somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ অলৌকিক প্রেমিকা

২২ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রতিদিন টিউশানি থেকে ফিরতে একটু দেরি হয়ে যায়। বিশেষ করে নতুন আরেকটা টিউশনি নেওয়ার পর থেকে কোন ভাবেই সাড়ে দশটার আগে বাসায় ফেরা হয় না। তবে আজকে একটু বেশিই দেরি হয়ে গেল। যখন হাউজিং এ পৌছালাম তখন সাড়ে এগারোটা পার হয়ে গেছে। হাউজিং এলাকা ততক্ষণে ঠান্ডা হয়ে গেছে। মানুষজন নেই বললেই চলে। প্রায় সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে। আমি দ্রুত হোটেলের দিকে পা বাড়ালাম। আজকে আর হোটেলে বসে খাওয়ার উপায় নেই। খাবার বাসায় নিয়ে যেতে হবে।

খাবার হাতে নিয়ে যখন বাসার পথ ধরেছি তখনই বিড়ালটাকে দেখতে পেলাম। সামনের দুই পা দিয়ে কোন মতে এগিয়ে চলছে। নিশ্চয়ই কেউ শক্ত কিছু দিয়ে বিড়ালটার মেরুদণ্ডে শক্ত করে আঘাত করেছে। ফলে সেটা ভেঙ্গে গেছে। আমার বিড়াল এমনিতেই খুব পছন্দ। এই অবস্থা দেখে খুব মায়া লাগলো।

কেমনে কাজটা করলো?

দেখলাম বিড়ালটা হাটা বন্ধ করে দিয়েই নেতিয়ে পড়লো। কেমন করুন স্বরে ডাকতে শুরু করলো। আমার এখানে কিছুই করার নেই। আশে পাশে কোন পশু চিকিৎসালয় আছে কি না আমার জানা নেই। তবুও বিড়ালকে ওখানে অভাবে ফেলে আসতে পারলাম না। পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলাম।

বসে আস্তে আস্তে আদর করতে লাগলাম। মনে হল বিড়ালটা আর বেশি সময় বাঁচবে না। আহারে! অবুঝ প্রানীটাকে কে এমন ভাবে মারলো! তখনই মনে হল বিড়ালটার নিশ্চয়ই কিছু খাওয়া হয় নি। এই শরীর নিয়ে কিছু যে খুজে খাবে সেটারও উপায় নেই। খানিকট ইতস্তত করলেও নিজের জন্য কিনে আনা ভাত আর মাংশ প্যাকেট থেকে খুলে বিড়ালটার সামনে রাখলাম। কিছুটা সময় আমার চোখের দিকে এক ভাবে তাকিয়ে রইলো বিড়ালটা। তারপর খেতে শুরু করলো।

তখনই আমার খেয়াল হল বেশ খানিকটা সময় পার হয়ে গেছে। রাস্তাঘাট একেবারেই নির্জন। মানুষজন নেই বললেই চলে। তবে একজনকে দেখতে পেলাম আমার থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে। আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। মেয়েটির পরনে ধবধবে সাদা সেলোয়ার, সাদা ওড়না আর সাদা লেগিংস পরা পরা। আমার দিকে মেয়ে এগিয়ে এসে বলল

-আপনি নিজের খাবারটা বিড়ালকে দিয়ে দিলেন? রাতে কি খাবেন?

বুঝলাম মেয়েটা নিশ্চয়ই আশে পাশেই কোথাও থাকে। প্যাকেট খুলে বিড়ালটাকে খাবার দিতে দেখেছে। আমি বললাম

-সমস্যা নেই। আরেকবার কিনে আনা যাবে। এই অবুঝ প্রাণীটাকে কেউ মেরেছে। খুবই খারাপ কাজ হয়েছে।

মেয়েটা কঠিন গলায় বলল

-মানুষরা আর পারে কি! এদের মত নিষ্ঠুর কি আর কেউ আছে?

আমি বললাম

-সবাই কি নিষ্ঠুর?

মেয়েটা একটু যেন নরম হল। তারপর বলল

-না, সবাই এক না। আমি জানি।

তারপর মেয়েটি আমার আরও একটু কাছে এগিয়ে এল। মেয়েটি কাছে আসতেই এক চমৎকার পারফিউমের গন্ধ পেলাম। মেয়েটি বলল

-আপনি বরং আপনার খাবার নিয়ে আসুন আরেকবার। নয়তো হোটেল বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

আমার তখনই মনে হল মেয়েটা আসলে ঠিকই বলছে। আজকে যদি আবার গিয়ে খাবার না পাই তাহলে হয়তো রাতটা আমাকে না খেয়েই থাকতে হবে। বিড়ালের দিকে তাকিয়ে দেখি ও ততক্ষণে চেটে পুটে সব খেয়ে ফেলেছে। যাক মারা যাওয়ার আগে বিড়ালটা অন্তত শান্তিমত কিছুটা খেতে পারলো। আমার মনটা ভাল হয়ে গেল।

আমি মেয়েটার কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় তাকিয়ে দেখি মেয়েটা বিড়ালটার দিকে একভাবেই তাকিয়ে আছে। চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়বে এখনই। মেয়েটাও নিশ্চয়ই বিড়াল পছন্দ করে খুব। এই জন্যই মেয়েটার খারাপ লাগছে। আমি আর কিছু না বলে আবারও হোটেলের দিকে রওনা দিলাম। বার কয়েক কিয়েক পিছনের দিকে তাকিয়েও দেখি মেয়েটা সেই একই ভাবে তাকিয়ে আছে। একটুও নড়ে নি।

হোটেলের কাছে পৌছে দেখলাম হোটেল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত পৌছেও লাভ হল না। ওরা বলল যে কিচ্ছু আর অবশিষ্ট নেই। এই হোটেলটাই সব থেকে বেশি সময় ধরে খোলা থাকতো। এটা বন্ধ মানে অন্য সব গুলাই বন্ধ হয়ে গেছে। কেবল এই হোটেলই না, আসে পাশে কোন দোকান আর অবশিষ্ট নেই। সব বন্ধ হয়ে গেছে। ফিরতি পথ ধরলাম। বাসায় বিস্কুট আর পাউরুটি আছে। আজকের রাত পার হয়ে যাবে। খুব একটা সমস্যা হবে না।

একই রাস্তা দিয়ে ফেরার সময় মেয়েটাকে আর দেখতে পেলাম না। অবশ্য সেই আশাও আমি করি নি। নিশ্চয়ই বাড়ির ভেতরে ঢুকে পরেছে। কিন্তু সেই বিড়ালটাকেও দেখতে পেলাম না। সেটার অবস্থা এতোই খারাপ ছিল যে একা একা চলার মত অবস্থা তার ছিল না। তাহলে কি মেয়েটা সাথে করে নিয়ে গেল ওটাকে?

যাক নিয়ে! আমার আর এতো চিন্তা করার দরকার নেই। আমি বাসার দিকে হাটা দিলাম। তবে বিড়ালটার শেষ সময়ে যে একটু পেট ভরে খাওয়াতে পেরেছি এটা ভেবে নিজ মনেই শান্তি লাগছিল।

পরদিন দুপুরে খাওয়ার সময় বের হয়েই বুঝলাম এলাকাতে কিছু একটা সমস্যা হয়েছে। চারিদিকে কেমন একটা থমথমে ভাব বিরাজ করছে। রাস্তার মোড়ে দেখলাম বেশ কয়েকজন পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে। একটা পুলিশের জিপও দেখতে পেলাম। আমার অবশ্য এতো কিছু জানার আগ্রহ নেই। আমি পাশ কাটিয়ে হোটেলে ঢুকে পড়লাম।

ঘটনা জানতে পারলাম কিছু সময় পড়েই। বেয়ারার সাথে আবার আমার ভাল পরিচয়। প্রতিদিন বিল দেওয়ার সাথে সাথে একটা আলাদা বকশিস তার পকেটে দিয়ে যাই। খাবার দিতে দিতে সেই সব খুলে বলল। আমাদের এলাকাতে একটা মার্ডার হয়েছে। যে মারা গেছে সে হচ্ছে কমিশনারের লোক। অবশ্য আমি আগেই ধারণা করেছিলাম যে এমন কিছুই হবে। কমিশনার আর সাবেক কমিশনারের লোকেদের মাঝে প্রায়ই মারামারি বাঁধে। ডুই চারটা মার্ডার হওয়া নতুন কিছু না। আগেও হয়েছে। তবে চমকপ্রদ ব্যাপার হচ্ছে এই মার্ডারটা হয়েছে অস্বাভাবিক ভাবে। যাকে মেরে ফেলা হয়েছে তাকে প্রচণ্ড ভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। শরীরের প্রতিটি হাড় নাকি ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। এবং তাকে একটা কারেন্টের থামের সাথে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল।

আমি সব শুনে একটু অবাকই হলাম। এতোটা আক্রোশ নিয়ে মানুষ মানুষকে হত্যা করতে পারে!

তবে এটা নিয়ে আর বেশি কিছু ভাবার নেই। জীবন যেমন কারো জন্য থেমে থাকে না, এই ঘটনার জন্যও থেমে থাকবে না। বিকেলের মধ্যেই এলাকার সেই গুমট ভাবটা কেটে গেল। টিউশানি তে যাওয়ার সময়ই দেখলাম এলাকা আবার অন্যান্য দিনের মত স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।

রাতে প্রতি দিনের মত ফিরছিলাম খাবার নিয়ে। সেই রাস্তার মাথায় আসতেই গতদিনের সেই মেয়েটাকে দেখতে পেলাম। আমার কেন জানি মনে হল মেয়েটা আমার জন্যই অপেক্ষা করছিল।আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো একটু। তারপর বলল

-কেমন আছেন?

আজকেও মেয়েটি সেই সাদা পোষাকই পরে আছে। মেয়েটাকে দেখতে সত্তিই পরীর মত মনে হচ্ছে। এতো স্নিগ্ধ আর মোলায়েম চেহারা আমি এর আগে কোন মেয়ের মাঝে দেখি নি। মেয়েটি শরীর থেকে সেই অচেনা সুগন্ধ আসলে। আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলাম কিছুটা সময়। তারপর বলল

-ভাল আছি। আপনি?

মেয়েটা এই প্রশ্নের জবাব দিল না। তবে আমার দিকে একটা প্যাকেট বাড়িয়ে দিল।

আমি সেটার দিকে তাকিয়ে থেকে বললাম

-কি এটা?

মেয়েটা বলল

-আপনার জন্য।

-তা তো বুঝলাম আমার জন্য। কিন্তু কি?

মেয়েটা সেটার জবাব দিল না। কেবল হাসলো। তখনই আমার বুকের ভেতরটা ধক করে উঠলো। কোন মানুষ এতো চমৎকার ভাবে হাসতে পারে আমার জানা ছিল না। আমি কেবল অবাক হয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়েই রইলাম।

মেয়েটাও নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছে আমি তার দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছি। খানিকটা লজ্জামিশ্রিত কন্ঠে মেয়েটা বলল

-আজকে আমি আসি!

-আপনার নামটা এখনও বলেন নি আমাকে?

-আমার নাম? বলব এক সময়। সময় আসুক তবে এখন না।

এই মেয়েটা আবার দৌড়ে চলে গেল সামনের গলির দিকে । একবার ভাবলাম আমি নিজেও মেয়েটার পিছু পিছু যাই তারপরই মনে হল কি দরকার ! প্যাকেট খুলে দেখি সেখানে সন্দেশ জাতীয় মিষ্টি । একটু ভেঙ্গে নিয়ে মুখে নিতেই মনে হল এমন স্বাধের মিষ্টি আমি আমার জীবনে কোন দিন খাই নি । বাসায় যেতে যেতে অর্ধেক মিষ্টি খেয়ে শেষ করে ফেললাম ।

এরপর থেকে মেয়েটির সাথে আমার প্রায়ই দেখা হতে লাগলো । একদিন দেখা হল নিউমার্কেটে একদিন দেখা হল লাইব্রেরীতে আবার একদিন দেখা হল পথে মাঝখানে । আর টিউশনী থেকে ফেরার পথে তো দেখা হতই ।

লিজার সাথে মুভি দেখতে গিয়েছিলাম । লিজার স্বামী অফিসের কাজে বাইরে গিয়েছে । আমাদের আরেক বন্ধু লিপিও আটকে গেছে কাজে । তিন জনের প্লান ছিল মুভি দেখার কিন্তু লিপি শেষ পর্যন্ত লিপি না আসাতে আমি আর লিজাই হাজির হলাম মুভি দেখতে । সেখানে গিয়ে মেয়েটার সাথে দেখা হয়ে গেল । আমি স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে গিয়ে যেতেই ধাক্কা খেলাম । কারন মেয়েটার চোখের দৃষ্টি বলছে অন্য কথা । সেখানে আমি আমার জন্য অভিমান দেখতে পেলাম ।

কেন ?

কিছু সময় লাগলো আমার সেটা বুঝতে । কিন্তু যখন ডাকতে যাবো দেখি মেয়েটা দৌড়ে চলে গেল । আমার কেন জানি খুব অস্বস্তি লাগলো । মেয়েটার নামও আমি জানি না যে ডাক দিবো । পুরো মুভির সময়টা ধরে আমার মন পড়ে রইলো মেয়েটার কাছে । কি করবো বুঝতে পারছি । মুভি শেষ করে বাসায় আসতে আসতে নয়টা বেজে গেল । এসেই আমি সেই রাস্তা ধরে হাটাহাটি করতে শুরু করলাম কিন্তু মেয়েটার দেখা নেই ।

কি করবো ঠিক বুঝতে পারছি না । বিকেল থেকে একটু একটু মেঘ করেছিলো আকাশে । আমি দাড়িয়ে থাকতে থাকতেই টিপটিপ বৃষ্টি শুরু হল । একবার মনে হল বাসায় চলে যাই তারপর মনে হল না যাবো না । ভিজতে থাকি । যদি মেয়েটা না আসে তাহলে এখানেই দাড়িয়ে থাকবো । এমন একটা ভাবনার কোন কারন নেই তবে আমার কেন জানি মনে হল মেয়েটা আসবেই । ঐদিনের পর থেকে যতবার আমার মনে হয়েছে মেয়েটার সাথে আজকে দেখা হবে ততবারই কোন না কোন ভাবে মেয়েটার সাথে আমার দেখা হয়েছে । তাহলে আজকে কেন হবে না !

কিন্তু কিছু সময় পড়ে তীব্র বৃষ্টি শুরু হল । আমি তবুও দাড়িয়ে রইলাম । একবার রাস্তার এদিক আরেকবার ওদিক হাটতে লাগলাম । যখন মনে সত্যিই মনে হল যে মেয়েটা আজকে আর আসবে না তখনই মনে হল পেছনে কেউ এসে দাড়িয়েছে । তাকিয়ে দেখি সেই মেয়েই !

আমি দৌড়ে কাছে যেতেই মেয়েটা বলল

-এখানে দাড়িয়ে আছো কেন শুনি ? যাও যে মেয়ের সাথে মুভি দেখেছো তার কাছে যাও !

বাচ্চাদের মত অভিমান ঝড়ে পড়ছে মেয়েটার কন্ঠে । আমি তাকিয়ে আছি একভাবে ! মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে । সেই আলোর ঝলকানিতে আমি আমি মেয়েটার চেহারা দেখতে পাচ্ছি আর সেই চেহারাতে আমার জন্য ধরে রাখা অভিমান দেখতে পাচ্ছি । আমি হঠাৎ করেই একটা কাজ করে ফেললাম । কোন কিছু না ভেবেই মেয়েটার ঠোঁটে শক্ত করে চুমু খেয়ে ফেললাম । একটু ভয় ছিল যে মেয়েটা হয়তো রাগ করে উঠবে তবে সে কিছু করলো না । বরং নিজেকে খানিকটা সমর্পন করে দেওয়ার মত করেই আমার চুমুতে সঙ্গ দিল । আমার তখনও এমন ভাবে চুমু খাওয়ার অভিজ্ঞতা হয় নি । মনে হল জীবনের সব থেকে চমৎকার একটা অভিজ্ঞতা হল । যখন মেয়েটার ঠোট থেকে আমি নিজেকে মুক্ত করলাম তখন মেয়েটা একটু দুরে গিয়ে রাস্তার পাশেই উচু করা একটা বেদীর উপর গিয়ে বসলো । আমিও তার পাশে গিয়েই বসলাম । জিজ্ঞেস করলাম

-কি হল ? দেখো ও আমার বন্ধু ছিল । আমি যদি কাউকে তীব্র ভাবে পছন্দ করে থাকি সেটা কেবল তুমি । তাহলে তুমি কেন রাগ করে আছো ?

মেয়েটা আমার দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে বলল

-আমি রাগ করে নেই ।

-তাহলে ? তোমার মুখ এমন বেজার কেন লাগছে ! আমার এভাবে চুমু খাওয়াটা ভাল লাগে নি !

-আমার জীবনের সব থেকে মধুর অভিজ্ঞতা এটা !

-তাহলে ? কি হল ?

মেয়েটা আমার দিকে একভাবে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় । তারপর বলল

-আচ্ছা তোমার কি অবাক লাগে না যে আমি প্রতিদিন হঠাৎ করে কোথা থেকে চলে আসি আর কোথায় যাই ? যখনই তুমি আমাকে দেখতে চাও তখনই চলে আসি !

আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না আসলে মেয়েটা কি বলতে চাইছে । তবে এটা সত্যিই যে আমি যখনই মেয়েটার কথা ভাবি কিংবা দেখা করতে ইচ্ছে করেছে তখনই মেয়েটা এসে হাজির হয়েছে । আমি কিছু না বলে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইলাম কেবল । মেয়েটা বলল

-তোমার কি মনে আছে আমাদের প্রথম কবে দেখা হয়েছিলো ?

-হুম ! ঐ যে বিড়ালকে কে যেন মেরেছিলো !

-হ্যা । তুমি কি জানো ঐ বিড়ালটা কে ছিল ?

-মানে ! বিড়ালটা তোমার পোষা ছিল ?

মেয়েটা আরও কিছুটা সময় আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল

-ঐ বিড়ালটা আমার ছোট ভাই ছিল !

আমার কাছে কেবল মনে হল মেয়েটা হয়তো আমার সাথে ঠাট্টা করছে । কিন্তু মেয়েটার চোখের দিকে তাকিয়ে আমার মনে হল না যে মেয়েটা মিথ্যা বলছে । আমি আমতা আমতা করে বললাম

-কি বলছো তুমি ? তুমি কি ....

-আমি মানুষ না । আমি ...

মেয়েটা কথা শেষ করলো না । কথা শেষ করার দরকার পড়লো না । আমি কেবল চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলাম মেয়েটার দিকে । মেয়েটা বলল

-আমরা মাঝে মাঝেই বিভিন্ন পশু পাখির রূপ ধরে থাকি । ঐদিন সেও এমন রূপ ধরে ছিল । তখন ঐ জসিম বিনা কারনে তাকে আঘাত করে ।

আমি আবার ধাক্কা খেলাম । জমিস হচ্ছে সেই ছেলেটা যাকে নৃসংস ভাবে কেউ মেরে ঝুলিয়ে রেখেছিলো । আমি বললাম

-তাহলে ঐ জমিস কে ....

-আমার বাবা আর বড় ভাই মিলে তাকে কষ্ট দিয়ে মেরেছে !

আমার এখন তীব্র ভয় পাওয়া উচিৎ কিন্তু আমার কেন জানি ভয় হচ্ছে না । বরং আমার এসব কিছুই মনে হচ্ছে না। একটু অবাক লাগছে তবে আমার কেন জানি মনে হচ্ছে এই মেয়েকে আমি ভালবাসি । এই মেয়েটা কে ছাড়া আমি কিছুই চিন্তা করতে পারছি না । আমার মনের কথাই যেন মেয়েটা বুঝতে পারলো । অবশ্য সেটা বুঝারই কথা ।

-এমনটা হয় না !

-কেন হয় না ?

-তুমি বুঝবে না !

-আমি কিছু বুঝতে চাই না । কিছু না । আমি কেবল তোমাকে চাই । আর কিছু না ।

মেয়েটা আমার কাছে এসে আমার ঠোঁটে আরেকটা চুমু খেল । তারপর বলল

-আমরা কোন দিন আমাদের সত্যটা কোন মানুষের কাছে প্রকাশ করি না । তোমার কাছে কেন করলাম আমি জানি না । ঐদিন আমার ভাইকে শেষ খাওয়া খাইয়েছো এটা আমার সারা জীবন মনে রাখবো । তবে এরপর আমাদের আর দেখা হবে না কোন দিন ।

আমি কিছু বলতে চাইলাম কিন্তু মুখ দিয়ে কোন কথা বের হল না । একটা তীব্র কষ্ট হতে লাগলো । এই কষ্ট কেন হল আমি সেটা জানি না ।

দাদু এরপর .....

গল্প বলতে বলতে কখন চুপ করে গিয়েছি বুঝতেই পারি নি । রিনি আমার কে ধরে ঝাকি দিতে দিতে বলল

-দাদু এরপর ! এরপর কি হল ?

-এরপর আর কিছু না হয় নি ।

-দুর এটা কোন কথা ! যাও তোমার সাথে কথা না । আমি তোমাকে কি গল্প বলতে বললাম আর তুমি কি গল্প বললা !

রিনি গান ফুলিয়ে বসে রইলো কিছুটা সময় । তারপর থাকতে না পেরে নিজেই বলল

-আচ্ছা এরপর থেকে কিন্তু ভাল গল্প বলবা । যেখানে রাজকুমার আর রাজকুরীর বিয়ে হবে । ঠিক আছে !

আমি হেসে বললাম

-আচ্ছা বলব !

-কি ব্যাপার দাদু নাতনি মিলে কি এতো গল্প হচ্ছে ?

রিনি দিম্মা বলে দৌড়ে চলে গেল ওর দাদীর কাছে । আজকে সপ্তাহখানেক হয়েছে রিনিরা এখানে এসেছে । সামনেই আমাদের বিবাহ বার্ষিকী । সেটা পালন করতেই সবাই একে একে আসা শুরু করেছে । রিনি পরীক্ষা শেষ হয়েছে একটু আগে তাই বড় ছেলে রিনি আর রিনি মাকে আগেই পাঠিয়ে দিয়েছে ।

-দিম্মা জানো দাদুর না একটা পরীর সাথে প্রেম করেছিলো । তুমি জানো ?

ওর দাদী আমার দিকে তাকিয়ে বলল

-তাই ? তা তারপর কি হল ?

রিনি বলল

-তারপর আর কি ? সেই পরী দাদুকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলো ।

আরও কিছু বলতে যাবো তখনই রিনির মায়ের কন্ঠ স্বর শুনতে পেলাম । রিনি কে খাওয়ার জন্য ডাকছে । রিনি ঘরের দিকে দৌড় দিল । রিনি চলে যেতেই সে আমার পাশে এসে বসলো । তারপর চোখ পাকিয়ে বলল

-তোমাকে না বলেছি এসব গল্প না করতে ! কি আজিব !

-আরে আমি করলাম !

-কি করলাম মানে ! দেখো এতো গুলো বছর আমি শান্তিমত থেকে আর এখন অশান্তি চাই না । বুঝেছো ! আমি কিন্তু সত্যি সত্যি চলে যাবো !

-আচ্ছা বাবা আচ্ছা ! এমন রাগ কর না । আর শুনো চলে যাওয়ার ভয় দেখাবা না বুঝছো ! তোমার দৌড় আমার জানা আছে !

কিছুটা সময় সে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো রাগত চোখে তবে সেটা খুব বেশি সময় ধরে রাখতে পারলো না । আমি জানিও সে সে কখনদিন পারবেও না । আর আমাকে ছেড়ে দুরে যেতে পারবে না কোন দিন !

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:১৯
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×