somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্ত সফটওয়্যার আন্দোলনের জনক

১৬ ই মে, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা অনেকেই মুক্ত সফটওয়্যারের নাম এবং এর ব্যাবহারের সাথে পরিচিত কিন্তু অনেকেই জানিনা যে এই মুক্ত সফটওয়্যারের আন্দোলনের জনক কে। আমার এই পোস্টটি সেই মুক্ত সফটওয়্যার আন্দোলনের জনক "রিচার্ড ম্যাথু স্টলম্যান"কে নিয়ে যিনি সফটওয়্যারের জগতে এক নতূন ধারার সূচনা করেছিলেন--
রিচার্ড ম্যাথু স্টলম্যান(Richard Matthew Stallman) জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫৩ সালের ১৬ই মার্চ,নিউইয়র্কে। তার বাবার নাম ড্যানিয়েল স্টলম্যান এবং মায়ের নাম এলিস লিপম্যান। ছোটবেলা থেকেই দারুণ মেধাবী স্টলম্যানের প্রথম কম্পিউটারের সাথে পরিচয় হয় আই বি এম এর নিউইয়র্ক সায়েন্টিফিক সেন্টারে যখন সে হাইস্কুলে পড়তো। সেখানে সে ফরট্রানে ১টা নাম্বার আনাল্যসিসের প্রগ্রাম লেখার জন্য ডাক পেয়েছিলো। এর কিছুদিন পরে স্টলম্যান ১টি প্রি-প্রসেসরের কোড লেখেন PL/Iprogramming language যেটি চলতো আই বি এম এর System/360 মেশিনে। ১৯৭১ সালের জুন মাসে স্টলম্যান যখন MITএর Artificial Intelligence Laboratory এর হ্যাকার হিসাবে যোগদান করেন,তখন তিনি কেবল হার্ভাড ইউনিভার্সিটির প্রথম বর্ষের ছাত্র। এরপর তিনি তার নামের সংক্ষিপ্তরুপে তথা rms নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন। ১৯৭৪ সালে তিনি হার্ভাড থেকে পদার্থবিদ্যায় বি এ ডিগ্রী নেন। এরপর তিনি MITতে গ্রাজুযেট ছাত্র হিসাবে ভর্তি হন কিন্তু প্রথম বর্ষ শেষে তিনি এক দূর্ঘটনায় হাটুর ইনজ়ুরিতে পড়েন এবং প্রোগ্রামিং এর প্রতি ভালোবাসার জন্য তিনি MITতে পদার্থবিদ্যায় PhD নেয়া থেকে বিরত থাকেন। MITতে হ্যাকার হিসাবে থাকার সময় স্টলম্যান TECO, Emacs প্রভিতি প্রজেক্ট এবং Lisp Machine নামক অপারেটিং সিস্টেম বানানোর কাজ করেন।

১৯৭০-৮০এর দশকে বিভিন্ন কোম্পানি তাদের সফটওয়্যার অন্য কোম্পানিকে ব্যাভার করতে না দেয়ার জন্য প্রোগ্রামিং সংকেত সরবরাহ বন্ধ করে দেয় এবং এর প্রেক্ষিতে ১৯৭৬ সালে U.S. Copyright Act এর সূচনা হয়। ১৯৭৯ সালে যখন ব্রায়ান রেইড (Brian Reid) যখন লাইসেন্সবিহীন সফটওয়্যার ব্যাবহারের বিরুদ্দে কথা বলেন তখন স্টলম্যান এটিকে একটি “মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ” বলে মন্তব্য করেন। ১৯৮০ সালে স্টলম্যান এবং তার সহকর্মী কিছু হ্যাকারকে পৃথিবীর প্রথম লেজার প্রিন্টারের প্রোগ্রামিং সংকেত দেখা থেকে বিরত রাখা হয় এবং এই ঘটনায় তিনি উপলব্ধি করেন যে ব্যাবহারকারীকে তার সফটওয়্যারের মানন্নোয়োন করার স্বাধীনতা দেয়া দরকার। এর কিছুদিন পর ১৯৮২ সালে তিনি MIT’র হ্যাকারের চাকরি ছেড়ে দেন এবং সফটওয়্যারের স্বাধীনতার জন্য তিনি ১৯৮৩সালের সেপ্টেম্বরে তিনি তার বহুল আলোচিত GNU project চালু করেন।

স্টলম্যান মনে করেন যে সফটওয়্যার হবে উন্মুক্ত যাতে সে তার প্রতিবেশীর(সমগোত্রীয় সফটওয়্যার) সাথে শেয়ার করতে পারে ("share with their neighbor") এবং ব্যাবহারকারী সফটওয়্যারের মানন্নোয়োন করতে পারবে। এই চিন্তাধারা থেকেই তিনি “সফটওয়্যারকে মুক্ত হতে হবে”("software wants to be free") কথাটির প্রচলন করেন যেটির অনেক সময় ভুল ব্যাখ্যা দেয়া হয়। তিনি মনে করেন যে সফটওয়্যারকে ভোক্তাদের হাতে ছেড়ে দেয়াটা “অসামাজিক” অথবা “অনৈতিক” না বরং ভোক্তাদের কাছে এর উন্নয়নের ভার দেয়াটায় বেশি যৌক্তিক।
স্টলম্যান ১৯৮৫ সালে GNU operating system এর পরিকল্পনা ঘোষণা করেন এবং GNU Manifesto প্রকাশ করেন যাতে তিনি GNU operating system এর কথা বলেন যেটি Unix নামক operating system এর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হবে। GNU নামের পূর্ণ অর্থ হলো "GNU's Not Unix"। এরপর খুব শীঘ্রই তিনি Free Software Foundation নামক একটি অলাভজনক ফাউন্ডেশন তৈরী করেন মুক্ত সফটওয়্যার প্রকৌশলী এবং মুক্ত সফটওয়্যার আন্দোলনকে ১টি পূর্ণ রূপদানের জন্য। স্টলম্যান আদ্যবধি এই ফাউল্ডেশনের অবৈতনিক প্রেসিডেন্ট। স্টলম্যান “copyleft” যেটি আসলে “copyright” বিপরীত। ১৯৮৯ সালে তিনি GNU General Public License (GPL) প্রকাশ করেন যার পর থেকে বেশিরভাগ GNU System তৈরী হয়েছে। স্টলম্যান GNU এর জন্য অনেক টুলস তৈরি করে দেন যার মদ্ধে text editor (Emacs), compiler (GCC), debugger (gdb), এবং ১টি build automator (gmake) উল্লেখযোগ্য।

১৯৯১ সালে লিনাস টরভাল্ড(Linus Torvalds) নামক এক ফিনিশ ছাত্র GNU এর টুলসগুলো দিয়ে লিনাক্সের একটি কার্নেল তৈরী করেন এবং GNUএর তৈরী করা প্রোগ্রামগুলো সব এই কার্নেলে ব্যাবহারের জন্য দেয়া হয় লিনাক্সের নামে যার ফলে সৃষ্টি হয় মুক্ত সফটওয়্যার কমিউনিটির মদ্ধে নাম বিষয়ক জটিলতা। স্টলম্যান ব্যক্তিগতভাবে মনে করেন যে GNUএর নাম ব্যাবহার না করার ফলে GNU project এর দর্শনের ক্ষতি হয়েছে যা মুক্ত সফটওয়্যার আন্দোলনের জন্য ক্ষতিকর।

ব্যক্তিগত জীবনে স্টলম্যান খুবি সাদাসিধা একজন মানুষ। তিনি খুবি সাধারণ জীবনযাপন করেন। MITতে কাজ করাকালীন সময়ে তিনি তার অফিসেই রাতে থাকতেন,তার কোন অন্য বাসস্থান ছিলো না। তিনি গবেষক হিসাবে MIT থেকে কোনদিন একটি পয়সাও বেতন নেননি। ১৯৯৯ সালে লেখা তার একটি ফুটনোটে তিনি বলেন যে, “যদিও একজন নাস্তিক হিসাবে আমি কোন ধর্মীয় নেতাকে ফলো করি না কিন্তু অনেক সময় তাদের বলা কথা শুনে অবিভূত হই”("As an atheist, I don't follow any religious leaders, but I sometimes find I admire something one of them has said.")। স্টলম্যান মহাত্বা গান্ধী,মার্টিন লুথার কিং,নেলসন ম্যান্ডেলা,অং সান সু কি প্রভৃতি ব্যক্তিত্বদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছেন। তিনি খ্রীষ্টানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব “বড়দিন” পালন করেন না,২৫শে ডিসেম্বর তিনি পালন করেন "Grav-mass” যেটি এসেছে পুরাতন ক্যালেন্ডারে বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটনের জন্মদিন থেকে। তিনি মোবাইল ফোন ব্যবহারকে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা নষ্টের সবচেয়ে বড় উপকরণ মনে করেম এবং মোবাইল ব্যাবহার করেন না। তিনি তার অফিসে কার্ড ব্যবহার করে গেট খুলে যাওয়া-আসাও করেন না। স্টলম্যান বিভিন্ন ধরনের ফোক মিউজিক পছন্দ করেন। স্টলম্যান তার মুক্ত সফটওয়্যার আন্দোলনের গানটি নিয়েছেন “সাদি মোনা” নামক একটি ফোক ব্যান্ডের গান থেকে। তার পছন্দের মিউজিকাল ব্যান্ড হলো Bela Flack and the Flecktones এবং Weird Al Yankovic । সম্প্রতি তিনি গুয়ানতানামো কারাগারের বন্দিদের নিয়ে একটি গানও রচনে করেছেন। স্টলম্যান গ্রেগ ইগানের সায়েন্স ফিকশনের ভক্ত। তিনি নিজেও ২টি সায়েন্স ফিকশন লিখেছেন যার নাম “The Right to Head” এবং “Jinnetic Engineering”। স্টলম্যান নেটিভ ইংলিশ স্পীকার হলেও তিনি খুব ভালো ফ্রেঞ্জ,স্প্যানিশ এবং ইন্দোনেশিয়ান ভাষা জানেন।

যদিও স্টলম্যান কিছুটা একরোখা স্বভাবের কিন্তু তিনি কিছু কারণে খুব জনপ্রিয় এবং বিখ্যাত। হার-জিত যাই হোক না কেন তিনি কখনো আশাহত হননা। তিনি হলেন শেষবিন্দু দিয়ে লড়াই করে যাওয়ার মানসিকতা সম্পন্ন একজন মানুষ। যে যাই বলুক না কেন,তার এই একরোখা স্বভাব,দৃঢতা এবং কঠোর সততা বিশ্বের বিলিওন ডলার সফটওয়্যার বাজারের প্রতি একপ্রকার কটাক্ষসরূপ।
৬টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×