somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

~ অন্যরকম দিনলিপি ~

২০ শে মে, ২০০৯ রাত ১:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



যেই নিরানব্বইয়ে যখন কলেজের ঢুকলাম ইচ্ছে হল ডায়রী লিখবার। এর আগ পর্যন্ত ডায়েরিতে শুধু ক্লাসের পড়ার ইতিহাস লিখতাম। যখন সত্যিকারের ডায়েরি লিখতে বসলাম সেটা ছিলি একটা এপয়েন্টমেন্ট ডায়রি। সেখানেই ছোট ছোট করে প্রতিদিনের কাজ গুলো লিখতাম ঘরে ফিরে। দিনের পর দিন প্রায় একই লেখা, “আজ সকালে অমুক স্যারের কাছ থেকে পড়ে নাস্তা করে কলেজে ঢুকলাম। ক্লাস না করেই বাসায় ফেরা এবং বিকেলে আবার প্রাইভেট পড়তে বেরিয়ে যাওয়া”। এমনি ছিল আমার দিনলিপি। চলতে চলতে পৌছলাম একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে। শুরু হল চিঠি লেখা। অনেক অনেক চিঠি লিখতাম। সেগুলো আসলে ছিল আমার অন্যরকম দিনলিপি। প্রতিদিনের নানা ঘটনাই লিখে যেতাম। যে সময়টুকু একাকী কাটত সেই সময়টুকুই লিখে রাখতাম। যেন পরে পড়তে গিয়ে আমার সেই একা মুহুর্তের সঙ্গী হয়ে যায় সে। মাঝে বাধ সাধল মোবাইল। কিছু বলার এলেই কল করা লিখবার ফুরসত কোথায়। অনেকদিন লিখলাম না। চিঠি চাইলেও বিরক্ত হতাম। বিজ্ঞানের যুগে মনে হত অবৈজ্ঞানিক আচরণ।

প্রথম পর্যায়ে বাধ ভাঙ্গা প্রেমের প্রকাশ, দ্বিতীয় পর্যায়ে বৈজ্ঞানিক যুক্তি, তৃতীয় পর্যায়কে কেমন যেন নিরস করে দিল। সব থেকেও যেন কি ছিল না। ফলে আগমন চতুর্থ পর্যায়ের, যা অসহ্য কষ্টে ভরা। একের কষ্টের কথা শুনবার সময় অন্যের কোথায়। তাই আবার ফিরে এল চিঠি। ফুরসত পেলে পড়ে নিও, কোন চাপ নেই। এই চিঠিও এক দিনলিপিই। তবে অনেকটা পরিনত মানসিকতার চিহ্ন সহ। কিছু ছিল প্রথম থেকেই যার জন্য কাহিনী প্রথম, দ্বিতীয় তৃতীয় পেরিয়ে চতুর্থ পর্যন্ত গড়াবার সুযোগ পেয়েছিল। সেটাই কাহিনীকে নিয়ে গেল পঞ্চম পর্যায়ে। পঞ্চম পর্যায় হল মসৃন, ভাল লেগে পথচলার রাস্তা। যার আছে সুনির্দিষ্ট গন্তব্য, ষষ্ট থেকে সপ্তম পর্যায়ে উন্নিত হবার। এতক্ষণ ছিল দুটি মন একটি পথ আর এখন দুটি মন দুটি পথ। চেষ্টা শুধু পথ দুটিকে সমান্তরাল রাখবার। যেন দুরত্ব সৃষ্টি না হয় কখনও।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুর দিকে এক বড় ভাই বলেছিল, জীবন হচ্ছে নদীর মত আর আমরা তাতে নৌকা বইছি। চলার পথে কিছু কচুরিপানা খানিক্ষণ নৌকাকে সঙ্গদেয় তারপর পিছিয়ে পড়ে। জীবনের নানা পর্যায়ে পাওয়া বন্ধুরাই সেই কচুরিপানা। এদের মাঝের দুই একজনকে আমরা ভালবেসে নৌকায় তুলে নেই, তারাই আসল বন্ধু। বাকিরা হয় ছাত্রজীবনের সহপাঠী, সতীর্থ অথবা কর্মজীবনের সহকর্মী।

ডায়েরির পাতার সেই সহচারী চরিত্রগুলো কবে যে সহপাঠী থেকে সহকর্মী হয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না। যখন বুঝলাম দুজনের এক পথচলার ইতিতে পৌছেছি মন খারাপ হয়েছিল, তবে সময়ের দাবীতে আলাদা পথকে সমান্তরাল করে নিতেও সময় লাগে নি। শুরু হল নতুন পথে চলা, সাথে সাথে নিজের অজান্তেই ডায়েরির পাতা গুলোর ধরন পালটে গেল। একটা সময়ের অভিযোগের লাইন গুলো এখন দৃঢ় বাস্তবতা। সেগুলো কেন ঘটে প্রশ্নের উত্তর এখন, “এইটাই সিস্টেম”। টিপাই মুখের বাঁধ বা ধেয়ে আসা সোয়াইন ফ্লুর জন্য কোন অবকাশ নেই। নিজের স্বার্থেই খোজ নিতে হয় অর্থনৈতিক মন্দা কতদূর। খেয়াল করলাম, অনেকদিন ধরেই কোন ব্যাপারে উত্তেজিত হই না। স্বার্থ ছাড়া অন্য বিষয় নিয়ে খুব কমই ভাবি। নিজেকে কেমন যেন চালাক চালাক মনে হয়।
জীবনের বাস্তব দৌড়ে একদিন দেখি, একবন্ধু ফেসবুকের স্টাটাস লিখল, “What is the meaning of life?”। বিদেশে পড়তে গিয়ে প্রতিদিন নতুন নতুন কি শিখল তার আপডেট লিখত সে। এর মাঝে হঠাৎ এইসব ভাববাদী কথা বার্তা বন্ধুতালিকার সদস্যরা তামাশা হিসেবেই নিল। দুইদিন পরে বন্ধু ডিজুস স্টাইলে উত্তর দেয়, “আরে মাম্মা! একটু ডিসটার্ব ছিলাম”।

একটা সময় জীবনটাকে দেখতাম বাসে মানুষের ঠেলাঠেলিতে, রিক্সা ওয়ালার রিক্সা টেনে নেওয়াতে। এখন দৃষ্টি পালটে গেছে। পালটে ফেলতে হল বলব না, নিজের জ্ঞাতসারেই পালটে গেছে। জীবনকে এখন ততটুকুই দেখা হয়, যতটুকু মানুষ দেখায়। এর গভীরে ঢুকবার আর আগ্রহ নেই। পালটে গেছি আমি, পালটে গেছে আমার সাথীরা। সবার সাথে পালটে গেছে আমার ডায়েরির পাতা। পড়লে মনে হয়, এটা এখন আসলে প্লানিং খাতা। এক অন্যরকম দিনলিপি।
১৫টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×