somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজ তোমাদের দায়মুক্তির রাত...

১৫ ই নভেম্বর, ২০১০ রাত ৩:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথমা, তুমি যখন এসেছিলে, তুমি তখন আহত, তোমার ভাষায় ডানাভাঙা পাখী। আমি তখনো ভাঙিনি কোন ভাবেই, তাই ডানাভাঙার কষ্টের তীব্রতা বুঝিনি। তবু পাশে থেকেছি, সুশ্রুষা করেছি, সারিয়ে তুলেছি আহত ডানা।

আমাদের দিন গুলো ছিলো অনেক রঙীন, অনেক স্বপ্ন মাখা। তারপর যখন দূরে চলে আসতে হলো, জীবনে প্রথম সবকিছু থেকে দূরে থাকবার সারাদিনের কষ্ট দূর হয়ে যেতো তোমার একটা একলাইনের এসএমএস পেলেই।

আউট অব সাইট, আউট অভ মাইন্ড - কথাটা বলেছিলে শেষ দিনে। বলেছিলে আমি দায়মুক্ত, আমার কোন দায় নেই। সেই প্রথম নিজে ভেঙে গিয়ে বুঝেছিলাম, ডানা ভাঙার কি সুতীব্র কষ্ট নিয়ে এসেছিলে আমার কাছে। জানতে চাইতে পারিনি, ভাঙার কষ্ট যদি বোঝোই, তবে কেন ভাঙলে আমাকে? কষ্টের তীব্রতায় জানতে চাইতে পারিনি, আমাকে দায় মুক্ত বলে গেলেও, তুমি নিজে দায়মুক্ত কি না।

দ্বিতীয়া, তুমি এসেছিলে প্রথমার চলে যাবার দেড় বছর পরে, যখন আমি নিজেকে কোনমতে জুড়তে পেরেছি। তোমার চুম্বন ফিরিয়ে দিয়ে বলেছিলাম, আমি ভাঙা মানুষ, আর ভাঙতে রাজী নই, কেন এসেছো?

তুমি বলেছিলে, আমার সারাদিনের ফুর্তিবাজ চেহারার পেছনে কষ্টের একটা অতল খাদ তুমি ঠিকই দেখতে পাও, তুমি সেই খাদ পরিপূর্ন করতে চাও ভালোবাসায়। বলেছিলে, তুমি কষ্ট পাওনি কোনদিন, তবু বুঝতে পারো কষ্টের তীব্রতা।

আমরা কিন্তু ভালোই ছিলাম, স্বল্প চাহিদা আর সবরকম উচ্চাকাংখা ছাড়া মানুষ দুজনেই। একসাথে হাত ধরে ঢুঁড়ে বেড়িয়েছি ছুটির দিনের ঢাকা। কেনাকাটা করতে গিয়ে নিজেদের মিলিত তহবিলের ক্ষুদ্রতা দেখে কষ্ট পাইনি, বরং হেসে ফেলেছি কোন নিদারুন কৌতুকে। কারন জানতাম, দুজনেই চাকরী করি আর এভাবেই চলবে ছোট্ট সংসার।

শেষ দিনে তোমার নাকে নথ দেখেই বুকের ভেতরে খামচি দিয়েছিলো কিছু একটা।
আমি কিছু বলার আগেই বলেছিলে, আরো ভালো অপশন ছাড়তে চাওনি তুমি, তাই হুট করেই গত সন্ধেয় "কবুল" বলেছিলে তিনবার, কোন এক গ্রীনকার্ডধারীর গ্রীনকার্ডকে।

তুমিও বলেছিলে আমি দায়মুক্ত, মনে যেন কোন অভিযোগ না রাখি নিজের ওপর।

তোমাকেও প্রশ্ন করা হয়নি, তুমি নিজে কি দায়মুক্ত?

প্রথমা, আবার ফিরেছিলে তুমি, এবারে ডানাভাঙা নয়, পূর্ন বিদ্ধস্ত।
কেঁদেছিলে, ঝরঝর করে কেঁদেছিলে। আমার শুধু মনে আছে, একরাশ স্বপ্ন দেখিয়েছিলে তুমি।

অটবির বিছানা ভালো হবে নাকি রট আয়রনের?
ড্রেসিং টেবিলটা কেমন হবে? রাখবোই বা কোথায়?
তুমি রাঁধতে পারবে না।
চাকরী করতে পারবে না।
একটাই মেয়ে দেবে আমাকে, দুটো না।
আরো কত কি!

সবাই যখন খুশি, আমি নতুন করে শেঁকড় ছড়াতে উপড়ে ফেলেছি পুরানো শেঁকড়- জানলাম, ডানাকাটা পরীরাই স্থির হয়, ডানা ওলা পরীরা উড়ে যাবেই।

প্রানে ধরে কাটতে পারিনি ডানাজোড়া।
এটাই শাস্তি সেই অপরাধের।

এবারে আমাকে দায়মুক্ত বলে যাওনি। তবু নিজেকে দায়মুক্ত মনে হয়েছিলো এবং হয়।

তুমি কি দায়মুক্ত? উড়ে গেলে চলে যায় সব দায়?

তৃতীয়া, তুমি এসেছিলে, তোমার ভাষায় প্রানহীন মৃতা। আমি সেই মৃতদেহে প্রান ফিরিয়েছিলাম।

প্রথমা দ্বিতীয়বার উড়ে যাবার প্রায় পরপরই এসেছিলে তুমি। দুজনেই ছিলাম অসংখ্যবার ভেঙে টুকরো হওয়া মানুষ। দুজনেই এবারে জুড়ে নিয়েছিলাম নিজেদের টুকরোগুলো।

এরপরে দুজনেই মুখ ঘুরিয়েছি, আবার দুজনেই ফিরে আঁকড়ে ধরেছি নিজেদেরকে অসংখ্যবার। তবে সম্পর্কের শেষটার শুরু হয়েছিলো সেই কেতাবের আর সুশিল সমাজের নারীবাদ-পুরুষতান্ত্রীকতা আর পরিচিতদের অযাচিত নাকগলানোকে প্রশ্রয় দেওয়াতে।

যেদিন থেকে তোমার সেলফোনটা বন্ধ হয়েছিলো, সেদিন থাকেই শেষ হয়েছিলো আমাদের সবকিছু।

তুমি বলোনি আমি দায়মুক্ত কি না। আমিও ভাবতে চেষ্টা করিনি তুমি দায়মুক্ত কি না। তবে অনেক মাস বাদে আমাকে করা ইমেইলটায় তুমি মুক্ত বলেছিলে আমাকে।

তোমরা কেন বোঝনা আমি কোন দায়মুক্তির সনদ নিয়ে আগ্রহী নই? দায়মুক্তির কোন সনদ তো আমাকে আমার হারানো সময় আর স্বপ্ন ফিরিয়ে দেবে না কোনদিন!

আজ রাতে অবশ্য আমি তোমাদের সবাইকে দায়মুক্ত করছি, আদৌ যদি কোন দায় থেকে থাকে তবে তা থেকে। আর দায়মুক্তি আমাকে তো দিয়েছো সবাইই।

আমাকে ভালোবেসে মেয়েটা যখন আমার বুকের ওপর ফেলে তপ্ত নিঃশ্বাস, গভীর নিরাপত্তার আশ্বাস মাখা শ্যামলা মুখটা যখন বুকে মাথা রাখে, শক্ত হাতের বেষ্টনিতে বাঁধে শরীরটা, তার ঘন কালো চুলে মুখ ডুবিয়ে, পিঠে আলতো হাত রেখে ঐশ্বরিক অনুভুতিতে শিখি ভালোবাসার সংঙ্গা, তখন তোমাদের সবাইকে আমার দায়মুক্ত মনে হয়।

আজ আমার সবকিছু ভুলে যাবার রাত...
আজ তোমাদের দায়মুক্তির রাত...




ব্যাকআপ
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:৫১
২০টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×