somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটগল্প: ভুলোমন

১৮ ই জুন, ২০১৮ দুপুর ১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমার এই একটাই সমস্যা। মানুষের নাম ভুইল্লা যাই !

পৃথিবীর কোন দেশের উপর দিয়া কোন অক্ষাংশ রেখা চইলা গেছে, আফ্রিকার জঙ্গলে সবচেয়ে বিষাক্ত পিঁপড়ার নাম কি, এমনকি কোন দেশের জনসংখ্যা কত, মহিলা কত, পুরুষ কত, সবই থাকে আমার নখদর্পনে। অর্থাৎ নখ কামড়াইলেই সব মনে পইড়া যায়!

কিন্তু ঐ একটাই সমস্যা।
মানুষের নাম ভুইল্লা যাই !

একবার ভাইবা বোর্ডে আমারে প্রশ্ন করলো, আইচ্ছা বলেন তো দেখি উগান্ডার প্রেসিডেন্টের রান্নাঘরে কতজনের জন্য রান্না করা হয় ?
আমি একটু মুড নিয়া এবং চালাকি কইরা উত্তর দিয়া দিলাম। সকালে ৩৮ জন, দুপুরে ৩৭ জন, রাতে ৪২ জন।
বোর্ডের লোকেরা একে অন্যের দিকে তাকাই থাকে। বুঝলাম তারাও ধাঁধায় পইড়া গেছে। এবার আমারে বলে, হা হা.. এইটাতো কোন প্রশ্নই ছিল না। এইটা একটা ট্রায়াল কোয়েশ্চন। আপনারে এমনেই জিজ্ঞেস করছি। মজা লইছি !

আচ্ছা এবার বলেন, বাংলাদেশের ১৫তম রাষ্ট্রপতির নাম কী ?
বুঝলাম তারা আমার দুর্বল জায়গায় টুনকা মারছে। আমি হাত কচলানি শুরু করলাম। নাকের গোড়ায় বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা দিতাছে। এ্যা এ্যা এ্যা....
পাশেরজন মারলো একটা ধমক। যান মিয়া... খালি এ্যা এ্যা করতেছেন। রাষ্ট্রপতির নাম জানেন না আইছেন চাকরি করতে !

আমি মাথা নিচু কইরা ভাইবা বোর্ড থাইক্কা বাইর হইলাম। আপনারা হয়তো ভাবছেন এই অফিসে আমার চাকরি হয়নি ! কিন্তু না। আপনাদের ধারনা ভুল। একদিন মাথা উঁচু কইরা এই চাকরিতেই জয়েন করছি আমি ।

এবার আরেকটা ঘটনা বলি।

গাড়ি মিস করায় শ্বশুরবাড়ি যাইতে সন্ধ্যা হইয়া গেল। প্রচন্ড ঝড়-তুফান চলতেছে। বিদ্যুৎ উধাও। বাস থেকে নাইমা রিক্সাতে উঠলাম। ড্রাইভার কইলো, স্যার কই যাইবেন ? কইলাম, নিদনপুর। 'আইচ্ছা' কইয়া ড্রাইভার তুফান বেগে রিক্সার প্যাডেল মারা শুরু করলো।
সিগারেটের আয়ু অর্ধেক থাকতেই নিদনপুর গ্রামে ঢুইক্কা গেলাম। পুরা গ্রাম আন্ধাইরে গিজগিজ করতেছে। গ্রামের রাস্তাঘাট দেখা তো দূরে থাক, হাত বাড়াইলে নিজের হাতও দেখা যায় না। ড্রাইভার কইলো, স্যার, আপনে কি রিক্সায় বইসা আছেন। আমি 'হুম' কইরা একটা শব্দ করলাম। পরে ড্রাইভার কইলো, পিছন ফিইরা আপনারে দেখি নাইতো স্যার, তাই কইলাম।

ড্রাইভারকে দোষলাম না। দোষ আমারই। এমন আন্ধাইর রাতে কুইচ্চার মতো কুচকুচে কালাইয়া এই আমি গায়ে দিছি নীল রংয়ের ফুলহাতার শার্ট। আমারে না দেখারই কথা !

স্যার, আমরা নিদনপুর গ্রামে তো আইয়া পড়লাম। আপনি কার বাড়ি যাইবেন ?

আমার এ্যা এ্যা শব্দ শুরু হইয়া গেল।

তাড়াতাড়ি কন, তাড়াতাড়ি কন স্যার !

বউরে দিলাম ফোন।
- আইচ্ছা, কও তো দেখি তোমাদের বাড়ির দক্ষিণ দিকের বাড়িটার নাম কি ?
- দক্ষিণবাড়ি !
- আরে, বাড়ির মালিকের একটা নাম আছে না !

বউ চিল্লাই উঠলো।
-তুমি যাবা তোমার শ্বশুরবাড়িতে। দক্ষিণবাড়ির মালিকের নাম জাইন্না লাভ কি তোমার !
-তাইলে পূবেরবাড়ির মালিকের নামটা কও।
-এই, কী হইছে তোমার। কী আবুল তাবুল বকতাছ। তোমার মাথা কি নষ্ট হইয়া গেছে। তুমি শ্বশুরবাড়ি গিয়া আউলাই গেছো নাকি ?

ওপাশে চিৎকার শুরু করে বউ। যেন মোবাইলটা ফাটাইদিতাছে। পরে টাস কইরা লাইনটা কাইট্টা দেয়। ভাবছিলাম দক্ষিণবাড়ির মালিকের নামটা জানলে ড্রাইভাররে কইমু এই বাড়ির ধারেকাছে লইয়া যাইতে ! তা আর হইলো না ।

হঠাৎ মাথায় নতুন একটা বুদ্ধি উঁকি দিল।
আমার পাশ দিয়ে যাওয়া একটা লোকরে দাঁড় করাইয়া কইলাম, ভাই, এই গ্রামে কিছুদিন আগে ধরাধরপুর গ্রামের একটা ছেলে বিয়া করছে। আপনি কি কইতে পারবেন সেই বাড়িটা কোনটা ?
- ধুর মিয়া কী যা-তা কইতাছেন। কোন বাড়িতে কে বিয়া করছে আমি তা ক্যামনে কইমু... যান মিয়া, যান.. ভাগেন।

রিক্সাড্রাইভার কইলো..
আপনার মতো এক পাগলের কাছে কোন দূর্ভাগা তার মেয়েরে বিয়া দিলো। আপনি শ্বশুরের নাম জানেন না। নামেন, নামেন। আমার রিক্সা থাইক্কা নামেন !

ড্রাইভার আমারে নামাইয়া গলা ফাটাইয়া চিল্লাইতেছে... শ্বশুরের নাম জানেনা.. বেয়াক্কলের ঘরে বেয়াক্কল।
লাজে-ভয়ে আমার কাপড় ভেজার মতো অবস্থা !

আন্ধাইর রাতে কাকভেজা হইয়া গাছের নিচে দাঁড়াই আছি। বুকটা ধড়পড় করতাছে। ভগবান, এবারের মতো মাফ কইরা দেও আমারে। শ্বশুরের নামটা মনে কইরা দেও ভগবান !

হঠাৎ দূর থাইক্কা একটা বিরহী গানের সুর আমার কানে ভাইসা আইলো।

নিশি ভোর হইয়া যায়,
কোথায় ছিলে প্রাণবন্ধু বলগো আমায়।

প্রাণটা আমার জুড়াই গেল। কিছু একটা আবিষ্কারের আনন্দে মনটা ছলাত ছলাত কইরা উঠল তখন। বুঝলাম সৃষ্টিকর্তা কাউরে সহজে বিপদে ফালায় না।
একটা দোকানে গিয়া জিজ্ঞাস করলাম-

ভাই, নিশিকান্ত বাবুর বাড়িটা কোনদিকে কইতে পারবেন !

লোকটা তর্জনীর ইশারায় দেখাইলো, ঐ যে দেখা যায় নিশিকান্ত বাবুর বাড়ি !

ছবি: গুগল

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০১৮ দুপুর ১:২৮
২০টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×