আর কতক্ষণ? এইত, এতা ৪০ নাম্বার।চুল্টা এইপাশে সরাও এবার পিঠ
সোজা করে বস।
পার ও তুমি।
ঈশ্বর তোমাকে এতো সুন্দর করে বানিয়েছেই আমার জন্ন।আমি এটা বুঝি তাই একে রোজ ডীসকভার করি। ট্যাটু গুল জোশ!
ভালই বলেছ,দেখি ক্যামেরাটা এদিকে আনত।
প্রমিলা আর পরেশের বিয়ে হয়েছিল ৭ বছর আগে।ঢাকা ইউনিভার্সিটির চারুকলা থেকে পাশ করে কলকাতায় ফাইন আর্টস এ মাস্টার্স করে দুইজন। দারুণ মেধাবী ছাত্র এরা,অসম্ভব রকম ক্রিয়েটিভ ।বিয়ের আগে ২ বছর লিভ ইন রিলেশনশিপ এ ছিল, কলকাতায়।একে অপরের প্রতি অপরিমেয় ভালবাসা অদম্য আকর্ষণ আর ভরা যৌবনের আধার ছিল এরা দুজন।
এক সময় তাদের জীবনের মানে ছিল ডিএসএলআর,ক্যানভাস,অইল পেইন্ট আর স্কেচবুক।
এখন তাদের ডিজাইনিং ফার্ম আছে, প্রতি মাসে এক্সিবিসন ,মঅ্যাগাজিন সব ওদের নিজেদের কষ্টের মিষ্টি ফল।
প্রমিলা রঙ খুব ভালবাসে,পরেশ ভালবাসে রঙ দিয়ে প্রমিলার গায়ে ট্যাটু আঁকতে। এটা ওদের সিক্রেট ব্যাপার বাট ট্যাটু করার পর ফ্রেন্ড সার্কেলে ওটা আর সিক্রেট থাকেনা।
প্রমিলা ছোট থেকেই চেয়েছে তার মতো ক্রিয়েটিভ কাউকে বিয়ে করতে তাতে করে বোঝাপড়া টা যেমন ভালো হয়,ভালবাসাটাও হয় অকৃত্রিম।তার মতে শিল্পী কখন মিথ্যা বলেনা,তারা মানুষকে গভীর ভাবে ভালবাসতে জানে,তাদের ভালবাসার মাপকাঠি নেই কোন।
দাম্পত্য জীবনে তারা খুব সুখি। একটা অপুরনতা ছাড়া পরেশ প্রমিলাকে সব কিছু দিয়েছে আর তা হল একটি সন্তান।
পরেশ বরাবরই অগোছালো ধাঁচের।সে সবসময় ই প্রমিলাকে বলেছে ও সন্তান চায় না। শুরুতে প্রমিলা ভাবতো বয়স হলে হয়তোবা অর মন পালতাবে,কিন্তু না বিয়ে ৭ বছর পরও পরেশ মত বদলায়নি।খুব একরোখা ছেলেটা,প্রমি ভাবে।
সন্ধায় পরশ প্রমি কোলে মাথা রেখে টিভি দেখছিল,ওর ঘন কোঁকড়া চুলে হাত বুলিয়ে প্রমি বলল ‘ বাবু,আরেক বার একটু ভেবে দেখবে?সময় চলে গেলে পরে…এত কি ভয় তমার?আমাদের জীবনে তো ওরকম কোন ঝামেলা নেই।তাইনা?”
চট করে উঠে বস্ল পরেশ বলল “তুমি কি কনদিন কি আমার সে্নটিমেন্ট বুঝবেনা?আমি কতোটা ইন্সিকিউরিটি থেকে এতো বড় একটা ডিসিশন নিয়েছি তা বুঝবেনা?
রিমোট ছুঁড়ে ফেলে স্টাডি রুমের দিকে গেল পরেশ।প্রমিলার দীর্ঘশ্বাস শুনারো সময় নেই তার।
ওদের ঝগ্ড়া,মনমালিন্য বেশিক্ষণ টেকে না,খুব পসিটিভ একটা গুন।ভেরি রেয়ার আজকাল।
রাতে নাইটি তে নিজেকে খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছিল আয়নায় প্রমি। ভাবছিল ওর ওভুলুশনের ডেইট টা কবে।নাইটি টা চেঞ্জ করে আর খোলামেলা একটা কাপড় পরল,যেটায় ওর ভারী স্তনের প্রায় সম্পূর্ণটাই দেখা যাচ্ছে। বাতি টা নিভাতে যাবে আর অমনি পরেশ ঘরে ঢুকল,আয়নায় প্রমিলাকে দেখে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলনা পরেশ,চরম আবেগে প্রমিলাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।এ সময়ের অপেক্ষা ই প্রমিলা যেন করছিলো।
সকালে নাস্তার টেবিলে রুটিতে বাটার লাগাচ্ছে প্রমিলা,পরেশ বলল "ঈমনের ফার্মের একটা কাজ করতে বলছে, ওদের অফিসে যেতে বলছিল। একদিন তুমি যাবে নাকি?অনেকদিন তো ডিজাইনের কাজ করছনা। "
নাহ আমার এক্সিবিশন সাম্নে,তাছারা স্টুডেন্ট গুলোর ফাইনাল সাম্নে।ঢাকার বাইরে আপাতত যাবনা।
কবে যেন?২১ তারিখ না? পরেশের প্রশ্ন। হুম- বলল প্রমিলা।কোথায় যেন হারিয়ে গেল প্রমিলা।
এই প্রমি! হ্যালো! কি ভাবছ?
নাহ কিছুনা।
আমি বেরুলাম,আজ সন্ধ্যায় তোমার কোমরে একটা ট্যাটু করব,আগের টা মুছে গেছে গত রাতে।। রেডী থেকো।বলেই প্রমির কপালে চুমু খেয়ে বেরিয়ে গেল পরেশ।
গতকাল রাত থেকে প্রমির মন টা খচখচ করছে, ও যদি কন্সিভ করেই ফেলে আর পরেশ যদি এটা মেনে না নেয় তখন?আপা বলেছে ৩৪ বছর বয়সে আবরসন করাটাও খুব রিস্কি প্রমির জন্য, তাছাড়া কলকাতা থাকতে একবার ও আবরশন করিয়েছিলও। দুশ্ছিন্তায় পরে গেল প্রমি।
পরেশের জন্ম সাদামাটা একটা পরিবারে। ওর বাবা ব্যবসায়ী আর মা ছিলেন আঁকিয়ে, ওর বাবার এ ব্যাপারে খুব আক্ষেপ ছিল কারন তার মা তার স্বামী ও সন্তানকে সময় দিতনা একদম। শেষে ওর মা আবার বিয়ে করে তার এক মেন্টরকে। আগে থেকেই প্রেম ছিল,বিচ্ছেদের পর বিয়েটা সহজ হয়।সেই থেকে পরেশের এতো ভয়,পাছে ওর সন্তান একা না হয়ে যায়।
যথারীতি প্রমির পিরিয়ড মিস হল,পরেশ চিটাগং গেছে নিউ প্রোজেক্ট এর কাজে।
প্রমি ভাবছে কি করবে? নিজে চেক করবে নাকি বোন কে ফোন দিবে।বোনকে ফোন দিলে পরেশের ব্যাপারে আজেবাজে মন্তব্য করবে কারন তাদের মতে পরেশ কাওয়ারড,ইনকনফিডেন্ট। মেজাজ টাই বিগ্রে গেল তার।
ঘরে প্রেগ্নাসি টেস্ট পসিটিভ এলো।
রবিবার পরেশ এলো। খাবার টেবিলে কোন কথা বলছেনা প্রমি।কাল তার এক্সিবিশন ।
“কি হল তোমার? টেন্সড??”
নাহ” বলেই টেবিল ছেড়ে উঠে পড়ল সে।
অ্যাজ আগে ঘুমিয়ে যাবার ভান করল প্রমিলা। খুব টেনশন তার।
এক্সিবিশন ভালই গেল,পার্টি তে খুব পিসড অফ লাগছিল প্রমিকে। অনেকেই বলল।
রাতে প্রমিলা পরেশকে ডেকে নিয়ে তার পাশে বসাল,সব বল্ল।পরেশ ওভার রিয়াক্ট করেনি একদম বাট মন খারাপ করে বলল “ তারমানে তুমি আনেকদিন ধরেই এটা চাইছিলে,? প্রমি মাথা নাড়াল।
অনেক কথা কাটাকাটির পর পরেশ জানালো ও স্টিল ইন্টারেস্টেড না,বাকিটা প্রমি যানে, আর প্রমি জানালো ও এই সন্তানটিকে জন্ম দিচ্ছেই।
প্রমি পরেশকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল “তোমার ভয়টাকে ওভারকাম করবে আমদের সন্তান দেখে নিও”
সময় কেটে যাচ্ছিলো পরেশ শুধুমাত্র প্রমিলার ভালো মন্দের খোজ খবর রাখছে,ভুলেও তাদের সন্তানের খোঁজ করেনা।প্রমিলার মন খারাপ হয় এতে।
ডাক্তারের কাছে আনেক সময় ই একা যায় সে। এভাবে ৪ মাস কেটে গেল।প্রমিলার বিশ্বাস তবুও অতল,পরেশ পালটাবেই নিজেকে।
হঠাৎ একদিন প্রমি দেখল পরেশ তার আল্ট্রাসনগ্রাফি রিপোর্টটা দেখছে,নিজেকে দরজায় আড়াল করে নিয়ে ও দেখল পরেশ কত উৎসাহ নিয়ে ছবি গুল দেখছে।কিছুটা আশ্বস্ত হল প্রমি।
প্রমির এখন ৭ মাস চলছে।পরেশ এখন প্রমি কে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যায়। ভালমন্দ জিগ্যেস ও করে।
বিছানায় প্রমিকে জড়িয়ে শুয়ে আছে পরেশ,কনো কথা নেই…হঠাত পরেশ জিগ্যেস করল বাবুটা কে কবে দেখব বলত?প্রমিলা ম্রিদু হেসে বলল “খুব জলদি”
পরেশ এখন খুব রেস্পন্সিবল!
লেবর পেইন এ প্রমি হাসপাতালে ভর্তি হল। কাছের মানুষ বলতে প্রমির বড় বোন আর পরেশ ই।৩ ঘন্টা পর জানানো হল অপারেশন লাগেবেই।
ওটি তে নেবার পথে পরেশ কিছুই বলতে পারলনা প্রমিলাকে।চুপ করে তাকিয়ে রইল।
পরেশের হার্ট বীট ক্রমাগত বেড়েই ছলেছে,প্রমি ছাড়া ওর আপন কেউ নেই।কিছু হলে ও নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেনা। যদিও প্রমির প্রেগ্নেন্সিতে কমপ্লিকেসন ছিলনা তবুও মনের ভয় বড় ভয়।অপারেশন থিয়েটারের বাতি নিভে গেলো।
এতো ফুটফুটে একটা মেয়ে হবে তার আশা পরেশ কখনই করেনি কারন তারা দুজনী শ্যামবর্ণ। বাচ্চাটাকে মায়ের কোলে দেয়ার পর পরেশ প্রমিকে দেখতে গেলো ।
প্রমি কাঁদছিল।
তাদের দুইজন কে জড়িয়ে ধরে পরেশ বলল “তুমি আমার ক্যানভাস আর এইটা আমাদের রঙ!!”
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:০৪