somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওয়েলকাম টু ইউটোপিয়া সিসটেমস - কর্পোরেট স্বপ্নরাজ্যে স্বাগতম... (সাময়িক ও নিজের সাইট বিজ্ঞাপন পোষ্ট)

১৪ ই জুলাই, ২০১০ রাত ১২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানুষটা ক্লান্ত খুব, ষোল ঘন্টা ডিউটি শরীরের বাঁকে বাঁকে ক্লান্তির জন্ম দিচ্ছে। তবু মনটা বেশ ফুরফুরে, আজ বাচ্চাটাকে অনেক আদর করবে, বৌকে নিয়ে একটা মুভিও দেখে ফেলবে।

ঘরে ঢুকেই মনটা একটু খারাপ হলো, বৌ মুখ কালো করে জানলার পাশে বসে, বাচ্চা মেয়েটাকে এক হাতে শরীরের পাশে আঁকড়ে আছে সে। মেয়েটাও কেমন যেনো গাল ফুলো ভাব, চুপচাপ, মন খারাপ।

মানুষটার আসবার শব্দ পেয়ে দুজনেই একসাথে তাকালো এদিকে -

সাথে সাথে আশেপাশের সবকিছু সিনেমার পজ এর মত থেমে গেলো, রং হারিয়ে ঝাপসা এবং সাদাকালো একটা ফ্রিজড ফ্রেম যেনো।

একঘেয়ে যান্ত্রিক নারী গলা জানালো, ক্রেডিট শেষ, ইউটোপিয়াতে আরো ক্রেডিট চার্জ না করা হলে এখানেই আজকের সেশনের সমাপ্তি।

বিড়বিড় করে গাল দিয়ে উঠলো মানুষটা, এরা সিসটেম আপগ্রেড করেনা কেনো? কেবলইতো লগইন করলো সে, শুরুতেই জানালে হতোনা?

কার্ড অথরাইজ করে প্রয়োজনীয় ক্রেডিট ট্রানসফার করে আবার কপালের দুপাশে সেন্সর মতো জিনিষদুটো চেপে বসালো, তারপর আবার হারিয়ে গেলো ইউটোপিয়ার ভার্চুয়াল স্বপ্নবিলাসে।

নিথর শুয়ে থাকা শরীর আর পাশের কম্পিউটরটার পাশে একটা ব্রুশার পড়ে আছে - "ওয়েলকাম টু ইউটোপিয়া সিসটেমস - আপনার একান্ত স্বপ্নরাজ্যে স্বাগতম"

লিফলেটটা সগর্বে বর্ননা করছে অত্যাধুনিক এই স্বপ্ন মেশিনটির গুনাগুন, সাবসক্রাইব করবার জন্যে প্রয়োজনীয় তথ্য, বিধিবদ্ধ সতর্কবানী, ডিসকাউন্ট ইত্যাদি।

আসুন মানুষটা যখন নিজের একান্ত স্বপ্নের জগতে বিচরন করছে, আমরা ইউটোপিয়ার সম্পর্জে জানি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে ইউরোপে আর আমেরিকাতে আস্তে ধীরে যৌথপরিবার ভেঙ্গে গড়ে উঠতে থাকে ছোট পরিবার কনসেপ্ট। সেটা উনিশশো আশির দিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে তৃতীয়বিশ্বেও। আর সাল দুইহাজারের পরপরই দেখা যায়, উন্নত বিশ্বেতো বটেই, পিছিয়ে পড়া তৃতীয়বিশ্বেও ছোটপরিবার একটা আন্দোলন হিসাবে গড়ে উঠতে থাকে।

দুহাজারের পরে মানুষকে আইসোলেটেড করে ফেলবার কর্পোরেট কৌশল হিসাবে পৃথিবীব্যাপি ব্যাক্তিস্বাধীনতা, নারীবাদ, বাকস্বাধীনতা, নারীস্বাধীনতা, যৌনস্বাধীনতা ইত্যাদি বিভিন্নপ্রকার নিত্যনতুন মুখোরোচক মতবাদের সুপরিকল্পিত ও সুপরিচালিত প্রয়োগে আস্তেধীরে একক পরিবার বা ছোটপরিবার কনসেপ্টও বিলোপের মুখে পড়ে এবং দুজাহার পঞ্চাশ নাগাদ দেখা যায়, লিভটুগেদার সর্বত্রই প্রাধান্য পাচ্ছে।

কারন হিসেবে দেখাযায়, কর্পোরেট প্রায়-নিয়ন্ত্রিত পরিবেশি একজন মানুষ প্রফেশানালিজম চর্চায় এত বেশি ব্যাস্ত হয়ে উঠছে যে ক্যারিয়ারের আর স্ট্যাটাসের পেছনে দিনের বেশিরভাগ সময়টাই চলে যাচ্ছে, বাকি সময়টা নিজেকে দেবে না পরিবার গড়ে সেখানে ব্যায় করবে সেটা নির্ধারন আর চর্চা বেশ জটিল হয়ে উঠছে।

দুহাজার একশো নাগাদ এই লিভটুগেদার ও ভাংতে শুরু করলো, কারন দুটো মানুষ বিশেষ করে পুরুষ ও নারী একত্রে থাকলে স্বকীয়তা, ব্যাক্তি স্বাধীনতা খর্বের আশংকা বেশ, এবং একে অন্যকে নিজের মতে বিশ্বাসী করে তুলতে গিয়ে ঝগড়াঝাটির পরিমান বড়ছে, বাড়ছে স্বকীয়তা, ব্যাক্তি স্বাধীনতা, নারীস্বাধীনতা খর্বের হার।

তাই এসময়ে একাকি জীবন যাপনের হার বাড়তে থাকে, কমতে থাকে জন্মের হার এবং জনসংখা বৃদ্ধির হার নেগেটিভের দিকে যেতে থাকে।

এই সময় পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্র সন্তান গ্রহন ও পরিবার গঠনে মানুষকে প্ররোচিত করলেও সন্তান প্রতিপালনের ঝামেলার কারনে সেই আহ্বান খুব একটা ফলপ্রসু হয়নি।

তখন বিশ্বব্যাপি কর্পোরেশন গুলো এক হয়ে হাত বাড়িয়ে দেয়। তারা দেশে দেশে শিশু প্রতিপালন কেন্দ্র গড়েব তোলে সামাজিক দায়িত্বশীলতার (কর্পোরেট রেসপনসিবিলিটি) অংশ হিসাবে। তারা জানায়, সন্তান গ্রহনে ইচ্ছুক মানব-মানবীকে তারা বিশেষ বোনাস দেবেন, গর্ভীনি মানবী ছ'মাসের সবেতন ছুটি ও সন্তান বোনাস পাবেন।

শর্ত হলো, সন্তান তিনমাস বয়সি হলেই তাকে শিশু প্রতিপালন কেন্দ্রে ভর্তি করে দিতে হবে। এই সকল শিশুর সমুদয় দায়িত্ব যৌথ কর্পোরেট শিশু তহবিলের, যাদের ছত্রছায়ায় শিশু প্রতিপালন কেন্দ্রে এই সকল শিশুকে শৈশব থেকেই ভবিষ্যতের কর্পোরেট অফিসার হিসাবে গড়ে উঠবার তালিম দেওয়া হবে।

এই ঘোষনা ব্যাপক সাড়া যাগায় মানুষের মাঝে। শুধু উপরের ঘোষনাই নয়, বরং এর ফলে যে বড় ধরনের কর্মসংস্থান হবে, সেই কারনেই রাস্ট্র সমুহ এবং সামাজিক ভাবে বিপুল জনপ্রিয়তা পায়।

এর ফলে পরিবার প্রথা ফিরে না আসলেও জন্মহার আবার বাড়তির দিকে চলে আসে।

তবে একুশশো তিরিশ নাগাদ দেখা যায়, এভাবে বেড়ে ওঠা শিশুদের একটা বড় অংশ, পঁচিশ থেকে তিরিশের মাঝে আত্মহত্যায় নিজেকে শেষ করে দিচ্ছে। কারন হিসাবে এক গবেষনায় দেখা যায়, কোন এক রহস্যময় কারনে এই বয়েসটায় এরা নিজেদের একা বলে ভাবতে শুরু করে এবং অসহনীয় একাকীত্বই এই আত্মহত্যার মূল উপযাচক।

অথচ এরা বেড়ে উঠেছে একাকীত্বের মাঝে, তাই একাকীত্বে নিজেকে খুন করে ফেলাটা বিশেষজ্ঞদেরকাছে ঠিক পরিষ্কার নয়।

এই সময় উদ্ভাবন ঘটে ইউটিপিয়া সিসটেমের, কিছু নিবেদিতপ্রাণ বিজ্ঞানীদের হাতে (অবশ্যই কর্পোরেশনের সামাজিক দায়িত্বের অংশ হিসাবে এই খরচ দিয়েছে যৌথ কর্পোরেট ফান্ড)। এর ফলে মানুষ নিজের চারপাশে একটা প্রায়-বাস্তব স্বপ্নজগত তৈরি করতে পারবে, অফিস থেকে ফিরে আর একাকীত্বে ভুগতে হবেনা। জগতটা এতটাই বাস্তব মনে হবে, যে মাঝে মাঝে নিজের আশেপাশের বাস্তব জগতটা অবাস্তব মনে হতে পারে।

তাই নির্ধারন করা হয়েছে, ইউটোপিয়া ব্যাবহার কালে ব্যাবহারকারী মানব/মানবী সরাসরি সেন্ট্রাল হাসপাতালের কম্পিউটরের সাথে যুক্ত থাকবেন এবং প্রয়োজনে তাতক্ষনিক মেডিকেল সাপোর্ট পৌঁছানো হবে।

এছাড়াও সপ্তাহে ১৪ ঘন্টার বেশি অথবা একটানা ৩ ঘন্টারবেশি এই সিস্টেমটি রান করবে না।

এবছর মেডিকেল জার্নালে জানা গেছে, এই সিসটেম সাফল্যের সাথে একাকিত্ব আর হতাশার কারনে আত্মহত্যার হার কমিয়ে এনেছে। তবে ইউটোপিয়া সিসটেমের আসক্তি বা এডিকশনের কারনে আত্মহত্যার পরিমান দিনকে দিন বাড়ছেই। এ নিয়ে সিসটেমের উদ্ভাবক টিম জানিয়েছে হয়তোবা কোন হিডেন বাগ বা ম্যালফাংশন এজন্যে দায়ী, তারা সেটা বের করতে আপ্রান চেষ্টা করছেন।

একাকিত্ব আর হতাশার কারনে আত্মহত্যার হার কমিয়ে আনাতে বিশেষ অবদান রাখার জন্যে এবছর ইউটোপিয়া সিসটেমের উদ্ভাবক টিমকে বিশেষ সম্মানসূচক পুরষ্কার দেওয়ার ঘোষনা দিয়েছে সম্মিলিত কর্পোরেট ফান্ড।

কচুঘন্ট:
আমার উত্তর পুরুষ এভাবে স্বপ্নজগতে ডুবতে থাকে।
আমি তার একাকিত্বের অনুভুতির অনুভবে হতাশা আর একাকিত্বে ডুবে যেতে থাকি।


এইটা আমার সাইটের বিজ্ঞাপন পোষ্ট
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:০১
১৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×