এ দেশের রাস্তায় বাসের রেষারেষিতে রাজিব হাত হারাচ্ছে, দিয়া-করিম প্রাণ হারাচ্ছে। কোটার খপ্পরে পড়ে তারুণ্যের ভবিষ্যৎ ঢাকার রাস্তার বাসগুলোর মতই ঝরঝরে হয়ে যাচ্ছে আর আমরা আমজনতা, শেখ পরিবার ও জিয়া পরিবার এই দুই রেজিমের রেষারেষিতে পড়ে আম ছালা সবকিছুই হারাচ্ছি। বিপদেই আছি! কথায় আছে, রাজায় রাজায় যুদ্ধ করে, উলুখাগড়ার বিপদ বাড়ে... স্বাধীনতার সাতচল্লিশ বছর পর এসে আমরা সেই উলুখাগড়ারও অধম হয়ে গেছি বলে মনে হচ্ছে।
ছোটবেলায় পাঠ্য বইয়ে পড়েছিলাম- এক বৃদ্ধ মৃত্যুশয্যায় তাঁর সাত ছেলেকে ডেকে সবার হাতে একটা করে লাঠি ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ভাঙ্গো। ছেলেরা সব সুপুরুষ, সামর্থ্যবান। পটাপট লাঠিগুলো ভেঙে ফেললো। এরপর বৃদ্ধ সাতটা লাঠিকে একসাথে কষে বেঁধে ছেলেদের হাতে দিয়ে বললেন, এবার ভাঙ্গোতো দেখি বাছারা... ছেলেরা বহুত চেষ্টা করে হাটু টাটু ছিলে ফেললেও ওই লাঠির আঁটিকে ভাংতে পারলো না।
বৃদ্ধ বললেন, কি বুঝলে বাবারা? ছেলেরা সুন্দর করে বুঝে গেলো ঐক্যের সুফল আর বিভক্তির কুফল।
তো এই বৃদ্ধ আর তাঁর সাত ছেলে মূখ্যসূখ্য মানুষ ছিলো, লেখাপড়া জানতো না, তাই তারা খুব দ্রুত বুঝতে পেরেছিলো নিজেদের ভালোটা। কিন্তু আমরা তো সব অতি শিক্ষিত। একেকজনের ডিগ্রি আর পদকের কি বাহার! আমরা এ সব বুঝতে যাবো ক্যান?
আজ পর্যন্ত দেখলাম না কোনো একটা সিঙ্গেল সাবজেক্টে বিএনপি আর আওয়ামীলীগ এক হতে পেরেছে। আওয়ামীলীগ যদি বলে ডান, বিএনপি নির্ঘাৎ বলবে, বাম। বিএনপি যদি বলে রাত, আওয়ামীলীগ অতি অবশ্যই বলবে, দিন। কি, আপনি কি মনে করতে পারছেন একটা ইস্যুও, যেখানে এই দুই দল একমত হয়েছে? আমি কিন্তু একটা খুঁজে পেয়েছি। সেটা হইলো শুল্কমুক্ত সুবিধায় ব্যক্তিগত দামী গাড়ি আমদানী।
এ ধরণের আরো কিছু ইস্যু নিশ্চয় আছে। কিন্তু যেই বিষয়গুলাতে এই দুই দল একমত হয়, সেইখানে বিলক্ষণ কোনা খারাপ কিছু থাকে। নিশ্চিত থাকেন যে সেইগুলা দিয়া এই দেশের ‘ইয়ে’ মারা ছাড়া কোনো উপকার হয় না।
আর এই দুই রেজিমের উত্তরাধিকার আমরাও মাশাল্লা, স্বাধীনতার পর থেকেই একদল আরেক দলকে সমানে পাঙ্গা দিয়ে যাচ্ছি। আরে ভাই, এরকম দ্বিধাবিভক্ত জাতিই যদি হবো, তাইলে স্বাধীন হয়ে কি ‘চ্যাটের বাল’টা ছিড়ছি আমরা? আর যাঁদের পিরিতে মুখর হয়ে এসব করছি, তাঁদের চৌদ্দগুষ্ঠির সবাই কিন্তু বহুত আগেই এই দেশের পাছায় লাত্থি দিয়ে বিদেশে দিব্বি সংসার পেতে বসেছে।
এর চেয়ে ভালো ছিলো যে স্বাধীনতার পর পরই পাড়ায় পাড়ায়, গ্রামে মহল্লায় মহল্লায় গণআদালত বসিয়ে আরো লাখ দুয়েককে কোরবানী দিয়ে দিতাম। তাহলে আমরা সবাই অন্তত একপক্ষীয় হতে পারতাম!
নিজেদের মুক্তি খুঁজতে একাত্তুরের প্রজন্ম বেছে নিয়েছিলো আওয়ামীলীগকে আর আশির প্রজন্ম বিএনপিকে। তারপর পদ্মা-মেঘনা-ধরলা-তিস্তায় বহু পানি গড়িয়ে গেছে। ‘ঘোড়ার ডাক’র যুগ থেকে দেশ এখন ফোরজিতে রুপান্তরিত। দুই ব্যান্ডের রেডিও ফেলে হাতে হাতে এখন এফএম। ম্যান! এটা ২০১৮। এই প্রজন্মকে এখন আর ‘চুদুরবুদুর’ বোঝানো যাচ্ছে না। ওদের কাছে দেশই আগে। দল নয়, কোনো ভন্ড ডাইন্যাস্টি নয়। এখন ওরা আর দুই ভাগে থাকতে চায় না। দুই পরিবারের মাইনক্যা চিপায় আটকে থাকতে চায় না। আটকে থেকেও যে কোনো লাভ নেই; এই প্রজন্ম সেটা বুঝতে পারছে কিন্তু পারছি না আমার মত বুইড়ারা। অগত্যা কি আর করা, নিজেই মোনাজাত ধরছি, হে আল্লাহ.... তো মা র কা ছে বি চা র দি লা ম...
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৭