যখনই আমরা ডিএনএ নিয়ে কথা বলি তখনই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে ৪৬ টি ক্রোমোসোমের মধ্যে থাকা ডিএনএ এর কথা। যদিও আমরা সবাই জানি এ বাদেও ডিএনএ আরও এক জায়গায় থাকে কিন্তু কেন জানি মাইটোকন্ড্রিয়ার মধ্যে থাকা এই ডিএনএ এর কথা বাদবাকি ডিএনএ এর মধ্যে আনা হয় না।
১৯৬৩ সালে নেচার নামক জার্নালে প্রকাশিত এক পেপারে Margit M. K. Nass এবং Sylvan Nass ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে মাইটোকন্ড্রিয়ার অভ্যন্তরে ডিএনএ এর মত গঠন দেখতে পান। ১৯৬৪ সালে আরেকটি জার্নালে প্রকাশিত লেখায় Ellen Haslbrunner, Hans Tuppy and Gottfried Schatz জানান তারা biochemical assay এর মাধ্যমে মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ আলাদা করতে পেরেছেন।
মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ হল কোষের শক্তিঘর নামে খ্যাত মাইটোকন্ড্রিয়ার মধ্যে অবস্থিত দ্বিসূত্র যুক্ত গোলাকার ডিএনএ। এতে প্রায় ১৬৬০০ বেস পেয়ার থাকে এবং এতে অবস্থিত জিনের সংখ্যা প্রায় ৩৭ টি। এই ডিএনএ এর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল অন্যান্য ডিএনএ যেমন বাবা এবং মা উভয়ের কাছে থেকে আসে এটি সেভাবে সঞ্চারিত হয় না। এটি শুধুমাত্র মায়ের থেকে সঞ্চারিত হয়।(মাইটোকন্ড্রিয়ার মূল উৎস হিসাবে ব্যাকটেরিয়ার কথা-অর্থাৎ এন্ডোসিমবায়োসিস নিয়ে আরেক দিন হয়ত লেখা যাবে)
কেন এমন হয় তা বুঝতে গেলে আমাদের প্রথমে শুক্রাণুর গঠন মনে করতে হবে। নিউক্লিয়াসে অবস্থিত সকল ক্রোমোসোম সংকুচিত অবস্থায় শুক্রাণুর মস্তক নামক অংশে থাকে এবং মাইটোকন্ড্রিয়া ও সেন্টিওল থাকে লেজের দিকে। শুক্রাণু যখন ডিম্বাণুর অভ্যন্তরে প্রবেশ করে তখন শুধু মস্তক অংশই প্রবেশ করে, বাকিটুকু নয়। যে কারণে পিতার মাইটোকন্ড্রিয়ার ডিএনএ মাতার মাইটোকন্ড্রিয়ার ডিএনএ এর সাথে দেখা করার সুযোগ পায় না।তবে এর ব্যতিক্রম যে একেবারে হতে পারে না তা নয়। আমাদের নতুন আবিষ্কার IVF বা ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশনে যখন শুক্রাণুকে ডিম্বাণুর অভ্যন্তরে প্রবেশ করানোর সময় তাতে পিতার মাইটোকন্ড্রিয়াও প্রবেশ করে বলে কিছু বিজ্ঞানী দাবি করছেন।
মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ শুধু মাতা থেকে আসে এই তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে ১৯৮৭ সালে আবার সেই নেচার জার্নালে তিনজন বিজ্ঞানী Rebecca Cann, Mark Stoneking, and Allan Wilson দাবী করেন বর্তমান পৃথিবীতে বেঁচে থাকা সকল মানুষের কমন পূর্বপুরুষকে তারা খুঁজে পেয়েছেন। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে তারা আসলে যাকে খুঁজে পেয়েছেন তিনি ‘পূর্বনারী।’ তারা ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় তার নাম দিলেন ‘ঈভ।’ তারা আসলে এখানে একটু চালাকিও করেছিলেন বটে। তারা ঈভ এই অর্থে ব্যবহার করেছিলেন যে ঈভ হতে পরবর্তীতে সকল মানুষ এসেছে। কিন্তু আসলে তারা কিন্তু সেই প্রথম নারীর দেখা হয়ত পান নি। তারা হেঁটেছিলেন বর্তমান কালের মানুষগুলো থেকে তাদের মায়ের হাত ধরে পিছনের দিকে। এমন তো হতেই পারে এই দীর্ঘসময়ের পরিক্রমায় আলোচ্য ঈভের সমসাময়িক সকল নারী বা বাকি সকল নারীর মেয়েরা একসময় শুধু ছেলে জন্ম দিয়েছেন ফলে এভাবে তাদের মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ সঞ্চারণ বন্ধ হয়ে গিয়েছে।(বংশের বাতি জ্বালানোর জন্য আসলে মেয়ে প্রয়োজন।) তাই সহজভাবে বলতে গেলে ১৯৮৭সালের জার্নালে যা বলা হয়েছে তা হল তারা সেই সাম্প্রতিকতম মহিলাকে খুঁজে পেয়েছেন যার Mt DNA আমরা সবাই বহন করছি। প্রশ্ন হচ্ছে তাকে খুঁজে বের করে আমাদের লাভ কী মূলত?
বাকী অংশ এই লিঙ্কে Click This Link