somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্যরি! ভুল তোমাদের না! ভুল তাদেরই

৩১ শে মে, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নাহ! ভুলটা আমাদের শিক্ষা-ব্যবস্থারই। আচ্ছা ধরুন আজকে আমরা আমাদের জাতীয় বীর মুস্তাফিজকে চিনি না। চার পাঁচ বছর আগে সে সবেমাত্র এসএসসি দিল এবং এ প্লাস পেল! আমাদের মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের জনাব বিশেষজ্ঞ (বিশেষ অজ্ঞ) সাংবাদিক ভাই গেলেন মুস্তাফিজকে প্রশ্ন করতে পিথাগোরাস কে, GPA এর ফুল ফর্ম কি, আমি জিপিএ ৫ পেয়েছি এর ইংরেজি কি এইসব হাবিজাবি। বেচারা মুস্তাফিজ একটারও উত্তর দিতে পারল না এবং একদিন পরেই উনি জাতির সামনে উপস্থাপিত হলেন জাতীয় বোকা হিসেবে। ভাবতে পারছেন পরিস্থিতিটা কি হত? বাংলাদেশ মুস্তাফিজের মত একটা হীরার টুকরাকে চিরজীবনের মত হারাতো। এত এত লজ্জার সামনে সে মাথা তুলে দাড়ানোর সাহস পেত কিনা সন্দেহ আর মাঠে বল করে ঝড় তোলার চিন্তা তো দূরের কথা। ভাগ্যিস মুস্তাফিজের প্রতি উপরওয়ালা সদয় ছিলেন বলে উনি আজ জগদ্বিখ্যাত বোলার! আমি জিপিএ ৫ পেয়েছির ইংলিশ না জানলেও উনি আজ ডেভিড ওয়ার্নার, টম মুডিকে ভালই দু একটি বাংলা শিখিয়ে দিয়েছে যেটা আমাদের শিক্ষিত গাধাদের কজনই বা পেরেছে? মূল সমস্যাটা আমাদের শিক্ষা-ব্যবস্থার শিকড়ে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাটা হয়ে গেছে ঠিক এরকম- একদিন এক মাস্টার মশাই বসে আছেন আর তার সামনে বসে আছে তার ছাত্র-ছাত্রীরা যাদের মধ্যে রয়েছে হাতি, বানর, কোকিল, দোয়েল সহ আরো অনেকে। মাস্টার মশাই ঘোষণা দিলেন যে আজকের পরীক্ষার মূল বিষয়বস্তু হলো আকাশে উড়া। আকাশে যে উড়তে পারবে না সে ফেইল আর যে পারবে সে এ প্লাস। কোকিলের ডাক পড়ল সর্বপ্রথম এবং অত্যন্ত নিপুণতার সাথে সে আকাশে উড্ডয়ন করে এ প্লাস হাসিল করলো। এবার পালা দোয়েলের। সে তার উড্ডয়ন ক্ষমতা দেখিয়ে মাস্টার মশাইকে থ মারিয়ে দিলো এবং যথাক্রমে এ প্লাস। এবার পালা বেচারা হাতির। সে প্রথম থেকেই না না বললেও পরে তার বিশালাকার দেহ নিয়ে অনেক উড়ার চেষ্টা করলো কিন্তু পারল না। তার উপর সাথে সাথেই ফেলটুস তকমা পড়ে গেল। বানর বাবাজিরও একই অবস্থা! সারাক্ষণ অনেক ক্রিয়েটিভ কাজ করে থাকলেও ওই উড়তে পাড়ার অক্ষমতার কারণেই সেও ফেলটুশের খাতায় নাম লেখালো। কিন্তু মাস্টার মশাই তাদের সক্ষমতার দিকে একটুও নজর দিল না। বানর যে কত সুন্দর গাছে চড়তে পারে কিংবা হাতি সাহেব যে কত সুন্দর শুড়ের ভেতর পানি ঢুকিয়ে খেল দেখাতে পারে সেটা তার অগোচরেই রয়ে গেল। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাও আজ এখানেই এসে থেমেছে। আমরা কোন জায়গায় কাকে নিয়োগ করতে হয়, কোন সেক্টরে কাকে প্রয়োজন সেটা বিচার না করে ঢালাওভাবে সবাইকে উড়তে বলি পাখির মত। কিন্তু বানরেরও যে কত উদ্ভাবনী ক্ষমতা রয়েছে সেটা আমরা দেখেও না দেখার ভান করি। শিক্ষার একই চশমা দিয়ে সবাইকে বিচার করতে গেলে আজ হয়তো আমাদের জাতীয় বীর মুস্তাফিজকে ফেলটুশের তকমা মাথায় লাগিয়ে ঘুরতে হতো। মুস্তাফিজ ভাগ্যবান ছিল বলে সে আজ বিশ্বসেরা! কিন্তু হাজার হাজার মুস্তাফিজ তো আর ওতো ভাগ্যবান নয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসম্ভব সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও হয়তো দেখা গিয়েছে আজ তারা প্রশ্নবাণ়ে ক্ষত বিক্ষত। এদের মধ্যেও হয়তো আগামীর মুস্তাফিজ লুকিয়ে আছে কিন্তু তাকে বেরিয়ে আসার সুযোগ কই দিলাম? বের হয়ে আসার আগেই তো তাকে মেরে ফেললাম। সব ছেলে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হবে এটা তো কোনো কথা না। কেও পাইলট হবে, কেও শিক্ষক হবে, কেও ব্যাংকার হবে কিংবা কেও রেষ্টুরেন্টের নামকরা শেফ হবে! ইচ্ছা, ট্যালেন্ট দুটোই ওদের, কিন্তু সুযোগ দানের দায়িত্ব আমাদের। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার, আমাদের সরকারের। আইনস্টাইন সম্পর্কে একটা কথা প্রচলিত আছে আর সেটা হলো উনি নাকি নিজের ফোন নাম্বার, হোম এড্রেস কিছুই মনে রাখতে পারতেন না! কেন প্রশ্ন করলে তিনি সবসময়ই বলতেন যে জিনিসটা আরেকজনকে জিজ্ঞেস করলেই সহজে জেনে নেওয়া জানা যায় সেটা মনে রাখার দরকার কি? ভিডিওর ছেলেগুলোও তাই বলতেই পারে "যে জিনিসগুলো গুগল করলেই হাতের কাছে পেতে পারি সে জিনিসগুলো জেনে রাখার প্রয়োজনটা কোথায়?" হয়তো দেখা যেতে পারে এদের মধ্যেই লুকিয়ে আছে আমাদের ভবিষ্যত মুস্তাফিজ কিংবা দেশ সেরা গলফার সিদ্দিক। বের করে আনতে প্রয়োজন শুধু "আকাশে উড়তে" বলার শিক্ষা পদ্ধতির বিয়োগীকরণ।

সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৭
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×