অনেকদিন? নাকি অল্প দিন? যাই হোক, একটা দেশ ছিলো, কোথায় সেসব কিছু জানা যায়নি। শুধু জানা গেছে একটা আশা আর লড়াই এর গল্প।
সে দেশের মানুষ সব সাধাসিধা, মনে এক আর মুখে আরেক - এমন মানুষ খুব কম। ওরা গর্ব করে বলতে পারে, কথা বলার অধিকার ওদের রক্তে কেনা।
সেই দেশে ছিলো কিছু ধুরন্ধর অমানুষ, ওরা আফিমের কারবারী। জানে এমনিতে এই বিষ এই মানুষ খাবে না, জোর করে গেলাতে হবে। তাই ভর করলো মানুষের "পবিত্র বিশ্বাস" এ। পবিত্র বিশ্বাসে মিলিয়ে আফিম খাইয়ে বুঁদ করে রাখতে লাগলো সরলমনা মানুষকে। বিতর্কিত করে ভুলিয়ে দিতে চাইলো রক্তে কেনা গৌরবগাঁথা।
কিছু মানুষ লড়াই শুরু করলো, নিয়মিত মহড়া, গেরিলা আক্রমন, সর্বাত্মক যুদ্ধ। তবে দলটা শত্রুর কাছেতো বটেই, সাধারনের কাছেও নিজেদেরকে দানব হিসেবে তুলে ধরেছিলো - এটা তাদের ভুল।
তবু পিছু হঠলো পবিত্র বিশ্বাসে আফিম মেশাবার দল। জিতে গেলো প্রতিবাদের সৈনিকেরা।
তবে ওরা আরো একটা ভুল করেছিলো, ভুলে গিয়েছিলো, স্বাধীনতা অর্জনের চাইতে রক্ষা করা অনেক অনেক কঠিন।
এবারে ওরা নিজেরা কোন্দল শুরু করলো। কেউ চায় ক্ষমতা, কেউ প্রতিপত্তি, কেউ যশ, কেউবা সর্বাধিনায়কের স্বীকৃতি। নিজেরাই নিজেদের আবেদন নষ্ট করে ফেললো ওরা।
মূল দলটা আরো ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে গেলো। ওদের কেউ কেউ চুপটি করে সরে গেলো দূরে, লোভী কেউ কেউ গিয়ে গোপনে হাত মেলালো সেই আফিমের কারবারীদের সাথে, ওদের পরামর্শদাতা হিসাবে।
আফিমের কারবারী এখন আরো অনেক সতর্ক। আগের পরাজয় থেকে শিক্ষা নিয়েছে ওরা, আর সাথে আছে গোপনে দলবদলানো বিজয়ী কয়েকজন - রণকৌশল যাদের নখের ডগায়।
আস্তে আস্তে আবারো ওদের কালো ছায়া গ্রাস করতে লাগলো সেই অজানা দেশের মানুষগুলোকে। এবারে ওদের টার্গেট, অবোধ শিশু গুলো, যারা শুরুতেই শিখবে বিকৃত ইতিহাস আর দুধের বদলে অভ্যস্থ হবে আফিম মেশানো পবিত্র বিশ্বাসে।
ওরা অনেকটাই সফল, এখন আর লুকোছাপা করে না, প্রকাশ্যে মগজধোলাই করা প্রজন্মের জোরে ওরা ফুৎকার দিয়ে উড়িয়ে দেয় ইতিহাস, মানবতার নামে চালায় গোপন অমানবিক কার্যক্রম।
এবারে হটাৎ একটা ধাক্কা খেলো ওরা, ওদের নোংরা পরিকল্পনা কার্যকর হবার একদম শেষ পর্যায়ে।
কিছু বিচ্ছিন্ন মানুষ ওদের পথে ব্যারিকেড দেয়, যাদের ঘন রক্তে ওদের আফিমের বিষ দাঁত বসাতে পারেনি, যারা বিশ্বাস করে পবিত্র বিশ্বাস পবিত্রই, সে বিশ্বাস মানবতার বিশ্বাস, একাত্মবোধের বিশ্বাস, বিশ্বাস সমাধিকারের।
ওরা কোন দল নয়, তবু ওরা বিশ্বাসী, ওরা বিশ্বাস করে বিশ্বাস ওদের শক্তি দেবে, পথ দেখাবে, বিজয়ী করবে। ওরা জানে ওদের সাথী ওদের পিঠে পিঠে দিয়ে লড়বে।
ওরা একা হলে এগোয় এক প্লাটুনকে রুখতে, দুজন জুটে গেলে থামায় ব্যাটালিওন, শত্রুর গন্ধ পেলে একা এগিয়ে যাওয়া গেরিলা জানে, ওর পাশে ঠিকই জুটে যাবে আরো অজানা অনেকেই, তাই সে নিশ্চিন্তে বুকে বোমা বাঁধে পুরো ব্রিগেড উড়িয়ে দিতে।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিশ্বাসী গেরিলাদের লড়াই জারী ছিলো বিশ্বাসে আফিম মিশিয়ে বিশ্বাসের পবিত্রতা নষ্টকারীদের বিরুদ্ধে।
শত্রু বিপর্যস্ত, বিদ্ধস্তপ্রায়।
আশা করছি, মুক্তিকামী বিশ্বাসীরা জয়ী হবেই!
অজানা সেই দেশের মুক্তিকামী বিশ্বাসী গেরিলাদের জানাই আমার শুভকামনা।