somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সড়ক দুর্ঘটনা মহামারী! আফগানিস্থানের গৃহযুদ্ধের চেয়েও ভয়াবহ!

২৩ শে জুন, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশে ২০১৭ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ৭৩৯৭ জন, আহত হয়েছেন ১৬১৯৩ জন। অন্যদিকে ২০১৭ সালে আফগানিস্থানে যুদ্ধে মোট মৃতের সংখ্যা ৩৪৩৮ জন। আহত ৭০১৫ জন। বাংলাদেশে শুধুমাত্র সড়ক দুর্ঘটনায়ই আহত-নিহতের সংখ্যা যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্থানের দ্বিগুণেরও বেশি।

মানুষের জীবন কত মূল্যহীন। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত (২২-২৩ জুন ২০১৮) মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যেই সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৩৫ জনের! বাংলাদেশের সড়কপথ যেন মৃত্যুপুরী। বাসা থেকে বেরোবেন, কোন নিশ্চয়তা নেই যে আপনি দুর্ঘটনা এড়িয়ে বাড়ী ফিরে আসবেন। প্রতিদিন অসংখ্য দুর্ঘটনা, অসংখ্য মুত্যৃ-যখম। আজ বা কাল যে আপনার পালা নয়, সেটা কেউ বলতে পারে না। তাই মৃত্যু মাথায় নিয়েই ঘর থেকে বের হতে হয় প্রত্যেকটা মানুষকে। কিন্তু এই যে মৃত্যুর মিছিল এটা মোটেও স্বাভাবিক নয়। দুনিয়ার বেশিরভাগ দেশেই সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু একেবারে সীমিত। উন্নত বিশ্বে তো সড়কপথও নিরাপদ। সড়ক দুর্ঘটনা যেমন সীমিত তেমনি সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনাও অনিয়মিত। আর এর মূল কারণ কঠোর সড়ক-পরিবহণ আইন এবং এর যথাযথ বাস্তবায়ন।অন্যদিকে বাংলাদেশের সড়ক-পরিবহন আইন খুবই দুর্বল। সেই দুর্বল আইনও ড্রাইভাররা যেমন মানে না, সরকারও তাদের মানতে বাধ্য করে না। রাজনীতিক-পুলিশ-পরিবহন মালিক-রোড কন্ট্রাকটর মোটামুটি সবাই দুর্নীতিতে আকন্ঠ নিমজ্জিত।তাই প্রতিবছর ঝরে যাচ্ছে হাজারো তাজা প্রাণ!


বাংলাদেশের পরিবহন সেক্টরে মাদকসেবন একেবারেই ওপেনসেক্রেট। পরিবহনের সাথে জড়িত প্রত্যেকটা ব্যক্তিই বিষয়টি জানেন। মন্ত্রী, পুলিশ-প্রসাশন, পরিবহন মালিক-শ্রমিক-কর্মচারী সবাই। আপনার দুরপাল্লার বাসের ড্রাইভার মাদকাশক্ত অবস্থায়ই ড্রাইভিং করছে, আপনার জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে কিন্তু আপনার কিছু করার নেই। দুরপাল্লার ট্রাক ড্রাইভারদের মধ্যে মাদক সেবন করে না বাংলাদেশে এরকম ট্রাক ড্রাইভার নাকি খুঁজেই পাওয়া দুষ্কর। ট্রাক আর বাসে মিলেই বেশিরভাগ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটায়! দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদের আলোকে তৈরি করা বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গেল বছর (২০১৭) ছোট-বড় ৪৯৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে বাস দুর্ঘটনা ১২৪৯টি এবং ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান দুর্ঘটনা ১৬৩৫টি। অধিকাংশ যাত্রীর প্রাণহানিও ঘটে এই বাস-ট্রাক দুর্ঘটনায়। ড্রাইভারদের বেপরোয়া গাড়ী চালানো, অসুস্থ প্রতিযোগীতা, ড্রাইভিং আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করা, পর্যাপ্ত না ঘুমিয়ে গাড়ি চালানো, হেল্পার দিয়ে গাড়ি চালানো ইত্যাদির সাথে যখন মাদকাসক্ততা যুক্ত হয় তখন দুর্ঘটনা না ঘটে আর কোন উপায় থাকে না।

সড়ক দুর্ঘটনার উপর বুয়েটের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, “বাংলাদেশের অনেক সড়ক-মহাসড়ক গাড়ী চলার অনুপযুক্ত, বাঁকগুলি ডেঞ্জারাস।” অনুপযুক্ত রাস্তাই সড়ক দুর্ঘটনার দ্বিতীয় প্রধান কারণ। দুর্নীতিগ্রস্ত ইঞ্জিনায়ার-কন্ট্রাক্টর-সড়ক পরিবহন দপ্তরই এর জন্য দায়ী।

ফিটনেসবিহীন গাড়ী চলছে সর্বত্র। গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট নেই, কোনদিন ছিলও না এমন গাড়িও নিয়মিত ঘুষ দিয়ে রাস্তায় চলে । ফিটনেস তো মালিকের ব্যাপার। আর জনগণের নিরাপত্তা রক্ষার্তেই ফিটনেসবিহীন গাড়ী রাস্তায় যাতে না চলতে পারে তার জন্য সড়ক-পরিবহন আইনের প্রয়োগ করা সরকারের দায়িত্ব। আমাদের ফাটাকেষ্ট মন্ত্রীও দায়বদ্ধতার বাইরে নন।

কিন্তু বাংলাদেশ নামক এই মৃত্যুপুরীতে কে কার কথা শোনে!! কে কোন কথা রাখে?? নেতাদের টেন্ডারবাজী-চাঁদাবাজী আর কন্ট্রাক্টর-ইঞ্জিনিয়ারদের পাশবিক লোভ মিটিয়ে যখন রাস্তাটা তৈরী হয়, তখন সেটা যানবাহন চলাচলের অনুপযুক্ত হতে বাধ্য। এরপর ওই বিপদজ্জনক রাস্তায় পরিবহন মালিকের কারসাজি-দুর্নীতির সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় পুলিশের চাঁদাবাজী, ক্ষমতাসীন দলের নেতা-পাতিনেতাদের চাঁদাবাজী, পরিবহন মালিক-শ্রমিক ইউনিয়নের চাঁদাবাজী, ড্রাইভারের মাদকসেবন ইত্যাদি। এর সব দায় মিটাতে হয় সাধারণ যাত্রীদের। কখনও জীবন দিয়ে, কখনও পঙ্গুত্ব বরণ করে।

শুধামাত্র যদি সড়ক-পরিবহন আইন যেটুকু আছে সেইটুকুও মেনে চলা যেতো, তাহলেই প্রতিবছর হাজার হাজার প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হতো। কিন্তু বাংলাদেশ চলছে উল্টো পথে। টেন্ডারবাজদের টেন্ডারবাজী যেমন বাড়ছে, চাঁদাবাজদের চাঁদাবাজী তেমনই বাড়ছে। রাস্তার আইন না মানার প্রবণতাও যেমন বাড়ছে, সমানতালে সরকারের উন্নয়নের গলাবাজীও বাড়ছে। উন্নয়নের ফিরিস্তি সরকার যতই দিন না কেন বাস্তবতা হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনার হার প্রতিবছর বাড়ছে, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত-নিহতের হারও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। এই মৃত্যুমিছিল কবে শেষ হবে কেউ জানে না। “আল্লার মাল আল্লায় নিছে” এটা প্রকাশ্যে কেউ না বললেও মন্ত্রী-নেতা-চামচিকা সবাই ঠাটে-বাটে পাবলিককে ওরকমই বোঝাতে চাচ্ছে। সড়কে গণমৃত্যুর দায় নিচ্ছে না কেউ!

পাঠক লাল গোলদার
২৩ জুন ২০১৮
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪৯
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা লাস্ট ডিফেন্ডারস অফ পলিগ্যামি

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০


পুরুষদের ক্ষেত্রে পলিগ্যামি স্বাভাবিক এবং পুরুষরা একাধিক যৌনসঙ্গী ডিজার্ভ করে, এই মতবাদের পক্ষে ইদানিং বেশ শোর উঠেছে। খুবই ভালো একটা প্রস্তাব। পুরুষের না কি ৫০ এও ভরা যৌবন থাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য: টিপ

লিখেছেন গিয়াস উদ্দিন লিটন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৫




ক্লাস থ্রীয়ে পড়ার সময় জীবনের প্রথম ক্লাস টু'এর এক রমনিকে টিপ দিয়েছিলাম। সলজ্জ হেসে সেই রমনি আমার টিপ গ্রহণ করলেও পরে তার সখীগণের প্ররোচনায় টিপ দেওয়ার কথা হেড স্যারকে জানিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বৈশাখে ইলিশ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৪০



এবার বেশ আশ্চর্য ঘটনা ঘটেছে । বৈশাখ কে সামনে রেখে ইলিশের কথা মনে রাখিনি । একদিক দিয়ে ভাল হয়েছে যে ইলিশকে কিঞ্চিত হলেও ভুলতে পেরেছি । ইলিশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রিয় কাকুর দেশে (ছবি ব্লগ) :#gt

লিখেছেন জুন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৩



অনেক অনেক দিন পর ব্লগ লিখতে বসলাম। গতকাল আমার প্রিয় কাকুর দেশে এসে পৌছালাম। এখন আছি নিউইয়র্কে। এরপরের গন্তব্য ন্যাশভিল তারপর টরেন্টো তারপর সাস্কাচুয়ান, তারপর ইনশাআল্লাহ ঢাকা। এত লম্বা... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেরত

লিখেছেন রাসেল রুশো, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:০৬

এবারও তো হবে ইদ তোমাদের ছাড়া
অথচ আমার কানে বাজছে না নসিহত
কীভাবে কোন পথে গেলে নমাজ হবে পরিপাটি
কোন পায়ে বের হলে ফেরেশতা করবে সালাম
আমার নামতার খাতায় লিখে রেখেছি পুরোনো তালিম
দেখে দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×