somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি বাঁধের ছবি এবং আরো কিছু কথা

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ সকাল ৯:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ব্লগে একটা ছবি শেয়ার করি। একটু আগে গুগল ম্যাপস আর্থ ভিউ হতে এই ছবিটা স্ক্রিণশট হিসেবে নিয়েছি। এটি একটি বাঁধের স্যাটেলাইট ভিউ। আপনাদের কাছে জানতে চাইবো বলুনতো জায়গা কোথায় অবস্থিত? ধরতে পারছেন না?

আমি ক্লু দিচ্ছি, এটি এশিয়ার একটি দাদা দেশ, নব জাতক একটি ছোট দেশকে পানি থেকে শুকিয়ে মারার জন্য আন্তর্জাতিক সব নিয়ম কানুন উপেক্ষা করে এটি প্রায় ৩৬ বছর আগে নবজাতক দেশটির উজানে চালু করেছিল।

চালু করার আগে অবশ্য নবজাতক ছোট দেশটির প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে দাদা দেশটি অনুষ্ঠানিক ‍অনাপত্তি অনুমতি নিয়ে ছিলো। বলা বাহুল্য নব জাতক দেশটির প্রেসিডেন্ট দাদা দেশটিকে পরম বন্ধু ভেবে ৯০ দিনের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে বাধটির কার্যক্রম চালু করার এক আত্মঘাতী এবং হাস্যকর অন‍াপত্তি চুত্তিপত্রে স্বাক্ষর করেছিলেন।

৩৬ বছর আগে চালু হবার পর বাঁধটি আর কোন দিনই বন্ধ হয়নি। অর্থাৎ দাদা দেশটি তার ভৌগলিক অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে উজানের পানি ‍আটকে তা নিজেদের মরু অঞ্চলে ডাইভার্ট করে নিয়েছে, নিজেদের কৃষি কাজে ব্যবহার করেছে।

একই সাথে অন্তর্জাতিক নদী আইনের সব নিয়ম কানুনকে বুড়ো ‍আঙ্গুল দেখিয়ে মাত্র ৩৬ বছরে নবজাতক দেশটির জলবায়ু, নদীর স্রোতধারা, মৎস সম্পদ, প্রকৃতি, কৃষিজ উৎপাদন, তথা প্রাকৃতির জীব বৈচিত্র’র বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে।

অনুজ দেশটিতে ৪০ বছর আগে ছোটবড় প্রায় চার হাজার নদী ছিলো। আজ ৪০ বছর পর সেই সংখ্যাটা এখন ২০০ এর কিছু কমবেশী!



অবশ্য এ নিয়ে নব জাতক দেশটির মাথাওয়ালা লোকগুলোর তেমন কোন মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। নবজাতক দেশটি এখন যৌবনে পৌছেছে, অনেক অনেক মাথাওয়ালা ব্যক্তিবর্গ এই দেশটির সরকার প্রধান হয়েছেন, দেশ ও জাতি উদ্ধার করেছেন। কিন্তু নদী না থাকলে দেশটির অস্তিত্ব থাকবেনা, ধুধু সাহারা মরুভূমির মতোই হয়ে যাবে দেশের বুক, এতো ক্ষুদ্র বিষয় তাদের বড় মাথায় আসেনা।

তারপরও দেশটিতে কিছু কিছু ছোট খাটো মাথার লোক আছেন যারা এই ক্ষুদ্র বিষয়টা বুঝেন এবং প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেন। আনু মোহাম্মদ নামক একব্যক্তি তাদের একজন। তার আবার অনেক তরুন ভক্ত আছে, তারা আবার ব্লগে লিখে থাকে। সমস্যা হলো দেশটিতে আবার আরেক শ্রেণীর তরুণ আছে যাদের দেশ প্রেম অসম্ভব গভীর। এই দ্বিতীয় শ্রেণীর তরুণরা দেশটির দাদা দেশ তথা পরম বন্ধু দেশ সম্পর্কে কোন কটু কথাই সহ্য করতে পারেন না। অবধারিত ভাবেই দাদা দেশের অপকর্মের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বল্লেই তার জন্ম পরিচয় নিয়ে এই দ্বিতীয় শ্রেণীর তরুণরা চরম সন্দিহান হয়ে যান। যারা প্রতিবাদ করেন, দাদা দেশের এমন দাদাগিরির সমালোচনা করেন অনেক সুশীলের কাছে তারা হয়ে যান দেশদ্রোহী। হয়তো এই পোস্টদাতাও পেয়ে যাবে রাজাকার খেতাব।

আফসোস হয় অনুজ দেশটি একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্যেদিয়ে এক রাহুগ্রাস থেকে মুক্ত হয়ে ও নব্য রাহুর গ্রাসে পরিনত হলো। দেশটির জন্মের ৩৯ বছর ধরে বিভিন্নভাবে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় করা দাদা দেশটির সাহায্যের ঋণই পরিশোধ করে যাচ্ছে। ঋন পরিশোধ করছে আন্তর্জাতিক নদী গঙ্গা-পদ্মার পানি দাদা দেশকে একচ্ছত্র ব্যবহার করার অধিকার দেওয়ার মাধ্যমে, ঋণ পরিশোধ করছে প্রতিনিয়ত সীমান্তে বিএসএফসের গুলিতে অনুজ দেশটির নিরহ মানুষ হত্যার লাইসেন্স দিয়ে, ঋণ পরিশোধ করছে দেশটি দাদা দেশটির একচ্ছত্র এবং বাণিজ্য ভারসাম্যাবিহীন অবাধ বাণিজ্য করার সুযোগ দিয়ে। এখন আরো দেবে টিপাইমুখে বাঁধ দেওয়ার মাধ্যমে, উচ্চহারে ব্যাংক ঋণ নেওয়ার মাধ্যমে এবং পন্য-ট্রানজিট দেওয়ার মাধ্যমে। ভবিষ্যতে দিয়েই যাবে। এজন্যই কি দেশটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করেছিলো? একদেশের রাহুগ্রাস থেকে মুক্ত হয়ে অন্যদেশের রাহুর কবলে পড়ার জন্য?

দাদা দেশটি অবশ্য তার প্রতিবেশী এই দেশটিকে অতো খাটো করে দেখেনা। পানি ডাইভার্ট করে নেওয়ার পর দাদা দেশটির পর কৃষির অসম্ভব উন্নতি সাধিত হয়েছে। তাই দয়া পরবশ হয়ে প্রতিবেশী অনুজ দেশের কাছে আলূ, পেয়াজ, আদা, রসুন, ডাল প্রভৃতি রপ্তানি করে থাকে। অন্যদিকে অনুজ দেশটি তুলনায় সরিষাটাও দাদার কাছে বিক্রি করতে পারেনা, বানিজ্য ঘাটতি লেগে থাকে হাজার হাজার কোটি টাকার।

দাদা দেশটি এবার মনযোগ দিয়েছে টিপাইমুখ নামক একটা স্থানে উজানে নদীর ওপর বাধ দেওয়ার ওপর। এতেও অনুজ দেশটির বড় বড় মাথাওয়ালা পলিটিশিয়ানদের ঘুম ভাঙ্গেনি। বরং অনুজ এই দেশটি যখন একদমই নবজাতক সেই সময়কার প্রেসিডেন্টের মতোই দেশটির বর্তমান সরকার প্রধান এই বাধ স্থাপনে অনাপত্তি চুক্তি সই করে এসেছেন। বিনিময়ে দাদা দেশটি হয়তো কিছু দেবে এই যা আশা অনুজ দেশটির সরকারের।

তবুও তো দাদা, দাদাই। যাই হোক, দাদা দেশটি কিন্তু বিপদের সময় সাহায্য ঠিকই করে। পচা চাল দিয়ে হলেও অসময়ে খাদ্য যোগান দেয়, নাহয় দামটা একটু বেশীই রাখে। দাদার দেশ যখন বন্যায় ভেসে যায়, তখন এই স্লুইস গেটগুলো ঠিকই খুলে যায়, দাদা দেশটির করুনায় অনুজ দেশটির তৃষ্ণার্ত বুক ঠান্ডা হয়, সারা বছর যেটুকু পাওনা ছিলো অনুজ দেশটির তা একবারেই পুষিয়ে দেয় দাদা দেশ।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ সকাল ৯:৪৩
১৯টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×