somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ প্রাচীর প্রথম ভালবাসা

৩০ শে মে, ২০১৮ রাত ১২:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




প্রাচীর খুব রাগ হচ্ছে । রীতিমত কষ্ট হচ্ছে ওর রাগ সামলাতে । চোখের সামনে যা আছে সব কিছু ভেঙ্গে ফেলতে ইচ্ছে করছে । রাগ বেশি উঠলেই ওর নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয় । তখন দম বন্ধ হয়ে আসে । ও যখন বুঝতে পারলো যে রাগটা ঐদিকেই যাচ্ছে তখন নিজেকে শান্ত করার সর্বাত্ত্বক চেষ্টা চালিয়ে গেল । কিন্তু কোন লাভ হল না । ও জানে একটু পরেই ওকে ইনহেলার নিতে হবে ঠিক মত নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য ।

প্রাচী চাচ্ছে না রাগটা সেদিকে যাক । কিন্তু চাইলেও সেটা নিয়ন্ত্রন করতে পারছে না । বারবার মনে হচ্ছে যখন সব কিছু ঠিক হতে যাচ্ছিলো তখন কেন তার আবার যোগাযোগ করতে হবে ?
কেন হ্যালো বলতে হবে ?
কেন ?


কিছুটা সময় যে নিশ্চুপ হয়ে বসে রইলো । এটা হচ্ছে ওর রাগ নিয়ন্ত্রনের একটা উপায় । কোন কিছু না করা । সব কিছুর উপর থেকে নিজে চিন্তা দুরে টেনে নিয়ে গিয়ে কেবল যে কারনে রাগটা হচ্ছে সেটা নিয়ে ভাবা । এবং রাগের পেছনের কারন গুলোর একটা যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা দাড় কড়ানো । কিন্তু আজকে সেই কাজ করতে গিয়ে যেন হিতে বিপরীত হল । তার রাগ যেন আরও বাড়তে লাগলো ।

বারবার কেবল তার একটা কথাই মনে হচ্ছে । সে নিজে কেন তাকে নিয়ে এতো ভাবছে ? কেন ভাবছে ? রাগটা কি তার নিজের উপর নাকি ঐ মানুষটার উপর সেটাই ঠিক মত ধরতে পারছে না । একবার মনে হচ্ছে রাগটা ঐ মানুষটা উপর । এতোদিন পরে সে কেন আবার নক দিল আবার মনে হচ্ছে রাগটা হচ্ছে নিজের উপর । সে নিজেক কেন মানুষটা কে নিয়ে এতো ভাবছে । সে ভাবার মত কেউ না ।
তারপরই মনে হল আসলেই কি কেউ না ?

ফোন বাজছে অনেক সময় ধরে । প্রাচীর ধরতে ইচ্ছে করছে না । ও জানে ফোনটা কে করেছে । এই জন্যই ফোনটা ধরতে ইচ্ছে করছে না । কিন্তু এও জানে যে যত সময় ফোনটা ধরবে না তত সময়ে রাফান ফোন করেই যাবে । এই ছেলেটার মাঝে কেন এতো ধৈর্য্য কে জানে ? অবশ্য রাফানের ধৈর্য্য আছে বলেই ও এখনও প্রাচীর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে । অন্য কেউ হলে কবেই অন্য রাস্তায় চলে যেত ।

শেষে ফোনটা রিসিভই করলো । একটু কঠিন কন্ঠে বলল
-কি হল ? এতো বারবার ফোন কেন দিচ্ছো ? একদিন না বলেছি ফোন ধরলে দুইবারের মধ্যেই ধরবো । নয়তো ধরবো না । এতো বারবার ফোন দেওয়ার কি হল ?

কথা গুলো বলতে গিয়েই প্রাচীর নিঃশ্বাস শেষ হয়ে এল । ইনহেলারটা টেবিলের উপর ছিল । একবার ইচ্ছে হল সেটা না নেয় । ওর রাগের কারনে মরে যেতে ইচ্ছে করছে । কিন্তু বেশি সময় সেটা না করে পারলো না । ফোনটা এক পাশে রেখে টেবিলের উপর থেকে ইনহেলারটা হাতে নিল । তারপর কিছুটা সময় বসে রইলো এক ভাবে । ওর রাগ এখন কেন জানি কমতে শুরু করেছে । লম্বা করে একটা টান দিল ইনহেলারে । বুক ভরে নিঃশ্বাস নিল ।

ফোনটা আবারও কানে নিয়ে বলল
-আছো ?
সাথে সাথেই উত্তর এল ।
-হুম । রাগ উঠেছে কোন কারনে ?
-হুম !
-কার উপর রাগ উঠলো শুনি ?
-জানি না ।
-বলতে চাও না ?
-এতো কথা বল না । বলতে ইচ্ছে করছে না । কেন ফোন দিয়েছো ? আমার মাথা ধরেছে ।
-কোন কারন নেই ।

প্রাচীর ও পাশ থেকে নিরবতার মাঝেও একটা ছোট্ট দির্ঘ্যশ্বাস লুকানোর শব্দ শুনতে পেল । প্রাচীর একটু মন খারাপ হল । কন্ঠটা একটু শান্ত করে বলল
-শুনো রাফান এখন কথা বলতে লাগছে না । পরে কথা বলি ?
-আচ্ছা ।
-মন খারাপ কর না । তুমি জানো আমি এমনই ।
-হ্যা জানি । আচ্ছা শুনো ....
-হুম
-কালকে আম্মু বলছিলো কার্ডের ব্যাপারে তোমার কোন মতামত আছে কি না ?
প্রাচী কয়েকটা ডিজানইণ ঠিক করে রেখেছিলো । কিন্তু এখন এই সব বিষয় নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না । বলল
-আমার কোন পছন্দ নেই । তুমি যেটা ভাল বোঝ ঠিক কর ।
-সিওর ?
-হ্যা । আমি রাখছি ।

রাফান কে আর দ্বিতীয় কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়েই প্রাচী ফোন রেখে দিল । তারপর চিৎ হয়ে বিছানার উপর শুয়ে রইলো কিছু সময় । বার বার ঘুরে ফিরে সেই মেসেজটার দিকেই মন চলে যাচ্ছে । বারবার কেবল মনে হচ্ছে মানুষটা এতো দিন পরে কেন তাকে ফোন নক দিলো । কি এমন দরকার ছিল ? এই প্রশ্নটা থেকে কিছুতেই নিজেকে বের করতে পারছে না । এই জন্যই রাগটা হচ্ছে ওর । শেষে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না । নিজের মোবাইলটা হাতে নিল ।



#####

-কি করছেন ?
-কিছু না ।
-শান্তিতে আছেন ?
-হুম । আমি সব সময় শান্তিতেই থাকি ।
-আর অন্যদেরকে অশান্তিতে রাখেন ?

ওপাশ থেকে হাসির শব্দ শুনতে পেল প্রাচী । তারপর অপু বলল
-তুমি দেখি আগের মতই আছো ? একদম একটুও বদলাও নি ।
-তো আপনি কি ভেবেছিলেন ? আপনার গল্পের প্রেমিকাদের মত ন্যাকা হয়ে যাবো । আপনি যা বলবেন সব শুনে যাবো চুপচাপ ।
প্রাচীর মনে ফোনের ওপাশ থেকে অপু হাসতে হাসতে নিচে পড়ে গেল । কিছু একটা পড়ার শব্দ সে শুনতে পেয়েছে । হাসতে হাসতেই অপু বলল
-তুমি আসলেই বদলাও নি ।
-কেন বদলাবো শুনি ? কার জন্য বদলাবো শুনি ? আপনার জন্য ?
-আরে আরে এর মাঝে আবার আমি এলাম কোথায় ?
-তাহলে আমাকে কেন ফোন দিলেন এতো দিন পরে ? কেন ? আমি আপনাকে ছাড়া খুব ভাল ছিলাম ।
-এখন ভাল নেই ?

প্রাচীর কথা হঠাৎ করেই আটকে গেল । কি বলবে ঠিক খুজে পেল না । নিজেই নিজের কাছে প্রশ্নটা করলো । একটা মেয়ের ভাল থাকার জন্য যা যা দরকার প্রাচীর সব আছে । রাফান নামের ছেলেটা ওকে সত্যিই ভালবাসে । সেটা কদিন বাদের তাদের বিয়ে হতে চলেছে । নিশ্চিন্তে রাফানের কাধে মাথা দিয়ে বাকি জীবনটা সুখে কেটে যাবে । অথচ সে চিন্তা করছে এমন একটা মানুষকে নিয়ে যার কাছ থেকে সারা জীবন সে কষ্টই পেয়েছে ।
হঠাৎ অপু বলল
-তোমার কাল ক্লাস আছে নাকি ?
-কেন ?
-না । আমি কাল তোমাদের ক্যাম্পাসের এলাকাতে যাবো একটু কাজে । ভাবছি তোমার সাথে অনেক দিন দেখা হয় নি । দেখা করা যাক ।
-আপনার সাথে আমি কেন দেখা করবো শুনি ?
-করবা না ?
-জি না । আপনি কাজে যাবেন । কাজ শেষ করে চলে যাবে ।
-আচ্ছা ! কাজ শেষ করে চলে আসবো । তোমার সাথে দেখা করবো না । ঠিক আছে ?

প্রাচীর মনে হল ওপাশ থেকে মানুষটা যেন ওর সাথে কথা বলে খুব মজা পাচ্ছে । প্রাচী রাগ করে আবারও ফোন কেটে দিল । তারপর সাথে সাথেই নাম্বার টা ব্লক লিস্টে দিয়ে দিল । আর এই মানুষটাকে সে ফোন দিবে না । কোন দিবে না ।



ছোট বেলা থেকে প্রাচী একটু রগচটা টাইমের মেয়ে । মেয়েদের স্বভাব সুলভ নমনীয়তা ওর ভেতর নেই । স্কুল থেকে কলেজ পুরোটা সময় ও কেবল সবার সাথে ঝগড়াই করে এসেছে । মুখের উপর সব কথা বলার জন্য ওর বন্ধু বান্ধবের সংখ্যা অনেক কম ছিল । অবশ্য এতে প্রাচী নিজেই অনেক খুশি । ওর ভাষ্যমতে স্টুপিড আর ন্যাকা মানুষ গুলো আশে পাশে থাকার চেয়ে সে একা একা থাকতেই বেশি পছন্দ করবে ।

এভাবেই ওর জীবনটা চলে যাচ্ছিলো । সময়ই মানুষটার সাথে তার পরিচয় । ও তখন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে । দিন গুলো এক ভাবেই কেটে যাচ্ছে । তখনই একদিন খোজ পেল ওর রুম মেট মোবাইল চোখের সামনে নিয়ে কাঁদছে । প্রথমে মনে হল হয়তো কোন দুঃখের মুভি দেখতে কিংবা ওর মন খারাপ এই জন্য কাঁদছে । কিন্তু কিছু সময় পরে ও আবিস্কার করলো যে ওর রুমমেট আসলে একটা গল্প পড়ে কাঁদছে । তাও আবার কোন বিখ্যাত লেখকের গল্প না । কোথাকার কোন ফেসবুকে গল্প লেখে এমন একজন । রুম মেটের উপর এমন মেজাজ খারাপ হল । ইচ্ছে একটা থাপ্পড় লাগিয়ে দেয় ।

কিন্তু তারপরই মনে হল যে আগে সে গল্পটা পড়ে দেখবে যে কি এমন গল্প যে সেটা পড়ে এতো বড় একজন থাপিস মেয়ে কাঁদছে । সে মোবাইলটা নিয়ে গল্প পড়া শুরু করলো ।

পনের মিনিট পরে যখন প্রাচী গল্প শেষ করলো তখন ওর মেজাজটা আরও বেশি খারাপ হল । বারবার মনে হল এই ঘোড়ার দিমের গল্প পড়ে কান্নার কি হল । গল্পে লেখক মেয়েটাকে এমন নমনীয় করে উপস্থাপন করেছে যে সেটা পড়েই প্রাচীর আরও বেশি রাগ হল । নিজের রুমমেটের উপর রাগতো হলই, তার থেকে বেশি রাগ হল ঐ লেখকের উপর । খুব ঝাড়ি দিতে ইচ্ছে করলো ।

আইডি খুজে পেতে খুব একটা সমস্যা হল না । তারপর সেই আইডিতে গিয়ে খুব কড়া করে কিছু কথা লিখলো । কথা গুলো লেখার পর ওর রাগ যেন একটু কমলো । এই ঝাড়ি টুকু না দিলে হয়তো প্রাচীর রাতে ঘুমই আসতো না ।


পরদিন সকালে প্রাচীর জীবনটাই অন্য রকম হয়ে গেল । এখনও মাঝে মাঝে মনে হয় ঐদিন রাতে যদি সে কড়া করে এই মেসেজ না পাঠাতো তাহলে কি ওর জীবনটা একম হত ? হয়তো হত না । তবে প্রাচী শুনেছে জীবনে যার সাথে তোমার পরিচয় হওয়ার কথা তার সাথে তোমার ঠিক ঠিক ভাবেই পরিচয় হয়েই যাবে । আর প্রাচী এখনও বিশ্বাস করে তার জীবনটা অপূর্ণ রয়ে যেত যদি এই মানুষটার সাথে তার পরিচয় না হত ।

পরদিন ক্যাম্পাসে গিয়েই শুনতে পেল ওদের ডিপার্টমেন্টের এক পলিটিক্যাল বড় ভাই নাকি ওর খোজ করছিলো । ওকে দেখা করতে বলেছে । প্রাচীর কোন ধারনা ছিল না কেন ওকে দেখা করতে বলেছে । তবে একটু ভয় ভয় করছিলো । আর দেখা যে করবে না সেটারও উপায় নেই । পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পলিটিক্যাল বড় ভাইরা দেখা করতে বললে দেখা করতেই হয় ।

ভয়ে ভয়ে প্রাচী হাজির হল । ওদের ক্যাম্পাসের মধ্যে বেশ কয়েকটা পুকুর । সাঁন বাধানো পুকুর পাড় । অনেকেই সেখানে বসে আড্ডা দেয় । আজকে এখানে প্রাচী এসে হাজির হয়েছে । মোট দুইজন । একজনকে সে আগে থেকেই চেনে । সরকারী দলের বড় নেতা । আর তার পাশের জন্য ...
পাশের জনের দিকে চোখ যেতেই প্রাচী সব বুঝে ফেলল যে ওকে কেন এখানে ডেকে আনা হয়েছে । গত কাল রাতে সে যে লেখক কে ঝাড়ি দিয়েছিলো এই সেই লোক । আজকে তার খবর আছে বুঝতে বাকি রইলো না । ওর পলিটিক্যাল বড় ভাই ওর দিকে তাকিয়ে বলল
-তোমাকে কেন এখানে ডেকে এনেছি জানো ?
প্রাচী কোন কথা বলল না । কেবল মাথা ঝাকালো ।
-এ হচ্ছে অপু । আমারই বন্ধু । ও তোমার সাথে কয়েকটা কথা বলতে চায় । কোন সমস্যা আছে ?
প্রাচীর খুব করে ইচ্ছে করলো বলতে যে খুব সমস্যা আছে । আমি যার তার সাথে কথা কেন বলব কিন্তু সেটা আর বলা হল না । সে পলিটিক্যাল কারো চোখে খারাপ হতে চায় না । এবারও সে মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দিল যে কোন সমস্যা নেই ।

ওদের কে রেখে সেই পলিটিক্যাল ভাই চলে গেল । সামনে বসা মানুষটা বেশ কিছু সময় ওর দিকে তাকিয়ে থেকে বলল
-দাড়িয়েই থাকবে ? চাইলে বসতে পারো এখানে এসে ।

অপু সিমেন্টের বেঞ্চটা দেখালো । প্রাচী আবারও মাথা নেড়ে বলল যে সে ওখানেই ঠিক আছে ।
অপু বলল
-তুমি কি ভয় পাচ্ছো কোন কারনে ?
প্রাচী কোন কথা না বলে চুপ করে রইলো । অপু আবার বলল
-তুমি যদি ভেবে থাকো যে আমি তোমাকে ধমকানোর জন্য এখানে ডেকে এনেছি তাহলে ভুল হবে । আমি খানিকটা কৌতুহল নিয়ে তোমার সাথে কথা বলতে এসেছি ।
প্রাচী এবার চোখ তুলে তাকালো অপুর দিকে । মোটা ফ্রেমের চশমার পেছনে চোখ দুটোর দিকে সরাসরি তাকালো । অপু বলল
-আমার কালকে তোমার ম্যাসেজটা পড়ে কেবল মনে হল তুমি কোন কারনে আমার উপর রেগে আছো ? আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না কেন রেগে আছো । এই টুকু বলবে কি আমাকে ?
প্রাচী বলল
-রেগে নেই । তবে আপনার উপর মেজাজ খারাপ হয়েছে খুব ।
-কেন ? কি এমন করলাম আমি শুনি ?
-মেজাজ গরম হয়েছে গল্পে আপনার মেয়েদের চিত্রায়ন দেখে । কেন সব সময় মেয়েদের ওমন ন্যাকা ন্যাক হতে হবে আর নরম আর নমনীয়ই বা কেন দেখাতে হবে ? আপনার গল্প পড়লে মনে হচ্ছে পৃথিবী মেয়েরা আসলেই কেবল সব কিছু মুখ বুঝে স হ্য করার জন্য ? কেন একটা মেয়ে মুখ ফুটে বলতে পারবে না যে সে ভালবাসে ? কেন ?

অপু বেশ কিছুটা সময় তাকিয়ে রইলো প্রাচীর দিকে । কি বলবে ঠিক যেন বুঝে উঠতে পারছে না ।
-আপনাদের ন্যাকা মেয়ে গুলো খুব পছন্দ তাই ?
-না তা হবে কেন ?
-তাই তো মনে হয় ! কেন আপনার কেন সব ছেলেদেরই এমন মেয়ে পছন্দ যে কোন দিন তার কথার উপর কথা বলবে না । যা সে বলবে মেয়েটি তাই মাথা পেতে নিবে !
অপু হেসে ফেলল । প্রাচী বলল
-হাসছেন কেন ? আমি হাসির কোন কথা বলেছি ?
-না । বল নি । আসলেই আমারই ভুল । এবার থেকে এটা মাথায় রাখবো ।
-আমি যেতে পারি এখন ?
-আরে ? অনুমুতি কেন নিচ্ছো ? তোমার যখন ইচ্ছে তখন চলে যেতে পারো । তবে তোমার সাথে কথা বলে ভাল লাগলো ।

প্রাচী আর কোন কথা না বলে গেল । পরদিন রাতেই অপু ওকে মেসেজ করে জানালো যে এবারের গল্পটার মেয়েটি মোটেই নমনীয় নয় । ব্যাস এই টুকুই । প্রাচী ভেবেছিলো যে হয়তো এবার লিংক দেবে গল্পের কিন্তু সেই লিংক দিল না । এতে করেই প্রাচীর কৌতুহল বেড়ে গেল । নিজের মনকে শাসন করলো । প্রথমে মনে হল সে কিছুতেই ঐ গল্প পড়বে না । কিন্তু কৌতুহল মেটাতে না পেরে নিজেই খোজ করলো । খুব বেশি খুজতেও হল না ।

গল্পটা শেষ করে কিছুটা সময় কেবল থ হয়ে বসে রইলো । ও যখন গল্পটা পড়ছিলো তখন ওর কেবল মনে হচ্ছে যে সে নিজের কথা গুলো কেবল পড়ছে । অপু নামের মানুষটার সাথে তার কথা হয়েছে কয়েক মিনিট মাত্র এর ভেতরে মানুষটা যেন ওর ব্যাপারে সব কিছু বুঝে ফেলেছে । তার কেবলই মনে হয়েছে সে কিভাবে এতো কিছু জানে ?

তখনই মেজেস আসলো আবার । সেই একই আইডি থেকে । একটা কথাই লেখা "গল্প পছন্দ হয়েছে ?"

প্রাচী কি করবে ঠিক বুঝতে পারছিলো না । হঠাৎ করেই ওর মনে হল যেন কিছু একটা পরিবর্তন হচ্ছে ওর ভেতরে ... কিন্তু সেই পরিবর্তনটা সে ঠিক ধরতে পারছে না ।

সেই থেকে শুরু । একটা সময় প্রাচী আবিস্কার করতে শুরু করলো যে অপুর প্রোফাইলেই বেশি বেশি ঘোরাঘুরি করছে । সে কি লিখছে কিংবা তার পছন্দ অপছন্দ সব প্রাচীর ভাল লাগছে । প্রতিদিন তার সাথে দেখা করা কথা বলা ছাড়া যেন তার ঘুমই আসতো না । নিজের মাঝেই এই পরিবর্তন দেখে সে অবাক হচ্ছিলো তবে নিজেজে পরিবর্তন করার কোন চেষ্টা সে করলো না বরং যেমনটা চলছিলো ওর মন যেমনটা চাইছিলো তেমন করেই এগিয়ে যাচ্ছিলো । নিজের অনুভুতি গুলো সে কিছুতেই আটকে রাখতে পারছিলো না, রাখলেও না । বলে দিল তাকে । আর তখনই সব থেকে বড় ধাক্কাটা খেল ।

প্রাচী যেন একবারে ছেলে মানুষ হয়ে গেল অপুর মানা করাতে । অপু ওকে বারবার বোঝাতে চেষ্টা করলো ওর জীবনে অন্য কেউ আছে । এভাবে কি চাইলেই ওর সাথে সম্পর্কে জড়ানো যায় নাকি । কান্না কাটি করেই ওর দিন কাটতে লাগলো । কিন্তু আসল সত্যটা সে আরও কয়েকদিন পরে জানতে পারলো । অপু ওর ভালবাসা ফিরিয়ে দেওয়ার পেছনের কারনটা ছিল মিথ্যা । অপু একটা মেয়েকে সত্যি ভালবাসতো তবে সেই মেয়েটা এখন আর ওর জীবনে নেই । অনেক আগেই মেয়েটা ওকে ছেড়ে চলে গেছে । এটা জানার পর প্রাচীর নিজের কাছে নিজেকে বড় ছোট মনে হল ।
প্রথম কারনটা হলেও নিজেকে কোন রকম সে বুঝ দিতে পারতো যে তার একজন আছে বলেই সে তার ভালবাসাটা ফিরিয়ে দিয়েছে কিন্তু এখন কি বলে নিজেকে বুঝাবে ?


তারপর থেকে নিজেকে আবার গুটিয়ে নিলো । অপুর কাছ থেকে একেবারে আড়াল করে ফেলল নিজেকে । প্রথম কয়েকদিন অপু ওর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলো । তবে যখন প্রাচীর কাছ থেকে কোন সাড়া শব্দ পাচ্ছিলো না তখন সেও আস্তে আস্তে আর যোগাযোগ বন্ধ করে দিল । ধীরে ধীরে তার স্মৃতি ঝাপসা হয়ে হয়ে এল ঠিক তবে মনের একটা অংশে রয়ে গেল । আজকের এই যোগাযোগের পর আবারও যেন


পরিশিষ্টঃ

প্রাচী আজকে নীল রংয়ের শাড়ি পরেছে । সোজা হাটছে পূর্ব দিকের পুকুর পাড়ে । জানে অপু সেখানেই আছে । আজকে তার কোন কাজ নেই । সে ক্যাম্পাসে এসে কেবল ওর সাথেই দেখা করতে । কত গুলো দিন পরে আবারও প্রাচীর সেই অনুভূতি গুলো ফিরে আসছে ।
গতকাল রাতেই প্রাচী ফোন করে ওর মাকে বিয়েটা ভেঙ্গে দিতে বলেছে । তারপর রাফানকেও একটা ম্যাসেজ করে জানিয়েছে ।

রাফানের জন্য একটু খারাপ লাগছিলো কিন্তু প্রাচী খুব ভাল করেই জানে এই সিদ্ধান্তটা সবার জন্য ভাল হবে । এখনও জানে না অপুর সাথে ওর সামনে কি হতে চলেছে কিংবা কি হবে কিন্তু তারপরেও অন্য কাউকে বিয়ে করা কিংবা তার জীবন অতিবাহিত করা প্রাচীর পক্ষে সম্ভব না । সে জীবনের প্রথম কেবল অপুকে ভালবেসেছিলো আর বাকিটা সময় কেবল তাকেই ভালবাসবে । তার মনে অন্য কেউ কোন জায়গা করতে পারবে না ।

এই তো অপুকে দেখা যাচ্ছে । সাঁন বাঁধানো পুকুড় পাড়ে বসে আছে । এক ভাবে পানির দিকে তাকিয়ে আছে । প্রাচী লক্ষ্য করলো ওর বুকের ভেতরটা তোলপাড় শুরু হয়েছে । আর এখনই কান্না আসতে শুরু করেছে । কি অদ্ভুদ এই অনুভূতি ! যার কোন ব্যাখ্যা নেই । ভালবাসার অনুভূতি গুলোর কোন ব্যাখ্যা থাকে না !

সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১৮ রাত ১২:১০
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পিরিতের সংস্কৃতিওয়ালা তুমি মুলা’র দিনে আইলা না

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৬


---- আমাদের দেশে ভাষা, সংস্কৃতি এবং সামাজিক সমুন্নয়ন তলানিতে। তেমন কোন সংস্কৃতিবান নেই, শিরদাঁড়া সোজা তেমন মানুষ নেই। সংস্কৃতির বড় দান হলো ভয়শূন্য ও বিশুদ্ধ আত্মা। যিনি মানবের স্খলনে, যেকোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসরায়েল

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮

ইসরায়েল
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

এ মাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বাবাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
নিরীহ শিশুদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এই বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধাদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ ভাইক হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বোনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
তারা মানুষ, এরাও মানুষ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্রামের রঙিন চাঁদ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১২


গ্রামের ছায়া মায়া আদর সোহাগ
এক কুয়া জল বির্সজন দিয়ে আবার
ফিরলাম ইট পাথর শহরে কিন্তু দূরত্বের
চাঁদটা সঙ্গেই রইল- যত স্মৃতি অমলিন;
সোনালি সূর্যের সাথে শুধু কথাকোপন
গ্রাম আর শহরের ধূলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৭



পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষঃ
পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করছিলেন।১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরবাসী ঈদ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৩

আমার বাচ্চারা সকাল থেকেই আনন্দে আত্মহারা। আজ "ঈদ!" ঈদের আনন্দের চাইতে বড় আনন্দ হচ্ছে ওদেরকে স্কুলে যেতে হচ্ছে না। সপ্তাহের মাঝে ঈদ হলে এই একটা সুবিধা ওরা পায়, বাড়তি ছুটি!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×