আগে হয়তো অনেককে বলতে শুনেছেন যে যদি তুমি কারো জীবন নষ্ট করতে চাও তাহলে তাকে একখানা বিয়ে করিয়ে দাও। এর সার কথা হলো বিয়ে বিষয়টা জীবনে যতটুকু সুখ আনে, নিয়ে যায় তার চেয়ে ঢের বেশি। আধুনিক যুগের অনেক পরিবর্তনের মাঝে এ বিষয়টা খানিকটা পাল্টে গিয়ে নতুন এক বিষয় যোগ হয়েছে। আর তা হলো ক্রেডিট কার্ড। এটি এমন এক বিশেষ ধরণের সংযুক্তি যা আপনার জীবন থেকে কখন আর কিভাবে যে অনেক কিছু নিয়ে যাবে তা আপনি বুঝতেই পারবেন না। আর যখন বুঝবেন, তখন আর কিছুই করার থাকবে না। ইংরেজীতে একটা কথা আছে-Cut your Coat, according to your cloth. মানে হলো গিয়ে তোমার যতটুকু কাপড় আছে, তোমার জামাটাও সেই সাইজের হওয়া উচিত। কিন্তু ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে বক্তব্যটা Cut your Coat, beyond your cloth. আর এই বেহাতি জামাটা আপনার খরচের হাতকে এমন ভাবে নষ্ট করবে যে, আপনি ভুলেই যাবেন যে আপনার কখন, কতটুকু খরচ করতে হবে এই অনুভূতিটাকে ভোঁতা করে দেবে।বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বিকাশিত ব্যাংকিং খাতের ব্যবসায়িক এক হাতিয়ার যা তাদের জন্য এতটাই লাভজনক যে, বিশাল কর্মকান্ড পরিচালনা করেন তারা এ বিষয়ে। নব্য চাকুরিজীবি শ্রেনীর লোকেরা যারা সবে মাত্র নিজের পয়সায় জীবনকে উপভোগ করতে শুরু করেছে, তারাই পাবে সুরেলা নারী কন্ঠের ফোনকল, কিংবা সুদর্শন ব্যাংক কর্মী স্যার স্যার বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলবে। আপনার জন্য অফার হলো বেতনের বিপরীতে কয়েকগুন বাড়িয়ে তার নিজের নামে একখানা ভিসা অথবা মাষ্টার ক্রেডিট কার্ড। শর্ত হলো খুবই সহজ সরল-মাসে যা খরচ করবেন ৪৫ দিনের ভেতর তা ফেরত দিলে কোন সুদ নেই। বছরে ১৮টা লেনদেন করলে কোন বাৎসরিক ফি নেই। বাহ্ ভালোত। কোন সুদ, চার্জ ছাড়া এত বড় অর্থনৈতিক ক্ষমতা কে কাকে দেয়। বিশেষ করে মাস শেষের কটা দিনের টানাটানি কিংবা হঠাৎ কোন প্রয়োজনে বন্ধু আত্মীয়দের কাছ থেকে ধার না পাওয়ার ঝামেলাটা বুঝি আর থাকলো না। এখন গার্ল ফ্রেন্ড, বৌ, মা, ভাই কিংবা বন্ধুদের কাছে টাকা নেই বলে মাথা হেড করে বসে থাকতে হবে না। আর দূর্দিনের শুরু এখান থেকেই, যতই মিনিমাম পেমেন্ট দিবেন মূল টাকা কক্ষোনো কমবে না; আর যদি কোনভাবে পেমেন্ট মিস করেন তখন শূরু হবে- ক্রেডিট নেয়া অংকের উপর ১ম দিন থেকে সুদ, লেট পেমেন্ট ফি, তার সুদ, আর যদি অংকটা মূল লিমিট কে ছাড়িয়ে যায় তাহলে আপনাকে আর পায় কে। নতুন করে যোগ হবে-ওভার লিমিট চার্জ, তার সুদ। এর পর আসি যারা ফোনে বা সামনা সামনি আপনাকে স্যার স্যার বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলেছিলো তাদের ভিন্ন রুপ দেখার শুরু। ফোন করে নীরবে ধোলাই দেয়া হবে। স্যার সম্বোধন ডাক নামে রুপান্তর হয়ে যাবে। তারপর যদি কোন কারণে টানা ৬ মাস পেমেন্ট মিস করেন তবে তো আপনার মন্দ দিনের শুরু। আপনাকে, পরিবারকে, সনাক্তকারীকে, গ্যারান্টর কে ফোন কল, মেসেজ সাথে ধমক ও গালমন্দ, অফিস, বাসা ভিজিট (দিনে/রাতে),(একক/সদলবলে)। মানষিক, পারিবারিক, সামাজিকভাবে আপনার মান ইজ্জতের ফালুদা বানানো পর্যন্ত বিষয়গুলো চলবে। এর পর বড় মাপের ডোজের মধ্যে রয়েছে- থার্ড পার্টি (এলাকা ভিত্তিক মাস্তানচক্র) নিয়োগ, হিজলা লেলিয়ে দেয়া ইত্যাদি। পাশাপাশি চলবে উকিল নোটিশ, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন, অবশেষে মানি লন্ডারিং মামলা। আপনারা হয়তো ভাবছেন একটি ক্রেডিট কার্ডে কয় টাকাই বা লিমিট থাকবে, যা আদায়ের জন্য ওরা এত কিছু করবে?
এবার সেই মজার কার্যকারণে আসি। মূলত আমাদের দেশের প্রায় সকল ব্যাংক থেকে নামে বেনামে বড় বড় ব্যাবসায়ীরা ব্যবসার নাম করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেবার কথাতো ইতোমধ্যে আপনারা জানেন। এখন ভাবছেন এতসব কি ওদের সাথে ও হয়? উত্তর হলো না। তাদের সাথে এগুলোর কিছুই হয় না, কারণ সেগুলো ঘটে ব্যাংকের বড় কর্তাদের, রাজনৈতিক নেতাদের যোগ সাজসে। আর এই নিয়ম নীতিমালা বিহীন কর্মপন্থা শুধুই ছোট ও মাঝারি ঋণ গ্রহীতাদের জন্য। শুনলে অবাক হবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নাকের ডগায় এসব কিভাবে চলে। উত্তর হলো ব্যাংকগুলোর পরিচালক মন্ডলীর সদস্যরা প্রাক্তন ব্যাংক কর্মকর্তা। আরেকটা মজার বিষয় হলো লোনের একটি নির্দিষ্ট সুদের হার আছে, যেমন বর্তমানে ক্ষেত্র বিশেষে শতকরা ১৩-১৯%, কিন্তু ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে বিষয়টা চক্র বৃদ্ধি হারের পাশাপাশি ২৫-৪০%। আর বোধকরি এজন্যই শুধু ব্যাংক নয়, লিজিং কোম্পানী গুলো ও ক্রেডিট কার্ড ব্যাবসায় মন দিয়েছে। সবশেষে মামলায় হেরে যাবার পর (যেটা শতভাগ নিশ্চিত) আপনাকে মূল ক্রেডিট লিমিটের ২-৩ গুন টাকা+বাদী পক্ষের আইনি খরচ+টাকা আদায়ের জন্য জনবল ও যে সব পদ্ধতি অবলম্বন খরচ ইত্যাদি আপনাকেই বইতে হবে। আর এর জন্য যদি আপনার ভিটে মাটি বিক্রয় করতে হয়, তাতে রক্ষে। এ এক অদৃশ্য চোরাবালি। হাজার চেষ্টাতেও আপনি আটকে যাওয়া থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারবেন না। তাই বলছি বিবেচনা আপনার নিজের।