somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আল বিরুনীর ভারততত্ত্ব বইতে প্রাচীন ভারতে হিন্দুদের বিচিত্র রীতিনীতি: উৎসর্গ শিবসেনার প্রোপিকওলা জনৈক আবাল মিজান

০৯ ই জুন, ২০১২ রাত ২:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



যে কোন জিনিসের ভিন্নতা স্পষ্টত, বিভিন্ন তথ্যের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে এবং তা কদাচিৎই নজরে পড়ে, আর কখনো বা চেষ্টা করলে জানার সুযোগ পাওয়া যায়। আর এ সকল বৈচিত্র যদি খুবই প্রবল হয়ে উঠে তাহলে তা জানার জন্য কৌতুহল আরো বৃদ্ধি পায়। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা চমৎকারিত্ত্বের রূপ গ্রহণ করে। আর যা প্রকৃতির সাধারণ নিয়মের অনুরূপ না হয় তাহলে যতক্ষণ তা প্রত্যক্ষ করা যায় না, ততক্ষণ তা কল্পনার বিষয় হয়েই থেকে যায়। হিন্দুদের অনেক রেওয়াজ আমাদের দেশ ও কালের রেওয়াজ থেকে এতটাই বিপরীত যে, তা আমাদের কাছে বড়ই বিকট বলে মনে হয়। বরং একথাও কেউ ভাবতে পারে যে, তারা জেনে বুঝেই আমাদের বিপরীতাচরণ করে। কেননা, আমাদের রীতি-রেওয়াজ তাদের সাথে একেবারেই মিল খায় না। বরং সর্বথায় তাদের সম্পূর্ণই বিপরীত। আর যতি তাদের কোনো রেওয়াজ আমাদের রেওয়াজের সাথে মেলেও তবুও তার অর্থ হবে সম্পূর্ণ বিপরীত।

তারা শরীরের কোনো অংশের কেশ মুণ্ডন করত না। মূল রুপে তো গরমকালে তারা উদোম হয়ে চলাফেরা করত আর মাথার চুল না কাটার এটাই ছিল মূল কারণ যে, তারা সূর্যালোক থেকে বাঁচতে চাইত। তারা গোঁফদাড়িও কামাত না। আর তো গুপ্তাঙ্গের কেশ মুণ্ডনের প্রশ্নই ওঠে না। তারা জনসাধারণকে এই বলে ধোঁকায় ফেলে রেখেছে যে, গুপ্তাঙ্গেও কেশ মুন্ডন করলে কামপ্রবৃত্তি বৃদ্ধি পায় এবং বিষয়-বাসনাও বেড়ে যায়। এজন্য এ সমস্ত লোকের প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্তেও গুপ্তাঙ্গের কেশ মুণ্ডন করে না। তারা নখ বৃদ্ধি করে এবং নিজেদের অলসতার গুণগান করে। কেননা, তারা নখ দিয়ে কোনো কাজ করে না। আর সুখদায়ক অলস জীবন অতিবাহিত করার জন্যে তারা অন্যকে দিয়ে মাথার চুলের মধ্যে উকুনের সন্ধান চালায়।

হিন্দুরা আলাদা আলাদা বসে পানাহার করে। তাদের খাবার জায়গা গোবরলিপ্ত হয়। তারা উচ্ছিষ্ট ফেলার জন্যে আলাদা পাত্র ব্যবহার করে না এবং যে পাত্রে তারা খায় তা মাটির তৈরী হলে খাওয়ার পরে তাকে ফেলে দেয়। যেহেতু তারা চুন ও সুপারি দিয়ে পান খায় সেহেতু তাদের দাঁত সর্বদাই লাল থাকে। তারা খালি পেটে মদিরা পান করে এবং তার পরে ভোজন করে। তারা গরুর মূত্রপান করে কিন্তু তার গোশত খায় না। তারা ঝাঁঝ, করতাল ইত্যাদি কাঠের ছড়ি দিয়ে বাজায়।

তারা পায়জামার (স্থলে) জন্য ধুতি ব্যবহার করে। যারা স্বল্প পোশাক পড়তে চায় তারা দু’আঙুল চওড়া কাপর তলপেটের নিচ দিয়ে গুপ্তাঙ্গকে আড়াল করে কাছা দিয়ে কোমড়ের সাথে বেঁধে নয়ে। কিন্তু তাদের মধ্যে যারা বেশী কাপড় পরতে চায় তারা ধুতি পরে। যাতে একটা কাপড় লাগে যা দিয়ে একটি চাদর ও কম্বল বানিয়ে নেয়া যায়। এ ধুতি এতটা লম্বা এবং চওড়া যে, তা পা পর্যন্ত পড়ে এবং পুরো শরীরকে ঢেকে দেয়া যায়। তা কোমড়ে পেঁচিয়ে পিছনে কাছা দিয়ে পরা হয়।

এর একটি অংশ দিয়ে মাথা, বুক ও শরীরের উর্ধ্বাংশ বা ঘাড় ঢেকে নেয়, দেখলে মনে হয় তা পায়জামার মতো করে বানানো। এর পিছনে আলাদা বোতাম লাগানো হয়। তাদের কুর্তা ডান এবং বাম দুদিকেই দেয়া থাকে। জুতো তারা ততক্ষণ পর্যন্ত পরতে শুরু করে না যতক্ষণ পর্যন্ত না তা শক্ত হয়। তারা বাছুরের চামড়া থেকে জুতো তৈরী করে। হাত-মুখ ধোয়ার সময় প্রথমে তারা পা ধোয়, তারপরে মুখ। তারা তাদের স্ত্রীদের সাথে সহবাসের পূর্বে গোসল করে।

দন্ডায়মান অবস্থায় দ্রাক্ষাশাখার মত পরস্পরকে জড়াজড়ি করে ওরা সহবাস করে। হাল চালনা করার মত, স্ত্রী নিচ থেকে উপর দিকে দেহ আন্দোলিত করতে থাকে। পুরুষ নিস্ক্রিয় থাকে।

ব্রত পালনের দিন তারা শরীরের সুগন্ধাদি মাখার পরিবর্তে তারা সারা শরীরে গোবর লেপন করে। পুরুষরা স্ত্রীদের অলঙ্কার পরিধান করে। তারা ভূষণাদি পরিধান করে, কানে দুল, বাহুতে কড়া, অনামিকা এবং পায়ের আঙ্গুলে স্বর্ণালঙ্কার পরিধান করে। তারা জিন ছাড়াই অশ্বারোহন করে। আর যদি জিন তারা লাগায়ও তবুও তারা ঘোড়ার ডানদিক থেকে গিয়ে উঠে। আর ঘোড়ার পিঠে উঠে কোথাও গেলে তারা পিছনে একজনকে বসিয়ে নেয়।

নপুংসকদের সাথে সঙ্গমে অপারগ লোকদের তারা কৃপা করে। নপুংসকদের পুষণ্ডিল বলা হয়। এরা পুরুষাঙ্গকে মুখে নিয়ে তার বীর্য গলঃধকরণ করে। মলত্যাগের সময় তারা প্রাচীরের দিকে মুখ করে পশ্চাৎদেশ পথচারীর দিকে উন্মুক্ত করে রাখে। তারা শিবের লিঙ্গ বা পুরুষাঙ্গের পূজা করে।

তারা তাদের কোমড়ের ডানদিকে কুঠার বেঁধে নেয়। তারা একটি মেখলা পরে, যাকে যজ্ঞোপবিত বলে। সেটি বাম কাঁধ থেকে ডানদিকের কোমড় পর্যন্ত ঝোলানো থাকে। সমস্ত প্রকার কাজের পূর্বে এবং আপৎকালে তারা স্ত্রীর পরামর্শ গ্রহণ করে। সন্তান জন্মালে কন্যা সন্তানের চেয়ে পুত্র সন্তানের দিকে তারা বেশি মনযোগী হয়। তাদের যমজ সন্তান জন্মালে ছোট সন্তানটির প্রতি তাদের মনযোগ বেশী থাকে। বিশেষ করে দেশের পূর্বঞ্চলে এটা বেশী লক্ষ্য করা যায়। কেননা, তাদের মতে, প্রথমটি মূলত কামপ্রবৃত্তির ফসল কিন্তু দ্বিতীয়টি পরিণত চিন্তন ও প্রশান্ত সহবাসের পরিণাম।

কারো ঘরে প্রবেশের পূর্বে তারা অনুমতি নেয় না কিন্তু ফিরে আসার সময় অনুমতি চায়। বসার সময়ে তারা হাত বা অন্য কিছু দিয়ে এলোমেলো করে ঝাড় দিয়ে বসে। থুথু ফেলার বা নাক ঝাড়ার সময় আশেপাশে বসে থাকা লোকদের প্রতি তারা কোনো পরোয়া করে না। তারা প্রকাশ্যে মথা থেকে উকুন বেছে তাকে মারতে দ্বিধা করে না। তারা হাঁচিকে অশুভ মনে করলেও পশ্চাদদেশ হতে বায়ু নিঃসরণ ও তার গন্ধ নাকে আসাটাকে শুভ লক্ষণ বলে বিবেচনা করে। তারা জোলাদের নোংরা এবং নাপিত ও মুচিকে স্বচ্ছ বা পবিত্র জ্ঞান করে। যারা মরণাপন্ন পশুকে পানিতে ডুবিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে মারে তাদেরকে পবিত্র জ্ঞান করে।

তাদের শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে লেখার জন্য কালো তক্তা (স্লেট) ব্যবহার করে এবং চরড়ার দিক থেকে নয়; বরং লম্বায় বাম দিক থেকে ডান দিকে লিখে যায়। নিচের পংক্তিটি পড়ে কারো ধারণা হতে পারে যে, কবির এ বক্তব্য মূলত হিঁদুদের উদ্দেশ্যেই হয়ে থাকবে।

“ কত না লেখক কয়লার মতো কাগজের ব্যবহার করে। তারা তার উপর লেখনীর মাধ্যমে সাদা কালি দিয়ে লেখে, মনে হয় যেন অন্ধকারকে দিবালোকে পরিবর্তিত করে দেয়া হয়েছে: মনে হয় যেন তার উপরে তারা কিছু বুনে দিয়েছে, কিন্তু তার সীমানা ছাড়িয়ে যায়নি।”

তারা তাদের পুস্তকের শিরোনাম গ্রন্থের শুরুতে দেয় না, বরং নীচে দেয়। তারা তাদের ভাষার সংজ্ঞাসমূহকে স্ত্রীলিঙ্গের মাধ্যমে প্রকাশ করে থাকে। তাদের মধ্যেকার কোনো ব্যক্তি কাউকে কিছু দিতে গেলে সে আশা করে যে, সেটি এমনভাবে তার দিকে নিক্ষেপ করবে, যেমনটি একটি কুকুরকে নিক্ষেপ করে কিছু দেয়া হয়। যদি দুজন ব্যক্তি নার্দ (পাশা বা ঐ জাতীয় কোনো খেলা) খেলে তাহলে তৃতীয় ব্যক্তি দুয়ের মাঝখানে পাশা নিক্ষেপ করে। তারা সেই লালাকে খুব পছন্দ করে যা কামোত্তেজনার সময় বড় বড় হাতির গাল বেয়ে প্রবাহিত হয়, যা অত্যন্ত দুর্গন্ধ হয়ে থাকে।

আমরা ‍যেমন ওদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও পৃথক হওয়ার দাবি রাখি, হিন্দুরা যদি তেমন আমাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ হওয়ার দাবি করে, তা হলে ওদের ছেলেদের নিয়ে একটি পরীক্ষা করে প্রশ্নটির মীমাংসা করা যেতে পারে। মুসলমান রীতিনীতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ যেসব হিন্দু বালক দাসরূপে মুসলমান রাজ্যে সম্প্রতি এসেছে তাদের মধ্যে এমন একজনকেও আমি দেখিনি, যে প্রভুর সামনে, প্রভুর পাদুকাজোড়া ঠিকমতো পড়াতে পেরেছে, অর্থাৎ ডান পায়ের জায়গায় বাম পায়ের জুতা না রেখেছে, অথবা প্রভুর পোষাক ভাঁজ করার সময় উল্টো করে ভাঁজ না করেছে, কিংবা কার্পেটের নিচের দিকটি উপরে না রেখে বিছিয়েছে। এরকম আরও ব্যাপার আছে যা ওদের মানসিক রূচিবিকৃতির ফসল।

ইসলামপূর্ব যুগে আরবদেরও ঐসব বহু কদাচার ও কুরীতি ছিল। তারা রজঃস্বলা ও গর্ভিনী স্ত্রীগমন করত, হায়েজের গোসলের পর একাধিক পুরুষগমন করত, নিজ স্ত্রী বা কন্যার গর্ভে অন্য ব্যক্তির বা অতিথির সন্তানকে নিজ সন্তান হিসেবে গ্রহণ করত। তাদের পূজাপদ্ধতিতে, হাত ও মুখ দিয়ে শিস দেয়া এবং নোংরা ও মৃত পশুর গোশত খাওয়ার কথা নাহয় বাদই দিলাম। আল্লাহকে অসংখ্য ধন্যবাদ, ইসলাম এসব কদর্যতার মূলোচ্ছেদ করেছে, এবং ভারতবর্ষের যেসব জায়গার লোকের ইসলাম গ্রহণ করেছে, সেখানেও এসব জঘন্য ও গর্হিত কর্ম রহিত আছে।

সূত্র: ভারততত্ত্ব, অনুবাদ: আবু মহামেদ হাবিবুল্লাহ। দিব্যপ্রকাশ
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০১২ রাত ২:৩১
১৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×