পশ্চিমা দেশগুলো যখন শরণার্থীদেরকে ভাগ করে নেওয়ার ঘোষনা দিল।(যদিও এখন অনেকেই তাদের কথা থেকে সরে এসেছে) আমরা তখন অনেকেই হয়ত চোখ কপালে তুলে বলেছি, আহা কি মানবতাবাদী দেখছ!! কানাডা একাই নিবে ২৫০০০ হাজার শরণার্থী! খুবই ভাল খবর তাতে কোন সন্দেহ নাই। সিরিয়াতে IS(আমার মতে পশ্চিমা production) দানবীয় আকার ধারন করেছে! তাকে নির্মূলের জন্য এবং সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য (নাকি সাধারন মানুষ মারার জন্য) সিরিয়াতে আক্রমণ করা হচ্ছে। কিন্তু যত না IS মারা যাচ্ছে তারচেয়ে অনেক গুণ বেশি মারা যাচ্ছে সাধারন মানুষ। এসব মুসলিম দেশগুলোকে জনশূন্য করার পায়তারা ছাড়া আর কিছুই নয়।
ভাওতা বাজি আর কাকে বলে দেখুন, সামরিক পরাশক্তি গুলো সবাই মিলে একটা জঙ্গী গোষ্ঠী মোকাবেলা করার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না! আজব! অথচ ইরাক-আফগানিস্তানেরক মত দেশকে তারা ধ্বংস করে করেছে।
সত্যিই সেকুলাস!
আসলে এসব হল সাম্রাজ্যবাদীদের পুরনো একটা খেলা মাত্র। এই খেলার ফর্মুলা সর্বপ্রথম দিয়েছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর স্যামুয়েল হান্টিংটনের Clash of Civilizations and Remaking of world order নামক বইতে। বইতে তিনি বলেছেন, এক সময় সমাজতন্ত্র বা সোভিয়েত ইউনিয়ন কে পাশ্চাত্যর জন্য হুমকি বা প্রতিদদ্বী হিসেবে ধরা হত। বলাই বহুল্য সমাজতন্ত্র যে দেশে উত্থান হয়েছিল সে দেশেই গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তিনি আরো বলেন, যে সকল উপাদান সভ্যতা গঠনে ভূমিকা রাখে , তার মধ্যে ধর্ম হলো সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যায় বিশ্বের প্রধান সভ্যতাগুলোর সাথে কোন না কোন বৃহৎ ধর্মের সংযোগ রয়েছে।
প্রফেসর হান্টিংটন ইসলাম ও চৈনিক সভ্যতাকে পাশ্চাত্যের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সভ্যতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তাঁর মতে এ দুই সভ্যতা ছাড়া অন্যগুলো পাশ্চাত্য সভ্যতার মধ্যে বিলীন/একীভূত হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে ইসলাম সেই সাড়ে ১৪ শত বছর ধরে পাশ্চত্যের জন্য হুমকি হয়ে আছে।
১৯৯৬ সালে এই ফর্মুলা প্রকাশ হওয়ার পর আমেরিকার সামরিক থিংক টেংক পরিকল্পনা করছিল কিভাবে পাশ্চাত্যের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলাম কে ধ্বংস করা যায়। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সর্বপ্রথম এগিয়ে আসে প্রেসিডেন্ট বুশ। সময় ২০০১ সাল। Twin Towers ধ্বংস করে দোষ চাপানো হয় মুসলমানদের উপর। সেই অজুহাতে ধ্বংস করে দেওয়া হয় আফগানিস্তান। যেখানে নিহত হয় এক হিসাব মতে প্রায় ১৪৯,০০০ জন। একই ভাবে ইরাকে নিহতের সংখ্যা প্রায় ১২০০০০ জন, সিরিয়ায় নিহতের সংখ্যা প্রায় ৩৫০,৭৫৮জন। শরনার্থীর সংখ্যা শুধু সিরিয়াতেই ২৫ লক্ষের উপরে বাকিটা বাদই দিলাম।
আসলে সিরিয়া, আফগানিস্তান বা ইরাক হল তাদের খেলার মাঠ। তালেবান, আলকায়দা, IS হল তাদের খেলার উপকরণ। একই উপকরণ কিন্তু নাম ভিন্ন। একটা দেশ ধ্বংস করার পরিকল্পনা নেওয়ার পর সেখানে প্রথমে উপকরণ হিসেবে জঙ্গিগুষ্ঠি পাঠায়। তখন তারা ঐদেশের জনগনের কছে আবির্ভূত হয় মৃত্যুর বিভীষিকা হিসেবে। আর তখনই খেলোয়াররা শুরু করে আসল খেলা। তাদের পকেট মিডিয়া গুলোতে একযোগে প্রচার হবে ধ্বংসলীলার কথা। আর তখনই শুরু হবে সাম্রাজ্যবাদীদের মায়া কান্না। শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে, শান্তি........।
আমি শান্তি দেখেছি ইরাকে(?) শান্তি দেখেছি আফগানিস্তানে, সিরিয়ায়, ফিলিস্তিনে, শান্তি দেখেছি রুহিঙ্গাদের মাঝে(?) আমি আতঙ্কের প্রহর গুনছি নতুন কোন দেশে শান্তি দেখার অপেক্ষায়।
নিচের ছবিতে লাইনের ঘনত্বের মাধ্যমে সভ্যতাসমূহের সংঘাতপূর্ণ সম্পর্ক ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। লাইন যত বেশী ঘন বা মোটা তত বেশী সংঘাতপ্রবণ। কম সংঘাতপূর্ণ সম্পর্কের ক্ষেত্রে ঘনত্বও কম।
তথ্যসূত্র:
1.Syrian Observatory for Human Rights
2.Wikipedia, the free encyclopedia
3.Google
4.NHCER
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪১