somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

IBA Method ফলো করুন, শিক্ষাঙ্গন একদিনে ঠিক হয়ে যাবে। গ্যারান্টি!!

১৮ ই মার্চ, ২০০৯ রাত ১০:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিশ্বাস হয় না? তাহলে আসুন বুঝিয়ে বলি-

HSC পরবর্তি ভর্তি পরীক্ষার মধ্যদিয়েই বর্তমানে বিদ্যমান সিস্টেমে ছাত্রজীবনের একধরনের অবসান ঘটে। হাতে গোনা কিছু 'বোকা' ছাড়া সারাবছর কেউই টেবিলে বসেনা। যেহেতু মেধা রয়েছেই, ফাইনাল পরীক্ষার আগে একটু ঝালাই আর দেদারসে চাপা ঝাড়লে সেকেন্ড ক্লাস ঠেকায় কে? কিছু 'তুকতাক' জানলে ফাস্টক্লাশ ও আহামরি কঠিন কিছু না। ভিন্নতা আছে, তবে মোটা দাগে এ হচ্চে আমাদের Tertiary level এর শিক্ষার হাল। কলা, আইন ও সমাজ বিজ্ঞান ফ্যাকাল্টি তে অবস্থা এই, বাণিজ্য, বি্জ্ঞান বা প্রকৌশলে আরেকটু বেটার। মেডিক্যালের দু' বছরান্তে পরীক্ষা নেয়ার রীতি সেটাকেও দর্শন বিভাগ বানিয়েছে!

ফলে ক্লাশ, বই, এসাইনমেন্ট, কুইজ, টার্ম পেপার, মিড, ফাইনাল ইত্যাদির অহর্নিশি যাতনা নয় বরং মাথার মধ্যে বাসা বাধেঁ সিট, ভালো সিট, চা দোকান, টিভি রুম, আড্ডা, টিউশনি, একটি যেন তেন হলেও প্রেম, সংস্কৃতি ইত্যাদির ঢাল বেয়ে মিছিল, মিটিং, রাংগা চোখ, চাপাতি এবং সিকি, আধুলি বা পুরুপুরি রাজাধিরাজ। এ বনের। এ হলের। এ কাহিনী আমাদের এতটাই সুপরিচিত যে ভাব সম্প্রসারন অবান্তর।

'৭৫% ক্লাশে হাজির না হলে জরিমানা ও ৬০% এর নীচে নামলে পরীক্ষা দেয়ার অযোগ্য' এ ধরনের একটি ভোতা আইন, তদস্থিত নানাবিধ ফাঁকফোকর ও নেহায়েৎ বলদ কিছিমের টিচারের বোরিং লেকচার শিক্ষার্থীকে ক্লাশে না আনার সব ব্যবস্থাই পাকাপোক্ত করে রেখেছে! পোলাপাইন যে আসে, তা তাদের দয়া বা আড্ডা মারার রাইট ভেন্যু- এটাই হয়ত কারন।
আসুন এসেসমেন্ট নিয়ে কথা বলি। এক কি বড়জোর দুটি এক্সামে কারবার ফিনিশ। সারাবছর টাংকি মেরেও ঐগুলোতে পার পাওয়া কোন ব্যাপার না। কারন প্রশ্ন ঘুরে ফিরে একই এবং একই ফরম্যাটের। এবং পরীক্ষার আগে অদ্ভুৎ একটি পি এল দেয়া হয়। ইন কোর্স বা এসাইনমেন্ট নামে কিছু মধ্যর্বতী মুল্যায়ন চালু হলেও সামগ্রিক 'পচন' কে রক্ষার জন্য তা যথেস্ট নয়। তবে রেসপন্স ভাল। সুতরাং 'হোল সেল' কন্টিনিউয়াস বা আমেরিকান বা IBA style follow করলে যে ধবংসপ্রায় ক্যাম্পাস গুলো আবার জেগে উঠবে, একদা এখানে খুন খারাবি হইত বলে ইতিহাস চর্চা করা হবে তা হলপ করে বলা যায়।

এবার বলি- IBA র সিস্টেম টা কি? ১৯৬৬ সাল থেকে দীর্ঘ ৪৩ বছর ধরে সামান্যও দাগ ছাড়া কেমনে এইটা রান করছে? কি এমন যাদু? আসলে বড় কোন যাদু নাই। সিস্টেমটাও পুরানো। ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি থেকে কপি করা। টিচারগুলাও যথারীতি.....।

BBA/MBA program এ যথাক্রমে ৪০/২০ টি কোর্স। প্রতি টার্মএ ৫টি। কতৃপক্ষ ৫টি কোর্স ও ৫ জন শিক্ষকের নাম নোটিশবোর্ডে ঝুলিয়ে খালাস। সিলেবাস, ক্লাশ, পরীক্ষা, মুল্যায়নের দায়দায়িত্ব উক্ত টিচারের। টার্ম শেষে তিনি ছাত্রের নাম ও প্রাপ্ত লেটার গ্রেড (A, B+, B, C+, C, D+, D, F, I stands for grade point 4, 3.5, 3, 2.5, 2.0, 1.5, 1.0, Fail, Incomplete) আবার একই ভাবে বোর্ডে ঝুলিয়ে দিবেন। গড়ে ছাত্রটিকে ২.৫ পেতে হবে (২.০ হলে প্রবেশনারী আউট যাহা পরবতী টার্ম এ স্থায়ী হবে যদি না ইতোমধ্যে তা ২.৫ এর জিরো লাইন পার না হয়), নচেৎ আউট। আবার কোন একটি কোর্সে পরপর দুবার F পেলে ও আউট। সবগুলো কোর্স শেষে একটি Comprehensive exam (major arena) and Internship। মামলা খুব সিম্পল। শুধু টিচারকে ম্যানেজ করলেই হল! আসুন 'ম্যানেজ' নিয়ে একটু আলাপ করি।

প্রথম ক্লাশেই আপনি বুঝে যাবেন 'কি করিলে কি হইবে।' ১-৪ পাতার একটা 'কর্মপদ্বতি" প্রায় সবাঈ দেন। এতে পাঠ্যবই, লেকচার টাইটেল, মুল্যায়ন নিয়ে মোটামুটি ধারনা দেয়া থাকে। তবে বিষয়টা অহি জাতীয় কিছু নয়। যেকোন সময় শিক্ষক পরিবর্তন করতে পারেন। মূল্যায়ন ভাগটা সবচেয়ে ফ্যানটাস্টিক! বিরাট আকারের কোন ফাইনাল পরীক্ষা গোছের কিছু সেখানে নেই। বরং প্রতিদিনই আমলনামা ভারী হতে থাকে। ফলে 'এখন বটতলায় থাকি, ফাইনালের আগে ডোরলক টান দিমুনে' জাতীয় চিন্তা করার কোন স্কোপ নেই। সাধারনত: Quiz (noticed and surprised) 10-20%, Assignment 10-20%, Term paper 10-25%, Mid Term 20-25%, Final 20-25% ধরনের বিন্যাসই কমনলি দেখা যায়। আর প্রাপ্ত স্কোরে ফিক্সড কততে এ গ্রেড হবে সেটাও আপেক্ষিক। এভাবে ৫ জন ফ্যাকাল্টি সমানতালে ছাত্রদের ধাওয়া করতে থাকে। মাঝখানে দু একজন ফ্যাকল্টির আবার মস্তিস্কের গঠনপ্রনালী ভিন্ণ থাকা বিচিত্র কিছু না। পেন্সিলে লিখে উত্তরদান, অন্যদের এসাইনমেন্ট স্ক্রুটনী করে দেয়া, একরাতে 'জল গামছার' মার্কেটিং প্লান বানানোসহ জগতের নানান অপরিচিত পাংগা। পরীক্ষাগুলির প্রশ্নের কোন ট্রাডিশন নেই। রচনামুলক, বইখোলা, শুন্যস্থান, টিক চিহ্ন- যেকোনটিই হতে পারে।

যাহোক ৫টি বিষয়ের কোনএকটিতেও সি বা ডি পাইলে যে ক্যারিয়ার শেষ
এটা ক্লিয়ার। বাচাঁর উপায়- লাইনে চলা। বই, ডিসকাস, রিপোর্ট, লাইব্ররী, নীলক্ষেত, ক্লাস, কুইজ- এটাই মগজের টোটাল ইস্যু। আজ কারো কুইজ তো কারো ফাইনাল। কাল কারো প্রেজেনটেশান। বাঁচতে হলে, জানতে হবে। শিবিরের যুদ্ধ, লীগের প্রগতি, দলের ২১দফা, সমাজতন্ত্রের কাস্তের আওয়াজ কানে ঢুকেনা। আর বলা বাহুল্য, আওয়াজ টা দিবে কে? চাচা আপন প্রান বাচা!

এভাবে দিন, টার্ম, বছর শেষে গ্রাজুয়েশন ও ক্যাম্পাস ত্যাগ। নতুন ব্যাচের আগমন। একই চক্র। পুরনো, শান্ত, সুনসান কিন্তু ব্যস্ত IBA. পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এমন হতে পারে, সবকটি মেডিক্যাল, সবকটি ভার্সিটি এমন হতে পারে। খুবই সম্ভব। ইচ্ছাটা করলেই হল।
গুড লাক বাংলাদেশ

পাদটিকা: কেহ ভাইবেননা যে IBA র পোলাপাইন খুব কাটখোট্টা। বরং আয়েস করে শিক্ষকদের গীবত, বিভিন্ন কোম্পানীর গুস্টি উদ্ধার মূলক টক শো, গান, বিতর্ক, পিকনিক, ইন্টারনেট, ক্যান্টিন টাইম, টিউশনি, প্রেম, বয়স্ক চলচ্চিত্র দর্শন সহ নানান কাজে সারাবছরই তারা ব্যস্ত!



সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০০৯ রাত ১০:২৮
২২টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×