আমাদের চিলেকোঠায় দু'চাকার সাইকেলটা জীর্ণশীর্ণ হয়ে পড়ে আছে। মাকড়সা তার বাসা বাঁধে, বাচ্চাকাচ্চা ফোঁটায়-এই সাইকেলকে ঘিরে। মা মাঝেমাঝে সাইকেলটিকে ধুয়েমুছে রুপের পরিবর্তন ঘটান। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই সেটি পূর্বের বেশে ফিরে যায়। সেই ছোটবেলা থেকে আজকের ষোল বছরের যুবকে পরিনত হওয়া আমার কালের স্বাক্ষী এই দু'চাকার যান।
আমার বন্ধু যেদিন একটা নতুন ফনিক্স সাইকেল কিনলো সেদিনই আমার সাইকেল কিনার শখ জাগলো খুব। মাকে গিয়ে বললাম- মা, সাইকেলটাতো পড়েই আছে। আমি না হয়.......
মায়ের টানটান হাতের চড় পড়লো আমার বাম গালে। তোরে না একশো দিন বলছি এই সাইকেল নিয়ে কথা বলবি না......
সেই থেকে হাজারো বিষয়ে কথা হয়েছে কিন্তু সাইকেল নিয়ে টু-শব্দটি আর হয়নি।
দিন যায়, সন্ধ্যা হয়, রাত আসে। পাহাড়ি ঢলের মতো সময় গড়ায়। প্রকৃতিজাত মানুষ কোনো কিছু গোপন রাখেনা। কু-সংবাদের গতি নাকি আলোর চেয়ে বেশী। আমিও জেনে যাই সাইকেলের প্রতি মায়ের দুর্বলতার হেতু।
সন্ধ্যার আলো-আধারে সাইকেলটা পড়েছিল বাবার মৃতদেহের ঠিক পাশেই। দলবদ্ধ মানুষ যেন কোনো হিংস্র পশুকে হত্যা করে উল্লাস করছিল তখন। ললাট ফেটে গলগল করে ঝরছিল বাবার টকটকে লাল রক্ত। সবাই তখন বলাবলি করছিল, লাশের সাথে সাইকেলটা যেন নিয়ে যাওয়া হয়। মা তখন দৃঢ় কন্ঠে বলেছিলেন, দেহ নয়, শুধু সাইকেলটাই যাবে। লজ্জ্বা-অপমানে মায়ের ফর্সা মুখমন্ডল তখন রক্তিমবর্ণ গ্রাস করেছে।
নেশা মানুষকে তিলেতিলে শেষ ঠিকানায় নিয়ে যায়। বদনেশা হলে মৃত্যুতে আর সু-নেশা হলে সাফল্যের সর্বোচ্চ চূড়ায়। বাবার নেশা ছিল পরকীয়ায় !
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:০৮