এ বছরেও নিপাহ ভাইরাসে মারা গেলো ৬ জন মানুষ। আশঙ্কা করা যেতেই পারে আরও মৃত্যুর খবর হয়তো আমাদের শুনতে হতে পারে। আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে মৃত্যু তো অলঙ্ঘ্য। কিন্তু না। এই ভাইরাস নিয়ন্ত্রন যোগ্য এবং সমস্ত মৃত্যুই ছিল প্রতিরোধ যোগ্য। তবে কেন, ২০০১ সাল থেকে পর পর বার বছর প্রত্যেক বছর শুধু বাংলাদেশেই মানুষ মরছে? ভারত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর এ একবারের বেশী কোথাও নিপাহ ভাইরাসের কারণে মানুষের মৃত্যু হয়নি। ব্যতিক্রম শুধু মাত্র বাংলাদেশ, যেখানে প্রতি বছর অসহায় ভাবে মানুষ নিপাহ ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে অসহায় মৃত্যু বরণ করছে। ২০১১ সালে বাংলাদেশে সব চেয়ে বেশী মানুষ মারা গেছে এই নিপাহ ভাইরাসে, এর প্রত্যেকটা মৃত্যু প্রতিরোধযোগ্য ছিল আর এ বছরেও অসহায় মৃত্যুর মিছিলে যোগ হল আরও কিছু মানুষ।
নিপাহ এঙ্কেফালাইটিস প্রথম ধরা পরে ১৯৯৮ সালে মালয়েশিয়া তে এবং পরে সিঙ্গাপুরে। পাখি এবং পশু থেকে এ রোগ ছড়ায় এবং এর মৃত্যু হার প্রায় ১০০ ভাগ। নিপাহ ভাইরাস জীবাণু যুদ্ধে ব্যবহারের সম্ভাবনা আছে, আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল নিপাহ ভাইরাসকে ক্যাটাগরি সি ক্রিটিকাল বায়োলজিক্যাল এজেন্ট হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ক্যাটেগরি সি এর অর্থ হচ্ছে এটাকে সহজেই প্রাণঘাতী রূপ দেয়া যায় এবং বিপুল পরিমাণে উৎপাদন করা যায়। কিন্তু এই ভাইরাসের প্রকৃতি, সংক্রমণের পদ্ধতি খুব স্পষ্ট ভাবে এখনো জানা যায়নি কারণ ভাইরাসটি আবিষ্কৃত হয়েছে খুব বেশী দিন নয়। তাই এই জীবাণু নিয়ে গবেষণার জন্য একটা রিসার্চ ফিল্ড থাকা দরকার। মালয়েশিয়া সহ যেসব দেশে প্রথম রোগটি দেখা যায় তাঁরা প্রাদুর্ভাবের সাথে সাথেই রোগটিকে একেবারে নির্মূল করে ফেলেছে। তাই কোন দেশেই আর মানুষের উপর নিপাহ ভাইরাস নিয়ে গবেষণার সুযোগ নাই, সুযোগ আছে শুধু বাংলাদেশে। বাংলাদেশকে করে তোলা হয়েছে নিপাহ নিয়ে উন্নত বিশ্বের মাঠ পর্যায়ের গবেষণার একটা ক্ষেত্র। তাই নিপাহ ভাইরাস ইচ্ছে করেই জিইয়ে রাখা হচ্ছে বলে যৌক্তিক ভাবে তীব্র সন্দেহ পোষণ করা যায়। নিপাহ রোগ নিয়ন্ত্রণ বা নির্মূল হলে নষ্ট হবে গবেষণার এই উর্বর ক্ষেত্র যেখান থেকে উন্নত বিশ্ব নিপাহ ভাইরাস নিয়ে অনেক নতুন নতুন তথ্য পাচ্ছে। এর বিনিময়ে আসছে দেশের কিছু রথি মহারথীর অসংখ্যবার বিদেশ যাত্রা, সেই সুত্রে আসা কোটি কোটি টাকার প্রোজেক্টের ভাগ, গবেষণা পত্রে উচ্ছিষ্টের মতো নাম।
এই রোগটি নিয়ে বাংলাদেশে কাজ করে জাতীয় রোগতত্ত্ব এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান সংক্ষেপে আই ই ডি সি আর। আই ই ডি সি আর দেশের বিভিন্ন রোগের প্রকোপ নির্ধারণ, নতুন রোগের গতিপ্রকৃতি, বিস্তার, চিকিৎসা নির্দেশনা তৈরি এসব নিয়ে কেন্দ্রীয় ভুমিকা পালন করার কথা থাকলেও, এই জাতীয় প্রতিষ্ঠানটি এই নিপাহ ভাইরাসের মৃত্যু কুপ জিইয়ে রেখছে বলে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের কর্মপরিধি এনং বর্তমান কর্মকাণ্ড নিয়ে সংশ্লিষ্টদের খুব বেশী ধারণা না থাকায়, ডি জি অফিসের পেটের মধ্যে থাকা এই প্রতিষ্ঠানটি জবাবদিহিতা বিহীন এক অভূতপূর্ব ইমুনিটি ভোগ করছে।
নিপাহ ভাইরাসে মৃত্যুর খবর আসলেই আই ই ডি সি আরে বিদেশ থেকে পি এইচ ডি থিসিস করছেন এমন টিম আসে এবং বাংলাদেশের সরকারের খরচে আই ই ডি সি আর এর মেডিক্যাল অফিসার তাদের সাথে নিপাহ আক্রান্ত অঞ্চলে যান, বিদেশী টীম উপাত্ত এবং স্যাম্পল সংগ্রহ করে এবং কাউকে কোন স্যাম্পল এবং তথ্য না দিয়ে সবকিছু তারা বিদেশে নিয়ে যায়। আই ই ডি সি আর কোন অধিকার বলে বিদেশী পি এইচ ডি ছাত্রদের সরকারের খরচে সহায়তা দেয়া হচ্ছে? কেন গবেষণার নামে সংগ্রহ করা তথ্য এবং স্যাম্পল বাংলাদেশের কাছে থাকছেনা। সারা পৃথিবীর মেডিক্যাল গবেষণা ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ডট গভ এর রেজিস্ট্রি করা থাকলেও কেন আই ই ডি সি আর এর সহায়তায় হওয়া এই গবেষণাগুলো কেন সেখানে রেজিস্ট্রেশন করা নাই? এগুলো কি কোন ধরণের গোপন গবেষণা? কে আই ই ডি সি আর কে প্রশ্ন করবে, তোমরা যে গবেষণায় শরীক হচ্ছো সে গবেষণার ডাটা সিট কোথায়? সেটা তোমাদের কাছে নেই কেন?
এর কোন উত্তর নেই। জীবাণু যুদ্ধে ব্যবহার হওয়া নিপাহ এর বাংলাদেশে কোথাও প্রকোপ দেখা দিলে আই ই ডি সি আরে নাকি বয়ে যায় উৎসবের বন্যা। আর আসতে থাকে দলে দলে বিদেশী গবেষক, শুরু হয় তাঁদের পথ প্রদর্শক হিসেবে জাতীয় এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তার নীরব সফরসঙ্গি হওয়া।
আজকে এই জাতীয় প্রতিষ্ঠাটিকে জবাবদিহি করতে হবে, কেন গত ১২ বছর ধরে চলছে মৃত্যুর মিছিল, কেন নিপাহ ভাইরাস নির্মূল হোল না, গিনিপিগ বানানো অসহায় কিছু মানুষের জীবন নিয়ে খেলার লাইসেন্স কে তাদের দিয়েছে, কেন এই প্রতিরোধ যোগ্য সংক্রমণে মৃত্যুকে ইচ্ছাকৃত হত্যাকাণ্ড বলে অভিহিত করা হবেনা এবং এর জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবেনা?
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:৪০