somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যেখানে আমরা রোহিঙ্গাদের কাছে হেরে যাই...

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সাথে সামাজিক-পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন করার কোন সম্পর্ক আছে কি না, সেটা সমাজবিজ্ঞানী বা নৃবিজ্ঞানীদের ভালো জানার কথা। খোলা চোখে আমরা দেখি উন্নত দেশগুলোতেই নিউক্লিয়াস ফ্যামিলি, ওল্ডহোমের মত ধারণা সৃষ্টি হয় এবং বাস্তবে তার ব্যাপক অনুশীলনও হয়। বিপরীতে দরিদ্র দেশগুলোর সামাজিক ব্যবস্থায় যৌথ পরিবার ব্যবস্থা প্রবল। এই পারিবারিক ব্যবস্থা টিকে থাকার পেছনে ধর্মের একটা জোরালো ভুমিকা নিশ্চয় থেকে থাকবে। আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না বলে ইসলামে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য ধর্মেও নিশ্চয় একই ধরণের বক্তব্য আছে।

পত্রিকায় একটা খবর দেখলাম, তিন ছেলে পুলিশ কর্মকর্তা, এক মেয়ে স্কুল শিক্ষিকা, তবুও বৃদ্ধা মাকে ভিক্ষা করে জীবনযাপন করতে হচ্ছে!!! মানুষ হিসেবে এর চেয়ে দুঃখের, কষ্টের, গ্লানীর আর কিছুই হতে পারে না। পত্রিকায় ওই মায়ের ছবি দেখে চোখে পানি ধরে রাখা কষ্টকর। সাম্প্রতিক সময়ে এই ধরণের খবর একদমই বিরল নয় বরং আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে দিনকে দিন।

অন্যদিকে, মায়ানমারে গণহত্যার স্বীকার হওয়া রোহিঙ্গারা যখন প্রাণভয়ে পালিয়ে দলে দলে বাংলাদেশে আসছে, সেই সব ছবিও বিস্তর প্রকাশিত হচ্ছে পত্রপত্রিকায়। বাংলাদেশের ওই মায়ের পাশাপাশি রোহিঙ্গা মায়েদের-বৃদ্ধ বাবাদের ছবিও আমরা দেখছি। এই জীবন মরণ সমস্যার সময়েও কিশোর, যুবক, পৌঢ় রোহিঙ্গা ছেলেরা বৃদ্ধ বাবা-মাকে পিঠে কাঁধে চড়িয়ে, মাথায় তুলে, টুকরিতে বা চেয়ারে বসিয়ে মাইলের পর মাইল হেটে বাংলাদেশে আসছে।

ওদের কিসের এত জোর, আর আমাদের খামতিটা কিসে? ব্লগের ‘লিভিং লেজেন্ড’ চাঁদগাজী এবং আরো অনেকে রোহিঙ্গাসংক্রান্ত বিভিন্ন পোস্টে বা মন্তব্যে রোহিঙ্গাদেরকে শিক্ষাহীন, দরিদ্র, ধর্মপরায়ন এবং যুগ যুগ ধরে অসভ্য হিসেবে কটাক্ষ করেছেন দেখছি। অনেকে আবার মুক্তিযুদ্ধের সময়ে রোহিঙ্গারা আমাদের সাথে কি কি অন্যায় করেছেন, সেগুলোও খুঁজে বের করতে সক্ষম হয়েছেন দেখেছি। কিন্তু উন্নত দেশের ইষদুঞ্চ কামরায় বসে প্রতিনিয়ত ধর্মহীন ও জাগতিক হওয়ার দীক্ষা দেওয়া চাঁদগাজী বা তার মত যারা, তাঁরা কি ভেবে দেখেছেন জাগতিক মোহে অন্ধ হয়ে যাওয়ার পরিনতি কি? ধরতে পারছেন অশিক্ষিত, দরিদ্র আর ধর্মপরায়ন অসভ্য রোহিঙ্গাদের সাথে শিক্ষিত, ধর্মনিরেপেক্ষ এবং নব্য পুঁজিবাদি আমাদের পার্থক্যগুলো কোথায়?

ঠিক এই যায়গাটাতে আমরা ক্রমেই হেরে যাচ্ছি রোহিঙ্গাদের মত অশিক্ষিতদের কাছে। আমাদের প্রগতি আমাদের আত্মীয় স্বজনদেরকে অস্বীকার করতে শিখাচ্ছে। আমাদের মূল্যবোধগুলোকে গিলে খাচ্ছে। বুঝতেও পারছি না যে, আজকের শক্তিশালী যুবক আমাকেও একদিন বৃদ্ধ হতে হবে।

আমরা রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করেছি। অসংখ্য বাংলাদেশি নিঃস্বার্থভাবে সাহায্যও করছি। তবুও ওই পুলিশ কর্মকর্তাদের মত অনেক বাংলাদেশিই এখনও সহযোগিতায় স্বার্থহীন হতে পারিনি। একটা নিউজ দেখলাম, অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে স্থানীয় এমপি ইয়াবা বদির নেতৃত্বে একটা সিন্ডিকেট রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে অত্যন্ত কম মূল্যে তাঁদের মূল্যবান অলংকার কিনে নিচ্ছে। একইভাবে মুদ্রা বিনিময়ের মাধ্যমে প্রচন্ডভাবে ঠকানো হচ্ছে রোহিঙ্গাদের।

আমাদের অতিশিক্ষা এইসবই শেখাচ্ছে আমাদেরকে। নিতান্তই দুর্ভাগ্য আমাদের। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দিকে যথাসময়ে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়ে সত্যিকার মানবিকতা দেখানোর যে সুযোগ আমরা পেয়েছিলাম, যৌথ অভিযান পরিচালনার প্রস্তাব দিয়ে প্রথমেই আমরা সেটা হারিয়েছি। এভাবে অমানবিকতার প্রাতিষ্ঠানিকরণ, রাষ্ট্রীয়করণের মাধ্যমে আমরা এখন নোবেল পাওয়ার লোভে উদগ্রীব হয়ে আছি।

যখন আমরা ক্রমেই একটা অমানবিক সমাজের দিকে ধাবিত হচ্ছি, সেই একই সময়ে, এই দুঃসহ সময়েও রোহিঙ্গারা মানবিকতার চুড়ান্ত উদাহরণ সৃষ্টি করে যাচ্ছে। মৃত্যুবরণ করেও ওরা তাই জিতে যাচ্ছে আর নিরাপদে নির্বিঘ্নে বেঁচেও আমরা হেরে যাচ্ছি।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:৩১
২৫টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×