শরিয়া আইন বলতে আল্লাহর আইন বুঝানো হলেও ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় এটা মানব রচিত আইন। এই আইনে ন্যায় বিচার পাওয়া সম্ভব নয়। এই আইনে অনেক ফাঁক ফোকর আছে। শরিয়ার সমস্যাগুলো পর্যায়ক্রমে ব্যাখ্যা করা হলঃ
শরিয়া আইনে অপরাধের বিচার তিনটি ভাগে বিভক্ত।
১) হুদুদঃ যেসব অপরাধের শাস্তি কোরান বা হাদিস দ্বারা নির্ধারিত বলে দাবী করা হয়। অপরাধ ও শাস্তি গুলো হচ্ছে-
চুরি- হাত কেটে ফেলা
ডাকাতি- হাত কেটে ফেলা
জিনা- অবিবাহিত হলে ১০০ বেত্রাঘাত
জিনা- বিবাহিত হলে পাথর নিক্ষেপে হত্যা
মিথ্যা জিনার অভিযোগ আনা- ৮০ বেত্রেঘাত
ধর্ষন- পাথর নিক্ষেপে হত্যা
মদ খাওয়া- ৮০ বেত্রাঘাত
মুরতাদ- মৃত্যুদন্ড
আপাত দৃষ্টিতে আইনের বিচারগুলো ঠিক মনে হচ্ছে। তবে এখানে সমস্যা হচ্ছে অপরাধ প্রমাণ করার উপায়। শরিয়া বলে যে জিনা বা ধর্ষনের অপরাধ প্রমাণের জন্য ৪ জন ভাল চরিত্রের চাক্ষুষ পুরুষ সাক্ষী ছাড়া অন্য কোন প্রমাণ গ্রহণযোগ্য নয়, হাজার মহিলা সাক্ষীতেও কাজ হবেনা। এমনকি ধর্ষনের বেলায় মেডিকেল বা ডিএনএ টেস্টও প্রমাণ হিসেবে নেয়া যাবেনা। মেয়ের প্রেগন্যান্সিও প্রমাণ হিসেবে নেয়া যাবেনা। তাহলে একটা কেস স্টাডি চিন্তা করা যাকঃ নির্জন রাস্তায় এক নারী ধর্ষণের শিকার হল। এই নারী শরিয়া কোর্টে বিচার চাইলে তাকে চারজন সৎ চরিত্রের পুরুষ সাক্ষী যারা অবশ্যই লিংগ প্রবেশ পর্যন্ত দেখেছে তেমন লোক জোগার করতে হবে। প্রমাণ জোগাড় করতে না পারলে এই মেয়েটিকেই বরং জিনার শাস্তি প্রয়োগ করা হয় কেননা সে ধর্ষনের মাধ্যমে হলেও যৌনকর্মের কথা স্বীকার করেছে। ধর্ষক কিছু টাকা জরিমানা দিয়ে দিব্যি বেঁচে যায়। প্রশ্ন হচ্ছে চারজন সাক্ষী রেখে কে ধর্ষণ করে? আর যেসব লোক এমন ক্লোজ ডিসটেন্সে ধর্ষন করতে দেখেও মেয়েটিকে বাঁচাতে যায়না তারা কেমন সৎ চরিত্রের অধিকারী? এই আইনের সুযোগ নিয়ে সৌদি আরবে প্রচুর ধর্ষন হয় কিন্তু সেগুলো মিডিয়াতে যায়না কারণ ধর্ষিতার পক্ষে ধর্ষন প্রমাণ করা সম্ভব না। এই আইনের আরও বড় সমস্যা হচ্ছে মিথ্যা সাক্ষী দিয়ে কাউকে সহজেই ফাঁসানো যায়। সত্য ঘটনা নিয়ে বানানো এমন চমৎকার একটা মুভিঃ দ্য স্টোনিং অফ সুরাইয়া এম দেখতে পারেন।
পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় এটা আল্লাহর আইন না। কারণ আল্লাহ কোথাও বলে দেননি যে অপরাধের প্রমাণ হিসেবে মেডিকেল, ভিডিও বা অন্যান্য কোন আলামত নেয়া যাবেনা। এইসব বাজে ক্রাইটেরিয়া শুধুমাত্র মানুষ্য নির্মিত।
২) কিসাসঃ এটা হচ্ছে চোখের বদলে চোখ, জানের বদলে জান। কিছু নমুনা অপরাধ হচ্ছে-
খুন- মৃত্যুদন্ড
এসিড নিক্ষেপ- ডাক্তারি তত্বাবধানে এসিড দিয়ে ঝলসে দেয়া।
কিসাস আইনের আওতায় দিয়াত নামে একটি অপশন আছে যার অর্থ রক্তমূল্য বা ব্লাডমানি। অর্থাৎ যদি নিহত ব্যক্তির সন্তান বা পরিজন খুনিকে ক্ষমা করে দেয় তাহলে নির্ধারিত অঙ্কের টাকা পরিশোধ করে খুনি ক্ষমা পেতে পারে। এই দিয়াত পদ্ধতির কারণেই শরিয়া আইনে বড় একটা ফাঁক সৃষ্টি হয়েছে যার সুযোগে অনার কিলিং ইসলামে বৈধ হয়ে গিয়েছে। অনেক স্বল্পজ্ঞানী মোল্লা অনার কিলিং ইসলামে বৈধ নয় দাবী করলেও তারা আসলে জানেনা যে শরিয়া আইনের বইতেই সুস্পষ্ট অক্ষরে অনার কিলিং এর অনুমতি দেয়া আছে। অনার কিলিং মানে হচ্ছে পরিবারের সম্মান রক্ষার অজুহাতে বাবা কিংবা ভাই কর্তৃক সেই পরিবারের কণ্যাকে হত্যা করা। সাধারণত মেয়েরা প্রেম করলে বা এরেঞ্জড ম্যারিজে রাজী না হলে বা ধর্ষিতা হলে অনার কিলিং করা হয়। পাকিস্তান, তুরষ্ক ও মিশর সহ অন্যান্ন অনেক মুসলিম দেশে ইসলামের নামে বছরে অন্তত ১ হাজার মেয়ে অনার কিলিং এর শিকার হয়। প্রশ্ন আসতে পারে যে অনার কিলিং কিভাবে বৈধ? যদি বাবা কণ্যাকে হত্যা করে তখন দিয়াত আইনের আওতায় ছেলে বাবাকে ক্ষমা করে দেয়, তাই এই ধরনের হত্যাকান্ডে পুলিশও নাক গলাতে আসেনা। পুলিশ নাক গলালেও শরিয়া আইনের ক্ষমতা নেই সেই পাষন্ড খুনি বাবার শাস্তি নিশ্চিত করা। এটা কি কখনো আল্লাহর আইন হতে পারে?
৩) তাযিরঃ যেসব অপরাধের শাস্তি কোরান হাদিসে নির্ধারিত নয় সেগুলোর জন্য বিচারক নিজের বিবেচনায় কিছু গাইডলাইন মেনে শাস্তি নিরুপণ করেন। এমন কিছু অপরাধ হচ্ছে ঘুষ, দূর্নীতি, সুদ, জুয়া ইত্যাদি। এখানে বুঝাই যাচ্ছে এই আইনগুলো মানব রচিত। তাহলে দেশের বর্তমান আইনের সাথে এর পার্থক্য রইল কি? আর এটাকে আল্লাহর আইন বলার কারণটাই বা কি?
------------------
অপরাধীর বিচার করা ছাড়াও তালাক ও উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তির বন্টন নিয়ে সমস্যার মিমাংসা করে শরিয়া আইন। এখানেও আছে মারাত্মক সমস্যা। শরিয়ার তালাকের আইন কোরান ও হাদিসের সাথে সাংঘর্ষিক। বিস্তারিত প্রমানের জন্য সুন্দর এই ইংরেজি নাটকটি দেখুন। http://www.youtube.com/watch?v=Z49zUQDq1OA । নাটকে রেফারেন্স দেয়া আছে।
এছাড়া শরিয়া আইনের ত্রুটি নিয়ে আরেকটি বাংলা নাটক দেখতে পারেন।
Click This Link
Click This Link
Click This Link
--------------------------
চারটি সুন্নি মাযহাব বা শরিয়া আইন বই এর মাঝে আছে অনেক অনেক কন্ট্রাডিকশন। কিন্তু আল্লাহর আইন এর মাঝে কি কন্ট্রাডিকশন থাকতে পারে? মাযহাব গুলোর মাঝে কিছু উদ্ভট আইনের কথা বলিঃ
ক) শাফি আইনে মেয়েদের সুন্নতে খৎনা করা বাধ্যতামূলক, হাম্বলি ও হানাফি আইনে সুন্নত।
খ) হানাফি আইনে মাহরাম পুরুষ (যাদের সাথে বিয়ে নিষিদ্ধ যেমন বাবা,চাচা,ভাই) এর সামনে নারীর পর্দা হচ্ছে নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত। অর্থাৎ বাবা,চাচা,মামা,ভাই বা সন্তান এর সামনে মেয়েরা চাইলে বুক খুলে স্তন দেখিয়ে চলাফেরা করতে পারবে।
গ) ইসলামী রাস্ট্রপ্রধান এর জন্য চুরি, ডাকাতি, খুন, ধর্ষন ইত্যাদি হুদুদ মামলায় শাস্তি দেয়া জায়েজ না।
ঘ) শাফি আইনে একটি বিষেশ অবস্থায় নিজের ঔরষজাত কন্যাকে বিয়ে করা (ইনসেস্ট বা অজাচার) জায়েজ। যেমন, দুই অবিবাহিত নারী পুরুষ যদি জিনা করে তবে তাদের ১০০ করে চাবুক মারা হবে। কিছুদিন পর যদি মেয়েটি গর্ভবতী হয়ে কণ্যা জন্ম দেয় তবে সেই জিনাকারী পুরুষ কণ্যাটির বাবা বলে বিবেচিত হবেনা। তাই কণ্যাটি বড় হলে সেই পুরুষ নিজ ঔরষজাত কণ্যাকে শরিয়ত সম্মতভাবে বিয়ে করতে পারবে।
এগুলো ছাড়াও হাজার হাজার উদ্ভট ও হাস্যকর অযৌক্তিক আইন দিয়ে ভর্তি এই শরিয়া আইন। মুসলিমরা ভুলভাবে মনে করে যে শরিয়া হচ্ছে আল্লাহর আইন। তাই শরিয়া আইন বাস্তবায়নের স্বপ্ন নিয়ে যেসব দল রাজনীতি করে, যেমন জামাতে ইসলামী সহ অন্য ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল সেগুলোকে না বলার সময় এসেছে। মনে রাখবেন শরিয়া কে না বলা মানে ইসলামকে না বলা নয়।