আমি খুব ছোটবেলা থেকে বিড়াল পালতাম। আমার আব্বু, আম্মু এবং ছোটবোনও বিড়াল পছন্দ করতো। আমার প্রথম বিড়ালের নাম ছিল অঞ্জনা। আমি যখন সেই বিড়ালটা পালা শুরু করেছিলাম, তখন অঞ্জনা খুব জনপ্রিয় নায়িকা ছিল। আমরা তখন থাকতাম পদ্মাভিলা, পুরানো ঢাকার একটি নামকরা বাড়ি। একতলায় থাকতাম। অঞ্জনার অনেকগুলো বাচ্চা হয়েছিল। পরে অঞ্জনা কোন কারণে পাগল হয়ে গেছিল। এরপর আমরা নয়াপল্টনে ছক্কা হাজীর বাড়িতে ভাড়া নেই। বাড়িআলার নাম ছক্কা হাজী ছিল, কেননা সে ছয়বার হজ্জ করেছিল।অঞ্জনার একটা বাচ্চা আমাদের সাথে এসেছিল।নাম ছিল এসশাদ। ওর নাম এটা হওয়ার কারণ তখন ক্ষমতায় ছিল এসশাদ। বিটিভিতে একদিকে রাষ্ট্রপতি ভাষণ আর আরেকদিকে আমার বিড়াল খাবারের জন্য মিউ মিউ করতো। আমার ছোটবোন বিড়ালটাকে খুব আদর করতো। কালো রং এ ছিল। আমরা বিলাতে যখন ছয় মাসের জন্য যাই। বিড়ালটা আমাদের শোকে মারা যায়।বিলাত থেকে এসে রঞ্জনা নামে আরেকটা বিড়াল পালা শুরু করি। ওর আবার লেজ ফুলা ছিল। ওর অনেক বাচ্চা হয়। শ্রীদেবী, রেখা, অমিতাভ। গাড়ির চাপায় শ্রীদেবী মারা যায়। রেখা হারিয়ে যায়। অমিতাভ অনেকদিন আমাদের সাথে ছিল। আমরা ৮৮ বন্যার কিছুদিন আগে উত্তর শাহজাহানপুরের ৪২০(এটা ৪১৯ এই রেখেছে বাড়িআলা) নম্বর বাসায় উঠি তখন রঞ্জনা আর অমিতাভ ছিল। আমরা থাকতাম তিন তলায়। অমিতাভকে আমার এক আব্বার বন্ধুর ছেলে তামিম অমিতাভকে কতবার যে ছাদ থেকে ফেলে দিয়েছে, তার কোন হিসাবই নেই।রঞ্জনার একটা বাচ্চা হয়েছিল, যার দুই চোখের রং দুই রকম। এতো সুন্দর লাগতো না বিড়ালটাকে। রঞ্জনাকে বিষ দিয়ে মেরে ফেলা হয়। আমার সন্দেহ বাড়িআলার কেউ মেরেছে। ওই বাসা ছেড়ে দিলে নতুন বাসায় পুচ্চি(দুই রং বিশিষ্ট চোখআলী) এবং অমিতাভকে নিয়েও রাখতে পারি নাই। ১৯৮৪ সাল থেকে বিড়াল পালি। প্রথম অঞ্জনা দিয়ে শুরু হয়, অমিতাভ দিয়ে শেষ হয়। আমাদের বাসায় একদিন ৪২০ নম্বর বাসার একতলা অ্যান্টি বলে অমিতাভ মারা গেছে। আম্মার প্রিয় নায়ক অমিতাভ। সে তার কথা মনে করেছিল। পরে যখন শুন বিড়াল অমিতাভ তখনো দুঃখ পেল। আমি নিজে গিয়ে অমিতাভের লাশ পলিথিনে ভরে ময়লার জায়গায় ফেলে আসলাম। আমার দুই চোখ দিয়ে অঝর ধারায় অশ্রু বইছিল। ভালবাসা সবারই অন্যরকম। সবাই কি আর তা পায় বা প্রকাশ করে? জীবন চলে যাচ্ছে। জীবনের কিছু সৃতি মনে পড়লে হঠাৎ থমকে যাই। সময় নিষ্ঠুরভাবে চলে যায়।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৪