somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

পদাতিক চৌধুরি
আমি আমার নিরক্ষর কিন্তু বুদ্ধিমতী মায়ের কাছ থেকে এই শিক্ষাই পেয়েছিলাম,যথাযথ কর্তব্য পালন করেই উপযুক্ত অধিকার আদায় করা সম্ভব। - মহাত্মা গান্ধী

অলিভ রিডলে বীচ (শেষ পর্ব)

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



উড়িষ্যার গজ্ঞাম জেলায় অবস্থিত চিল্কার ঋষিকুল্যাকে ভারতের অলিভ রীডলে বীচ বলা হয় । পূর্ববর্তী পোষ্টে আমি সেকথা আলোচনা করেছি। আমি আগের পোষ্টে কিছু দুর্লভ ছবিও দিয়েছি। কিন্তু বলতে বাধ্য হচ্ছি, ঐ রকম ছবি তোলা বা প্রকাশ করাটা রীতিমতো আইন বিরোধী। সঙ্গত কারনে আজ সামান্য দুএকটি ছবি দিতে বাধ্য হবো ।



ঋষিকুল্যাতে অলিভ রীডলেরা বছরে মাত্র প্রায় এক সপ্তাহের জন্য ফেব্রুয়ারীর শেষ থেকে মার্চের শুরুতে ডিম পাড়তে আসে।সংখ্যাটা প্রায় দু/ আড়াই লক্ষ। একএকদিন রাতে সাধারনত ত্রিশ/ চল্লিশ হাজার রীডলে ডিমপাড়ে।ডিমপাড়ার পরের দিনই ভোর বেলা ওরা সমুদ্রে চলে যায়।এখন ভারত সরকারের সঙ্গে উড়িষ্যা সরকারও অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে ওদের রক্ষনাবেক্ষন করছে । সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতায় আছে স্থানীয় কিছু NGO । যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল,Orrissa Marine Resources Conversation Consortium এবং Rushikulya Sea Turtle Protection Committee যারা বীচে সর্বদা তীক্ষ্ণ নজরদারী করে অতিথীদের পর্যটকদের উপদ্রব থেকে রক্ষা করছে।

প্রসংগত উল্লেখ্য বর্তমানে টার্টলদের যেভাবে সামুদ্রিক প্রাণী সংরক্ষণের আওতায় এনে নিরাপদে বংশবৃদ্ধিতে সহায়তা করানো হচ্ছে,সেটা কিন্তু একদিনে এত মসৃণ হয়নি।এ প্রসঙ্গে একটি মজার ঘটনা বলতেই হয়।

১৯৯৪ সালে ঋষিকুল্যা নদীর মোহনায় ড.পান্ডের নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী আসেন টার্টেলের ডিমপ্রসব দেখতে। নেহাত কৌতুহল বশত সেদিন রবীন্দ্রনাথ সাহু নামে স্থানীয় এক যুবক এই বিজ্ঞানীদের গাইডের ভূমিকা নিয়েছিলেন।এক সঙ্গে প্রায় ত্রিশ /পঁয়ত্রিশ হাজার টার্টলকে উপকুলে দেখে সেদিন রাতে স্তম্ভিত হয়ে যান ড.পান্ডে।তিনি রবীন্দ্রনাথ সাহুকে টার্টলদের সংরক্ষনের প্রয়োজনীয়তা বোঝান।অর্থাৎ ড.পান্ডের কাছে পাঠ নিয়ে রবীন্দ্রনাথ বা রবি ভাই টার্টল সংরক্ষনে নেমে পড়েন।



রবি ভাই নুতন কাজে নেমে পড়লে, তার গ্রাম পুরানবাঁধ তো বটেই আশেপাশের গ্রামের লোকেরাও তাকে প্রাণে মারার ষড়যন্ত্র করে।আর করবে নাই বা কেন? যে গ্রামবাসীরা এতদিন টার্টলের ডিম খেয়ে আসছে বা বিক্রি করে আসছে,তাদের হঠাৎ করে একাজটি বন্ধ করতে বললে , তারা ছাড়বে কেন? কিন্তু শত বাঁধাতেও রবিভাই পিছিয়ে আসেননি। স্থানীয় কয়েকজন যুবককে সঙ্গে নিয়ে তিনি পাল্টা টার্টল সংরক্ষণের প্রচারে নেমে পড়লেন।তিনি হিন্দু মাইথোলজির প্রসঙ্গ টানলেন, বিষ্ঞুর দশাবতারের একটি বাহন হল কুর্মা। কাজেই তার দেখা মানে সাক্ষাত ভগবানের দর্শনলাভ।ক্রমশ তার যুক্তি গ্রাহ্য হতে লাগলো।নিজের গ্রামতো বটেই,প্রতিবেশী গ্রাম পুদমপেটা ও গোঘরকুটাতেও টার্টলের আগমনকে অতিথী বিষ্ঞুর আগমন হিসাবে দেখা হতে লাগলো।দিন বদলাতে থাকলো, রবিভাই একই সঙ্গে একাকায় জনপ্রিয়তা পেতে লাগলেন।এলাকায় তার নুতন নাম হল,টার্টল ম্যান 'নামে।

সাধারনত নভেম্বর মাসে এই অলিভ রীডলেরা সঙ্গমে মিলিত হয়।ফেব্রুয়ারীর শেষ বা মার্চের শুরুতে তারা ডিম পাড়ে । ৪৫/৫৫ দিনের মাথায় ডিম ফুটে ছোট্ট টার্টল বার হয়। উল্লেখ্য আমাদের সভ্য সমাজে জন্মদিন পালনের মত তাদেরও জন্মদিন পালন করা হয়। প্রতিবছর ২৩ মে বিশ্ব টার্টল দিবস পানলের মাধ্যমে ঋষিকুল্যার মোহনার গ্রামগুলিতে ধুমধাম করে জন্মদিন সেলিব্রেট করা হয়।

কতগুলি বিদেশি পাখি এই ছোট্ট টার্টলদের জন্মের সময় উপকুলে আসে,একটু খাবারের আশায়।





ছবিগুলির সহায়তায় বন্ধু তপন সাহা ও নেটের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই।

পোষ্টটি শ্রদ্ধেয় খায়রুল স্যারকে উৎসর্গ করলাম।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৭:০৫
২৮টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×