somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শহীদ আজাদঃ এক রত্নগর্ভা মায়ের বীর সন্তান !!!!!

১১ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



‘কতদিন ভাত খাই না মা, আমার জন্য ভাত নিয়ে এসো’ এভাবেই নিজের সাদা ভাতের প্রতি ক্ষুধার কথা নিজের মায়ের কাছে ব্যক্ত করেছিলো একজন সন্তান। কথা মতো মা ভাত নিয়েও এসেছিলেন। তবে ভাত নিয়ে এসে আর খুঁজে পাননি ছেলেকে।

সেই থেকে অপেক্ষা করেছিলেন সেই মা, এই বুঝি ফিরে এসে ভাত চাইবে তার ছেলে। না, আর ফেরেননি ছেলে। তাই মা-ও আর কোনো দিন ভাত মুখে তোলেননি। ১৪ বছর একবেলা রুটি খেয়ে থেকেছেন মা। ঘুমিয়েছেন মেঝেতে। কারণ ছেলে যে তার শুয়ে ছিলো নাখালপাড়ার ড্রাম ফ্যাক্টরি সংলগ্ন এম.পি হোস্টেলের মিলিটারি টর্চার সেলের মেঝেতে।

তার ছেলে ফেরেনি । কিন্তু মায়ের মন কে বোঝাবে । আজাদের মৃত্যুর পর প্রতিটি দিন প্রতিটি মুহুর্ত আজাদের অপেক্ষায় থেকে থেকে ১৯৮৫ সালের ৩০ আগস্ট না ফেরার দেশে চলে যান শহীদ আজাদের মা। তাঁর কবরের নাম ফলকে নাম-পরিচয়ের জায়গায় লেখা হয় ‘শহীদ আজাদের মা’। যে মা এমন সন্তান জন্ম দিতে পারে তার এর চেয়ে বড় পরিচয় কি হতে পারে যে উনি ‘শহীদ আজাদের মা’।

আজাদের পুরো নাম মাগফার উদ্দিন চৌধুরী। জন্ম ১১ জুলাই। ধনী পরিবারের সন্তান ছিলেন আজাদ। তবে ধন-দৌলতে কাটেনি তার পুরো জীবন।

আজাদ তখন পড়েন ক্লাস সিক্সে। বিলাসী ধনী পিতা বিলাসীতার জন্য বিয়ে করে আরেকটি। প্রতিবাদ করে আজাদের মা। অবশেষে অভিমানী মা ছেলেকে নিয়ে বেরিয়ে আসেন ঐ বিশাল প্রাসাদ ছেড়ে। ছোট একটি ঘর ভাড়া করে অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করা শুরু করেন দু’টি প্রাণ।

আজাদকে মানুষ করারই প্রাণান্তকর চেষ্টা এই মায়ের। সেসময় আজাদের সব সময়কার সঙ্গি ছিল খালাতো ভাই জায়েদ। অবশেষে ১৯৭১ সালে আজাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ পাশ করেন। মায়ের চরিত্রের প্রতিবাদী আর যোদ্ধা চরিত্রটা মিশে ছিলো আজাদের ভেতর।

১৯৭১ সাল। পুরো দেশ উত্তাল। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নগ্ন হামলা মুক্তিকামী বাঙালির ওপর। একের পর এক পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আক্রমণ করে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দিচ্ছে চারদিক। নৃশংসভাবে হত্যা করছে নিরস্ত্র-নিরপরাধ মানুষ। তখন এদেশের মুক্তিকামী মানুষ, ছাত্র-যুবক-কৃষক-জেলে-শ্রমিকেরা চুপ করে বসে থাকতে পারে নি। তাঁরা ঝাঁপিয়ে পরে নিজ নিজ অবস্থান থেকে। পাকিস্তানি বাহিনীর অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবতীর্ণ বাঙালি মুক্তিকামী মানুষ। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।

আজাদ তখন সবেমাত্র পাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়েছেন। আর সেসময়ই দেশের এমন পরিস্থিতিতে সেও চুপ বসে থাকতে পারে নি। সেও যুদ্ধে যাবে। তবে প্রয়োজন মায়ের অনুমতি। কেন না মা ছাড়া তাঁর আর কেউ নেই।

আবার তাঁকে ছাড়াও মায়ের কেউ নেই। তাই মায়ের অনুমতি প্রয়োজন। মাকে আজাদ বলল, ‘মা, আমি কি যুদ্ধে যেতে পারি’? মা বললেন, ‘নিশ্চয়ই, তোমাকে আমার প্রয়োজনের জন্য মানুষ করিনি, দেশ ও দশের জন্যই তোমাকে মানুষ করা হয়েছে’। মায়ের অনুমতিক্রমে স্বাধীনতার সংগ্রামে সে-ও ঝাঁপিয়ে পড়ে। সঙ্গে ছিলো বন্ধু শহীদ জননী জাহানারা ইমাম-পুত্র রুমী।
রাজধানীর ২৮ নাম্বার মগবাজারে ছিলো আজাদের বাসা। সেখানে ১৫ আগস্ট রুমী নিয়ে গেলেন তাঁর মা লেখক জাহানারা ইমামকে। সেখানে আজাদের মায়ের সাথে দেখা হল শহীদ জননীর।

সেদিনকার আলোচনায় উঠে এসেছিলো, ২১ আগস্ট রুমী ও আজাদ মেলাঘরের ক্যাপ্টেন হায়দারের কাছে স্পেশাল ট্রেনিং নিবেন। তাদের মিশন সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন উড়ানো। মুক্তিযুদ্ধের সময় একটি গেরিলা সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রুমি ও আজাদ।
১৯৭১ সালের ৩০ আগস্ট। রাতে আজাদের মগবাজারের বাড়িতে হামলা চালায় পাকিস্তানি বাহিনী। গুলিতে আহত হন আজাদের খালাতো ভাই জায়েদ। একই সময় ধরা পড়ে ক্র্যাক প্লাটুনের একদল সাহসী মুক্তিযোদ্ধা। সেসময় আজাদকেও আটক করা হয়। তাকে ধরে নিয়ে রাখা হলো রমনা থানা পাশে ড্রাম ফ্যাক্টরি সংলগ্ন এম.পি হোস্টেলের মিলিটারি টর্চার সেলে।

আজাদের মনোবল ভেঙে তার কাছ থেকে অন্য গেরিলা সহযোদ্ধাদের তথ্য জানতে জামায়েত নেতা রাজাকার মোহাম্মদ কামারুজ্জামান আজাদের মাকে আজাদের কাছে নিয়ে আসে। রাজাকার কামারুজ্জামান রমনা থানায় বসে আজাদের মাকে বলে “সিদ্ধিরগঞ্জ অপারেশনে আজাদের সাথে যারা অংশগ্রহণ করেছিলো সেইসব সহযোদ্ধারা কোথায় আছে সেটা যদি আজাদ পাকি সেনাদেরকে জানিয়ে দেয় তবে আজাদকে মুক্তি দেয়া হবে”।

পাকিস্তানী রাজাকার আর সেনাবাহিনী আশা করে সন্তানের জীবন বাঁচাতে আজাদের মা হয়তো আজাদকে সহযোদ্ধাদের নাম প্রকাশ করতে বলবে। কিন্তু রাজাকার আর পাকিস্তানী সেনারা কিভাবে বুঝবে এদেশের মায়েদের দেশপ্রেম আর সততার গভীরতা। আজাদের কাছে মা জানতে চাইলেন ‘কেমন আছো’, আজাদ মাকে বললেন, ‘খুব মারে, ভয় হচ্ছে কখন সব স্বীকার করে ফেলি’। ছেলের সামনে তিনি ভেঙ্গে পড়েন নি। বরং ছেলেকে সাহস দিয়ে বলেছিলেন, ‘শক্ত হয়ে থেকো বাবা। কোন কিছু স্বীকার করবে না’।

সেদিন থানা হাজতে মায়ের কাছে আজাদ ভাত খেতে চান। আজাদ মায়ের কাছে ভাত খেতে চেয়ে বলেন, ‘মা কতদিন ভাত খাই না। আমার জন্য ভাত নিয়ে এসো’। মা ভাত নিয়ে যান থানায়। গিয়ে দেখেন ছেলে নেই। এই ছেলে আর কোনদিনও ফিরে আসে নি। ধরে নেওয়া হয় সেদিন-ই ঘাতকরা মেরে ফেলেছে মায়ের আদরের আজাদকে।

আজ সেই শহীদ বীর আজাদের জন্মদিন । আজকের এই দিনে আপনাকে স্মরন করছি শ্রদ্ধা ভরে । আপনি ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন বাংলার প্রতিটি মায়ের অন্তরে । প্রতিটি তরুনের শ্রদ্ধায় ।

স্যালুট তোমায় ।

তথ্যসুত্রঃ গুগল ও আনিসুল হকের মা বই থেকে ।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১২:০৩
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×