somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রিন্সেস ডায়ানাঃ এক রাজকুমারী (হার রয়াল হাইনেস দি প্রিন্সেস অফ ওয়েল্‌স)

০১ লা জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



তাকে বলা হতো ফ্যাশন কুইন । সৌন্দর্যে তাকে পেছনে ফেলবে এমন মেয়ে পাওয়াটাই দুস্কর । বরং তার সাদামাটা জীবন দেখে অনেকেই অবাক হতো । ভাবত এত বড় রাজ পরিবার এ পুত্রবধু সে কিনা এরকম জীবন যাপন করছে । অসহায়ের কাছে ‘জনগণের যুবরানী’, ফ্যাশন সচেতন বিশ্বের কাছে স্টাইল আইকন আর সন্তানদের কাছে একজন মমতাময়ী মা- এই তিন কারিশমায় ব্রিটেনের (সাবেক) রাজবধুর পরিচয়ের বাইরেও তিনি যেন বিশেষ কিছু ।

হ্যা বলছিলাম সেই নারীর কথা যিনি পুরো পৃথিবীকে কাদিয়ে চলে গিয়েছেন । তিনি আর কেউ নন “ প্রিন্সেস ডায়ানা ’’।

পুরো নাম লেডি ডায়ানা ফ্রান্সেস স্পেন্সার । তবে বিয়ের পর তার নাম হয় ডায়ানা ফ্রান্সেস মাউন্টব্যাটেন । তিনি যুবরাজ চার্লসের প্রথম স্ত্রী এবং ১৯৮১ হতে ১৯৯৭ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের যুবরাজ্ঞী। তাঁর পুত্র রাজপুত্র উইলিয়াম ও হ্যারি, ব্রিটিশ মসনদের উত্তরাধিকারীদের তালিকায় যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয়।

১৯৮১ খ্রীস্টাব্দে বিবাহের পর থেকে ১৯৯৬ খ্রীস্টাব্দে বিবাহ বিচ্ছেদ পর্যন্ত তাঁকে হার রয়াল হাইনেস দি প্রিন্সেস অফ ওয়েল্‌স বলে সম্বোধন করা হত। এর পরে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের আদেশক্রমে তাঁকে শুধু ডায়ানা, প্রিন্সেস অফ ওয়েল্‌স বলে সম্বোধনের অনুমতি দেয়া হয়।

যদিও বা তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ নিয়ে নানা রকম গুঞ্জন ছিল । তাছাড়া ডায়ানার প্রাক্তন প্রেমিক তখন অনেক ভাবেই তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করত । এছাড়া প্রিন্স চার্লস এর সাথেও বনিবনা হচ্ছিল না । চার্লস ও বিশ্বাসঘাতকতা করল । শেষ পর্যন্ত বিয়েটা আর টিকিয়ে রাখা গেল না ।

ডায়ানার কিন্তু কোন সাধারন পরিবার থেকে উঠে আসেননি । ব্রিটেনের অন্যতম অভিজাত স্পেন্সার পরিবারে। সেই স্পেন্সার পরিবার, যারা উত্তরাধিকার সুত্রে মার্লবোরোর ডিউক, ভিস্কাউন্ট চার্চিল ও স্যান্ডারল্যান্ডের আর্লের মতো রাজকীয় খেতাব বহন করে চলেছেন। তাঁর বাবা ছিলেন ভিস্কাউন্ট অ্যালথর্প এডওয়ার্ড জন স্পেন্সার এবং মা ভিস্কাউন্টেস অ্যালথর্প ফ্রান্সেস শ্যান কিড। ৬ বছর বয়সেই বাবা-মা’র বিচ্ছেদ দেখতে হয়েছিলো ডায়ানাকে। তাঁর জিম্মা নিয়ে বাবা ও মায়ের কদর্য আইনী লড়াই প্রভাব ফেলেছিলো ডায়ানার শিশুমনে। শেষ অবধি লেডি ডায়না স্পেন্সারের শৈশব কেটেছিলো বাবার কাছেই।

তিনি পড়াশুনায় তেমন ভাল ছিলেন না । ও লেভেল এ অকৃতকার্য হওয়াতে পড়াশুনাই ছেড়ে দেন । শুরু করেন শিশু পরিচারিকা হিসেবে তার ক্যারিয়ার । এরপর কাজ করেন বাবুর্চি হিসেবে । ১৯৭৭ সালে যোগ দেন নাইটসব্রিজের একটি কিন্ডার্গার্টেন স্কুলে । তখন ই প্রিন্স চার্লসের সাথে পরিচয় হয় বড় বোন সারাহ এর প্রেমিক হিসেবে । যদিও দুজনের মাঝে ১৩ বছরের ফারাক ছিল । তবুও বয়স তাদের মাঝে বাধা হতে পারেনি । প্রেমটা হয়েই গিয়েছিল ।



প্রায় চার বছর প্রনয়ের পর ১৯৮১ সালের ২৯ জুলাই তাদের এই প্রেমের শুভ পরিনয় ঘটে । লন্ডনের সেন্ট পল’স ক্যাথেডালে অনুষ্টিত হয় তাদের বিয়ে । বিশ্বের সব মিডিয়া এই বিয়ে সরাসরি সম্প্রচার করে । কোটি কোটি মানুষ এই বিয়ের সাক্ষী হয়েছে ।
বিয়ের ১১ মাসের মাথায় জন্ম নেয় তাদের প্রথম সন্তান প্রিন্স উইলিয়াম আর্থার ফিলিপ লুইস । আর ১৯৮৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বরে জন্ম নেয় তাদের দ্বিতীয় সন্তান প্রিন্স হেনরি এলবার্ট ডেভিড । যাকে প্রিন্স হ্যারি নামেই সবাই বেশি চেনে ।

তবে তাদের সুখের সংসার বেশি দিন টেকেনি । হঠাত করেই অনেক কিছু এলোমেলো হয়ে গেল । তারপর বৃটিশ রাজবধুর তকমা ঝেড়ে ফেলে নিজের আলাদা পরিচয়ে বাচতে চেয়েছেনে । তিনি শুধু ফ্যাশেন আইকন বা মায়াময়ী নন । তিনি সাধারন মানুষের কথা ভেবেছিলেন । তিনি ছুটে গিয়েছেন বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠানে । মানুষকে সচেতন করেছেন এইচআইভি সম্পর্কে । এইডস নিয়ে মানুষের মাঝে তৈরি করেছেন সচেতনতা । কাজ করেছেন সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের নিয়ে । আর পত্রিকা ও গনমাধ্যম সবাই লুফে নিল তাকে । ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে পর্যন্ত পত্রিকা সম্পাদকদের ওয়েবমিনস্টারে তলব করতে হয়েছিলো! সেখানে তুমুল বিতর্ক হয়েছিলো একটি কোটি টাকার প্রশ্নে; একজন মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকারকে নাকি জনগণের জানার অধিকার- গণমাধ্যমের অগ্রাধিকার কোনটা হওয়া উচিত।

খ্যাতি সব সময় থাকে না । ডায়ানাও তার ব্যতিক্রম নন । যখন তিনি মিশরীয় প্রযোজক দোদি ফায়েদের সঙ্গে প্রেম শুরু করেন তখন তার খ্যাতির চূড়া থেকে পতিত হলেন । যদিও এটা আমার কাছে তেমন কন্ট্রভার্শল নয় । একজন নিঃসঙ্গ মানুষ সে তার সঙ্গী বেছে নেবার অধিকার রাখে । তার সাথে পাকিস্তানি এক চিকিতসকের প্রেমের গুজব ও শোনা গিয়েছে । কিন্তু তারা শুধু ভাল বন্ধু দাবি করেছেন । কিন্তু খ্যাতির বিড়ম্বনা থাকেবেই । মিডিয়া ট্রয়াল থেকে তিনি বাচতে পারেননি । চার্লসের সাথে বিচ্ছেদের পরও মিডিয়া তাকে এক দন্ড ছাড় দেয়নি । বরং আরো ঘাড়ে চেপে বসে ছিলেন । পাপারাজ্জিদের থেকে নিজেকে বাচাতে লাগলেন প্রিন্সেস ডায়ানা ।

এই পাপারাজ্জিদের জন্য ই প্রান হারাতে হলো প্রিন্সেস ডায়ানা । ১৯৯৭ সালের অগাস্টে ফ্রান্সে প্রমোদ ভ্রমনে এসেছিলেন ডায়ানা ও ফায়েদ । হোটেল রিতজ থেকে মার্সিডিজ বেঞ্জ করে বের হতেই পথিমধ্যে পাপারাজ্জিদের ধাওয়ার শিকার হন । তাদের চোখে ধুল দিতে গিয়ে এক টানেলের রাস্তায় তাদের গাড়িটি অন্য একটি গাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষে দুমড়ে মুচড়ে যায় । ঘটনা স্থলেই মারা যান ফায়েদ ও গাড়িচালক । ডায়ানার দেহরক্ষী কোন মতে বেচে যান । আর ডায়ানা মারাত্মক ভাবে আহত হন । তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হলেও শেষ রক্ষা হয়নি । কয়েক ঘন্টা মৃত্যুর সাথে লড়াই করে শেষে পরপারে পাড়ি জমান প্রিন্সেস ডায়ানা ।

তার মৃত্যুর পর বৃটিশ পরিবার কে সমালোচিত হতে হয় । স্বয়ং রানীকে পর্যন্ত কেউ ছাড়া দেয়নি । কারন তারা এই মৃত্যুতে কোন প্রতিক্রিয়া দেখাইনি । ত্রের বিবাহবিচ্ছেদ সংক্রান্ত তিক্ততার জের সত্ত্বেও রানীকে সেলাম ঠুকতে হয়েছিলো ডায়ানার জনপ্রিয়তার কাছে। ৫ সেপ্টেম্বর বাকিংহাম প্যালেস থেকে পাঠানো এক টেলি-শোকবার্তায় রানী এলিজাবেথ ডায়ানার অসামান্য জীবনাদর্শকে ‘অবিস্মরণীয়’ আখ্যা দেন।

৬টি কালোঘোড়ায় অস্ত্রসজ্জিত রাজকীয় সওয়ারী সমেত কেনসিংটন প্যালেস থেকে ৬ সেপ্টেম্বর প্রিন্সেস ডায়ানার শবযাত্রা শুরু হয়। চার মাইলের এ শবযাত্রায় পথের দুই পাশে হাজারো ভক্ত-শুভানুধ্যায়ীর সাথে ছিলেন অশ্রুসিক্ত ডায়ানার দুই সন্তান উইলিয়াম ও হ্যারি। আজকের ‘ডিউক অব ক্যামব্রিজ’ প্রিন্স উইলিয়াম তখন মাত্র ১৫ বছর বয়সী কিশোর, আর হ্যারির বয়স ১৩।

ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে ডায়ানার স্মৃতির উদ্দেশ্যে এক আবেগঘন অন্তিমস্তুতি পাঠ করেছিলেন তাঁর ভাই চার্লস স্পেন্সার। এল্টন জনের শোকসঙ্গীত পরিবেশনাও ছিলো সে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে। সে অনুষ্ঠান টেলিভিশনে প্রত্যক্ষ করেছিলো বিশ্বের প্রায় বত্রিশ মিলিয়ন মানুষ। অবশেষে তাঁর কফিন নিয়ে যাওয়া হয় স্পেন্সার মালিকানাধীন অ্যালথর্পের একটি ছোট্ট দ্বীপে। সেখানেই সমাহিত হন কোটি মানুষের হৃদয়ের রানী প্রিন্সেস ডায়ানা।

আজ এই হৃদয়স্পর্শী প্রিন্সেস ডায়ানার জন্ম দিন । আজকের এই দিনেই তিনি জন্ম গ্রহন করেন । শ্রদ্ধা ভরে তাকে শরন করছি ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪৭
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×