somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ স্বপ্ন ছিল হাতটা ধরার

১৯ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১০:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দুইবার গাড়ির হর্ণ শুনেই আমার মনে হল হর্ণটা আমার জন্যই বাজানো হচ্ছে । যদিও আমি একেবারে ফুটপাথের উপর দিয়েই হাটছি । পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি লাল রংয়ের গাড়িটা অনেকটা আমার পাশ এসে দাড়িয়েছে ।
আমি গাড়িটাকে চিনি । এও জানি এখনই কাঁচ নামিয়ে কার মুখ দেখা যাবে !

আমার ক্যাম্পাসটা বাসে চলা রাস্তা থেকেও বেশ ভেতরে । প্রধান সড়কে বাস থেকে নামার পরে আরও বেশ কিছুটা সময় হাটতে হয় । অন্যান্যরা এই পথ টুকু রিক্সা করেই যায় । মোড়েই মাথায় সব সময় গোটা বিশেষ রিক্সা দাড়িয়ে থাকেই এই জন্য । তবে আমার কাছে এই পথ টুকু রিক্সায় চড়া মানে বিশাল বিলাসিতা । আমি তাই এই পথ টুকু হেটেই যাই । আজও হেটেই যাচ্ছিলাম তখনই নিকিতার গাড়িটা আমার পাশে এসে দাঁড়ালো ।

কাঁচ নামিয়ে নিকিতা আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-শুভ, উঠে এসো ।
আমি একটু হেসে বললাম
-না থাক । চলে এসেছি তো !
-আরে আসো তো !
আমি আবারও না করে বললাম
-আরে সমস্যা নেই । তুমি সামনে যাও আমি আসছি ।

এই পথ টুকু অবশ্য নিকিতার গাড়িতে ওঠায় যায় তবে আমি ওর গাড়িতে উঠতে চাচ্ছি না। এই গাড়িতে উঠে পড়া মানেই হচ্ছে নিকিতাকে প্রশ্রয় দেওয়া । যেটা আমি মোটেই চাই না ।

আমি ওকে আর কথা বলার সুযোগ না দিয়ে হাটা শুরু করলাম । নিকিতা মেয়েটা দিন দিক কেমন যেন আরও একটু একটু করে কাছে চলে আসছে । কিছুতেই ওকে দুরে সরানো যাচ্ছে না । এমন যদি হতে থাকে তাহলে সামনে গিয়ে আমি বিপদে পড়ে যাবো ।
আমি ভেবেছিলাম ও হয়তো খানিকটা মন খারাপ করে গাড়ি নিয়ে চলে যাবে কিন্তু আমাকে ভুল প্রমান করে দিয়ে ও নিজেই গাড়ি থেকে নেমে পড়লো । তারপর আমার পাশাপাশি হাটতে লাগলো । আমি বললাম
-এই রোদের ভেতরে তুমি আবার নামলে কেন ? এখনও অনেকটা পথ ?
-তাহলে তুমি উঠছো না কেন গাড়িতে ?
-নিকি, সবাইকে সব কিছু মানায় না । এটা তোমাকে বুঝতে হবে ।
-আমি বুঝতে চাই না ।

আমি কিছুটা সময় নিকিতার চেহারার দিকে তাকিয়ে রইলাম । মেয়েটার পাতলা লিপস্টিক বিহীন ঠোঁটটা থেকে কেমন আভা ছড়াচ্ছে । মাঝে মাঝে এই ঠোঁট দুটো আমার সব চিন্তা ভাবনা গুলো উলটপালট করে দেয় । ইচ্ছে সব কিছু ভুলে গিয়ে ঐ ঠোঁট দুটো নিজের করে নেই । কিন্তু সেই চিন্তা বেশি সময় স্থায়ী হয় না । আমাকে আবার বাস্তবে ফিরে আসতে হয় ।

আর কথা না বলে আমি সামনের দিকে হাটতে থাকি । একটু হাটুক । হাটলে বুঝতে পারবে । একটু হয়তো বুঝতে পারবে যে ওর জীবন আমার জীবন থেকে কত আলাদা ।



আমার কোন ইচ্ছেই ছিল না এখান থেকে এমবিএ করার । আসলে এই স্বনামধন্য প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করার মত টাকা পয়সা আমার নেই । তবুও ভাগ্যে থাকলে যা হয় ! আমার ছাত্রকে এখানে ভর্তি করাতে নিয়ে এসেছিলাম তার বাবা মায়ের অনুরোধে । তখন আবার এমবিএর সার্কুলারও চলছিলো । কি মনে করে আমিও এপ্লাই করে দিলাম । ছাত্রের বিবিএর এডমিশন টেস্টের সাথেই আমার পরীক্ষার ডেট ছিল । সেই জন্য এপ্লাই করেছিলাম । ঐদিনও আমার আসতে হত । পরীক্ষা দিলাম । পরীক্ষা দেওয়ার সময়ই জানতাম চান্স হয়ে যাবে । তবে এও জানতাম এখানে পড়ার কোন উপায় নেই । এতো টাকা আমার নেই । কিন্তু ভাগ্য থাকলে কি আর কেউ আটকাতে পারে ?

এডমিশনে রেজাল্ট একেবারে সবার উপরে চলে এল । একেবারে ১০০% স্কলারশীপে পড়ার সুযোগ । এমন সুযোগ হাত ছাড়া করতে মন চাইলো না । কিছু অবশ্য খরচ হবে সেটা চেষ্টা করলে যোগার করতে পারবো । একটা আলাদা ডিগ্রি থাকুক ।

ক্লাস শুরুর প্রথম দিনই নিকিতাকে লক্ষ্য করলাম । কেবল যে আমি একা লক্ষ্য করলাম এটা বললে ভুল হবে । কারন নিকিতা এমনই মেয়ে ছিল । তাকে লক্ষ্য না করে কোন উপায় নেই । ক্লাসের প্রত্যেকটা ছেলে নিকিতাকে প্রথম দিন থেকেই লক্ষ্য করা শুরু করে । তারপর যতই দিন যেতে লাগলো আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করা শুরু করলাম যে নিকিতা কেমন জেকে বসা শুরু করেছে মাথার ভেতরে। তখনই মায়ের চেহারা ভেসে উঠলো । নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করতে লাগলাম যে আমার জন্য সব কিছু নয় । আমাকে নিকিতার চিন্তা থেকে বের হয়ে আসতে হবেই । যা সম্ভব নয় তা চিন্তা করার কোন মানে নেই ।

এই পর্যন্ত হলে হয়তো ভাল হত ! কিন্তু কদিন যাওয়ার পরে আমি নিজে লক্ষ্য করলাম যে একটা চোখ যেন আমার দিকে প্রায়ই তাকায় । মাঝে মাঝে দুষ্টামীর চোখ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে হাসে । কখনও কখনও চোখাচোখি হয়ে যায় তখন অস্বস্থির সীমা থাকে না । আমি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি কিন্তু পারি না । একদিন মুখোমুখি হয়ে গেলাম ।

সেদিন বাইরে খুব বৃষ্টি হচ্ছিলো । ক্লাস শেষ করে লাইব্রেরীতে একটা কাজ করছিলাম । যখন কাজ শেষ করে বের হলাম দেখি চারিদিক ভেঙ্গে বৃষ্টি হচ্ছে । ক্লাস অনেক আগেই শেষ হয়ে যাওয়ায় প্রায় সবাই ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে গেছে । আমি বারান্দায় বৃষ্টি থামার অপেক্ষা করতে লাগলাম । এমন সময় কেউ একজন আমার পাশে এসে দাড়ালো । মিষ্টি একটা সুগন্ধ আমার নামে লাগলো । মৃদ্যু কন্ঠে বলে উঠলো
-মুষল ধারে বৃষ্টির আলাদা একটা মাদকতা আছে । তাইনা ?

আমি কি বলব খুজে পেলাম না । এতো দিনে নিকিতা আমার সাথে কোন দিন কথা বলে নি । আমি নিজের এগিয়ে যাওয়ার তো প্রশ্নই আসে না । আমি কেবল নিশ্চুপ ভাবে নিকিতার দিকে তাকিয়ে রইলাম । একটা কথাও বলতে পারলাম না । নিকিতা অবশ্য আর কিছু বলল না । আমরা অনেকটা সময় সেই বারান্দায় দাড়িয়ে ছিলাম । নিশ্চুপ ভাবে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে ছিলাম । নিকিতা আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-কি তোমার বৃষ্টি পছন্দ না ?
আমি ছোট্ট করে বললাম
-হ্যা ।
-আসো বৃষ্টিতে ভিজি !

আমি নিকিতার কাছ থেকে এমন কথা আশা করি নি । খানিকটা অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালাম । মেয়েটা যে আমাকে এমন একটা কথা বলতে পারে সেটা আমি ভাবতেও পারি নি । আমি বললাম
-মাথা খারাপ নাকি !
-কেন ? এই না বললে বৃষ্টি অনেক পছন্দ । তাহলে ভিজলে সমস্যা কোথায় ?
আমি বললাম
-আছে । একটু সমস্যা তো আছেই । এখন ভেজা যাবে না ।

নিকিতা একটু যেন মন খারাপ করলো । বড়লোকের মেয়েদের অল্প বিষয় নিয়েই মন খারাপ হয় । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-একদিন তোমার সাথে আমি বৃষ্টিতে ভিজবো । কেমন !

আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই নিকিতা বৃষ্টির ভেতরে নেমে গেল । কিছুটা দুরে গিয়ে আবারও ফিরে তাকালো আমার দিকে । সেদিনের সেই দৃষ্টিতেই আমার ভেতরের সব কিছু কেমন যেন অলটপালট হয়ে গেল । আমি সেদিন থেকে বুঝতে পেরেছিলাম এই মেয়েটা আমাকে ভালবাসে । আর এই জন্যই হয়তো আমাকে মেয়েটার কাছ থেকে দুরে থাকতে হবে !


তারপর থেকেই আমি আরও সাবধান হয়ে গেলাম । নিকিতাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করলাম ! কিন্তু চাইলেও সব সময় সেটা সম্ভব হয়ে ওঠে না ।


ক্যাম্পাসের কাছে হাটতে হাটতে আসতেই গেটের কাছে আমাকে থামতে হল । রূপাকে এখানে দেখতে পাবো ভাবতে পারে নি । গেটের কাছে দাড়িয়ে আছে ! আমাকে দেখে ও নিজেও যেন একটু অবাক হল । আমি কি এগিয়ে যাবো ও নিজেই এগিয়ে এল ।
-এখানে ?
তাকিয়ে দেখি নিকিতা আগেই দাড়িয়ে গেছে । রুপা নামের মেয়েটার সাথে যে আমার পরিচয় আছে এটা যেন ও ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না । আমি খুব স্বাভাবিক ভাবে বললাম
-হ্যা । এখানে ক্লাস আমার !
-ও !
রুপা মুখ টিপে হাসলো । আমি জানি ও এখানে কেন এসেছে তারপরেও বললাম
-তুমি এখানে কি কর ?
-আমি কি করি তা তো তুমি জানোই । তোমাদের এক ভদ্র ছেলে আমাকে ডেকেছে । তার কাছে এসেছি !

বলতে বলতেই সে ভদ্র ছেলের গাড়ি বেরিয়ে এল গেল দিয়ে । রুপা আমার দিকে আবারও হাসলো । তারপর গাড়িতে উঠে পড়লো । আমি ফিরে তাকিয়ে দেখি নিকিতা আমার দিকে সেই আগের চোখে তাকিয়ে আছে । তবে একটু আগে যেখানে বিশ্ময় ছিল এখানে সেখানে একটা তীব্র অভিমানের রেখা দেখা যাচ্ছে । আমি ওর অভিমান ভাঙ্গানোর জন্য এগিয়ে গেলাম না । গিয়ে কি হবে !
কিন্তু একটা জিনিস আমার ঠিক মাথায় ঢুকলো না যে নিকিতা রুপাকে কিভাবে চেনে ?
রুপা কি এর আগেও এখানে এসেছে ?
আসতেও পারে অবশ্য ! ও যে কাজটা করে সেখানে এখানে আসা ওর জন্য খুব একটা বিচিত্র না !

তারপরের কয়টা দিন নিকিতা ক্লাসেই এল না । সপ্তাহখানেক পরেও যখন আবার ক্লাস করতে শুরু করলো কিন্তু আমার কাছে আর এল না । দুর থেকে আমার দিকে মুখ গোমড়া করে তাকিয়ে থাকতো ! আমার মনে হল যাক, অনাকাঙ্খিত ভাবেই হোক না কেন নিকিতা হয়তো আর আমার কাছে আসবে না । এটা আমার জন্য এক দিন দিয়ে ভালই হল । এর ভেতরেই শেষ সেমিস্টার ফাইলাম পরীক্ষা চলে এল । আর বেশি দিন নিকিতার সাথে আমার দেখা হবে না !

কিন্তু নিকিতা ঠিকই আমার কাছে একদিন প্রশ্নটা করেই ফেলল । একেবারে শেষ ক্লাসের দিন । আমার কাছে এসে খুব স্বাভাবিক ভাবেই আমার কাছে এসে বলল
-ঐ মেয়েটাকে কিভাবে চিনো ?
কোন মেয়েটার কথা বলছে সেটা আমার বুঝতে কষ্ট হল না । তারপরেও আমি না বোঝার ভান করে বললাম
-কোন মেয়েটা ?
-ঐ যে ঐদিন কথা বললা ? কিভাবে চিনো ?
আমি স্বাভাবিক কন্ঠে বললাম
-তা দিয়ে তোমার কি দরকার ? চিনি কোন ভাবে ?
-কিভাবে ? যেভাবে কথা বললে মনে হচ্ছে অনেক দিনের চেনা পরিচয় ! ওর নিয়মিত ক্লাইন্ট তুমি ?
আমি অবাক হয়ে নিকিতার দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছুটা সময় । নিকিতা যে এই কথা আমাকে বলতে পারে এটা আমি ভাবতেই পারি নি । নিকিতা আবার বলল
-কি কথা বলছো না কেন ? নিয়মিত যাওয়া হয় ওর কাছে ?

হঠাৎ করেই রাগ উঠে গেল । কেন উঠে গেল আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না । সবাইকে হতভম্ব করে দিয়েই আমি নিকিতাকে চড় মেরে বসলাম ! নিকিতা নিজেও আমার দিকে কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে । সুক্ষ একটা অশ্রুর ধারা বেয়ে নামলো ওর চোখ দিয়ে ।
আমি নিজে এতো খানি অবাক হয়েছি আমি নিজেই বলতে পারবো না । আমার ধারনার বাইরে ছিল যে নিকিতা আমাকে এমন একটা কথা বলতে পারবে আর আমিও এরকম একটা রিএকশন দেখাবো ।

তারপরই পিএল শুরু হয়ে গেল । ফাইনাল পরীক্ষার আগে আর ক্যাম্পাসে যাওয়ার কোন দরকার পড়লো না । পরীক্ষা দিতে গিয়েও নিকিতাকে দেখলাম সেই শুকনো মুখে পরীক্ষা দিচ্ছে । আমাকে যেন দেখেও নি । বুকের ভেতরে একটা তীব্র কষ্ট আর অনুশোচনাবোধ কাজ করতে লাগলো । নিজের সাথে যুদ্ধ করে সিদ্ধান্ত নিলাম যে একেবারে চলে যাওয়ার আগে শেষ বার ওর সাথে কয়েকটা কথা অন্তত আমার বলা দরকার !

পরীক্ষা শেষ করে সবাই যখন সবার সাথে কথা বলছিলো তখনই ওকে একটা মেসেজ পাঠালাম ক্যাম্পাসের পেছনের পুকুর পাড়ে আসার জন্য । যদিও এক বার মনে হয়েছিলো যে ও হয়তো আসবে না । কিংবা আমার নাম্বার হয়তো ও এতোদিনে ব্লক করে দিয়েছে । কিন্তু শেষ বারের মত ও আমার সাথে দেখা করতে এল । আমি চুপ করে বেঞ্চে বসে ছিলাম । ও আমার পাশে এসে বসলো !

কিছুটা সময় কেউ কোন কথা বলল না । আমি হঠাৎ বললাম
-শুনলাম বাইরে চলে যাচ্ছো ?
নিকিতা ছোট্ট করে জবাব দিল
-হুম !
-আর আসবা না ?
-জানি না !

আমি বড় করে একটা দম নিয়ে বললাম
-নিকি.....
কি বলবো কিভাবে খুজে পেলাম না । তারপর আবার নিজের মনকে বোঝালাম । আজকে না বললে হয়তো আর কোন দিন বলা হবে না । হয়তো আর কোন দিন শান্তিও পাব না । আবারও বলা শুরু করলাম
-ছোট বেলা থেকে আমার খুব বন্ধু ছিল না । আমার মত মানুষের বন্ধ থাকে না !
নিকিতার দিকে তাকিয়ে দেখি ও আমার দিকে ফিরে তাকিয়েছে । এতোটা সময় অন্য দিকে তাকিয়ে ছিল । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-তোমার মত মানুষ মানে ?
-ঐদিন জানতে চেয়েছিলে না আমি রুপাকে কিভাবে চিনি ? আসলে ওর আর আমার জন্ম একই জায়গাতে ! ফরিদপুরের একটা ব্রোথেলে !

নিকিতা আমার দিকে তীব্র বিশ্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে । আমি এবার পুকুরের পানির দিকে তাকালাম । নিকিতার দিকে তাকালোর শক্তি আর আমার নেই ।
-আমি জানি না আমার বাবা কে ! ছোট বেলা থেকেই এই ব্যাপারটা যতবার মানুষের সামনে এসেছে ততবারই আমি দেখেছি মানুষ কতটা ঘৃণা নিয়ে আমার চোখের দিকে তাকিয়েছে । এমন একটা পাপের বোঝা আমি বয়ে নিয়ে যাচ্ছি যা কোন দিন আমার পিছু ছাড়বে না । তাই তো ঐদিন তীব্র ইচ্ছা থাকা স্বত্ত্বেও আমি তোমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজতে পারি নি । আমার এসব মানায় না ! আমার মত মানুষের এসব মানায় না !

আর কোন কথা খুজে পেলাম না । অনেকটা সময় বসেই রইলাম একভাবে । খুব করে ইচ্ছে হল নিকিতার হাতটা আমি একবার ধরি । একবার যদি এখন বৃষ্টি হত তাহলে এখানে বসেই ওর সাথে বৃষ্টিতে ভেজা হয়ে যেত । কিন্তু মেঘ মুক্ত আকাশে বৃষ্টি হওয়ার কোন নাম গন্ধ নেই । আমি বললাম
-সন্ধ্যা হয়ে আসছে । যাওয়া দরকার !
নিকিতা আমার কথায় যেন বাস্তবে ফিরে এল । তারপর আমার দিকে না তাকিয়েই বলল
-হ্যা । উঠতে হবে । আর হয়তো দেখা হবে না ।

নিকিতা কোন কথা বলল না । আমিও ওর দিকে তাকানোর সাহস পেলাম না আর ! আগে থেকেই জানতাম নিকিতার প্রতিক্রিয়া এমনই হবে । কিন্তু তারপরেও ওর চোখের দিকে তাকানোর সাহস হল না । যদি সেখানে আমার জন্য ঘৃণা দেখি, এই ভয়ে !


তারপর বছর খানেক কেটে গেছে । চাকরি নিয়ে মগবাজারে একটা বাসাতে থাকি । মায়ের মানষিক অবস্থা অনেক আগেই খারাপ হয়ে গিয়েছিলো । তাকে একটা নার্সিং হোমে ভর্তি করিয়ে দিয়েছি । অফিস থেকে প্রায়ই দিনই সেখানে যাওয়া হয় । ফিরতে ফিরতে রাত হয় । অবশ্য বাসাতে ফেরার এতো তাড়াহুড়াও নেই ।

আজকেও কোন তাড়াহুড়া ছিল না । আজকে আমি ইচ্ছে করেই বাসায় ফিরছিলাম না । আকাশে মেঘ ছিল অনেক । যে কোন সময় বৃষ্টি নামবে । নিকিতার সাথে শেষ দেখা হওয়ার পরে যতবার আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি এসেছে আমি ততবার বৃষ্টিতে ভিজেছি । মনে মনে ওকে কল্পনা করে নিয়েছি যে ওর হাত ধরে হেটেছি ।

সিএনজিটা ছেড়ে দিয়েছি অনেক আগেই । আমি হাটতে হাটতে মিন্টু রোডের দিকে চলে এলাম । এই দিকটায় বৃষ্টিতে ভিজে অনেক বেশি মজা । ভিআইপি এলাকা । যদিও মাঝে মাঝে পুলিশের জেরার মুখে পরতে হয় তবে সেটা বেশি সময়ের জন্য নয় ।

আজকে মিন্টু রোডে পা দিতেই ঝুমঝুম করে বৃষ্টি নেমে এল । আমি চুপচাপ কিছুটা সময় বৃষ্টিতে ভিজতে লাগলাম । তারপর ফুটপাট দিয়ে হাটতে শুরু করলাম মনে আনন্দে । অন্ধকার নেমে আসলেও চারপাশটা পুরোপুরি অন্ধকার হয় নি । আমি আপন মনে বৃষ্টিটে ভিজতে লাগলাম । তখনই গাড়ির হর্ণ শুনতে পেলাম । আমার কেন জানি বুকটা হঠাৎ কেঁপে উঠলো । মনে হল গাড়িটা আমার মনযোগ আকর্ষনের জন্যই হর্ণ বাজাচ্ছে । সোজা হয়ে দাড়িয়ে রইলাম । অদ্ভুদ এক অনুভুতি হতে লাগলো !

এতো দিন পরে আর আবছায়া আলোতেও লাল রংয়ের গাড়িটা চিনতে আমার কষ্ট হল না । তবে আজকে আর কাঁচ নেমে এল না গাড়ির । পুরো দরজা খুলে গেল । বৃষ্টির ভেতরেই আমি নিকিতাকে দেখতে পেলাম । গাড়ি থেকে নেমে সোজা আমার সামনে এসে দাড়ালো ।
তারপর বলল
-জানো এই বৃষ্টির জন্য কতদিন ধরে তোমার পিছু নিয়েছি !
-কি ?
-হুম । যেদিন আমাদের শেষ দেখা হয়েছিলো খুব করে চেয়েছিলাম যেন বৃষ্টি নামুক । তাই চেয়েছিলাম আবার যখন দেখা হবে তখন যেন বৃষ্টি থাকে !

আমি কেবল তাকিয়ে রইলাম নিকিতার দিকে । এখনও আমার ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না যে নিকিতা আমার সামনে দাড়িয়ে আছে । আমি আমার সব কিছু ভুলে গেলাম । আমার কেবল মনে হল এখন আমার নিকিতার হাত ধরতেই হবে । নয়তো আমি এখনই মারা যাবো । তীব্র বৃষ্টির মাঝে আমি নিকিতার হাত ধরলাম । ভেজা ভেজা আর নরম হাত । কতদিনের স্বপ্ন ছিল নিকিতার হাত ধরার !

নিকিতা ওর পায়ের স্যান্ডেল খুলে ফেলেছে । আমিও আমার জুতা মুজা খুলে ওর গাড়ির মধ্যে রেখে দিলাম । তারপর প্যান্ট খানিকটা গুটিয়ে নিলাম । আমি এখনও ঠিক নিশ্চিত না যে নিকিতা আসলেই এসেছে নাকি আমি ওকে কল্পনা তৈরি করে নিয়েছি । তবে সেটার দিকে খুব বেশি মনযোগ দিলাম না । ওর হাত ধরে হাটার সুযোগ টুকু কিছুতেই নষ্ট করতে চাই না আমি । হোক সে কল্পনা কিংবা হোক সেটা বাস্তব ।

আমরা এগিয়ে চলছি বৃষ্টির মাঝে । এতো আনন্দময় বৃষ্টি আমার জীবনে আর আসে নি ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১০:১৭
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×