somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুগল্প: পুনরাবৃত্তি

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ছোট চাচ্চু মাথা নিচু করে খাটের কোণায় বসে আছেন। তার দু'চোখে নোনাজল ছলছল করছে। বাবা একটু পরপর তার রুম থেকে বের হয়ে আঠারো বছরের চাচ্চুকে উত্তম-মধ্যম দিচ্ছেন। বাসায় থমথমে অবস্থা। ভয়ে আমার পা কাঁপছে। এই ছোট্ট জীবনে বাবার মেজাজ সম্পর্কে আমি যেটুকু অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি সে অনুযায়ী চাচ্চুর পিঠে লাল লাল দাগ না পড়া পর্যন্ত তার নিস্তার নেই। রেহাই নেই।

মা রাগান্বিত বাবার পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন। ফিসফিস করে বললেন-তোমার মাথাটা একটু ঠান্ডা করো তো। এভাবে রাগ দেখিয়ে কোন লাভ নেই। তারচেয়ে বরং মাথা খাটিয়ে একটা সমাধান বের করো।

আমাদের পাশের বাসার কাজের মেয়ে ফুলি তার মাকে নিয়ে অশ্রুস্নাত চোখে গুটিসুটি হয়ে ফ্লোরে বসে আছে। দৃষ্টিতে তার অসহায়ত্বের ছাপ স্পষ্টত দৃশ্যমান।

কীসের সমাধান ? আমি কিচ্ছু জানি না। আমার মান-সম্মান সব সাগরের তলানিতে গিয়ে মিশেছে। ওরে আমি বাড়ি থেকে বের করে দিবো। কত্ত বড় বজ্জাত । আজ বাবা বেঁচে থাকলে তাকে টুকরোটুকরো করে শিয়াল কুকুরকে খাওয়াতেন। ফাজিল কোথাকার !
বাবার দু'চোখ দিয়ে যেন ড্রাগনের মতো আগুন বেরুচ্ছে। আমি সে আগুনের শিখায় দগ্ধ হচ্ছি ।

ফুলির মায়ের সাথে শুরু হল কপাটবদ্ধ বৈঠক। তাতে যোগ দিলেন গোষ্টীর হর্তাকর্তারা। এমনকি যাদেরকে জীবনে কখনো আমাদের বাসায় আসতে দেখিনি, তারাও। সিদ্ধান্ত হলো। রাত পোহালেই এবরশন !

সবাই হাফ ছেড়ে বাঁচলেন। উফ্.. এবারের মতো রক্ষা তাহলে। রাখে আল্লাহ, মারে কে !

চাচ্চু আমাকে কাছে টানলেন। বললেন- কী রে, তুই কিছু বুঝচ্ছিস।
-না চাচ্চু আমি কিছু বুঝিনি।
-ঠিক আছে বাবা, ছোটদের এতকিছু বুঝতে নেই।

ঠিক পরের দিন। সন্ধ্যায় গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। বাসার সামনে একটা গাড়ি এসে থামলো। সবার দৃষ্টি ঐ গাড়ির দিকে। গাড়ি থেকে চাচ্চু নামলেন। গায়ে লাল টুকটুকে পাঞ্জাবী। ঘুরে গিয়ে ঐ পাশের দরজাটা খুলতেই বেরিয়ে এলো গোলাপী এক পরী। আবছা আলোতে অস্পষ্ট মুখমন্ডল।

নিকটে আসতেই চেহারা স্পষ্ট হলো। মা চিৎকার দিয়ে বললেন- আরে, এতো দেখি ফুলি। কাজের মেয়ে ফুলি !!

আজ। আঠারো বছর পর...

চাচ্চুর বড় মেয়ে অনিশা খাটের কোণায় বসে অঝরে কাঁদছে। চাচ্চুও কাঁদছেন তার রুমে বসে। তাকে শান্তনা দেবার মতো কেউ নেই। আমি তার কাঁধে হাত রেখে বললাম, টেনশন করো না চাচ্চু, সব ঠিক হয়ে যাবে। আমাকে জড়িয়ে ধরে তিনি বাচ্চাদের মতো হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। আমার এই মুহূর্তে মনেহচ্ছে তিনিই পৃথিবীর একমাত্র অসহায় পুরুষ !
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:২২
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটা গাছ কাঠ হলো, কার কী তাতে আসে গেলো!

লিখেছেন নয়ন বড়ুয়া, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:০৬



ছবিঃ একটি ফেসবুক পেইজ থেকে

একটা গাছ আমাকে যতটা আগলে রাখতে চাই, ভালো রাখতে চাই, আমি ততটা সেই গাছের জন্য কিছুই করতে পারিনা...
তাকে কেউ হত্যা করতে চাইলে বাঁধাও দিতে পারিনা...
অথচ... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×