somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছিন্ন হয়েছে মোর নাড়ির বন্ধন

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
মরানাপন্ন অবস্থায় টঙ্গী হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল এবং ঢাকা মেডিকেল থেকে হোলিফ্যামিলী হাসপাতলে পৌঁছেছি। এব্যাপারে যুগান্তর পত্রিকার টঙ্গীর রিপোর্টার আর আমার অফিসের লোকজনের সহায়াতার কথা কোনদিনই ভুলতে পারবো না। সড়ক দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আমার স্ত্রী ছোট বাচ্চটাকে কোলে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে এসেছে। রাতেই গাইবান্ধা থেকে আমার ছোট ভাই এসেছে। ছোট বোন এসেছে। আমার চাচাতো ভাইয়ের ছেলেরা এসেছে। সুদুর গাইবান্ধা থেকে এত লোকজন ছুটে এলেও মাকে জানানো হয়নি। কারণ, মা ছেলে-মেয়েদের প্রতি খুবই দুর্বল। আমাদের সামান্য আহত অবস্থা দেখলেও কেঁদেকেটে একাকার করে ফেলেন। সেই মানুষ যদি আমার সড়ক দুর্ঘটনায় মরানাপন্ন অবস্থার কথা শুনতে পায়, তাহলে হার্টফেল করতে পারে। তাই আমার জ্ঞান ফেরার পর পরই সবাইকে অনুরোধ করে বলেছি, আমার দুর্ঘটনার কথা যেন মাকে না জানানো হয়।
কিন্তু বিধির সৃস্টি রহস্য বোঝা দায়। মায়ের নাড়ি-ছিঁড়ে জন্ম নেয়া সন্তানের খবর কেউ না দিলেও তার কলিজায় বিনা তারেই খবর হয়ে যায়। আমার মায়ের বেলাতেও এই নিয়মের ব্যাতিক্রম হয়নি। মা অস্থিরতায় ছটফট করতে থাকেন। এবাড়ি ওবাড়ি গিয়ে আমার খবর জিজ্ঞেস করেন। কেউ কোন উত্তর দিতে পারে না। উত্তর না দেয়ার কারণও ছিল, আমার সড়ক দুর্ঘটনার কথা আমার এলাকায় তখনও জানানো হয়নি। এ অবস্থায় মা তিনদিন অস্থিরতায় নাওয়া খাওয়া ভুলে যান। আমার খবর জানার জন্য পাড়ার সবাইকে জিজ্ঞেস করতে থাকেন। আমার ছোট ভাইটি মাকে কিছু না বলেই ঢাকায় চলে এসেছে। এতে মা আরো অস্থির হয়ে পড়েন। অবশেষে আমার ভাল-মন্দ কোন খবর না পেয়ে নিজেই রিক্সা ভাড়া করে একা একা আমার শ্বশুর বাড়ি গিয়ে উঠেন। আমার স্ত্রীর বড় ভাবীকে আমার কোন দুর্ঘটনা হয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করেন। তিনি আমার খবর জানতেন। কিন্তু সরাসরি আমার দুর্ঘটনার খবর না বলে আদর আপ্যায়ন করে মাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তার আদর আপ্যায়ন ব্যার্থ হয়। মা তার প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য উদগ্রীব। মায়ের ঘনঘন প্রশ্নের প্রেক্ষিতে বড় ভাবী উল্টো মাকে জিজ্ঞেস করেন, “আপনার মেজ ছেলে যে এক্সিডেন্ট করেছে এ খবর আপনি কোথায় পেলেন”? মা সহজ সরল ভাবেই জবাব দেন, “তিন দিন হলো আমার অস্থির লাগতেছে। কোন কিছুতেই ভাল লাগছে না। আমার মন বলতেছে আমার ছেলেটার কিছু একটা সমস্যা হয়েছে”। এ কথা শুনে আমার স্ত্রীর বড় ভাবী আশ্চার্য হয়ে যান। আমার মায়ের সন্দেহ যে সত্যি সত্যিই বাস্তব ঘটনা, এটা তিনি কিভাবে বুঝলেন! তিন দিন হলো তার মনে অস্থিরতা এবং আমার দুর্ঘটনাও তিনদিন হলো।
বড় ভাবী আমার মায়ের দুর্বলতা কিছুটা জানতেন, তাই তিনি সরাসরি আমার দুর্ঘটনার কথা না বলে বললেন, “আপনার মেঝ ছেলের সামান্য সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছিল এখন ভাল হয়েছে”। এটুকু শুনেই মা কান্নাকাটি শুরু করে দেন এবং ভাবীকে বলেন, “আমার ছেলের সামান্য দুর্ঘটনা নয়, বড় কিছু হয়েছে। সামান্য দুর্ঘটনায় আমার মনে এমন অস্থিরতা হতো না”। ভাবী মাকে বুঝানোর চেষ্টা করেন। অনেক বুঝানোর পর মা শান্ত হলে তখন বাসায় এনে রেখে যান।
প্রায় আড়াই মাস হাসপাতালে চিকিৎসার পর, লোহালক্কড় লাগানো আধা ভাঙা দেহ নিয়ে বাসায় ফিরি। বাসায় ফিরে মায়ের এমন কাহিনী শুনে আমিও আশ্চার্য হয়ে যাই। এ যেন মায়ের নাড়ি-ছেঁড়া সন্তানের সংযোগ বিহীন সংযোগ। পৃথিবীর যে কোন প্রান্তেই সন্তান থাকে না কেন, ইথারে সিগন্যাল পৌছার আগেই মায়ের কলিজায় খবর পৌছে যায়। হঠাৎ করেই আমার সেই সংযোগ বন্ধ হয়ে গেল। গত ৫ই অক্টোবর মা মারা গেছেন। সেই থেকে ছিন্ন হয়েছে মোর নাড়ির বন্ধন। এখন যত বিপদেই পড়ি না কেন, মা নেই আর কেউ আমার জন্য অস্থিরতায় ভুগবে না। যে মায়ের কলিজায় দুর্ঘটনার খবর পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই সন্তানের সুস্থ্যতা কামনা করে প্রার্থনা করতো, এখন আর কেউ সেই প্রার্থনা করবে না। কারণ আমার মায়ের কলিজায় আমার খবর যে ভাবে পৌছাতো, সেভাবে আর কারো কলিজায় পৌছাবে না। চিরতরে ছিন্ন হয়েছে মোর মায়ের সাথে নাড়ির বন্ধন।
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×