মেয়েটা সিদ্ধান্ত নিতে পারছেনা। বলবে? নাকি বলবে না? আগে একটু আলোচনা করে নিতে পারলে ভালো হতো। কার সাথে? বোনটা পড়ে আছে সেই হাজার মাইল দূরের শীতের দেশে। হাতে মাত্র দুটো-তিনটে দিন সময়! তারপরেই ১৪তারিখ ফেব্রুয়ারীর।
শেষমেষ এসএমএস পাঠায় বোনকে, রাতে ফোন দিস, আর্জেন্ট।
বোন তরিৎ ফোন করে, "কি হইছে রে, আম্মা...?"
"না বুবু, রাইতে ফোন দিও, জরুরি কথা আছে।"
"ঠিক মতন ক!"
"আম্মা ঠিক আছে বু, তুমি রাইতে ফোন দিও।"
ফোন কেটে আবার ভাবতে বসে।
ছেলেটাকে প্রথম দেখায় তেমন কিছু মনে হয়নি। বোকা, ভ্যাবলা, আনস্মার্ট, ল্যাবেন্ডিস - ইত্যাদি ইত্যাদি। বেড়াতে এসেছিলো এক ধনী আত্মীয়ের কাছে, তাদেরই ছেলে।
মা মেয়ে বেড়াতে এলে দু'দিন পর মা ফিরে যায়, মেয়ে রয়ে যায় ক'দিন বেড়াতে। সেই ক'দিনেই ছেলেটা কেমন বেঁধে ফেলেছে ওকে।
ছেলেটা সেই সাত সকালে বের হয়ে যায় অফিসে, বাসায় ফেরে রাতকরেই। এসে সেইযে নিজের ঘরে ঢুকে কপাট দেয়, একবার মাত্র দেখা হয় সারাদিনে খাবার টেবিলে। কথা কোনদিন একটা দুটো শব্দ, কোনদিন একটাও না।
তবু টানতে থাকে অদৃশ্য একটা টান, উপেক্ষা অসম্ভব।
প্রেম নয়, এ মায়া। ভালোবাস চেয়েও অনেক বেশি কিছু।
দিন পনেরো থেকে চলে যায় মেয়েটা নিজের শহরে, সাথে ছেলের মা'য়ের ফোনবুক থেকে চুরি করে নেওয়া নম্বরটা। উসখুশ করতে থাকে, একটা কল অথবা এসএমএস করতে। সাহস পায় না।
রাতের খাবার কোনমতে গলা দিয়ে ঠেলে নামায়। ফোনের অপেক্ষায়। ফোন বাজে।
বড়বোনকে খুলে বলে সব। বলে ওরা মেয়ে খুঁজছে ওদের ছেলের জন্যে। বোন কিছু একটা করুক, ওর নাম তুলুক সে বাড়ীতে।
বোন ধমকে ওঠে।
পাগলামী বাদ দিতে বলে।
বলে এই চাওয়া অসম্ভব।
বোন বলে, ওরা মহাজন, ওদের দয়াতেই যাদের সংসার চলে, তাদের মেয়ের এমন স্বপ্ন দেখা পাপ।
একটু গাঁইগুঁই করে ছোটবোন।
আবার ধমক লাগায় বড়বোন। বাবা মারা যাবার পর ওদের সংসার চালানো, দু'বোনকে পড়ানো, বড় বোনকে দেখেশুনে ভদ্র-সচ্ছল প্রবাসীর ঘরে পাঠানো - সবই ঐ ছেলের পরিবারের দয়ায়। যাদের ওদের দয়ায় সংসার চলে, সেখানে রানী সাজতে যাওয়া শোভা পায়না।
নীচু গলায় জ্বড়ানো স্বরে কি একটা বলতে গিয়ে আবার বড় বোনের ধমক খেয়ে থেমে যায় মেয়েটা্।
ফোন কেটে দিয়ে বালিশে মুখ গুঁজে ফোঁপাতে ফোঁপাতে ঘুমিয়ে পড়ে।
সকালে মা এসে ডেকে তোলে, চেহারাটা রাগে গনগনে।
এতো ভালো মা'টার এই আগুন মূর্তি চিনতে কষ্ট হয় মেয়েটার।
পহেলা ফাল্গুন, বাজতে থাকা ফোনটা ধরতে ইচ্ছে করেনা মেয়েটার। মা শ্যেন গলায় চেঁচায় শব্দে বিরক্ত।
ডিসপ্লেতে ভেসে ওঠা কলারের নামটা বিশ্বাস হতে চায় না! কাঁপা গলায় ফোন ধরে, "হ্যালো!"
"শুভ বসন্ত।" ওপাশ থেকে ভেসে আছে একঘেয়ে গলাটা, "কেমন আছো?"
"ভালো" - কোনমতে গলার কাঁপন সামলায় মেয়েটা।
"বাসার সবাই?" জানতে চায় ওপাশে।
"ভালো, আপনারা?" কুশল জানতে চায় মেয়েটা।
"ভালো, মায়ের সাথে কথা বলো।" জানিয়ে ফোনটা মাকে দেয় ছেলেটা।
বুকের মধ্যে সব পাওয়ার অনুভুতি, বিশ্বজয়ের আনন্দ।
বিয়েটা পহেলা বৈশাখ।
আমার এমন এটা জুটে না ক্যান? বেটার শালীও নাই যে আউগামু।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:০৩