somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটগল্পঃ একলা আঁধার

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৩:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাস থেকে নেমে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো দীপা। এখান থেকে তার বাসা রিকশায় দশ মিনিটের পথ। ভাড়া ফুরিয়ে রিকশায় উঠে বসে সে। একটা শিনশিনে কষ্টে তার বুকটা বিষিয়ে উঠে। ঘৃণায় মন মেঘাচ্ছন্ন হয়। বাসে আজকের ব্যাপারটা কোনোভাবেই ভুলতে পারছে না দীপা।

ব্যবস্থাপনায় মাস্টার্স করার পর প্রায় একবছর হন্যে হয়ে চাকরি খুঁজেছে দীপা। বিডিজবস ডট কমের মাধ্যমে অনেক এপ্লিকেশন করেছে সে চাকরির জন্য। সাড়া পেয়েছে খুব কম। একবার ইন্টারভিউতে ডাক এসেছিলো। চাকরি যদিও হয়নি। দেশের চাকরির বাজার যে খুব খারাপ তা বেশ টের পায় দীপা।

অবশেষে প্রতিবেশী ইমরান সাহেবের রেফারেন্সে এক প্রাইভেট কোম্পনিতে চাকরি হয় তার। ফ্রন্টডেস্ক এক্সিকিউটিভ। অফিস বনানীতে। নয়টা -ছয়টা অফিস তার। পাবলিক বাসে করেই যাতায়াত করতে হয় তাকে। এ ঢাকায় একজন মেয়ের জন্য একা যাতায়াত যে সুখের হবে না – এটা জেনেও সাহস করেছে দীপা।

প্রতিদিন চলার পথে আশপাশের কিছু মানুষের লোভাতুর দৃষ্টি, লালসার চোখ – সে বেশ বুঝতে পারে। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন অশ্লীল টিপ্পনি ও মন্তব্য তার কানে আসে। দীপা এসব এড়িয়ে যায়। সচেতনভাবেই।

আজ বিকেলে অফিস ছুটির পর বাসস্ট্যান্ডে এসে লম্বা লাইনের প্রায় পঞ্চাশ জনের পেছনে দাঁড়াতে পারে দীপা। অফিস ছুটির পর এ সময়টায় প্রতিদিনই এমন ভিড় দেখা যায়। তবু রক্ষে যে, এখানে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষার ব্যবস্থাটা আছে।

প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট অপেক্ষার পর গাড়িতে উঠার চান্স পায় দীপা। বাসের ভেতরে লোকে গিজগিজ করছে। বসার জন্য কোনো জায়গা অবশিষ্ট নেই। সামনের দিকেই থাকার চেষ্টা করলো দীপা। মহিলা সিটের কাছাকাছি। কিন্তু কোনো অজ্ঞাত কারণে সামনের দিককার এ জায়গাটায় ভিড় থাকে বেশি।

দীপা যেখানে দাড়িয়েছে, তার পাশেই দুজন উঠতি বয়সের ছেলে বসে আছে। এরা দুজন বন্ধু হবে হয়তো। তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলছে। দীপার দিকে তাকাচ্ছে। একটু অন্যরকমভাবেই তাকাচ্ছে। চলন্তবাসে ব্যালেন্স রাখতে দীপা ডান হাত দিয়ে উপরের রডে ধরে আছে। ছেলেদুটি নিজেদের মধ্যে কথা বলছে, আর হাসছে।

পরের স্টপ থেকে ভিড় আরো বাড়ে। গায়ের সাথে গা লেগে যাচ্ছে একএকজনের। দীপা টের পায়, তার পেছনে একজন লোক খুব ঘেঁষে দাঁড়াবার চেষ্টা করছে। অস্বস্থি লাগে তার। পেছন ফিরে দেখলো দীপা। লোকটির বয়েস চল্লিশের বেশি হবে। বেশ গোছানো ভদ্রলোক টাইপের। দীপার তাকানো দেখে হাসার চেষ্টা করলো লোকটি। লোকটির হাসি একটু বিচ্ছিরি ঠেকলো দীপার কাছে। সারা-শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠে তার। কিছুক্ষণ চলার পর, বাসটি হঠাৎ ব্রেক করলে লোকটি একেবারে দীপার উপরে এসে পড়ে। সাথেসাথে দীপার পেছনে অশ্লীলভাবে ছুঁয়ে দিয়ে হাত সরিয়ে নেয়।

দুঃখে, কষ্টে ম্রিয়মাণ দীপা ঘৃণার আগুন চোখে নিয়ে লোকটির দিকে ফেরে। একটু যেনো ভয় পেলো লোকটা। একটু দূরে সরে যায় সে। চোখের কোণে পানি এসে যায় দীপার।

–“এই যে আফা, মসজিদের কাছে না নামবেন, আইস্যা পড়ছি ত। নামবেন না…”

রিকশাওয়ালার কথায় ভাবনায় ছেদ পড়ে দীপার। বাসার সামনে এসে গেছে সে। এখন নামতে হবে।
অতপর, প্রস্তুতি আরেকটি আগামীকালের…।
===
সো আ প
২০১৪১০০৪
ঢাকা
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১০:০২
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×