somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ইফতেখার ভূইয়া
সাধারণ একজন মানুষ। বলার মতো বিশেষ কিছু নেই। মনের ভাবনাগুলো তুলে ধরতে চাই। ভালো লাগে কবিতা, লিখা-লিখি আর ছবি তোলা, এইতো! https://prokashoni.net

হুলিয়া

২০ শে এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(নির্মলেন্দু গুণ // নির্বাচিতা)

আমি যখন বাড়িতে পৌঁছলুম তখন দুপুর।
চুর্তদিকে চিক্ চিক্ করছে রোদ্দুর,
আমার শরীরের ছায়া ঘুরতে ঘুরতে ছায়াহীন
একটি রেখায় এসে দাঁড়িয়েছে।
কেউ চিনতে পারেনি আমাকে।
ট্রেনে সিগারেট জ্বালাতে গিয়ে একজনের কাছ থেকে
আগুন চেয়ে নিয়েছিলুম, একজন মহকুমা স্টেশনে উঠেই
আমাকে জাপটে ধরতে চেয়েছিল,
একজন পেছন থেকে কাঁধে হাত রেখে
চিৎকার ক'রে উঠেছিল।
আমি সবকেই মানুষের সমিল চেহারার কথা
স্মরণ করিয়ে দিয়েছি। কেউ চিনতে পারে নি আমাকে,
একজন রাজনৈতিক নেতা, তিনি কমিউনিস্ট ছিলেন,
মুখোমুখি বসে দূর থেকে বারবার চেয়ে দেখলেন,
কিন্তু চিনতে পারলেন না।

বারহাট্টায় নেমেই রফিজের স্টলে চা খেয়েছি
অথচ কী আশ্চর্য, পুর্নবার চিনি দিতে এসেও
রফিজ আমাকে চিনলো না।
দীর্ঘ পাঁচ বছর পর পরিবর্তনহীন গ্রামে ফিরছি আমি,
সেই একই ভাঙাপথ, একই কালোমাটির আল ধরে
গ্রামে ফেরা, আমি কতো দিন পর গ্রামে ফিরছি।

আমি যখন গ্রাম পৌঁছলুম তখন দুপুর
আমার চর্তুদিকে চিক্ চিক্ করছে রোদ,
শোঁ শোঁ করছে হাওয়া। অনেক বদলে গেছে বাড়িটা।
টিনের চাল থেকে শুরু করে পুকুরের জল,
ফুলের বাগান থেকে শুরু করে, গরুর গোয়াল,
চিহ্নমাত্র শৈশবের স্মৃতি যেন নেই কোনখানে।
পড়ার ঘরের বারান্দায় নুয়ে পড়া বেলী ফুলের গাছ থেকে
একটি লাউডুগী উত্তপ্ত দুপুরকে তার লকলকে জিভ দেখালো।
স্বতঃস্ফূর্ত মুখের দাড়ির মতো বাড়িটির চর্তুদিকে
ঘাস, জঙ্গল, গর্ত, আগাছার গাঢ় বন গড়ে উঠেছে অনায়াসে।
যেন সবখানেই সভ্যতাকে ব্যক্ত করে
এখানে শাসন করছে গোঁয়ার প্রকৃতি।

একটি শেয়াল একটি কুকুরের পাশে শুয়েছিলো প্রায়,
আমাকে দেখেই পালালো একজন, একজন গন্ধ শুঁকে নিয়ে
আমাকে চিনতে চেষ্টা করলো, যেমন পুলিশসমেত চেকার
তেজগাঁয় আমাকে চিনতে চেষ্টা করেছিল।

হাঁটতে হাঁটতে একটি গাছ দেখে থমকে দাঁড়ালাম,
অশোক গাছ, বাষট্টির ঝড়ে ভেঙে যাওয়া অশোক;
একসময় কী ভীষণ ছায়া দিতো এই গাছটা, অনায়াসে
দু'জন মানুষ মিশে থাকতে পারতো এর ছায়ায়।
আমরা ভালোবাসার নামে একদিন সারারাত
এ-গাছের ছায়ায় লুকিয়েছিলুম।
সেই বাসন্তী, আহা সেই বাসন্তী এখন বিহারে
ডাকাত স্বামীর ঘরে চার সন্তানের জননী হয়েছে।

পুকুরের জলে শব্দ উঠলো মাছের,
আবার জিভ দেখালো সাপ,
শান্ত স্থির বোকা গ্রামকে কাঁপিয়ে দিয়ে একটি
এরোপ্লেন উড়ে গেলো পশ্চিমে-
আমি বাড়ির পেছন থেকে শব্দ করে
দরজায় টোকা দিয়ে ডাকলুম : 'মা'।
বহুদিন যে দরোজা খোলে নি,
বহুদিন যে দরোজায় কোন কন্ঠস্বর ছিল না,
মরচেপড়া সেই দরোজা মুহূর্তেই ক্যাচক্যাচ শব্দ করে
খুলে গেলো। বহুদিন চেষ্টা করেও যে গোয়েন্দা বিভাগ
আমাকে ধরতে পারেনি, চৈত্রের উত্তপ্ত দুপুরে
অফুরন্ত হাওয়ার ভিতরে সেই আমি
কতো সহজেই একটি অালিঙ্গনের কাছে বন্দী হয়ে গেলুম।
সেই আমি কতো সহজেই মায়ের চোখে চোখ রেখে
একটি অবুঝ সন্তান হয়ে গেলুম।

মা আমাকে ক্রন্দনসিক্ত একটি চুম্বনের মধ্যে লুকিয়ে রেখে
অনেক জঙ্গলের পথ অতিক্রম করে
পুকুরের জলে চাল ধুতে গেলেন।
আমি ঘরের ভিতরে তাকালুম, দেখলুম দু'ঘরের মাঝামাঝি
যেখানে সিদ্ধিদাতা গণেশের ছবি ছিল
সেখানে লেনিন, বাবার জমা-খরচের পাশে কার্ল মার্কস,
আলমিরার একটি ভাঙ্গা কাচের অভাব পূরণ করছে
স্ক্রুপস্কায়ার ছেঁড়া ছবি।

মা পুকুর থেকে ফিরছেন, সন্ধ্যায় মহকুমা শহর থেকে
ফিরবেন বাবা, তাঁর পিঠে সংসারের ব্যাগ ঝুলবে তেমনি।
সেনবাড়ি থেকে খবর পেয়ে বৌদি আসবেন,
পুর্নবার বিয়ে করতে অনুরোধ করবেন আমাকে।
খবর পেয়ে যশমাধব থেকে আসবে ন্যাপকর্মী ইয়াসিন,
তিনমাইল বিষ্টির পথ হেঁটে রসুলপুর থেকে আসবে আদিত্য,
রাত্রে মারাত্মক অস্ত্র হাতে নিয়ে আমতলা থেকে আসবে আব্বাস,
ওরা প্রত্যেকেই জিজ্ঞেস করবে ঢাকার খবর।
আমাদের ভবিষ্যৎ কী?
আইয়ুব খান এখন কোথায়?
শেখ মুজিব কি ভুল করছেন?
আমার নামে আর কতদিন হুলিয়া ঝুলবে?

আমি কিছুই বলবো না, আমার মুখের দিকে চেয়ে থাকা
সারি সারি চোখের ভিতরে
বাঙলার বিভিন্ন ভবিষ্যৎকে চেয়ে চেয়ে দেখবো।
উৎকণ্ঠিত চোখে চোখে নামবে কালো অন্ধকার,
আমি চিৎকার ক'রে কণ্ঠ থেকে অক্ষম বাসনার
জ্বালা মুছে নিয়ে বলবো :
'আমি এসবের কিছুই জানি না,
আমি এসবের কিছুই বুঝি না।'


সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ২:২৫
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×