somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জমি/প্লট কেনার রীতিনীতি: জানুন, মানুন নয় পানিতে টাকা ঢালুন:((:((

২৮ শে জুলাই, ২০১২ রাত ৯:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


তিনটি বিষয় অতি জরুরী-
১. বিক্রেতার আইনানুগ দখল (যা সরেজমিন তদন্ত করে বুঝতে হয়);
২. ভূমি অফিসের রেকর্ড মোতাবেক মালিকানার স্বচ্ছতা;
৩. রেজিস্ট্রেশন অফিসের রেকর্ড মোতাবেক মালিকানার চেইন দলিল;

আরেকটু খোলাসা করা যাক। বাংলাদেশে জনসংখ্যার যেমন আধিক্য, তেমন জমির আকাল। ফলে এক টুকরা জমি যেন এক টুকরা সোনার খনি। খালেছ বিক্রেতার পরিমাণ খুবই কম কিন্তু নানান খাতে মানুষের আয় বাড়াতে ক্রেতার সংখ্যা অসীম। চাহিদা যোগানের অসাম্যের কারণে জমি-জমা নিয়ে জাল জালিয়তি, প্রতারণা, পারিবারিক ও সামাজিক কলহ, মামলা, মারামারি লেগেই আছে। তারপরও লোকেরা জমি কিনতে চায়। আর অনেক সময়ই না বুঝে রামধরা খায়!

ক. প্রস্তাবিত বিক্রেতাই কি জমির প্রকৃত মালিক?
এটাই মিলিয়ন ডলার কোশ্চেন। নিছক দখল ও মৌখিক দাবি যথেস্ট না। নানানভাবে আপাত: সঠিক মালিকানা দুষিত হতে পারে। যেমন-
-প্রকৃতপক্ষে মালিক হলেও, মালিকানার স্বপক্ষে কাগজপত্র ঘাটতি
-প্রকৃতপক্ষে মালিক কিন্তু সরকারী রেকর্ডে ভুল
-মালিকানার অন্য শরীক (ভাই, ভাস্তে, বোন, ফুফু ইত্যাদি) আছে
-এ মালিক সঠিক কিন্তু পূর্ববর্তী বিক্রেতা ঘাপলা করেছেন
-জমিতে খাস অংশ আছে
-প্রতিবেশীর সাথে সীমানা বিরোধ আছে
-জমি কোন ব্যাংকে বন্ধক
-জমি অলরেডী আরেক জায়গায় বায়না/বেচা/আমমোক্তারনামা হয়ে গেছে
-পুরোপুরি ভুয়া/ জবরদখল। গায়ের জোরে বিক্রি করছেন
-বাপ থাকতে পোলায় জমি বেচে দিচ্ছে

খ. মালিকানার স্বপক্ষে একক বৃহত্তম দলিল কি?
-খুবই ছোট একটা স্লিপ। খাজনা রশিদ বা ল্যান্ড ট্যাক্স রিসিপ্ট। জোত জমির মালিকরা তহশীলদার অফিসে গিয়ে বছরে একবার খাজনা দেন। এ রশিদ তার প্রমাণ। একটি এসি (ল্যান্ড) অফিসের আন্ডারে ১০/১২ টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস থাকে। সেখানে তহশীলদার বসে । বলাবাহুল্য ২০/২৫ টাকার খাজনা গ্রহন করার জন্য ৫০০ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়!:P না হলে ব্যাটা তহশীলদার খাজনা নিতে টালবাহানা করে!!X(( সিটি এলাকায় কর্পোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স রিসিপ্ট মালিকানার বড় দলিল। তবে কুইক এ রিসিপ্টই শেষ কথা না। এটা আসলে ফিনিশিং টোকেন। এটার লেজ ধরে এবার জমির গোড়ায় চলে যান। ২ টি অফিসের কাজকর্মের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের সকল জমিখন্ডের মালিকানা নিয়ন্ত্রিত হয়। ভূমি মন্ত্রনালয় অধীনস্ত থানা পর্যায়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি)র কার্যালয় ভায়া জেলা প্রশাসন ও আইন মন্ত্রনালয়ের অধীনস্ত রেজিস্ট্রেসন অধিদপ্তরের সাব-রেজিস্টার অফিস (সাধারনত থানা পর্যায়ে)। প্রথমোক্ত অফিসটি দুর্নীতিগ্রস্ত তবে সিস্টেমিক কিন্তু পরেরটি চরম দুর্নীতিগ্রস্ত ও জাল দলিল সৃজনে সিদ্ধহস্ত:। সুতরাং বুঝে শুনে আগান।

গ. ভূমি অফিস ঘরানায় কি কি ডকুমেন্ট পাব?
-মৌজা ম্যাপ
-বিএস/ (বা ঢাকায় মহানগর জরিপ) খতিয়ান, না থাকলে জাবেদা নকল
-এস এ খতিয়ান
-আর এস খতিয়ান
-সি এস খতিয়ান

এগুলো সকল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অনলাইনে আবেদন করেই আজকাল পাওয়া যায়! :)

ঘ. যাহোক জেনে নিই- খতিয়ান কি?
জেলা>উপজেলা> মৌজা>দাগ নং। একটি মৌজায় একজন মালিকের ১ বা একাধিক দাগে সকল জমির পরিমানের সনদ হল খতিয়ান। খতিয়ান একটি বালাম বইয়ের পাতার অবিকল নকল। এর সিরিয়াল নং ই হল খতিয়ান নং। লেটেস্ট মৌজা ম্যাপের সাথে আপনার খতিয়ান নিয়ে বসলে সহজেই নিজের জমির আকার আয়তন আন্দাজ করতে পারবেন।

ব্রিটিশ আমলের জনৈক ক্যাডেস্টাল করা জরিপের নামানুসারে সিএস জরিপ ও তারপরের পাকি ও বাংলাদেশ আমলের জরিপের ফলে নতুন দাগ ও খতিয়ান নং সৃজিত হতে পারে। তবে দেখার বিষয় সিএস থেকে বিএস পর্যন্ত মালিকানার যে পরিবর্তন তা যৌক্তিক ও আইন সংগত কিনা? সাধারন বিচারে দাদার জমি ভাগ হতে হতে নাতি পর্যায়ে কমে যাবে। বিক্রয়ের কারনে দাগে জমির পরিমান কমবে। তবে ব্যতিক্রম ক্ষেত্রে একই দাগে ক্রয় ও হেবা (দান) পাওয়ার কারনে জমি বাড়তে পারে। যাই হোক সিএস টু বিএস খতিয়ানে মালিকানারপরিবর্তন গুলোর স্বপক্ষে যথাযথ দলিল (ঘটনা) জানার জন্য যেতে হবে সাবরেজিস্ট্রি অফিসে।

ঙ. সাব-রেজিস্ট্রি অফিস: জমির দলিল বা জীবনবৃত্তান্তের আর্কাইভ
ক্রয়, দান বা বাটোয়ারা -এ তিনভাবে কথিত বিক্রেতা জমির মালিক হতে পারে। আর এ ৩ টি ক্ষেত্রেই যথাযথ দলিল ও তার রেজিস্ট্রেশন মাস্ট। বাপ-চাচার হেবা কিবা ভাই বোনের বাটোয়ারার দলিল না থাকার চান্স হাই। ক্রেতাদের কাজ হল এ ধরনের গর্তে পা না দেয়া। বিক্রেতাকে অনুরোধ করা ফর্মালিটি শেষ করতে। সর্বশেষ দলিলের লেজ ধরে আগালে বায়া দলিল-১, বায়া-২, বায়া-৩ পাওয়া যাবে। এভাবে খতিয়ান সমূহে জমির মালিকানার তালে তালে দলিলসমূহ পরখ করে দেখলেই একখন্ড নির্ভেজাল জমির চিত্র ফুটে উঠবে।

চ. মিউটেশন কি?
-পৃথকীকরন। সকল ঝামেলা শেষে জমির মালিককে সরকারীভাবে মালিকানার ব্যাপারে এক ধরনের ডিক্লারেশন সনদ।

আশা করি সবাই উপকৃত হবেন।
২০টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

আমরা সবাই জানি, ইরানের সাথে ইজরায়েলের সম্পর্ক সাপে নেউলে বললেও কম বলা হবে। ইরান ইজরায়েলকে দুচোখে দেখতে পারেনা, এবং ওর ক্ষমতা থাকলে সে আজই এর অস্তিত্ব বিলীন করে দেয়।
ইজরায়েল ভাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

নগ্ন রাজা কর্তৃক LGBTQ নামক লজ্জা নিবারনকারী গাছের পাতা আবিষ্কার

লিখেছেন মুহাম্মদ মামুনূর রশীদ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪০

LGBTQ কমিউনিটি নিয়ে বা এর নরমালাইজেশনের বিরুদ্ধে শোরগোল যারা তুলছেন, তারা যে হিপোক্রেট নন, তার কি নিশ্চয়তা? কয়েক দশক ধরে গোটা সমাজটাই তো অধঃপতনে। পরিস্থিতি এখন এরকম যে "সর্বাঙ্গে ব্যথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×