কাল বাড়ি থেকে ফিরলাম, ৫ দিনের বড় ছুটি শেষে। পুজার ছুটি । মনটা খারাপ হয়ে আছে, চারদিকে এত অস্থিরতা, কেউ সুস্থির না, আমিও না। কি চাই নিজেই জানি না, চাওয়া পুরন হলে আবার নতুন চাওয়া, আবার নতুন যুদ্ধ , ভালো লাগে না আর এসব।
এবারের পুজায় কেন জানি জাকজমক টা একটু বেশীই হয়েছে, সব কিছুরই আধিক্য, প্রতিমা, পুজা মন্ডপ, লাইটিং সবকিছুই একটু বেশী মাত্রায়। তবে খারাপ লাগেনি, বরং ভালোই লেগেছে। পুরনো বন্ধুদের সাথে রাতের বেলায় রাস্তায় রাস্তায় আড্ডা দেয়া, কে জানে, পরের বছর আবার এই বন্ধুদের পাব কিনা। সবাই একটা নিরাপদ , সুন্দর জীবন চায়, বাংলাদেশে কেউ থাকতে চায় না। সবার মাঝেই জোর তোড়জোর দেশ ছেড়ে যাবার জন্যে । এই সবকিছুই মাঝে পড়ে আমিও দিশেহারা হয়ে যাই, তোড়জোর শুরু করার কথা চিন্তা করি, কিন্তু যখনি প্রিয় মানুষগুলোর কথা মনে পড়ে তখনি কান্না চলে আসে। কতদিন ই আর বাচব? আর বড়জোর ৪০ বছর। এই অল্প সময়টুকুর জন্যে প্রিয়মানুষদের ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করে না। আমারও আর চেষ্টা করা হয় না।
ছোটবেলায় বাবাকে ভয় পেতাম। কিন্তু পুজার সময়টা আসলেই ভয় উড়ে যেত। পুজার সময় বাবা কিছু বলতেন না, বরং অষ্টমীর দিন আমাদের নিয়ে বাইরে যেতেন। অনেক ভিড় যেখানে থাকত সেখানে বাবা কোলে, ঘাড়ে যেভাবে সুবিধা হয় সেভাবেই প্রতিমা দেখার ব্যবস্থা করে দিতেন। পুজার সময় রাস্তায় অনেক লাইট থাকত, আর থাকত ছোট ছোট পোকা, আমার মনে আছে, পুজার প্রায় প্রতিদিন ই বাবার চোখে পোকা পড়ত, বাবা অনেকক্ষন চেষ্টা করে চোখ লাল করে পোকা বের করতেন, তারপরে আমাদের দিকে হাসিমুখ করে বলতেন, চল পরের পুজাটা দেখে আসি ...
এখন পুজার সময় পোকা , লাইট দেখলেই শুধু বাবার কথা মনে হয়, রাস্তার এত লোকজনের ভিড়ে বাবাকে খুজি, বাবার হাসিমুখ খুজি, পাইনা ...ভেতরে কেমন জানি লাগে, মনে হয়, আমার সারাজীবনের সব সুখ বিসর্জন দিয়েও যদি বাবাকে আবার পেতাম, একটিবারের জন্যে ...একটি বারের জন্যে যদি বাবার হাত ছুয়ে বলতে পারতাম , "বাবা, তোমাকে কখনই বলা হয়নি, আমি আসলে তোমাকে অনেক ভালবাসতাম, তোমার এই ভালবাসা উপেক্ষা করে চলে যাওয়া কি উচিৎ হয়েছে? বলো বাবা ..."
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১০:৪৪