আমার বয়স যখন দুই-তিন-পাঁচ অথবা সাত বছর, তখন ক্ষুধা লাগলে বাড়ির সবাই বিশেষ করে আমার ঠাম্মা পুরো বাড়ি চেঁচিয়ে গরম করে ফেলতেন। গালি খেতেন আমার মা। বলতেন- কই গো তুমি, তোমার এতো কীসের কাজ, দাদু ভাই'র জন্য তাড়াতাড়ি খাবার নিয়ে আসো।
আমার বয়স যখন পঁচিশের কোঠায়, পড়াশুনা করি, যখন আমি মেসে থাকতাম, তখন ক্ষুধা লাগলে বুয়াকে বলতাম- বুয়া, রান্না হইছে ? বুয়া বলতো, এতো খাইতাম খাইতাম করেন ক্যান ? রান্না হইলে এমনেই বুঝবার পারবেন !
আমার বয়স যখন পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই, যখন আমি অফিসের বড় কর্মকর্তা, তখন ক্ষুধা লাগলে একটা ইশারা দিলেই খাবার রেডি হয়ে যেত । ওরা এসে বলতো- স্যার, আজকের খাবারটা অমুক ফাইবস্টার হোটেল থেকে নিয়ে আসছি। সব রেডি, আপনি চলে আসেন স্যার।
আমার বয়স যখন পঁচাশি পার হয়েছে, যখন আমি বয়সের ভারে ন্যুব্জমান, বেডপ্যান ব্যবহার করি, ক্ষুধার জ্বালায় পেটের নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে আসার উপক্রম, যখন আমি রাত-বিরাতে শিশুর মতো চিৎকার করে কেঁদে কেঁদে বলি- আমার ক্ষুধা পেয়েছে, আমার ক্ষুধা পেয়েছে। তখন পাশের রুম থেকে কয়েকটা কর্কশ গলার আওয়াজ ভেসে আসে আমার কানে।
এতো খাই-খাই করেন ক্যান ! ডাক্তার বলছে না দিনে একবার খেতে ! বেডের মধ্যে এতো পায়খানা-প্রস্রাব কে ধুয়ে দিবে শুনি !
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:১৩