somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুগল্প: বিদায় ভাষণ

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আজকের এই বৃষ্টিভেজা গোধূলিতে আমরা সবাই মিলিত হয়েছি আমাদের সম্মানিত স্যারকে বিদায় জানাতে। বিদায় চাকরি জীবনের একটা স্বভাবিক ঘটনা। আমাদের প্রত্যেকেরই এভাবে বিদায়ের স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আমাদের পা দুটো একটা সময় থমকে যাবে, হাতদুটো নিস্তেজ হয়ে পড়ে থাকবে, নাসারন্ধ্রের নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে- আমরা আমাদের ঘটনাবহুল জীবন থেকেও একসময় বিদায় নিব ! It's a continuous process of life.

বন্ধুরা.......

আমার পূর্ববর্তী বক্তারা স্যারের কর্মময় জীবনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করেছেন। যেখানে প্রশংসাগীতি ছাড়া অন্য কোন গীত নেই। আপনারা মিথ্যাকে কথার মাধুর্য দিয়ে এমন ভাবে গোল পাকিয়েছেন মনেহচ্ছে এই পৃথিবী যেনো শুধুমাত্র সত্য দিয়েই আবৃত। স্বর্ব্বং সত্যং বিরাজ। আসলে কি তাই ? এই ধরাতে কি একটা মানুষও খারাপ কাজ করে না ? সবাই নিস্পাপ ?

হল ভর্তি শ্রোতারা নড়েচড়ে বসলেন। একে অন্যের চোখের দিকে তাকিয়ে আছেন। হলরুমটা সুনসান নিরবতায় এতটাই আচ্ছন্ন হয়ে পড়ল যেন বিদ্রোহী কোনো সেনা সদস্য অস্ত্র তাক করে বলছে - টু-শব্দ করলেই ব্রাশ ফায়ার ! মানুষ অস্ত্রের চেয়ে কখনো কখনো কথা'কে ভয় পায় - এটাই যেন এই মুহূর্তের জ্বলন্ত উদাহরণ।

শুনুন বন্ধুগণ....

আমরা এখন মিথ্যাকে সম্মুখে মিথ্যা বলি না, খারাপকে সম্মুখে খারাপ বলি না, গুণগান করি। অসুন্দরকে সম্মুখে অসুন্দর বলি না, প্রসংশা করি। সত্যকে সত্য বলতে ভয় পাই। মনের বিপরীতে আমাদের এই বিরুদ্ধাচার যেন নিজের সাথেই প্রতারণার সামিল। আমরা অবিরত অভিনয় করছি আমাদের বোবা মনের সাথে !

প্রিয় সহকর্মীগণ....

আমাদের এই বিদায়ী স্যার প্রায় দশ বছর আমাদের সাথে কাজ করেছেন। আপনারা কি মনে করতে পারছেন যে উনি একটা দিন সময়মতো অফিসে উপস্থিত হয়েছেন। না, একটা দিনও না। উনি কি কোনো দিন আপনাকে জিজ্ঞেস করেছেন, আপনার বাচ্চাটা কেমন আছে ? স্বল্প বেতনে আপনার সংসার কেমন চলছে ? না, এরকম কোনো স্মৃতি মনে পড়ছে না আপনার !

বিদায়ী স্যার কাচুমুচু হয়ে চেয়ারে বসে আছেন। লজ্জায়, অপমানে শরীর থেকে যেন ধোঁয়া বের হচ্ছে। এমন এক কঠিন পরিস্থিতিতে পড়বেন তা সুদীর্ঘ চাকুরী জীবনে একবারের জন্যও কল্পনা করেন নি। এতদিনের যশ-মান-খ্যাতি সব যেন ধোঁয়ার মতো বাতাসের সাথে মিশে যাচ্ছে।

শুনুন বন্ধুগণ.....

এই স্যার কী করেছেন...দুহাতে কাড়িকাড়ি টাকা কামিয়েছেন। অফিসের জুনিয়র মহিলা সহকর্মীদের সাথে অশালীন ব্যবহার করেছেন। তাদেরকে অফিস টাইমের বাইরে স্বাক্ষাত করার জন্য জোর খাটিয়েছেন। ঘুষের জন্য ফাইল আটকে রেখেছেন দিনের পর দিন। আপনারা কি আরো শুনতে চান ?? আরো শুনতে চান আপনারা ? আপনারা তো সবই জানেন। বুঝেন।

এবার একটু থামলেন বক্তা। সামনের দিকে তাকিয়ে নিরবতা উপভোগ করলেন তিনি।

আসলে দোষ উনার না। দোষ আমাদের। আমার। আপনার। আমরা স্যারদের সান্নিধ্য পাওয়ার আশায়, করুণা পাওয়ার আশায় এতোটাই অন্ধ হয়ে যাই যে, আবর্জনাকেও পকেটবন্ধি করি। নর্দমায়ও গোলাপের তীব্র ঘ্রান পাই!

পয়ষট্টি বছরের বিদায়ী স্যারের চোখ দিয়ে টলটল করে পানি ঝড়ছে। শরীর কাঁপছে তার। অনুতপ্ত তিনি। কথাগুলো আগে শুনলে বড় উপকার হতো। নিজেকে তিনি পরিশুদ্ধ করার সময় পেতেন। এখন আর সেই সুযোগটুকু নেই। তিনি বুঝতে পারছেন, মিথ্যাকে যেমন মিথ্যা বলা প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন সত্যের প্রশংসা। না হয় অন্যরা বিপদগামী হবে। একসময় পুরো পৃথিবী হয়ে যাবে মিথ্যাময়।

দর্শকসারির একজন ছিঃ ছিঃ করে উঠলেন। মুখ থেকে থুতুর দলা ফেললেন ওয়ালে। ওয়াক থু..... ওয়াক থু...
বিদায়ী স্যার অনুভব করলেন থুতুর দলাটা যেন তার শ্বেতশুভ্র ললাটের ঠিক মধ্যখানটায় পড়েছে। মনের অজান্তেই পকেট থেকে টিস্যু বের করে মুখটা মুছলেন তিনি।

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:৫৬
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×