somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গভীর রাতে এটা কিসের দৃশ্য?

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আমাদের বাড়ি থেকে প্রায় দেড় মাইল পূর্বে রতনপুর চরে কয়েক বিঘা জমি আছে। গত রাতে আমাদের ক্ষেতের পাশের ক্ষেত থেকে চোরেরা ধান কেটে নিয়ে গেছে। ক্ষেত ভরা পাকা ধান। কামলার অভাবে ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে না। চোরের ভয়ে বাবা ক্ষেত পাহারা দেয়ার জন্য আমাদের বাড়ির চাকর নাদের আলী আর সেকান ভাইকে কাঁথা বালিশ দিয়ে পাঠালেন। রাত বিরাতে মাঠে ঘাটে ঘুরে বেড়ানো আমার ছোট থেকেই নেশা। বিরান বালুচরের মাঝখানে রাত কাটানোর নেশায় পেয়ে বসল। আমি বাবাকে না জানিয়েই চাকরদের পিছু নিলাম। আমার উদ্দেশ্য ফাঁকা মাঠে রাতের অন্ধকারে মনের আনন্দে গলা ছেড়ে গান গাইবো। বাড়িতে তো চিল্লিয়ে গান গাওয়া যায় না। গাইলেও বেসুরো কণ্ঠের জন্য অনেকের ধমক খেতে হয়। কাজেই মনে মনে চিন্তা করলাম এই সুযোগ হাত ছাড়া করা ঠিক হবে না।

একে তো অগ্রাহায়ণ মাস তারোপর চর এলাকা। চারিদিকে নিরব নিস্তব্ধ ফাঁকা আর ফাঁকা। শীতের আমেজ শুরু হলেও খুব একটা শীত পড়ে নাই। চরের পশ্চিমে মানাস নদী পূর্ব দিকে যমুনা নদী। উত্তর দক্ষিণে ধুধু বালুচর। জমির আশেপাশে তো দূরের কথা দুই এক মাইলের মধ্যেও কোন ঘরবাড়ি নেই। যে কারণে ক্ষেতের পশ্চিম পাশে নদীর কাছাকাছি বাবা আগে থেকেই ধানের নাড়া দিয়ে অস্থায়ী ডেরা তৈরী করে রেখেছে।

নদীর পশ্চিম তীরে শ্মশান ঘাট। কয়েক দিন আগেও এখানে হিন্দুদের মরা পুড়েছে। আমাদের ক্ষেতে যেতে হলে এই শ্মশান ঘাটের পাশ দিয়েই যেতে হয়। মানাস নদী পার হওয়ার রাস্তাটিও এই শ্মশান ঘাটের পাশ দিয়ে। নদী অনেকটা শুকিয়ে গেছে তারপরেও এক তলকাছা পানি। নদী পার হয়ে আমরা যখন ক্ষেতে পৌঁছলাম তখন রাত দশটার কম হবে না। গ্রামে রাত দশটা মানে অনেক রাত। তিনজনের হাতেই তিনটি লাঠি। নাদের আলীর মাথায় কাঁথা বালিশ। ডেরায় ঢুকে হ্যারিকেনের আলোতে ধানের নাড়া বিছিয়ে বিছানা তৈরী করে গোল হয়ে বসলাম। অবাধ স্বাধীনতায় মনের আনন্দে তিনজনেই গলা ছেড়ে গান শুরু করে দিলাম। আহা! সে কি গান! আমাদের কোরাস গানের সম্মিলিত কণ্ঠ শুনে চোরদের চুরি করা তো দূরের কথা চরের শিয়ালগুলো পর্যন্ত চুপ হয়ে গেছে। অন্যান্য দিন রাতের বেলা চরে এলে শিয়ালের কণ্ঠ শুনতে পাই কিন্তু আজ আর তাদের কণ্ঠও শুনতে পেলাম না। ঘরবাড়ি বিহীন ফাঁকা মাঠে নিরব নিস্তব্ধ অবস্থায় গান যেন মনের অজান্তেই একটার পর একটা গলা দিয়ে বের হয়ে আসছে।

রাতের অন্ধকারে এরকম নিরিবিলি পরিবেশ খুব একটা পাওয়া যায় না। তিনজনের কেউ ভালোভাবে গান জানি না, তারপরেও খায়রুণ সুন্দরী থেকে শুরু করে গুনাই বিবি, রুপভান, সিনেমার গান, ভাওইয়া, পল্লীগীতি কোনটাই বাদ গেল না। প্রায় ঘন্টা খানেক এ গানের দুই লাইন ও গানের তিন লাইন এভাবে গাইতে গাইতে ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। নাদের আলী আর সেকান ভাই গান গাইতে গাইতে সারাদিনের পরিশ্রমে ক্লান্ত দেহ বিছানায় এলিয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।

আমার আর ঘুম আসে না। ওরা ঘুমিয়ে পড়ায় আমি গলা ছেড়ে গান না গেয়ে গুনগুন করে গাইতে লাগলাম। রাত প্রায় বারোটার দিকে আকাশে চাঁদ উঠল। আস্তে আস্তে পুরো চর চাঁদের আলোয় আলোকিত হয়ে গেল। ইচ্ছা হলো সাথে কেউ সঙ্গ দিলে এমন চাঁদনী রাতে দুধের মত সাদা ফকফকা বালুচরে হেঁটে বেড়াতাম। মন ভরে চাঁদনি রাতের স্বাদ নিতাম। কিন্তু একা একা এই বিরান বালুচরে বের হওয়ার সাহস হলো না। নদীর পশ্চিম পারেই শ্মশান ঘাট। শ্মশানের ভূতের কথা মনে পড়ে গেল। এই শ্মশানে মাঝে মাঝে নাকি ভূত প্রেতের উৎপাত হয়। যদি ভূতগুলো নদী পার হয়ে এপারে বালুচরে চলে আসে, তাহলে একা পেয়ে ঘাড় মটকে বালুর ভিতর পুঁতে ফেলতে পারে। সেই কথা চিন্তা করেই ডেরার ভিতরে শুয়ে শুয়ে ডেরার ফাঁক ফোকর দিয়ে চাঁদ দেখতে লাগলাম। চাঁদের আলোয় ডাইনে বায়ে অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায়। আকাশে এক ফোটা মেঘ নেই। পুরো পরিষ্কার আকাশ। ডেরায় শুয়ে শুয়ে চাঁদ দেখতে খুবই ভালো লাগছে। তন্ময় হয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি। চাঁদনী রাত অনেক দেখেছি কিন্তু আজকের মত এত ভালো কখনও লাগেনি।

হঠাৎ পশ্চিম দিকে তাকাতেই থমকে গেলাম। আমাদের ডেরা থেকে মাত্র পঞ্চাশ হাত দূরে কি যেন দাঁড়িয়ে আছে। চিৎ হয়ে শুয়ে ছিলাম। দৃশ্যটি ভালো করে দেখার জন্য উপর হয়ে শুয়ে মুখটি পশ্চিম মুখ করে ঘুরে দেখতে লাগলাম। ডেরাটি পূর্ব মুখ করে তোলা। কারণ পূর্ব দিকেই আমাদের ধান ক্ষেত। আমরা পশ্চিম দিকে মাথা দিয়ে শুয়ে আছি। ডেরার পশ্চিম পাশটা ধানের নাড়া দিয়ে আড়াল করা আছে, যাতে শীতের ঠান্ডা বাতাস মাথায় না লাগে। নাড়ার ফাঁক দিয়ে ভালো করে তাকাতেই চক্ষু ছানা বড়া হয়ে গেল। সাদা শাড়ি পড়া এক মহিলা নদীর কিনারে পশ্চিম মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। মাথার চুলগুলো এলোমেলোভাবে কোমরের নিচ পর্যন্ত ঝুলে আছে। মহিলা ঠাঁয় দাঁড়ানো কোন নড়াচড়া করছে না। ভয়ে মুষড়ে গেলাম। পশ্চিম দিকেই শ্মশান ঘাট। মনে মানে ভাবলাম, এ কি শ্মশান থেকে উঠে এলো নাকি!

নাদের আলী আর সেকান ভাই নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। ডাক দেয়ার সাহস হচ্ছে না। কি জানি মহিলা যদি ডাইনি হয়ে থাকে। নাদের আলীকে ডাক দিলে যদি দৌড়ে এসে গলা টিপে ধরে, ঘাড় মটকে বুকের রক্ত চুষে খাওয়া শুরু করে। ভয়ে অন্তরাত্মা শুকিয়ে গেল। ওদেরকে ডাক দেয়ার যেমন সাহস পেলাম না তেমনি ঐ দৃশ্য থেকে চোখও সরাতে পারছিলাম না। আমি তন্ময় হয়ে তাকিয়ে আছি। হঠাৎ দেখি মহিলা সোজা পশ্চিম দিকে কাছার বরাবর নিচের দিকে খাড়া অবস্থায় আস্তে আস্তে নেমে গেল। আমি আরো ভয়ে পড়ে গেলাম। ওখানে তো নদীর খাড়া কাছার। কমপক্ষে বারো হাত গভীর। কেউ এখানে ঝাপ দিলে ঝপ করে নিচে পড়ার কথা, কিন্তু মহিলা কিভাবে আস্তে আস্তে নেমে গেল! কোন মানুষের পক্ষে তো এভাবে নামা সম্ভব নয়। ভয়ে শরীরের লোম খাড়া হয়ে গেল। দৃশ্যটি দেখার পরে মুহুর্তেই কাঁথা দিয়ে মাথা ঢেকে শুয়ে পড়লাম। কিন্তু মাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকলে কি হবে সারা রাত আর ঘুম হলো না।

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেও রাতের ঐ দৃশ্যই মনে পড়তে লাগল। কিন্তু এই ঘটনা ওদের দুইজনকে বললাম না। ঘটনা শুনলে যদি ওরা আবার ভয় পেয়ে যায়, তাহলে রাতে আর ধান পাহাড়া দিতে আসবে না। ক্ষেতে পাহারা না থাকলে চোরে সুযোগ পেয়ে যেতে পারে।

পরদিন বাবা প্রায় বারো তেরোজন কামলা নিয়ে ক্ষেতের ধান অনেকটা কাটলেও পুরোপুরি কাটা শেষ করতে পারলেন না। ধান কাটা বাকি থাকার জন্য সেরাতেও পাহাড়া দিতে আসতে হলো। রাতের দৃশ্য মনে হওয়ায় আমি না যাওয়ার চেষ্টা করলাম, কিš ‘নাদের আলী আর সেকান ভাই আমাকে ছাড়লো না। গত রাতের মত গানের আনন্দ উপভোগ করার জন্য জোর করেই ওরা আমাকে টেনে নিয়ে এলো। রাস্তায় এসে সেকান ভাই পাশের বাড়ির আছর উদ্দিনকেও সাথে নিল।

আজকে চারজন হওয়ায় সাহস অনেকটা বেড়ে গেল। সাহস বেড়ে গেলেও গত রাতের মত আনন্দ পাচ্ছিলাম না। বার বার রাতের দৃশ্য মনে পড়তে লাগল। ওদের তিনজনের মনে খুব আনন্দ, কারণ ওরা তো রাতের সেই দৃশ্য দেখে নাই। ভয় ভীতির মাঝে অনিচ্ছা সত্বেও ওদের সাথে সাথে গানের তাল মিলাতে লাগলাম।

আমি গান বন্ধ করে চুপ হয়ে গেলেও নাদের আলী আর সেকান ভাই গুনগুন করে অনেকক্ষণ গান গাইল। গান গাইতে গাইতে সেকান ভাই ঘুমিয়ে পড়লেও নাদের আলী জেগে আছে। চাঁদ উঠলেও আমি আর বাইরে তাকানোর সাহস পাচ্ছি না। কাঁথা দিয়ে মাথা ঢেকে শুয়ে আছি। এমন সময় নাদের আলী আমাকে কুনুই দিয়ে গুতা দিয়ে ফিস ফিস করে বলল, ও চাচা-- ঘুমাইছেন?
আমার ঘুম আসছিল না, গত রাতের দৃশ্য বার বার মনে পড়ছিল। আস্তে করে বললাম, না।
নাদের আলী আস্তে আস্তে বলল, ও চাচা পশ্চিম দিকে দেখেন তো এডা কি?
নাদের আলীর কথায় বুঝে ফেললাম, এটা সেই গতকালের দৃশ্য। যে ভয়ে কাঁথার তলে মাথা ঢুকিয়েছি সেই দৃশ্য পুনঃরায় দেখার সাহস হলো না। ভয়ে আরো কাঁথার ভিতরে ঢুকে আস্তে আস্তে বললাম, যাই হোক না কেন, মাথা ঢাইকা ঘুম দে।
না চাচা ঘুমান যাইবো না, এরকম জিনিষ তো আগে কোন দিন দেহি নাই, চাচা আপনে একটু চায়া দেহেন তো।
আমি কাঁথার তলে মাথা রেখেই বললাম, আমি গতকাল দেখছি আইজকা আর দেখুম না।
নাদের আলী আশ্চার্য হয়ে বলল, কন কি চাচা! আপনি গত কাইল দেখছেন তারপরেও আমাগো কইলেন না ক্যান?
-- কইলে যদি তোরা ভয় পাস এর লাইগা কই নাই।
এমন সময় নাদের আলী আশ্চার্য হয়েই বলে উঠল, চাচা দেহেন দেহেন, আস্তে আস্তে জিনিষটা উপর দিকে লম্বা হইতেছে।
নাদের আলীর কথায় দেখার আগ্রহ দমাতে পরলাম না। কাঁথা দিয়ে মাথা ঢাকা অবস্থায় শুধু চোখ দু’টো বের করে নাড়ার ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে দেখি সাদা শাড়ি পড়া অবস্থায় দশ বারো হাত লম্বা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মাথার চুলগুলিও পাঁচ ছয় হাত লম্বা। তবে কালকের মতই পশ্চিম মুখ করে শ্মশানের দিকে তাকিয়ে আছে। চুলসহ শরীরের পিছন অংশ দেখা গেলেও মুখ দেখা যাচ্ছে না। আমরা দুইজন পাশাপাশি শুয়ে শুয়ে দৃশ্যটি দেখছি। এমন সময় পাশের বাড়ির আছর উদ্দিন বলে উঠল, ওই শালা নাদের আলী, ঘুমান বাদ দিয়া এত রাতে ফুসুর ফুসুর করতাছোস ক্যান?
নাদের আলী আছর উদ্দিনের কানের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে আস্তে বলল, কথা কইস না, আস্তে কইরা পশ্চিম দিকে চায়া দেখ।
আছর উদ্দিও কৌতুহলী হয়ে পশ্চিম দিকে তাকিয়েই বলে উঠল, ও আল্লাহ গো, এইডা কি খাড়ায়া আছে?
নাদের আলী দাঁতে দাঁত চিপে ধরে ফিস ফিস করে বলল, ওই শালা, কথা কইস না, বিপদ আছে।
নাদেরের কথা শুনে আছর উদ্দিন ভয়ে চুপসে গেল। মাথা কাঁথার নিচে দিয়ে আল্লাহ আল্লাহ করতে লাগল। আছর উদ্দিনের পাশেই ছিল সেকান ভাই, আস্তে আস্তে কুনুই দিয়ে সেকান ভাইকে গুতা দিতেই সেকান ভাই জোরে চিল্লিয়ে উঠল, এই শালারা কি শুরু করছোস রে- - । ঘুমাইতে দিবি না লাঠি দিয়া পেটন ফালামু। ঘুম দে হারামজাদারা।
সেকান ভাইয়ের চিল্লানের সাথে সাথেই মহিলাটি কাছারের উপর থেকে সোজা নিচে নেমে গেল। মানুষ লিফটে যেভাবে উপর থেকে নিচের দিকে নেমে যায় ঠিক সেভাবেই আস্তে আস্তে নেমে গেল। স্বাভাবিকভাবে কোন মানুষের পক্ষেই এভাবে নামা সম্ভব নয়।
এর পরে নাদের আলীকে বললাম, পশ্চিম দিকে আর চায়া দেহনের দরকার নাই, মাথা কাঁথার নিচে দিয়া চোখ মুখ বন্ধ কইরা ঘুম দে।
নাদের আলীকে ঘুমাতে বলে আমি মাথা ঢেকে শুয়ে শুয়ে এই অদ্ভুত দৃশ্য নিয়ে চিন্তা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়েছি আর বলতে পারি না।

সকাল বেলা নাদের আলী কাঁথা বালিশসহ বাড়ি গিয়ে হাজির। বাড়ি ফিরে বাবাকে বলল, দাদা-- বেশি করে কামলা নেন, ওই চরে আর থাকা যাইবো না। আমাগো ডেরার পশ্চিম পাশে এক দুষ্টা আইসা খাড়া থাকে।
-- কিসের দুষ্টা রে?
-- আমাগো ডেরার ঠিক পশ্চিম পাশে কাছারের উপর সাদা শাড়ি পরা এক মহিলা চুল আউলা ভাউলা কইরা পশ্চিম মুখ হয়া খাড়ায়া থাকে। আমরা দেইখা ডরাইছি।
বাবা সাহস দেয়ার জন্য বলল, ধূর পাগল, ঘর বাড়ি নাই ফাঁকা বালুচরে মহিলা যাইবো কোইত্থিকা?
-- না দাদা আমি একলা না তো, আমরা তিনজনে দেখছি। দশ হাত লম্বা একটা মহিলা খাড়ায়া আছিল।
-- তিনজনে দেখার পরে ছাইড়া দিলি ক্যান? তগো কাছে লাঠি আছিল না, লা ই লাহা কালেমা পাইড়া পাছায় পেটন দিলেই তো জিন্দিগীর মতো চইলা যাইতো। আর জীবনেও ্ওই এলাকায় আইতো না।
বাবার কথা শুনে নাদের আলী হাসি হাসি মুখে বলল, দাদা পেটন দিমু কি, মহিলারে ওই অবস্থায় দেইখাই তো আমরা খেতার তলে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে মরার অবস্থা।
-- ধূর পাগল, মহিলা কি তগো দাঁত বাইর কইরা ভেচকি দিছে?
-- ভেচকি দেয়ার আগেই তো আমরা খেতার তলে ঢুইকা কাঁপাকাঁপি শুরু করছি। ভেচকি দিলে তো আঁৎকা চিক্কুর দিয়া মইরাই যাইতাম।
-- তাইলে কি তোরা আসলেই ভয় পাইছস?
-- হ দাদা, আমরা আসলেই ভয় পাইছি।
-- সামান্য একটা মহিলা দেইখাই তোরা ভয় পাইলি?
-- দাদা আপনের কাছে সামন্য হইলেও আমাগো কাছে বিরাট কিছু। বিরান বালু চরে আউলা ঝাউলা মহিলা আইল কোইত্থিকা এইডা ভাইবাই আমরা ভয় পাইছি।
নাদের আলীর কথা শুনে বাবা তাড়াতাড়ি কাসার গ্লাস ভরে এক গ্লাস পানি এনে দোয়া পড়ে ফুঁ দিয়ে চারজনকেই খেতে দিল। বাকি পানি বালটিতে ঢেলে চারজনকেই গোসল করিয়ে দিল। পড়া পানি খেয়ে আর গোসল করে ওদের ভীতিভাবটা কেটে গেলেও আমার চোখে চোখে দৃশ্যটি অনেক দিন পর্যন্ত ভাসতে লাগল।
নাদেরের কথা শুনে বাবা বেশি করে কামলা নিয়ে পুরো ক্ষেতের ধান কেটে সাফ করে নিয়ে এলেন। ধান না থাকায় পরে আর কাউকেই পাহারা দিতে যেতে হয় নাই।
সেই রাতের দৃশ্যটির কথা মনে হলে আজো আমার চোখে চোখে ভাসে। জানিনা এটা কিসের দৃশ্য।

(সমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:৪২
৪৭টি মন্তব্য ৪৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×