somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিষয়ঃ এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল

১৬ ই মে, ২০১৪ দুপুর ১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যে মুহূর্তে এ লেখা লিখছি তখন এদেশের এক বিশাল জনসংখ্যা বিশাল মানসিক চাপে আছে। আগামী কাল রেজাল্ট বের হবে। অনেক সাধনার পর তারা মাধ্যমিক পর্যায় পাশ করবে। এই একই ফলাফলের উপর নির্ভর করে তারা ভর্তি হবে পছন্দের কলেজে।
পরীক্ষা তো অনেক রকম হয়, অ্যাকাডেমিক, শারীরিক, মানসিক। মাধ্যমিক পর্যায়ের এ পরীক্ষা অনেকটা এ সবেরই মিশ্রণ। জীবনে কী এই ছোট বাচ্চারা কম পরীক্ষা দিয়েছে? সেই ক্লাস ওয়ান থেকে পরীক্ষা দিয়েই আসছে। এটি তাদের প্রথম পাবলিক পরীক্ষাও নয়। তবে কেন এত ভয়? ছাত্র ছাত্রী, অভিভাবক সবার টেনশন শুধু মাত্র ভালো রেজাল্টের। দু বছরে কী শেখা বা জানা হল তা এখানে প্রায় তুচ্ছ হয়ে যায়। কেন এমন হয়, কেন এই রেজাল্টের একটি লেটার গ্রেড বা জিপিএ এর একখানি মানের জন্য এত দুশ্চিন্তা?
মূল বিষয়টি সম্ভবত স্বপ্ন ভঙ্গের। কেউ হয়ত আশা করে আছে সব বিষয়ে এ প্লাস পেলে নটর ডেম বা ভিকারুননেসা কলেজে পড়বে। কেউ হয়ত আশায় আছে বাবা ধান বিক্রি করা টাকায় পড়ালেখা করিয়েছে আমার নিজের জন্য না হোক বাবার জন্য ভালো ফলাফল পেতে হবে। ফলাফল নিয়ে সব চেয়ে বেশি চিন্তায় আছে সম্ভবত দুটি গ্রুপ। প্রথম গ্রুপ যারা সকল বিষয়ে এ প্লাসের প্রত্যাশা করে আছে এবং দ্বিতীয় গ্রুপ যারা নিছক পাশ করার আশা নিয়ে আছে। এ মুহূর্তে সবার জীবন মরণ আঁটকে আছে ঐ রেজাল্টের মাঝে।
তোমরা চিন্তা করো না। কারণ এ দুবছরে তোমার যে অর্জন তা কোনদিন তোমার থেকে কেউ নিতে পারবে না। হয়ত বলবে সার্টিফিকেট ছাড়া তো কেউ দাম দেবে না। না দিলো। তুমি যখন কষ্ট করছিলে তখন কি তারা এসেছিল তোমার খোঁজ নিতে?তোমায় সাহায্য করতে? না তোমার পাশে ছিল তোমার বাবা মা। রেজাল্ট খারাপ হলে হয়ত তোমার মা একটু বকা দেবে বাবা হয়ত মন খারাপ করে কথা বলবে না কিন্তু তারা কিন্তু তোমায় দূরে সরিয়ে দেবে না কখনো। কেন তারা এমন করবেন জানো? কারণ তারা তোমায় অনেক বেশি ভালবাসেন, তারা জানেন এর চেয়ে আরও অনেক ভালো হয়ত তুমি করতে পারতে। তারা হয়ত আশাও করেছিলেন। তুমি যখন খারাপ করলে তখন তোমার পরিশ্রমের পাশাপাশি তাদের পরিশ্রমটাও একটু কম মূল্যায়ন পেল। কিন্তু এতে তো তোমার কোন দোষ নেই কারণ তুমি তোমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছ।
তোমার বাবা মা এর কাছে তোমার আদর কখনোই কমবে না। এখন বলবে “ফলাফল খারাপ হলে যে সব স্বপ্নের জগত একসাথে নষ্ট হয়ে যাবে তখন কী করবো?”
পরীক্ষা দিয়েছ সেটা তোমার কাজ ছিল ফলাফল প্রদান করাটা তোমার হাতে নেই, তোমার দায়িত্বও নয়। তুমি শুধু এখন আশা কর কাল ফলাফল অবশ্যই ভালো হবে। কারণ পরিসংখ্যান বলে তোমরা তোমাদের বিদ্যালয়ে যে ধরনের ফলাফল করেছ সাধারণত মূল রেজাল্ট তারচেয়ে ভালো হয়। যাদের ফলাফল আগামীকাল মনের মত হবে তাদের জন্য আমার শুভকামনা এবং তাদের জন্য আমার এ লেখা এখানেই শেষ।
এর পর যা কিছু লেখা আছে তা এখন পড়ো না।
পরবর্তী লেখা শুধু মাত্র তাদের জন্য যাদের কাল মন খারাপ হবে। মন খারাপ হলে এসে তখন পড়ো।










প্রথমেই বলে নেয় এসএসসিতে আমি যখন খারাপ করলাম তখন আমাকে কী কী সহ্য করতে হয়েছিল। আমি অনেক বেশি ভিতু ছিলাম, অনেক বেশি টেনশন করতাম।আজ পর্যন্ত কোন পরীক্ষার রেজাল্ট আনতে যাবার সাহস হয় নি। শুনলাম এ প্লাস, কিন্তু বাংলা ও সমাজে এ এসেছে। রেজাল্টের দিন কেউ কেউ খোঁটা দিয়ে বলেছিল “মোল্লার দোড় মসজিদ পর্যন্তই”। রেজাল্টের জন্য পছন্দের কলেজে পড়তে পারি নি, ভর্তি হতে হয়েছিল এমন এক কলেজে যেখানে পড়ার বিষয়ে বুদ্ধি বয়স থেকে খারাপ ধারণা ছিল। কিন্তু সবশেষে আজ কী মনে হয় জানো “বেশ তো আছি, ভালোই”
জানি পরীক্ষা খারাপ হয়েছে বলে এ মুহূর্তে তোমার অনেক মন খারাপ। অসংখ্য স্বপ্ন তোমার হয়ত ভেঙ্গে গেছে। কিন্তু মনে রাখো যতক্ষণ তুমি মন খারাপ করে বসে থাকবে ততক্ষণ তুমি আসলে পিছিয়ে পড়বে। হাঁটতে গিয়ে অনেক বারই মানুষ পড়ে যায়, বুদ্ধিমানের কাজ তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়ানো। ভাবো মুক্তিযুদ্ধ যখন শুরু হয় তখনকার কথা। পাকিস্তান বাহিনী আমাদের উপর যখন প্রথম আক্রমণ করে তখন আমাদের প্রতিরোধ কতটুকু ছিল? তখন যদি সবাই বসে কান্নাকাটি করত তখন কী হত? তোমাকেও ঘুরে দাঁড়াতে হবে।
স্বপ্নগুলো তো তুমিই দেখেছিলে তাই না? আবার দেখবে। তবে একটু ভিন্নভাবে। বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে তোমার সামনের দিন সাজানোর কাজ করতে হবে। আবার বলছি তোমার যা কিছু অর্জন তা তোমারই আছে শুধুমাত্র কয়েকটা কাগজ বদলে গেছে। তুমি হয়ত পছন্দের কলেজে পড়তে পারবে না, ঠিক আছে, অন্য কোথাও পড়বে। পড়তে তো পারবে। যদি মানিয়ে নিতে সমস্যা হয় তবে নিজেকে গুটিয়ে নেবে। আগেও বলেছি তোমার প্রকৃত ভালো বন্ধু, তোমার বাবা মা কখনো তোমায় দূরে সরিয়ে দেবে না। তাদের ভালোবাসাকে কাজে লাগাবে। রেজাল্টকে শুধুমাত্র একটা কাগজ হিসাবে ভাববে। তোমার স্বপ্নগুলো আবার সাজাবে। হয়ত তুমি ভেবেছিলে ভালো রেজাল্ট হলে ল্যাপটপ বা সাইকেল কিনবে, এখন কিনতে পারছো না তো ঠিক আছে কিনবে না। এত দিন তোমার জীবন সাইকেল ছাড়া আনন্দে চললে এখন চলবে না? হয়ত তুমি ভেবেছ তুমি ভবিষ্যতে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হবে। রেজাল্ট খারাপ হওয়াতে সে স্বপ্নের কী হবে? কিছুই হবে না অল্প একটু পরিবর্তন করতে হবে। আগে হয়ত তোমায় ভর্তি পরীক্ষায় ৫০ পেতে হত এখন ৫৫ পেতে হবে। যদি মনে কর যে না ৫৫ পাওয়া অনেক কষ্টকর, তাহলে বলবো পৃথিবীতে সবাই কে কী ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ারই হতে হবে? আরও অসংখ্য ভালো পেশা আছে। ভাবতে থাকো অন্য কিছু ভালো লেগেই যাবে।

এককথাতে বললে তোমার স্বপ্ন পরিবেশ পরিস্থিতি একবার নয় বারবার ভেঙ্গে দেবে, দেবেই। তোমার টিকে থাকা নির্ভর করে তুমি কত দ্রুত আবার স্বপ্ন দেখতে পারো তার উপর। পড়ে যাওয়া মানেই দৌড়ে হেরে যাওয়া নয়, চেষ্টা না করাটা হয়ত হেরে যাওয়া। নিজেকে নিজের স্বপ্নকে বাস্তবতার সাপেক্ষে তুলনা করো, পরিবর্তন করো, পরিবর্ধন করো, এগিয়ে যাও।

এই কামনায়,
শুভাশীষ সাহা শুভ
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (৫৩তম এমবিবিএস ব্যাচ)
http://www.Fb.me/shuvo01
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×