somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গ্লাসটি নামিয়ে রাখতে হবে, তোমাকে পঙ্গু করার আগেই

০১ লা এপ্রিল, ২০১৫ ভোর ৪:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কলেজের প্রথম দিন, প্রথম ক্লাশ । ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাশে অধীর আগ্রহে অপেক্ষমাণ, তাদের কলেজ জীবনের প্রথম ক্লাশ, প্রথম শিক্ষক । কিন্তু কেমন হবেন তিনি দেখতে ? তিনি কি আইনষ্টাইনের মত চুলচেরা বিশ্লেষণ মুখী ? নাকি আলফ্রেড নোবেলের মত জীবন মুখী ? নাকি সুকুমার রায়ের মত হাস্য রসে ভরপুর কিন্তু বাস্তব মুখী ? কিরকম হবেন তিনি ? অপেক্ষার সময় আর কাটছিল না ।

অবশেষে আসলেন তিনি । অত্যন্ত সাদামাটা, উজ্জ্বল শ্যামলা বর্ণের, সাধারণ শারীরিক গঠন, উচ্চতা খুব বেশী হলে পাঁচ ফিট সাত হবে । পরনে কড়া আয়রন করা হালকা ছাই রঙের সূতির ফুল হাতা শার্ট । হাতা কনুই অব্দি গোটানো, সাথে কালো টেট্রনের প্যান্ট । পায়ে চকচকে কাল জুতো, যেন এই মাত্র কিনে এনেছেন । বাঁ হাতে অতি সাধারণ একটি কালো বেল্ট-এর ঘড়ি । চোখে গোল রিমের কালো ফ্রেমের চশমা । মাথায় ছোট করে ছাঁটানো ঘন কালো চুল । এই সাধারণ ইম্প্রেশনই কিন্তু বুঝিয়ে দিচ্ছে কোথাও... কোন দিক দিয়ে তার মধ্যে অসাধারণ কিছু যেন লুকিয়ে আছে ।

সব ছাত্র-ছাত্রী উঠে দাঁড়িয়ে শিক্ষককে সালাম জানালো । শিক্ষক মৃদু হেসে সালামের জবাব দিলেন এবং সবাইকে বসতে বললেন ।

-“তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী কে আছ ? হাত তোলতো” ।

প্রথম ক্লাশের প্রথমেই শিক্ষকের মুখে এমন কথা শুনে সবাই হতভম্ব । “আমরা কি ভাবে জানব ? সবে তো প্রথম দিন, তারপর এখনও কারো সাথে ভালো করে পরিচয়ই হয়নি । কয়েকদিন গেলে তবেনা বুঝতে পারব । দুয়েকটা মারামারি হোক, তখনই বুঝা যাবে কে বেশী শক্তিশালী । আর আপনার মান রাখতে যদি আমি এমনি দাঁড়িয়ে বলি – আমিই সবচাইতে শক্তিশালী, আর পরে যদি প্রমাণ হয়ে যায় আমার চেয়ে শক্তিশালী ঐ ছেলেটা, তাহলেতো গেলো, সবই গেল । প্রথম ক্লাশেই মিথ্যা কথা ? না বাবা আমি পারবনা, অন্য কেউ এই রিস্ক নিক । আমি নেবনা” । এরকমটাই হয়ত ভাবছিল প্রত্যেকে ।

কিন্ত সবাইকে অবাক করে দিয়ে একটা ছেলে হাত তুলল । সবাই ঘুরে তাকালো তার দিকে, হ্যাঁ দেখেই বুঝা যায় স্যারের মান রাখার জন্যই হাত তুলেছে । দেখেত তেমন শক্তিশালী মনে হয়না, তারচেয়ে তো শেষ বেঞ্চের ঐ কালো ছেলেটাকেই অনেক বেশী শক্তিশালী মনে হয়, আর হাইট’ও মাশাল্লাহ্‌, ছয় ফিট না হয়েই যায় না ।

- “ঠিক আছে, বাবা এদিকে এস তুমি । আমার জন্য এক গ্লাস পানি নিয়ে এসতো” । স্যারের এবারকার কথায় সবাই একটু মজার গন্ধ পেল ।

ছেলেটি পানি নিয়ে আসলে স্যার বললেন, “বাবা তোমাকে আরেকটু কষ্ট দিব, আশা করি কিছু মনে করবে না, এটা তোমাদের জন্যই দরকার” । আক্ষরিক অর্থেই সবাই এবার নড়েচড়ে বসল, মজার কিছু আবশ্যম্ভাবী ।

-“বলত বাবা, তুমি যে গ্লাসে পানি নিয়ে এসেছ তার মোট ওজন কতটুকু হতে পারে”?

-“স্যার আসলে এভাবে বলাতো কষ্টকর, তবে ২৫০ গ্রামের মত হবে”-ছাত্রের উত্তর ।

-“এটি এভাবে হাতে নিয়ে হাত সোজা করে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে”?

-“আমি আপনার কথা বুঝতে পারিনি স্যার”, ছাত্রের উত্তর ।

-“আমি বলছি, আমি যদি তোমাকে গ্লাসটি হাতে নিয়ে হাত সোজা করে দাঁড়িয়ে থাকতে বলি, তাহলে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে”?

এতক্ষণে ক্লাসে গুঞ্জন শুরু হয়ে গেছে, ও কি কোন অন্যায় করেছে? অন্যায় করলে কি অন্যায় করেছে ? আর কখনই বা কি করল ? এইসব হাবিজাবি চিন্তা প্রত্যেকের মনে...।

চিন্তা ভাবনা করে ছাত্রটি জানাল –“স্যার দু ঘন্টা পারব”, সেও ততক্ষণে ঘাবড়ে গেছে । সে বুঝেই উঠতে পারছে না কোথা থেকে কি হয়ে যাচ্ছে ।

-“ঠিক আছে, দু ঘন্টা । এর পর কি হবে” ? সহাস্য জিজ্ঞাসা স্যারের মুখে ।

- “হাত ব্যথা করবে স্যার” ।

-“যদি পাঁচ ঘন্টা হয়, তাহলে কি হবে” ?

-“হাত কাঁপতে থাকবে স্যার” ।

-“যদি এক দিন হয়, তখন কি হবে” ?

-“হাত অবশ হয়ে আসবে স্যার” ।

-“যদি তিন দিন হয়, তখন কি হবে”?

-“সমস্ত শরীর অবশ হয়ে আসবে স্যার, আমি পড়ে যাব, আর পঙ্গুও হয়ে যেতে পারি স্যার” । ততক্ষণে ওর গলা কাঁপতে শুরু করেছে, কান্না চলে আসছে বুক বেয়ে গলার কাছে, কি এমন করেছে ও ? এত বড় শাস্তির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ।

-“ঠিক আছে, অসংখ্য ধন্যবাদ তোমাকে । যাও তোমার সীটে গিয়ে বস” ।

ততক্ষণে গলা পর্যন্ত উঠে আসা কান্না আর বাঁধ মানছিল না, নেহায়েৎই কলেজে উঠে গেছে, নইলে কতক্ষণে... !!

এবার শুরু করলেন স্যার – তার গুরুগম্ভীর আর এতক্ষণ চেপে রাখা আসল আর মোহময় ব্যাক্তিত্ব সম্পন্ন কন্ঠস্বর দিয়ে, যা এক অদ্ভুত স্বর্গীয় বাণীর মত, যা ছেলেপেলে গুলো মনে রাখবে সারা জীবন প্রতিটা মুহুর্ত প্রতিটা চিন্তা ভাবনায় –

“এটি তোমাদের জন্য একটি শিক্ষা, এটি তোমাদের পরীক্ষায় পাশ করাতে পারবে না ঠিক, কিন্তু যথার্থ শিক্ষিত মানুষ হিসাবে পাশ করাতে পারবে ঠিকই । এটি তোমাদের মুক্ত জীবন, মুক্ত চিন্তা ভাবনা কে রক্ষা করবে নষ্ট হওয়া থেকে । এটি তোমাদের শক্তি দিবে স্বাধীন থাকার, সকল অনিষ্টকারী চিন্তা ভাবনা থেকে, যা বিশাল ক্ষতি করে ফেলতে পারে তোমার, তোমার প্রিয়জনের, তোমার পরিবারের, তোমার সমাজের, তোমার দেশের বা সমগ্র মানব জাতির ।

এটি একটি শিক্ষা, যা কোন বইয়ে পাবে না । কিন্তু অর্জন করতে হবে মানুষ হবার জন্যে । আমার পরবর্তী কথাগুলো মগজে গেঁথে রাখ, মনে রেখ পরীক্ষায় একবার ফেল করলে আবার পরীক্ষা দিতে পারবে, আবার ফেল করলে আবার পরীক্ষা দিতে পারবে, কিন্তু মানুষ হিসাবে একবার ফেল করলে এই জীবনে আর কেউ তোমার পরীক্ষা নেবার সাহস করবে না ।

তোমাদের জীবনে আজ কলেজের প্রথম দিন । উচ্চশিক্ষার প্রথন ধাপ এটি, এই পৃথিবীতে তোমাদের যোগ্য প্রমাণ করার শুরু এখান থেকে । পানি ভর্তি গ্লাসটি ছিল একটি উপমা মাত্র । জীবনে অনেক ঘটনা, অনেক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হবে তোমরা । এর মধ্যে কিছু থাকবে আনন্দের, কিছু বেদনার, কিছু থাকবে তিক্ততার কিংবা কিছু থাকবে ভয়ঙ্কর । সব অভিজ্ঞতা থেকেই শিক্ষা অর্জন করবে, কিন্তু কোন ঘটনাকেই মনে রাখবে না সেই পানি ভর্তি গ্লাসের মত । একটি সাধারণ ২৫০ গ্রাম ওজনের একটি পানি ভর্তি গ্লাস যদি একজন মানুষকে মাত্র তিন দিনে সম্পূর্ণ পঙ্গু করে ফেলতে পারে, তোমাদের মস্তিস্কে সংরক্ষিত কোন তিক্ত বা বেদনাদায়ক বা ভয়ংকর কোন অভিজ্ঞতা তোমাদের দিনের পর দিন কিংবা মাস কিংবা বছর ধরে কি করতে পারে তা চিন্তা করে নাও এখনি, এই মূহুর্তে । আর যদি কিছু থেকে থাকে খালি করে ফেল ঠিক এখন এই মূহুর্তে । ভুলে যাবার জিনিসগুলোকে দেরি না করে ভুলে যাবে । সব সময় মনে রাখবে “গ্লাসটি নামিয়ে রাখতে হবে, তোমাকে পঙ্গু করার আগেই” । আর তা শুরু হোক এখান থেকেই .........


কূণাল পাঞ্জাবী-এর “PUT THE GLASS DOWN TODAY” টিকে মূল বিষয় বস্তু ধরে লেখা । Address: Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:০৭
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×