somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বোরখা সমাচার

০৪ ঠা জুলাই, ২০০৮ রাত ১০:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্যবসা করিবার মহান পরিকল্পনা মাথায় লইয়া চাকরী ছাড়িয়া কেবল ঘরে আসিয়া গ্যাঁট হইয়া বসিয়াছি। ব্যবসা মানে যদিও ব্যক্তিগতভাবে মক্কেলদিগের সফটওয়ার কিংবা ওয়েব সাইট তৈরী করিয়া দেয়া, তথাপি দিনের বেশিরভাগ সময় একতলায় আমাদের কম্পিউটার ক্লাবে বসিয়া ব্যবসার নামে বন্ধুদের লইয়া আড্ডায় দিন পার করাই আমার প্রধান কর্ম হইয়া দাড়াইল। তবে ক্লাবে শুধু আড্ডা বা কম্পিউটার গেমই খেলা হইত না, পাশাপাশি কিছু শিক্ষক রাখিয়া কম্পিউটার কোচিংয়েরও ব্যবস্থা রাখিয়াছিলাম এলাকাবাসীর কম্পিউটারজ্ঞান উন্নত করিবার নিমিত্তে।

তো সেইদিন একা একাই ক্লাবের অফিসরুমে বসিয়া মাছি তাড়াইতেছিলাম। এমন সময় পাশের বাসার পুঁচকে ছোঁড়া জুয়েল আসিয়া গুলগুলা চেহারা লইয়া উঁকি দিলো। উহার ফাজিল ফাজিল ভাব দেখিয়াই নিশ্চিত হইয়া গেলাম যে এই ত্যাদোঁড় এখন কম্পিউটারে গেম খেলিবার জন্যে আমাকে ফুসলাইবার চেষ্টা তদবির করিবে। অতএব আমিও ভাব ধরিয়া একটু ঘুরিয়া বসিলাম। হেহ হে, কম্পিউটার খেলিবা ভাল কথা, তাই বলিয়া চাহিবামাত্রই টুপ করিয়া হাতে আসিয়া পড়িবে এখনও ইহা এতোটা সহজলভ্য হয় নাই। কিন্তু ছোকড়া আসিয়া কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার যুক্তিজ্ঞানকে তুচ্ছ প্রমানিত করিয়া দিয়া আরজি পেশ করিল যে, তাহাদের এক এলাকাবাসী খালা আসিয়াছেন তাহাদের বাসায় বেড়াইতে। তো এই খালা নাকি তাহার কন্যাকে আমাদের ক্লাবে কম্পিউটার কোচিংয়ে ভর্তি করাইতে আগ্রহী। এবং এই ব্যপারে তিনি ক্লাবে আসিয়া আমার সহিত বিস্তারিত আলাপ করিতে চান। আহা! নতুন মক্কেলের আগমন!! কি সৌভাগ্য কি সৌভাগ্য!!! এইবার আমি নিজে গুলগুলা হইয়া চেয়ারে পিঠ সোজা করিয়া বসিলাম। বলিলাম, শিঘ্রই খালাকে ক্লাবে লইয়া আস।

জুয়েল নিষ্ক্রান্ত হইয়া যাইতেই আমি ত্বরিত্ চেয়ার-টেবিল ঝারপোছ করিয়া ঠিক করিয়া সাজাইলাম। অতঃপর চেহারার মধ্যে বেশ প্রফেশনাল ব্যবসায়ীর একখানা ভাব ফুটাইয়া তুলিবার চেষ্টা করিতে করিতে খালার আগমনের অপেক্ষা করিতে লাগিলাম।

কিছুক্ষণের মধ্যেই জুয়েলের পিছনে পিছনে খালা আগমন করিলেন। আপাদমস্তক খয়েরী বোরখা এবং নেকাবে আবৃত বেশ হৃষ্টপুষ্ট গোলগাল সাইজের এক মহিলাকে খালা হিসাবে আবিষ্কার করিয়া আমিও সশ্রদ্ধ ভঙ্গিতে দাড়াইয়া সালাম দিয়া উঁনাকে ক্লাবে স্বাগতম জানাইলাম। খালা ইশারায় সালামের উত্তর দিয়া জ্বলজ্বলে চক্ষু লইয়া হেলিয়া দুলিয়া আসিয়া চেয়ারে বসিলেন। আমি যখন জানিতে চাহিলাম যে উঁনি তাহার কন্যাকে এইখানে ভর্তি করাইতে আগ্রহী কিনা, উঁনি কেবল 'হু' করিয়া একখানা শব্দের সহিত মাথা ঝাকাইয়া সায় দিলেন। আমি বুঝিলাম, বড়ই পরদানশীল মহিলা, তাই আমার ন্যায় পরপুরুষের সহিত কথা বলিতেও তিনি লজ্জা বোধ করিতেছেন বোধ হয়। অতএব আমি একাই বকবক করিয়া আমাদের ক্লাবের বহুবিধ কম্পিউটার কোর্স এবং উহাদের গুনাগুন বৃত্তান্ত করিতে লাগিলাম। খালা কেবল মাথা ঝাকাইয়া সায় দেন আর তাহার সহিত হু হা করিয়া শব্দ করেন। লেকচার প্রদান করিতে করিতে খালার চোখের দিকে তাকাইয়া কি যেন একটা মনে পরি পরি করিয়াও পরিতেছিল না।

যাই হোক, অতকিছুতে মনযোগ দেয়ার সময় কোথায়! বরং কম্পিউটার এবং আমাদের কর্মকান্ডের উপরে বহুবিধ জ্বালাময়ী বক্তব্য রাখিবার পরে আমি যখন পুরাপুরি নিশ্চিত হইয়া গেলাম যে মক্কেল বাগাইয়া ফেলিয়াছি, তখন খালাকে জিজ্ঞাসা করিলাম আমাদের বিশিষ্ট কোর্সগুলার ঠিক কোনটাতে তিনি তাহার কন্যাকে ভর্তি করাইতে চান। এতক্ষণ খালা চুপচাপ আমার লেকচারে মনোনিবেশ করিবার চেষ্টা করিতে থাকিলেও এইবার তিনি আর আপনাকে সামলাইতে পারিলেন না। হাসির দমকে কাপিতে কাপিতে তিনি বোরখার অবগুন্ঠন খুলিয়া ফেলিলেন। জুয়েল তো হাসিতে হাসিতে মাটিতেই গড়াগড়ি খাইতে লাগিল। আমি ঠাশকি খাইয়া হা করিয়া কিছুক্ষন ফ্যালফ্যাল নয়নে খালার(!) দিকে তাকাইয়া থাকিলাম। অতঃপর মস্তিষ্ক সচল হইতে আমিও তাহাদের সহিত দমকা হাসির হুল্লোরে যোগদান করিয়া হাসিতে হাসিতে চক্ষু দিয়া পানি পর্যন্ত নিঃস্বরিত করিয়া ফেলিলাম। আয়হায়, শেষমেশ এও ছিল আমার কপালে!?!

কিসের কোর্স, কিসের কি! ক্লাবে তালা ঝুলাইয়া আমরা তিনজন হাসিতে হাসিতেই জুয়েলদের বাসায় গিয়া হাজির হইলাম। সেইখানে অপেক্ষারত জুয়েলের মা এবং ভাই-বোন সকলেই অপারেশন সাকসেসফুল হইয়াছে শুনিয়া হাসিতে গড়াগড়ি যাইতে লাগিল। আমিও নিজের বোকামীর কথা ভাবিতে ভাবিতে তাহাদের সহিত তাল মিলাইয়া হাসিতে লাগিলাম। শত হইলেও নিজের মাতৃদেবীকে অপরিচিত খালা ভাবিয়া পনের মিনিট লেকচার দিয়া ফেলিয়াছি, এমন ঘটনা তো জীবনে বারবার ঘটিবে না!

পর্দার আড়ালের ঘটনা হইতেছে এই রকম। আমার মাতৃদেবী জুয়েলদের বাসায় বেড়াইতে গিয়া তাহার আম্মার কেনা নতুন বোরখাখানা দেখিতে দেখিতে সখ করিয়া পরিধান করিয়াছিলেন। অতঃপর আয়নার সামনে দাড়াইয়া যখন তিনি নিজেকে দেখিয়াই আর চিনিতে পারিলেন না, তখনই আমাকে বিভ্রান্ত করিবার এই কূটবুদ্ধিখানা উঁনার মস্তিষ্কে উদ্ভাসিত হইল। (ইহা নিশ্চিত যে আমার মস্তিষ্কের দুষ্টবুদ্ধিগুলার ৫০ ভাগই আমার মাতৃজননীর কাছ হইতে আমদানীকৃত)। কিছুক্ষণের মধ্যেই করণীয় ঠিক করিয়া তিনি জুয়েলকে ক্লাবে পাঠাইয়া দিলেন। এবং পরবর্তী ঘটনা তো ইতিপূর্বেই আপনারা অবগত হইয়াছেন।

তবে ইহাই আমার বোরখা বিড়ম্বনার একমাত্র ঘটনা নহে। একদিন বাসা হইতে নিষ্ক্রান্ত হইয়া আমি হাটিয়া কোথায় যেন যাইতেছিলাম। উল্টা দিক হইতে দেখি নকশাকরা বোরখা পরিহিতা ছিপছিপে তন্বী এক তরুনী বান্ধবীদের লইয়া এইদিকেই হাটিয়া আসিতেছে। বোরখার আড়াল হইতে তাহার নেত্রদ্বয় যতটুকু দেখিতে পাইলাম তাহাতে নিশ্চিত যে কন্যা বেশ সুশ্রীই হইবে। সাধারণতঃ রাস্তায় কন্যাদের মুখোমুখি হইলে যা হয়, আমি আড়ষ্ট হইয়া রাস্তার উল্টাপাশে চলিয়া গেলাম। কন্যাকে পার হইবার সময় আঁড়চোখে তাকাইয়া দেখি যে কন্যাও সেই তখন হইতে আমার দিকেই দৃষ্টি নিবদ্ধ করিয়া আছে। আমিও তাহাকে না দেখিবার ভান করিয়া হাটার গতি আরও বাড়াইয়া দিলাম। কিন্তু তাহাকে পার হইয়া যাইতে না যাইতেই এইবার কন্যা ঘুরিয়া দাড়াইয়া আমাকে ডাকিতে লাগিল, "এই মাজু (মেজো ভাই), কোথায় যাইতেছ? আমাকে দেখিয়াও যে কিছু না বলিয়া চলিয়া যাও?!" আয়হায়, তরুনী কোথায়, এ যে দেখি আমার ক্লাস ফাইভে পড়ুয়া আপন বোন!! আমি চরম লজ্জা পাইয়া ভ্যাবলার মতো আমতা আমতা করিতে লাগিলাম, আর তাহার সঙ্গী বান্ধবীরা তো হাসিতে হাসিতেই খুন।

অতএব বৎসগন, বুঝিতেই পারিতেছেন, বোরখার প্রতি এরপর হইতে আমার যদি কিছুটা দূর্বলতা সৃষ্টি হইয়াই থাকে (যেহেতু নিয়মিতই ইহা আমাকে দূর্বল অবস্থানে ফেলিয়া দেয়), ইহাতে অবাক হইবার কিছু নাই। বোরখা দেখিলেই তাই আমার মনযোগ বৃদ্ধি পাইয়া যায়, এবং তাহার আড়ালের মানুষটাকে ভালমতো বুঝিবার জন্যে সমস্ত চিন্তাভাবনা তাহাকে কেন্দ্র করিয়াই সন্বিবেশিত হইতে থাকে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০০৮ দুপুর ১২:৩৮
৯টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×