somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একেই বলে স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শামচুল হক

পুরানা পল্টন মোড়ের ফুটপাতের চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম। পাশেই ডাবওয়ালা ডাব নিয়ে বসে আছে। ডাবওয়ালার তেমন বেচা বিক্রি নেই। মাঝে মাঝে দু’একজন এসে ডাব খেলেও চায়ের দোকানের মত এত ভির নেই।

ফুটপাতে স্তুপ করে রাখা ডাবগুলো থেকে অল্প দূরেই দাঁড়ানো ছিলাম। এমন সময় একজন আধবয়সি হুজুর টাইপের লোক সাথে বোরখাওয়ালী বউ নিয়ে হাজির। ডাবওয়ালাকে ডাবের দাম জিজ্ঞেস করতেই ডাবওয়ালা দুই ধরনের ডাব দেখিয়ে একটি পঞ্চাশ টাকা অন্যটি ষাট টাকা দাম হাঁকালো। ষাট টাকার ডাবগুলো বেশ বড় কিন্তু সেই তুলনায় পঞ্চাশ টাকার ডাবগুলো অনেকটা ছোট। লোকটি ষাট টাকার ডাব পঞ্চাশ টাকায় দেয়ার জন্য খুব পীড়াপীড়ি করল কিন্তু ডাবওয়ালা এক পয়সাও ছাড়তে রাজী হলো না। অবশেষে ষাট টাকার ডাবের আশা ছেড়ে দিয়ে পঞ্চাশ টাকার ডাবের কাঁধি দেখিয়ে সেখান থেকে একটি ডাব কেটে দিতে বলল।

ডাবওয়ালা ছোট ডাবের কাঁধি থেকে তার দেখানো ডাবটি আলাদা করে বাম হাতে ধরে ডান হাতের দা দিয়ে ডাবের উপরের অংশ কেটে পানি বের করার মত ছিদ্র করে নিল। ছিদ্র মুখে চুষে খাওয়ার জন্য একটি পাইপ ঢুকিয়ে দিয়ে লোকটির হাতে তুলে দিল। ডাব হাতে নিয়ে হুজুর নিজে না খেয়ে বোরখাওয়ালী স্ত্রীর হাতে দিল। স্ত্রী ডাবটি হাতে নিলেও পাইপে মুখ না দিয়ে উল্টো হুজুরকেই খাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করতে লাগল। স্ত্রীর পীড়াপীড়ির পরও হুজুর নিজে না খেয়ে স্ত্রীকেই খেতে বলল। বুঝতে পেলাম, স্বামীর আগে স্ত্রী ডাবের পানি খেতে রাজী নয়। কিন্তু স্বামী আগে খেতে রাজী না হওয়ায় বাধ্য হয়েই স্ত্রী ডাবটির পাইপে মুখ দিয়ে অল্প একটু পানি চুষে খেয়ে স্বামীর হাতে ডাব তুলে দিতে চাইলেও স্বামী নিতে রাজী হলো না। তাকে আরো খাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করতে লাগল। স্বামীর অনুনয় বিনয়ে স্ত্রী আরেকটু পানি চুষে খেয়ে স্বামীর দিকে ডাবটি বাড়িয়ে দিয়ে বলল, আমি অনেক খেয়েছি, এটুকু তুমি খাও।
স্ত্রীর এমন কথায় হুজুর ডাবটি হাতে নিয়ে কাটা মুখের দিকে তাকিয়ে পানির পরিমান দেখে বলল, কি খেয়েছো, সব পানিই তো আছে?
স্ত্রী খুশি হয়ে বলল, না না-- আমি অনেক খেয়েছি, বাকি টুকু তুমি খাও।
স্ত্রীর কথায় হুজুর তার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বলল, কোথায় অনেক খেয়েছো, অর্ধেকও তো খাওনি?
স্ত্রী মৃদু হাসি দিয়ে বলল, আমি তো অনেক খেয়েছি, এটুকু তুমি খাওনা।
হুজুর আর স্ত্রীর দিকে ডাব এগিয়ে দিল না। তবে তার চুষে খাওয়া এঁটো পাইপে মুখ লাগিয়ে পুরো পানি আস্তে আস্তে খেয়ে ফেলল। পানি খাওয়া শেষে ডাবের খোসাটি নির্দিষ্ট ঝুড়িতে রেখে রুমাল দিয়ে নিজের মুখটি মুছতে মুছতে স্ত্রীর প্রতি এমন ভাবে তাকালো, যেন অনেক কিছু খেয়ে ফেলেছে।

ছোট্ট একটি ডাবের পানি খাওয়া নিয়ে স্বামী-স্ত্রী পরস্পর যেভাবে পীড়াপীড়ি করতেছিল, তাতে আমি কৌতুহল দমাতে না পেরে চা খাওয়া বাদ দিয়ে তাদের দিকেই তাকিয়ে ছিলাম। পরস্পরের ভালোবাসা দেখে অবাকই হলাম। স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা এমনই হওয়া দরকার।

ছোট্ট একটি ডাব, তাতে কতটুকুই বা পানি ছিল? খুব বেশি হলে এক গ্লাস। অথচ তারা এই সামান্য এক গ্লাস পানি যখন একে অন্যের দিকে এগিয়ে দিচ্ছিল, তখন তাদের কথায় মনে হচ্ছিল, এই ছোট্ট ডাবে এক গ্লাস নয় বালতি বালতি পানি ছিল, একজন খেয়ে শেষ করতে পারছে না তাই অন্যজনকে বেশি করে খেতে বলছে।

আহারে ভালোবাসা! স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা এমনই হওয়া দরকার। মহব্বতের সাথে মিলে মিশে কোন কিছু খেলে তাতে যে কত বরকত হয়-- তার প্রমাণ এখানেই পেলাম। ছোট্ট একটি ডাবের পানি, যা পান করলে এক জনেরই তৃষ্ণা মেটার কথা নয় অথচ সেখানে তারা দুইজনে পান করে পরস্পরকে এমন ভাব দেখালো যেন এক জন আরেক জনের চেয়ে চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি খেয়ে ফেলেছে। উভয়ের মধ্যে গভীর ভালোবাসা আছে বলেই হয়তো এই সামান্য ডাবের পানি তাদেরকে তৃপ্তির সর্বোচ্চ সীমায় পৌছে দিয়েছে। কিন্তু সাধারণভাবে খেলে কোন দিনই তারা এই তৃপ্তি পেত না।

আর্থিক দিক দিয়ে হয়তো তারা সচ্ছল নাও হতে পারে। যদি তারা সচ্ছল হতো তাহলে ছোট্ট একটি ডাব কিনে এভাবে দুইজনে ভাগাভাগি করে খেত না, দুইজনে দু’টি ডাব কিনে আলাদা আলাদা খেত।

অভাবের কারণে ভালোবাসা অনেক সময় দূরে চলে যায়, আবার অভাবে পরেই মানুষ গভীর ভালোবাসায় আবদ্ধ হয়। তার প্রমাণ এই দম্পত্তি। দুই জনই মধ্য বয়সি অথচ তাদের মাঝে যথেষ্ঠ মানসিক মিল আছে। যদি মিল না থাকতো তাহলে তারা পরস্পর এত অল্পতে তৃপ্তিবোধ করতে পারতো না।

অনেক দম্পতিরই অঢেল পয়সা আছে কিন্তু তাদের মধ্যে এমন মধুর সম্পর্ক নেই। পয়সা থাকলেই দাম্পত্য জীবনে সুখী হওয়া যায় না। আর্থিক স্বচ্ছলতার চেয়ে মানসিক সমঝোতাই মানুষের দাম্পত্য জীবনকে সবচেয়ে বেশি সুখী করে। মধ্য বয়সী জুটিতে সেই লক্ষণটিই দেখতে পেলাম।

০০ সমাপ্ত ০০
ছবি ঃ ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:১৭
৩৮টি মন্তব্য ৩৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×