somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পৃথিবীর অজানা এক রহস্যঃ বারমুডা ট্রায়াঙ্গল (পর্ব - ১ )

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পৃথিবীতে অনেক রহস্যের সমাধান আজও হয়নি । কখন কখনও ভাবইয়ে তোলে এগুলো কি প্রকৃতির খেলা নাকি অন্য কিছু । বিজ্ঞানীরা অনেক রহস্যের সমাধান এখনও খুজে বেরাচ্ছেন । তাদের আওতার বাইরে সেসব রহস্যের ঘিরে রয়েছে পৃথিবীকে । অথচ এই রহস্যের কথা খুব কম মানুষ শুনেছে । আবার শুনলেও তারা সেটা নিয়ে কম ভেবেছে । কারন যেখানে বিজ্ঞানীরাই রহস্যের সমাধান করতে পারেনি সেখানে তারা কিভাবে করবে । তবে মজার কথা হচ্ছে এই সব রহস্য যখন সামনে আসে তখন আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে কিভাবে সম্ভব । হয়ত এর অনেক ব্যাখ্যা করা সম্ভব তবে সঠিক ব্যাখ্যা কি সেটা অনেকেই জানে না ।

সেই সব রহস্য ঘেরা এক জায়গার নাম “বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল” । যার রহস্যে পুরো পৃথিবীকে করে রেখেছে এক ঘোরের মধ্যে । যাকে ঘিরে কত শত মিথের জন্ম হয়েছে তার ঠিক নেই । তবে রহস্যটা আজও আড়ালেই রয়ে গিয়েছে ।

প্রথমেই বলে আসি বারমুডা ট্রায়াঙ্গল সম্পর্কে। আমরা সকলেই জানি বারমুডা ট্রায়াঙ্গল একটি ত্রিভুজাকৃতি জায়গা বিশেষ। যার এক পাশে রয়েছে ফ্লোরিডা, অন্যপাশে বারমুডা আর অপরপাশে আছে সান জুয়ান, পুয়ারতো রিকো। পৃথিবীর অন্য যতো রহস্যেঘেরা স্থান তার থেকে এই জায়গাকে গুরুত্ব দেবার মূল কারণ হল ভয়াল পরিবেশে নৌযান ও আকাশযানের বহু যাত্রীর অকাল প্রাণহানি। এ এমন এক জায়গা যেখানে একবার প্রবেশ করলে সেখান থেকে বের হবার বা কোনো তথ্য বের করে আনার কোনো অবকাশ নাই। অনেকে আবার এই জায়গাকে ডেভিল ট্রায়াঙ্গল ও ট্রাপিজিয়াম আকৃতির বলে থাকেন।




একটি ধারণা সবার মধ্যে প্রচলিত আছে যে, বহিঃবিশ্বের কোনো অজানা প্রাণীর বাস সেখানে, যারা সর্বদা বসে আছে আশেপাশের সবকিছু গ্রাস করে নেবার জন্য। ধারণামতে ভিনগ্রহের মানুষেরা পৃথিবীতে এসে এ স্থানটিকে তাদের ঘাঁটি বানিয়ে নেয় এবং এ অঞ্চলের ভিতরে প্রবেশকারী সকল কিছুর চিহ্ন তারা গায়েব করে দেয় যাতে কেউ তাদের ব্যাপারে কিছুই জানতে না পারে। মজার বিষয় হিসেবে এই জায়গাকে তুলনা করা যেতে পারে ব্ল্যাকহোলের সাথে। যেখানে একবার কেউ প্রবেশ করলে বের হওয়া তো দূরের কথা তার কোনো অস্তিত্বও খুঁজে পাওয়া যায় না।

বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নিয়ে যারা লিখেছেন তাদের মধ্যে সর্ব প্রথম নাম হচ্ছে ক্রিস্টোফার কলম্বাস । যিনি আমেরিকা আবিস্কার করেন । তিনি লিখেছিলেন যে তাঁর জাহাজের নাবিকেরা এ অঞ্চলের দিগন্তে আলোর নাচানাচি, আকাশে ধোঁয়া দেখেছেন। এছাড়া তিনি এখানে কম্পাসের উল্টাপাল্টা দিক নির্দেশনার কথাও বর্ণনা করেছেন। তিনি ১১ই অক্টোবর, ১৪৯২ তে তাঁর লগ বুকে লিখেন –

"The land was first seen by a sailor (Rodrigo de Triana), although the Admiral at ten o'clock that evening standing on
the quarter-deck saw a light, but so small a body that he could not affirm it to be land; calling to Pero Gutiérrez, groom of the King's
wardrobe, he told him he saw a light, and bid him look that way, which he did and saw it; he did the same to Rodrigo Sánchez of Segovia, whom the King and Queen had sent with the squadron as comptroller, but he was unable to see it from his situation. The Admiral again perceived it once or twice, appearing like the light of a wax candle moving up and down, which some thought an indication of land. But the Admiral held it for certain that land was near..."





তিনি বলেছেন যে এই জায়াগাতে আসার পর কম্পাস ভুল নির্দেশনা দেয় । তাই নাবিকেরা দিক হারিয়ে ফেলে ।
এছাড়া অনেকেই বারমুডা এর মিস্ট্রি নিয়ে লেখালিখি করেছেন । অনেক ধারনা দিয়েছেন । তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন কুসচ । লরেন্স ডেভিড কুসচ হলেন “অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটি”-র রিসার্চ লাইব্রেরিয়ান এবং “ দ্যা বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল মিস্ট্রি: সলভড (১৯৭৫)” এর লেখক। তিনি কিছু ধারনা দিয়েছেন যার অনেকাংশে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার সাথে মিলে যায় ।
কুসচ –এর গবেষণায় যা পাওয়া যায় তা হল-

১। বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলে যে পরিমাণ জাহাজ ও উড়োজাহাজ নিখোঁজ হওয়ায় কথা বলা হয় তার পরিমাণ বিশ্বের অন্যান সমুদ্রের তুলনায় বেশি নয়।
২। এ অঞ্চলে গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঝড় (tropical storms) নিয়মিত আঘাত হানে, যা জাহাজ ও উড়োজাহাজ নিখোঁজ হওয়ার অন্যতম কারণ। কিন্তু বার্লিটজ বা অন্য লেখকেরা এধরনের ঝড়ের কথা অনেকাংশেই এড়িয়ে গিয়েছেন।
৩। অনেক ঘটনার বর্ণনাতেই লেখকেরা কল্পনার রং চড়িয়েছেন। আবার কোন নৌকা নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে দেরিতে বন্দরে ভিড়লে তাকে নিখোঁজ বলে‌ প্রচার করা হয়েছে।


আবার কখনোই ঘটেনি এমন অনেক ঘটনার কথা লেখকেরা বলেছেন। যেমন- ১৯৩৭ সালে ফ্লোরিডার ডেটোনা সমুদ্রতীরে( Daytona Beach) একটি বিমান দূর্ঘটনার কথা বলা হয়, কিন্তু সেসময়ের খবরের কাগজ থেকে এ বিষয়ে কোন তথ্যই পাওয়া যায়নি।
সুতরাং কুসচ –এর গবেষণার উপসংহারে বলা যায়- লেখকরা অজ্ঞতার কারণে অথবা ইচ্ছাকৃত ভাবে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল নিয়ে বানোয়াট রহস্য তৈরি করেছেন।




এবার আসি কিছু আলোচিত ঘটনা নিয়ে যার কোন ব্যাখ্যা আজও পাওয়া যায়নি –

ফ্লাইট নাইনটিন (Flight 19)

ফ্লাইট ১৯ একটি এভেঞ্জার টর্পেডো বোমারু বিমান । এই বিমানটি ১৯৪৫ সালের ৫ ডিসেম্বর প্রশিক্ষন চলাকালে নিখোজ হয়ে যায় । পরে যার আর কোন খোজ পাওয়া যায়নি । বিমানবাহিনীর ফ্লাইট পরিকল্পনা ছিল ফোর্ট লডারদেল থেকে ১৪৫ মাইল পূর্বে এবং ৭৩ মাইল উত্তরে গিয়ে, ১৪০ মাইল ফিরে এসে প্রশিক্ষণ শেষ করা। বিমানটি আর ফিরে আসেনি। নেভি তদন্তকারীরা নেভিগেশন ভুলের কারণে বিমানের জ্বালানীশূন্যতাকে বিমান নিখজের কারণ বলে চিহ্নিত করে। বিমানটি অনুসন্ধান এবং উদ্ধারের জন্য পাঠানো বিমানের মধ্যে একটি বিমান পিবিএম ম্যারিনার ১৩ জন ক্রুসহ নিখোঁজ হয়।

ইউ এস এস সাইক্লপস( USS Cyclops)

যুক্তরাষ্ট্রের নৌ- ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক (যুদ্ধ ছাড়া) ক্ষতি হচ্ছে ইউ এস এস সাইক্লপস নিখোঁজ হয়ে যাওয়া। অতিরিক্ত ম্যাঙ্গানিজ আকরিক ভর্তি বিমানটি ১৯১৮ সালের ৪ মার্চ বার্বাডোস দ্বীপ থেকে উড্ডয়নের পর একটি ইঞ্জিন বিকল হয় এবং ৩০৯ জন ক্রুসহ নিখোঁজ হয়। যদিও কোন শক্ত প্রমান নেই তবুও অনেক কাহিনি শোনা যায়। কারো মতে ঝড় দায়ী, কারো মত ডুবে গেছে আবার কেউ এই ক্ষতির জন্য শত্রুপক্ষকে দায়ী করে।উপরন্তু, সাইক্লপস-এর মত আর দুইটি ছোট জাহাজ প্রোটিউস এবং নেরেউস দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে নিখোঁজ হয়। সাইক্লপসের মত এই জাহাজদুটিতেও অতিরিক্ত আকরিকে ভর্তি ছিল। তিনটি ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত মালামাল ধারণে অক্ষমতার (ডিজাইনগত) কারণেই জাহাজডুবি হয় বলেই ব্যাপক ধারণা করা হয়।

ডগলাস ডি সি-৩(Douglas DC-3)

২৮ ডিসেম্বর ১৯৪৮ সালে একটি ডগলাস ডিসি - ৩, ফ্লাইট নাম্বার NC16002, সান জুয়ান, পুয়ের্তো রিকো থেকে মিয়ামি যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয়। বিমান থাকা ৩২ জনসহ বিমানটির কোন হদিস পাওয়া যায়নি। সিভিল এরোনটিক্স বোর্ড তদন্ত নথিপত্র থেকে বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার সম্ভাব্য একটি কারণ পাওয়া যায়, সেটি হল - বিমানের ব্যাটারি ঠিকমত চার্জ না করে পাইলট সান জুয়ান থেকে রওনা দেয়। কিন্তু এটা সত্যি কিনা তা জানা যায়নি।

আমি তখন কোন ক্লাসে পড়ি মনে নেই আব্বু আমাকে ভবেশ রায় এর বারমুডা ট্রায়াঙ্গল বইটি কিনে দিয়েছিলেন । পরে কে যে নিয়ে গেছে আর পাইনি । এখন অনলাইনে খুজি অনেক বলেছে বইটি নেই । বইটিতে অনেক তথ্য ছিল । এ ধরনের বইয়ের নাম জানা থাকলে সাজেস্ট করতে পারেন ।


ছবি ও তথ্যসুত্রঃ গুগল, ইন্টারনেট ও উইকিপিডিয়া
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৪৯
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×