somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টাকা পুড়েছে? কি করবেন!

২৩ শে মে, ২০১৭ দুপুর ২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


টাকা পুড়েছে? কি করবেন!

যদি টাকার পরিমাণ কম হয়, ১০০ বা ২০০ তাহলে হিসাব হবে এক রকম, আর যদি পরিমাণ হাজার থেকে লাখ টাকার হয় তাহলে অন্য রকম। কেনো এমন বললাম সেটা এই লেখাটা পড়লেই বুঝতে পারবেন।
টাকা পুড়লে আপনাকে যে কাজগুলি করতে হবে সেই পোড়া টাকার মূল্য উদ্ধারের জন্য তার একটি চেক লিস্ট দিচ্ছি।

১। বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবর একটি আবেদন করতে হবে। (না করলেও চলে)।
২। পোড়ার কারণ ও পরিমাণ সহ থানায় জিডি করে তার মূল কপি নিতে হবে। (অবশ্যই লাগবে)।
৩। পোড়ার কারণ ও পরিমাণ সহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধির প্রত্যায়ন পত্র। (না থাকলে ঝামেলা হতে পারে)।
৪। জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি ও মূল কপি। (অবশ্যই লাগবে)।
৫। পেপার ক্লিপিং ( না থাকলে সমস্যা নাই)।

অর্থাৎ আপনার টাকা পুড়লে প্রথমেই আপনি সেই পোড়া টাকার সংগ্রহ করে ফেলুন। পোড়া টাকা সংগ্রহের পরে যদি দেখেন নোটের ৫১% এর কম অবশিষ্ট আছে তাহলে সেই নোট বাতিল। যদি কোন নোটের ৫১% এর বেশী ঠিক থাকে তাহলেই কেবল সেই নোট গুলি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কিছু অর্থ উদ্ধার করা সম্ভব। এবং শুধু মাত্র তখনই যখন আপনার কাছে এমন নোট থাকবে যার ৫১% ঠিক আছে তখন কোন কিছু করার আগেই দৌড়ে চলে যান বাংলাদেশ ব্যাংকের সিও অফিসে। সেখানে গেলে আপনাকে একটি ডেট দিবে যেদিন আপনাকে আপনার পোড়া টাকা ও উপরের উল্লেখিত কাগজ নিয়ে হাজির হতে হবে।

সপ্তাহে একদিন শুধু মাত্র সোমবারে পোড়া টাকা চেক করা হয় বলে আপনি ডেট পাবেন কমপক্ষে ৬ থেকে ১২ মাস পরের কোন সোমবারের। আমি জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে গিয়ে ডেট পেয়েছিলাম মে মাসের ৮ তারিখে। আর মে মেসের ৮ তারিখে যিনি এসেছে তার ডেট পরতে দেখেছি পরের বছর জানুয়ারির ১ তারিখে।

ডেট পাওয়ার পরে পোড়া টাকা উদ্ধারের পরে আপনার প্রথম কাজ হচ্ছে থানায় জিডি করে তার মূল কপি সংগ্রহ করা। এরপর আপনি চলে যাবেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কাছে। পোড়ার কারণ ও পরিমাণ সহ উল্লেখ করে তার কাছ থেকে একটি প্রত্যায়ন পত্র সংগ্রহ করবেন। জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি করুন। সংবাদ পত্রের ক্লিপিং যদি থাকে তাও সংগ্রহ করুন। এবার একটি আবেদন পত্র লিখে সমস্ত কাগজ একটি ফাইলে বন্দী করে অপেক্ষায় থাকুন আপনার ডেট আসা পর্যন্ত। তবে উপর লেবেলের কেউ থাকলে আপনি ডেটের ঝামেলা এড়িয়ে যেতে পারবেন।

পোড়া টাকা নিয়ে সিও অফিসে যাবার আগে আপনি পোড়া টাকার পোড়া অংশটুকু বা ছাই টুকু এবং আগুনের তাপে কালো হয়ে যাওয়া অংশটুকু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ফেলে দিন। এতে আপনার কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষায় বসে থাকা কমে যাবে।

নির্দিষ্ট তারিখে সকাল ১১টার মধ্যে পোড়া টাকা ও কাগজ নিয়ে পৌঁছে যান সিও অফিসে। এবার বসে থাকুন চুপচাপ। দুজন লোক আসবেন আপনার টাকা নিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পোড়া অংশ ছিঁড়তে থাকবেন তারা। আপনি যদি বাড়িতে এই কাজটি করে নিয়ে যান তাহলে এই বিরক্তিকর সময়টুকু বেচে যাবে। এবার তারা স্ক্যানার মেশিনে একটি একটি করে নোট ফেলে স্ক্যানিং করে রিডিং নিয়ে সেই প্রিন্টেড রিডিং এর কাগজ প্রতিটি নেটরে সাথে স্টেপল করে সেটে দিতে শুরু করবেন। একটি একটি করে সবগুলি নোটে এই কাজ করা হবে। স্ক্যানিং মেশিনে দেখা হয় পোড়া নোটটির কত অংশ ভালো আছে। ৫১% ভালো না থাকলে সেই নোটটি বাতিল হয়ে যাবে। যা আপনার হাতেই ধরিয়ে দিবে।

৫১% ভালো থাকা টিকে যাও নোট গুলিকে এবার জাল নোট চেকিং মেশিনের নিচে দেয়া হবে কোন জাল টাকা আছে কিনা তা দেখার জন্য। কোন জাল নোট থাকলে সেটিও বাদ হয়ে যাবে এখানে।

এবার অবশিষ্ট টাকা গুলিকে ৩টি ভাগে ভাগ করা হবে। প্রথম ভাগে থাকবে ৫১% থেকে ৭৫% টিকে থাকা নোট গুলি। এই নোট গুলির জন্য আপনার ৫০% কেটে রেখে ৫০% টাকা আপনাকে দেয়া হবে। অর্থাৎ ১০০০ টাকার নোট থাকলে আপনাকে দেয়া হবে ৫০০ টাকা।

দ্বিতীয় ভাগে থাকবে ৭৬% থেকে ৯০% টিকে থাকা নোট গুলি। এই নোট গুলির জন্য আপনার ২৫% কেটে রেখে ৭৫% টাকা আপনাকে দেয়া হবে। অর্থাৎ ১০০০ টাকার নোট থাকলে আপনাকে দেয়া হবে ৭৫০ টাকা।

তৃতীয় ভাগে থাকবে ৯১% থেকে ৯৯% টিকে থাকা নোট গুলি। এই নোট গুলির জন্য আপনার কোট টাকাই কাটা যাবে না। অর্থাৎ ১০০০ টাকার নোট থাকলে আপনাকে দেয়া হবে ১০০০ টাকাই।

এবার আপনার টাকাগুলির সম্পূর্ণ বিবরণ কয়েকটি আলাদা আলাদা ফরমে লিখা হবে। সবগুলিই অফিসিয়াল কাজ। আপনাকে শুধু দুইটি পাতায় আপনার নাম ঠিকানা ও স্বাক্ষর দিতে হবে। সময় সাপেক্ষ এই কাজ শেষ হবে একসময়।

এরপর ক্যাশ কাউন্টার ডিপার্টমেন্ট থেকে একজন ব্যক্তি আসবেন। তিনি আবার আপনার তিন ভাগ করা টিকে যাওয়া টাকাগুলি গুনবেন। আগের দুই ব্যক্তির গোনা হিসেবের সাথে নিজের হিসাব মিলাবেন। হিসাব মিলে গেলে একটি প্যাকেটে টাকাগুলি রেখে প্যাকেটের উপরে আগের দুই ব্যক্তির লেখা হিসেবের নিচে নিজের হিসাব বুঝে পেয়েছেন সেটি লিখবেন।

এবার আপনার পোড়া টাকা ও কাগজ নিয়ে তারা চলে যাবে সিও স্যরের খাস কামরায়। সেখান স্যার নাকি আবার সমস্ত কিছু চেক করবেন এবং সব কিছু সুষ্ঠ ভাবে সম্পন্ন হয়েছে মর্মে বুঝে পেয়ে টাকার প্যাকেটটি সিল গালা করে দিবেন। এখানেই সিও অফিসের কাজ শেষ। তবে এই শেষ পর্যন্ত আসতে আসতে অলরেডি বিকেল হয়ে গেছে।

প্রথম দুজনের একজন ব্যক্তি এবার আপনার টাকার সিল করা প্যাকেট ও হাতে লিখিত সেই ফরমের কাগজগুলি নিয়ে আপনাকে সহ চলে আসবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন ৩০ তলা ভবনের নিচতলার কাউন্টারের সামনে। সেখানে একজন আপনার প্যাকেটটি বুঝে নিয়ে ফরমের মধ্যে নিজের হিসাব লিখে নিয়ে সেই অংশটি আপনাকে ছিঁড়ে দিয়ে দিবে। এখানে লেখা থাকবে আপনি মোট কত টাকা ফেরত পাচ্ছেন।

আজকের মত আপনার কাজ শেষ। পরদিন আপনি ১২টার দিকে আবার চলে যাবেন এই ৩০ তলা দালানের ৩য় তালার পোড়া টাকা দাবি আদায় অংশে। সেখানে গিয়ে আপনাকে গতকাল দেয়া হিসাবের অংশটি দেখাতে হবে। সেটি দেখে আপনার দাবি পরিশোধের অনুমতি দেয়া হলে সেটি নিয়ে নিচের কাউন্টারে গেলে আপনার হিসাব অনুযায়ী দাবীকৃত টাকার পরিশোধ করা হবে চকচকে নতুন নোটে।
এবার চকচকে নতুন নোট পকেটে ফেলে বাড়ি ফিরে আসুন।

বি.দ্র.
১। দুই চারশো টাকার জন্য এই ঝামেলা আপনি পোহাবেন কিনা বিবেচনা করুন।
২। তবে আপনি যদি সাহস করে চলেই যান তাহলে ঐদিন আপনার কাছে কোন কাগজ না থাকলেও বড় কোন পার্টির সাথে আপনার এই অল্প টাকা মিলিয়ে দিয়ে আপনাকে ওরা সাহায্য করবেন।
৩। ব্যাংকে লোক লাকলে বা ফোন করার মত লোক থাকলে আপার ডেট ছাড়াই কাজ হওয়ার সুযোগ আছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০১৭ দুপুর ২:৩৪
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×