খুবই শ্রুতিমধুর একটা কর্ড বেজে ওঠে, একটানা বাজতেই থাকে। আমাকে পুরোপুরি নস্টালজিক করে দেয় এই কর্ড। ছোট্ট একটা সুরে এত আকর্ষণ থাকতে পারে, সেটা না শুনলে বুঝা দায়। ঢেউয়ের মতই আমার অনুভূতিকে গ্রাস করতে থাকে এই কর্ড। ভাটার টানের মতই নিয়ে যায় গভীর সমুদ্রে। সাঁতার না জানা মানুষের মত আমি ডুবতে থাকি, কিন্তু পারি না। না ডুবছি, না ভাসছি এক অবস্থা আমার। আমি মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়ি। নস্টালজিয়া থেকে পালাতে চাই, কিন্তু পারি না। অতি সাধারণ একটা সুর এত শক্তি কি করে পায়!!!

এবার 'বেজ' বেজে উঠে। সাথে সাথে ভরাট কন্ঠে স্মৃতিকাতর গিলমোর কিছুটা করুণ কিছুটা নস্টালজিক সুরে গেয়ে উঠে..

Beyond the horizon of the place we lived when we were young
In a world of magnets and miracles
Our thoughts strayed constantly and without boundary
The ringing of the division bell had begun


গান শুনার সময় পুরো লিরিক বুঝতে পারি না। কিন্তু যা বুঝেছি সেটা আমাকে ভাবিত করে। পৃথিবী চুম্বক অলৌকিক এসব বিষয় মাথায় ঘুরপাক খায়। এরই মাঝে ডিভিশন বেল বেজে ওঠে।

Along the Long Road and on down the Causeway
Do they still meet there by the Cut

There was a ragged band that followed in our footsteps
Running before times took our dreams away
Leaving the myriad small creatures trying to tie us to the ground
To a life consumed by slow decay


কতবার শুনেছি এই পংক্তিগুলো, সেই ৭ বছর আগ থেকে, এখন পর্যন্ত। তারপরও আমি সঠিক অর্থ উদঘাটন করতে পারি নি। শুধু অনুভব করতে পারি কি বলতে চাচ্ছেন গিলমোর। সেই একই রকম অনুভব। অব্যক্ত, অপ্রকাশিত!
ক্ষয়িষ্ঞু জীবনের শেষে যেমন মাঝে মাঝে হঠাৎ কোন পরিবর্তন আসে, যেটা আমাদের চমকিত করে সেরকমই এইবার গানে, সুরে একটা পরিবর্তন আসে। "ঘাস তো সবুজই ছিল, আর আকাশ নীল। কিন্তু বেলা যখন শেষে সেটা কালো হয়ে যায়!" - না, এটা লিরিকের কোন অনুবাদ নয়। আমার যেটা বুঝে আসে সেটাই! লিরিকটা এরকম...

The grass was greener
The light was brighter
When friends surrounded
The nights of wonder


আবার আগের কথায় ফিরে যায় গিলমোর, আগের সুরে। কথার গাঁথুনি আরও জটিল হয়ে পড়ে। মানব মনস্বত্ত্বের অনেক গভীরে গভীরে প্রবেশ করে। বাস্তবতার চৌহদ্দি পেরিয়ে কোন এক পরাবাস্তব জগতে নিয়ে যায় আমাকে। আমি আর তাল সামলাতে পারি না। সুরের ঝর্ণায় ভিজতে থাকি। শব্দগুলো বাজনার তালে তালে বিচ্ছিন্নভাবে আমার কানে এসে আছড়ে পড়ে। প্রতিটির আলাদা আলাদা অর্থ খুঁজে পাই, কিন্তু পুরো স্ট্রাকচার আমার কাছে এসে এসেও ধরা দেয় না।

Looking beyond the embers of bridges glowing behind us
To a glimpse of how green it was on the other side
Steps taken forwards but sleepwalking back again
Dragged by the force of some sleeping tide
At a higher altitude with flag unfurled
We reached the dizzy heights of that dreamed of world


কম্পোজিশনে আবারো পরিবর্তন। লীড গিটার স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আশা এবং আতংক, এ দু অনুভূতিই একসাথে আমাকে আঁকড়ে ধরে। কি করে সম্ভব? একটি মিউজিকেই এ দুই বিপরীতধর্মী অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ কি করে ঘটানো যায়? আমি আবারো মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়ি। ভয়ও পেতে থাকি, কারণ গানটি শেষ হয়ে যাচ্ছে। সাড়ে ৭ মিনিট সময় খুব দ্রুত কেটে যায়।
গানের কথায় স্পষ্ট হয়ে উঠে আমাদের চাহিদার কথা, বিপরীত ধর্মী দোষ-গুণের উপস্থিতির কথা। গোড়ার কথা, গড়ার কথা, খ্যাতির উচ্চশিখরে আরোহন, ভেঙ্গে পরা এসবই।

Encumbered forever by desire and ambition
There's a hunger still unsatisfied
Our weary eyes still stray to the horizon
Though down this road we've been so many times


জীবন সায়াহ্নে এসবই আমাদের স্মৃতিপটে ধরা পড়ে। পিংক ফ্লয়েড একটু অন্যরকমভাবেই উপস্থাপন করেছে পুরো ব্যাপারটা...

The grass was greener
The light was brighter
The taste was sweeter
The nights of wonder
With friends surrounded
The dawn mist glowing
The water flowing
The endless river

Forever and ever!



বার বার শুনতে থাকি পুরো গানটা। কিন্তু একইরকম ধরা ছোঁয়ার বাহিরেই থেকে যায়। লিরিক বের করি, ডিকশনারি ঘাঁটি, কিন্তু অর্থ বের করতে পারি না। এখনও পারি নি। "রোলিং স্টোন" এর টম গ্রেভস তার রিভিউতে এই কথাটাই বলেন, "The Division Bell is a quieter, more atmospheric and contemplative Pink Floyd, with lyrics so opaque and inert one cannot hope to plumb their meaning." আবার এটাও বলেন, "Of course, no Pink Floyd album would be complete without a concept, and The Division Bell seems to be about that old standby failure to communicate. Even through the vagueness of the lyrics, one gets the feeling the band is firing broadsides at Waters."

অসংখ্য রিভিউ, অসংখ্য মতামত এই High Hopes গানটা ঘিরে, এমনকি তাদের এই Division Bell এলবাম নিয়েও আলোচনা সমালোচনা কম হয় না। কিন্তু পিংক ফ্লয়েড কি ভাবে সেটা আমাদের জানা দরকার। ইউ.এস. রেডিও প্রিমিয়ারে গিলমোর এই গানটা নিয়ে তার অনুভূতি ব্যক্ত করেন এইভাবে, ""High Hopes" was really the last one, it was written after all the other (songs) were sort of, in some form or another. I think I wrote it in July or something. It was very, very quick. It's one of those ones that works, quickly, but beautifully, almost immediately and, I came up with a tiny bit of music, just had it on a cassette, just a few bars of piano. And then I went off to get away to a small house somewhere with my girlfriend, Polly, and try and make some progress on the lyric writing. And she gave me a phrase about something about before time wears you down. And I took it from there, and...got stuck into a whole sort of thing about, I suppose, my, it's autobiographical really, I suppose I'd have to say on that one, it's about my life, Cambridge life, and my childhood, I suppose. Yeah, we came up with it very, very quickly, we wrote the words to it in, most of the words to it in a day. And then I went back to the studio, with no one else there, the minute I got back, and put a demo down of it. Did everything myself on it, and it was virtually complete in a day."


এলবাম কভার



হাই হোপস!



ডাউনলোড করার জন্য mp3 link: Click This Link

ইউটিউবে অফিসিয়াল মিউজিক ভিডিও লিংক :

লাইভ কনসার্ট :


যে দুটো পোস্ট আমাকে পিংক ফ্লয়েড নিয়ে লেখার জন্য প্রবলভাবে অনুপ্রাণিত করেছে: ছন্নছড়া পেন্সিলের
ফয়সালরকসের

বিশেষ ধন্যবাদ: ফয়সালরকস ভাইকে। যিনি বেশ কয়েকবার তাগাদা না দিলে এই পোস্ট লেখা সম্ভব হতো না!
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:০৭
১৫টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×