আমার তখন সাত কি আট বছর বয়স। গ্রাম থেকে অনেক দূরে বড় বোনের শ্বশুরবাড়ী গিয়েছিলাম। মা বাবা আর আমি। খুব বেশি কিছু মনে নাই। মনে আছে রাতের বেলা ওখানেই ছিলাম। খুব সকালে বাবা আমাকে নিয়ে হাটতে বের হল। প্রায় ঘন্টা দেড়েক গ্রামের রাস্তায় হাঁটার পর আমরা একটা বড় দীঘির পাড়ে এসে পৌঁছালাম। দীঘির পাড়টা অনেক উচু, রাস্তা থেকে উপরের দিকে উঠতে হয়। সেখানে কোন একটা কর্ণারে নিয়ে আব্বা দেখালো, এইদিকে তার মায়ের কবর, মানে আমার দাদীর কবর, কোন সীমানা নাই, আনুমানিকভাবে বলা।
আমার দাদী মারা গিয়েছিল অল্প বয়সে, যখন আমার আব্বার ৭ বছর বয়স। জিজ্ঞাসা করলাম আমাদের গ্রাম থাকতে এত দূরে এনে কবর দেওয়া হল কেন? পরে যা শুনলাম, সেটা ভয়াবহ। ঐ সময় ১৯৪০ সালের দিকে গ্রামে অনেক বড় বন্যা হয়েছিল। অনেকদিন ধরে পানিবন্দি সবাই। দাদী মারা যাওয়ার পর কবর দেওয়ার কোন জায়গা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। তাই নৌকায় করে ডেডবডি এত দূরে এনে কবর দেওয়া হয়েছিল। আমার ইচ্ছে আছে, পরে যদি কোনদিন সুযোগ হয়, দাদীর কবরটা আারেকবার দেখে আসবো।
আব্বাও মারা গিয়েছেন প্রায় ১০ বছর হতে চলল। আব্বাকে কবর দেওয়া হয়েছে আমাদের পারিবারিক কবরস্থানেই। কিন্তু ঈদে একদিন ছাড়া হয়ত আর গ্রামে যাওয়া হয় না। শেষবার গত বছর ডিসেম্বরের দিকে গ্রামে গেলাম, শুধু বাবার কবর দেখার জন্য। সাথে নিয়ে গেলাম তিন বছরের ছেলেকে। সে হয়ত কবর কি জিনিস কিছুই বুঝতে পারে নাই। তারপরও আমার পাশে তাকে দাড়িয়ে রাখলাম ৩-৪ মিনিট। ছেলেকে তার দাদার কবর দেখালাম। একদিন তো সবাইকেই এখানে যেতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০১৬ সকাল ৯:২৭