খুবই সাধারণ মানুষ। সাধারণ আট দশ জন মানুষের মতই ৯ টা ৫ টা অফিস করে। আজকে অফিস থেকে ফেরার সময়ে তিনি বড় একটা গ্লোব কিনে আনলেন। বাসায় এসে ফ্রেস হওয়ার পরে চোখে চশমা লাগিয়ে সেই ছোট পৃথিবীর মাঝে কিছু একটা খুব মনোযোগ দিয়ে খুজছিলেন। তার মেয়ে এসে জানতে চাইল "কি খোজ আব্বু?" তার উত্তর "তোর ভাই কোথায় আছে সেই জায়গা দেখার চেষ্টা করছি।"
ও আগে বলা হয়নি, তার ছেলে সাগরে ভেসে বেড়ায়। আজকে তিনি অফিসে থাকা অবস্থায়ই তার ছেলের সাথে কথা হয়। ছেলে প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝামাঝি কোন এক স্থানে ছিল তখন।
তার মনে পরে কত কষ্ট করে ছেলে জন্মের পর পর তাকে লালন পালন করেন তিনি। জন্মের পর পরই তার কোন এক কারণে চাকরিচ্যুতি ঘটে। তারপরে বিভিন্ন ভাবেই তাকে দিন যাপন করতে হয়েছিল। সেই দিকে আর নাই গেলাম। গল্পের ওই দিকটা শুধু আমার কাছেই থাকুক। কারো করুণা আদায় করা এই গল্পের উদ্দেশ্য নয়।
কিন্তু যার জন্যে এত সব কষ্ট করা, এখন সেই ছেলেকেই সবসময়ে দেখারও সুযোগ হয় না। নির্দিষ্ট কিছু মাস পর পর হয়তো অল্প কিছু দিনের জন্যে। সেই অল্প কিছু দিন তার জন্যে বছরের শ্রেষ্ঠ সময়। খুশিতে তার সব কিছুই এলো মেলো হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু অত্যন্ত ধীরস্থির মানুষ বলে সেই অবস্থা তার হয় না। সকল কিছুই তিনি সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে শেষ করেন।
তার সাথে তুলনা করলে তার ছেলের কোন দিক থেকেই মিল নেই। প্রায় অর্ধপাগল এবং এক রোখা ঘাড় ত্যাড়া টাইপের। কারো কথাই শোনে না। নিজের মতন চলে। অনেকটাই স্বার্থপর এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে লোভী। বাবা মানুষের সাথে ঠিক যতটা না কোমল ছেলে ঠিক ততটাই কঠিন। বাবার কথায় কখনো কোন অপছন্দের মানুষও কষ্ট পাওয়া দূরে থাক, সবসময়ে ভরসাই পায়। সেক্ষেত্রে ছেলে অপরিচিত কিংবা অপছন্দের মানুষদের সাথে কথা বললে তাকে কষ্ট না দিয়ে কখনোই কথা বলতে পারে না।
দুইজন মোটামুটি দুই মেরুর মানুষ। কিন্তু এক জায়গায় এদের কিছুটা মিল আছে। ছেলে যখন গৃহ ত্যাগ করে সে কখনোই তার বাবা কিংবা মায়ের দিকে তাকায় না। তার বাবা তাকিয়ে আছে কিনা তার দিকে সেটাও তার জানা নেই। তবে একটা ব্যাপার সে ঠিকই জানে, তার দিকে তাকিয়েই হোক কিংবা না তাকিয়েই হোক তার মতন তার বাবার চোখও প্রায় ভেজা
এই লেখাটা সেই মানুষটাকে উৎসর্গ করা উচিৎ ছিল। কিন্তু অতি ক্ষুদ্রতর মানের হওয়ায় করার সাহস পাচ্ছি না।
মূল পোষ্টঃ এইখানে
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৪:০৮