somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আট বছর কাটিয়ে ফেললাম ব্লগে! এ উপলক্ষ্যে কিছুক্ষণ হার্ড রক শুনলে মন্দ হয়না ;)

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইয়াপ, চোখ কঁচলানোর দরকার নেই, যা দেখছেন ঠিকই দেখছেন :D ব্লগার কালীদাসই পোস্টটা করেছে সামহ্যোয়ারইনব্লগে !:#P

এক সপ্তাহ হয় আবার লগড ইন হতে পারছি ব্লগে। না না, ব্লগের কোন টেকনিকাল সমস্যার জন্য না, অতি ব্যস্ততাই অনিয়মিত হওয়ার কারণ সব সময়কার মত। ২০১৩ এর ডিসেম্বরের পর কোন পোস্ট দেইনি; সেই একই কারণ। এবার আসার পর প্রথমেই লক্ষ্য করলাম যে আমার ব্লগিং টাইম আট বছর কয়েকদিন দেখাচ্ছে !:#P বুড়া হয়ে গেছি ;)


ব্লগ কিভাবে খুঁজে পেয়েছিলাম, কালীদাস নিক নেয়ার কারণ কি, কেন ব্লগিং ভাল লাগে, ব্লগে কি করি... সবকিছুই এক বছর পূর্তির পোস্টে লিখেছিলাম। এরপর সাতবছর চলে গেল, তারমধ্যে গত প্রায় চারবছর কোন পোস্ট করতে পারিনি। আজকে বরং পছন্দের কিছু হার্ড রক শেয়ার করি আট বছর টিকতে পারা সেলিব্রেট করতে ;) তার আগে কিছু প্রাসংগিক আলাপ করা যায় কি হচ্ছে, হবে বা হত কালীদাস রেগুলার থাকলে। অনেকেই হয়ত জানেন যে বেশ কয়েক বছর হয় আমি আমার প্রিয় ঢাকা শহরকে মিস করছি ;) এমনিতেও অনিয়মিত ছিলাম যখন বছরে দুই/তিনবার পোস্ট করতাম তখনও, এখন ব্লগীয় সাফল্যের মাপকাঠিটা লগইন করতে পারায় ঠেকেছে। পারি না, আসলেই সময় বের করতে পারিনা। বছর দেড়েক পর আবার সবকিছু স্বাভাবিক হবে আশা করি, তখন হয়ত অবস্হার উন্নতি হবে। দেখি কি আছে কপালে। আগের সহব্লগারদের মিস করি আসলে; বিশেষত যারা ছিলেন আমার রক বা মেটালে লেখার আগ্রহ বাড়ানোর অন্যতম সংগঠক। পুরান পরিচিত ব্লগাররা বা হঠাৎ হঠাৎ আসার পরেও যারা মার্ক করেছেন প্রায়ই সবাই প্রশ্ন করেন কেন লিখি না। এটাই কারণ। আট বছর আগের মত এখনও লেখার আইটেম মাথায় সবসময়ই থাকে, খালি সময়টাই কেবল পাই না :| অনেক সিরিজ লেখা শুরু করেছিলাম শুরুতে, ঢাকা কলেজেরটা ছাড়া কোনটাই শেষ করতে পারিনি। নিঝুম রাতের গানের সিরিজে একটা লেখা রেডি বছর খানেক হয়, পোস্ট করা হচ্ছে না আলসেমি করে :| মেটাল সিরিজটা চেস্টার বেনিংটনের জন্য হলেও একটা লেখা ডিজার্ভ করে। নিউমেটাল হারিয়ে যেতে বসেছে; মেটালের আখড়ার পাশে বসে আমি কিনা নিশ্চুপ :(


ব্লগের বিবর্তনের ব্যাপারে...
পুরান সব ব্লগার হতাশ হয়ে হারিয়ে যাননি বাংলা ব্লগোস্ফিয়ার থেকে। পুরান সব ব্লগার ২০১৩ এর কারণেও হারিয়ে যাননি। নোপ! পারসোনালি আমার যেটা মনে হয়েছে এটা ব্যক্তিজীবনের ট্রানজিশন; পারিবারিক জীবনে একটা সময় ব্লগের গুরুত্ব অন্য অনেক কিছুর তুলনায় কম আকৃষ্ট করে। মাঝে মাঝে অনেকেই অভিযোগ করেন ব্লগে আগের মান নেই, মেধাবী ব্লগার কমে গেছে, ব্লা ব্লা.... কখনও কখনও আমি নিজেও জিনিষগুলো প্রকটভাবে লক্ষ্য করেছি। এই জিনিষের অন্যতম নিয়ামক বলব স্বতস্ফূর্ত ইন্টারএকশনটা হারিয়ে যাওয়াকে। জিনিষটার শুরু যাদের মাধ্যমে তাদের প্রায় সবাই হারিয়ে গেছেন অনেক আগেই। খুবই আড়স্ট (অনেকটাই মেকি) যোগাযোগ, ফেসবুক ভিত্তিক কম্যুনিটি ব্লগিংও একে প্রভাবিত করেছে। ফেসবুককে আদর্শ ধরে, ফেসবুক-ভিত্তিক ব্লগিং যারা করতে এসেছিলেন সামহ্যোয়ারইনে; প্রায় সবাই খুব দ্রুত হতাশ হয়ে চলে গেছেন। ফেসবুকে পুরাপুরি চলে যাওয়া দুয়েকটা ক্যারেক্টারের জন্য খারাপ লাগে মাঝে মাঝে, এরা রেগুলার থাকলে নতুন ব্লগাররা উপকৃত হত। কম্যুনিটি ব্লগিং খুব শক্তিশালী একটা টুল, অলরেডি বাংলাদেশের ব্লগাররা তার শুরুটা দেখিয়েছে। তারপর মাঝে কিছু বড়সড় ব্লগীয় আন্দোলন অনেককে কাঁপিয়ে দিয়ে গেছে। আমি আগের ব্লগকে মিস করি কারণ কিন্তু শুধু লেখার মান না, ইন্টারএকশনটাই মেইন, কম্যুনিটি ব্লগিংএর প্রাণ এই আন্তরিক যোগাযোগটা। আমি গোড়া থেকেই ব্লগিং জিনিষটা এনজয় করি কেবল এই বিভিন্ন টপিকে জানার সুযোগ আর কমেন্ট করার জন্যই। আমি মেইনলি একজন কমেন্টার, কাউকেই অনুসরণ করিনা, বরং খুঁটিয়ে ফার্স্ট পেজের সব লেখা পড়াটা প্রেফার করি পেছনের লিংক ঘাটানো সহ। যদিও অনেক ক্যাঁচালেও জড়িয়েছি এককালে এই মুখ খুলে কমেন্ট করার জন্য ;) ইদানিং বেশ কিছু ব্লগারকেই দেখি কমেন্টের রিপ্লাই দেয়ার প্রয়োজন বোধ করেননা; এটা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। জিনিষটা আমার একেবারেই পছন্দের না; কম্যুনিটি ব্লগিং কি জন্য এটাই এরা উপলব্ধি করতে পারেননি। আবার নিজের মত প্রকাশ মানে ছয়পাওয়ালা বাঘের মত ঝাপিয়ে পড়ে লজিক গুলিয়ে খাইয়ে দেয়া না। সব ডিবেটে যেকোন মূল্যে জেতা কোন ভাল ডিবেটারের একমাত্র লক্ষণ না। এনিওয়ে সবাই মিলেই আমরা পারব বাংলা ব্লগিংকে আবার রিচ করতে বা আগের চেয়েও আরও রিচ করতে, আমি এখনও আশা রাখি :) সামহ্যোয়ারইনের অন্যতম বৈশিষ্ট্যই ছিল সবসময় এই ভার্সেটাইল ব্লগিং। বাইদ্যাওয়ে, একটা পার্টিকুলার শ্রেণীর প্রাণীকূলকে আমি ব্লগের চৌহদ্দিতেও দেখতে চাই না। এব্যাপারে আমাকে এখনও হিটলারের সাথে তুলনা করতে পারেন; আই ডোন্ট কেয়ার! লাকিলি ঐ জিনিষের উপদ্রব অনেক কম সাত বছর বা আরও আগেকার ব্লগের তুলনায়, চোখে পড়ে না বললেই চলে এখন।


আমি কি বদলাইনি?
দেখা যাক কালীদাস নিকের পেছনের লোকটার কি কি পরিবর্তন হয়েছে বাস্তব জীবনে। অনেক, অনেক, অনেক সাবলম্বী হয়েছি আগের চেয়ে পারসোনাল লাইফে। অল্প সময়ের নোটিশে কাঁধে ব্যাগপ্যাক নিয়ে দেশবিদেশ ঘোরার একটা নেশা প্রায়ই কাজ করে খুব; এই এক্সটেন্সিভ ট্রাভেল অবশ্য প্রায় ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে পেশাগত কারণেই করতে হয়। হা হা, সময়স্বল্পতার পাশাপাশি ছবি তোলার হাত অতি-জঘণ্য আমার, নাহলে ভ্রমণ পোস্ট দিয়ে ভাসিয়ে ফেলতে পারতাম ব্লগ :P তবে পুরান যারা আমাকে চেনেন; হয়ত খুশি হবেন শুনলে যে হার্ড রক এবং অল্টারনেটিভ মেটালের প্রতি ঝোঁকটা আরও বেড়েছে আগের চেয়ে। গত সাত বছরে অনেক নতুন মেটাল সাবজনার সৃষ্টি হয়েছে, এগুলো কয়দিন টেকে মাঝে মাঝে ট্র্যাক করি। নিজের সাবজেক্ট বা রিসার্চ রিলেটেড জিনিষপত্র নিয়ে ব্লগে টানাহেচড়া করাটা পছন্দ না, যদিও একবার করে ফেলেছিলাম ব্লগার অপ্রয়োজনের সাথে একটা জয়েন্ট প্রজেক্টে। কি বিপদ, ঐটাই দেখি আমার সবচেয়ে বেশি পঠিত পোস্ট :(( এমনিতেই কিছু কিছু সিমুলেশনে অনেক সময় লাগত গত উইন্টার পর্যন্ত (৫/৭ দিন পর্যন্ত), সেই সময়টা ইউটিলাইজ করতে হয় থিওরটিকাল ডেভেলপমেন্টে, তা হেডফোনে মেটাল থাকলে ক্ষতি কি? :P না, ঐ জায়গাটা পাল্টায়নি কালীদাস নিকের পেছনের লোকটার ;) ইরেগুলারিটির পাশাপাশি আমার ব্যাপারে পুরান/কমন ব্লগীয় কমপ্ল্যানের এক্সাম্পল ছিল যেটা:


উপস :| আসলে লেখা নিজের মনমত না হলে ব্লগের ফার্স্টপেজে জায়গা নেয়াটা লোক ঠকানো মনে হয়। আর সেভাবেই বড় হয়ে যায় :(


পরিশেষে, সামহ্যোয়ারইনব্লগ টিকে থাকুক যেভাবেই হোক: এটাই সবসময়কার প্রত্যাশা :)


ওয়েল, এবার কিছু হার্ড রক শোনা যাক নতুন পুরান মিলিয়ে! চতুরমাত্রিকে আমার পরিচয়ে বলা আছে; ভালবাসি অল্টারনেটিভ মেটাল এবং হার্ড রক। এমনকি সামহ্যোয়ারইনব্লগে আমার পরিচয়ে লেখা কথাগুলোও খুবই প্রিয় একটা হার্ডরকের লিরিক থেকে নেয়া। কেন হার্ড রক এত ভাল লাগে আমার? রক আর মেটালের বর্ডারের আগে রকের শেষ পয়েন্টটাই হচ্ছে হার্ড রক। রকের যত জাঁনর আছে সবচেয়ে এগ্রেসিভ জাঁনর হচ্ছে এই হার্ড রক (মেটালের কথা বলছি না)। আমার চোখে হার্ড রক অসম্ভব ক্রিয়েটিভ, শৈল্পিক একটা জাঁনর; টেম্পোর সামাণ্য হেরফেরে গান হয়ে যাবে হয় অল্টারনেটিভ অথবা চলে যাবে মেটালের কোন জাঁনরে। মেটালের টাচ পাওয়া খুবই কমন অনেক হার্ডরকে। এরপরও এক্সপেরিমেন্টের মাত্রা কিন্তু কম না হার্ড রক কম্পোজিশনে। গত আট বছরে মাত্র দুইটা পোস্ট করেছি শুধু হার্ডরকের, তাও একটা করেই গান ছিল। এবার কেন জানি খানিকটা বেশি শেয়ার করতে ইচ্ছা করল ;)

Stone Sour - Song #3
স্টোন সাওয়ার আমার অন্যতম প্রিয় ব্যান্ড অনেক বছর ধরেই। কারণ কোরে টেইলরের ওয়াইড ভোকাল রেন্জ (পোস্ট গ্রান্জ থেকে শুরু করে হার্ড রক, নিউ মেটাল, থ্রাশ মেটাল); জিমি রুটের ক্রিয়েটিভিটি; এর পর আর কি লাগে? দুইজনই স্লিপনটেরও মেম্বার; কিন্তু স্টোন সাওয়ারে সম্পূর্ণ অন্য রকমের এক্সপেরিমেন্ট চালানো হয়, স্লিপনটের মত অতটা মেটাল বেজড না স্টোন সাওয়ার। স্যাড নিউজ: স্টোন সাওয়ার থেকে জিমি রুটকে বাদ দেয়া হয়েছে তিন বছর হয়, কারণটা আমার কাছে এখনও পরিষ্কার না। তাতে কি? নতুন লাইনআপে এ বছরই বের করেছে এলবাম হাইডোগ্রাড, এলবামের বেশ কয়েকটা গানই হার্ড রক। আমি খুশি। এলবামের ৫ নাম্বার ট্র্যাক হচ্ছে এই সং নাম্বার থ্রি; হা হা :) নামে কি আসে যায়? এপ্রিলে প্রথম সিঙ্গেলস হিসাবে রিলিজড হয়, বাসার ছোট মেটালহেডটা প্রায় সাথে সাথেই জানিয়েছিল কিন্তু আমার তখন চেক করে হয়নি বিভিন্ন কারণে। প্রথম শুনি জুলাই মাসে, নিজে নিজেই খুঁজে পাই এবং শোনার পর কয়েকদিন টানা শুনেছি। লিরিকসটা অতি পাগলা কোন প্রেমিকের, প্রেমিকার কাছে কি চায় কেন চায়, যত্তসব ঘোড়ার ডিম! কিন্তু কম্পোজিশনটা জোস! ভেতরের ফিলিংসটা এত সুন্দরভাবে এসেছে, খুব সহজেই বোঝা যায় কিভাবে পুরা জুলাই মাস বিলবোর্ডের মেইনস্ট্রিমের এক নাম্বারে ছিল গানটা ;)


ইউটিউব লিংক, বড় করে দেখতে
লিরিকস


কোরাস তিনটা একরকম না গানটার, একটু খেয়াল করলেই কোরাসগুলোতে এক্সপোনেনশিয়ালি ভেতরের উচ্ছাসটা বাড়ার ট্রেন্ডটা খেয়াল করা যাবে। নেটের রিভিউগুলোতে অনেকেই দেখলাম গানটাকে পাওয়ারফুল ব্যালাড বলে চালিয়ে দিচ্ছেন মাসখানেক হয়, শুরুতে নিঃসংকোচে হার্ড রক হিসাবে মেনে নিয়েছেন অবশ্য সবাই। মিউজিক ভিডিওটা আরও ভাল করা যেত। ভিডিওতে যাই করুক, বাস্তবে কনসার্টগুলোতে কোরে নিজেও গীটারে থাকেন। শুনে দেখেন, প্রথম কোরাস দুইটা শোনার পর থার্ডটাতে দেখবেন আপনারাও বাতাসে ঘুযি মেরে গেয়ে উঠবেন "ইফ ইউ ক্রাইড আউট ফর মোর ...."



12 Stones - Picture perfect
এই টুয়েলভ স্টোনস এক মহা ফাঁকিবাজের ব্যান্ড। পোস্ট গ্রান্জের গোল্ডেন এরায় এরা মার্কেটে ভালই দখল রাখত, কিন্তু এলবাম বের করার ব্যাপারে খুবই ইরেগুলার। অল্টারনেটিভ রক/অল্টারনেটিভ মেটাল/পোস্ট গ্রান্জ এবং গ্রান্জ ইনফ্লুয়েন্সড চমৎকার কিছু হার্ড রক ছিল এদের। যারা জানেন না তাদের উদ্দেশ্য, ভোকাল পল ম্যাকয়, ইভানসেন্সের সাথে কোলাবরেশনে ২০০৪ সালে হার্ড রকে গ্রামি পেয়েছিলেন ব্রিং মি টু লাইফ গানের জন্য। ওয়েল, যথারীতি পাঁচ বছর হাইবারনেশনে থাকার পর এ বছরই টুয়েলভ স্টোনস বের করেছে লাস্ট এলবাম পিকচার পারফেক্ট। এলবামের লিড সিঙ্গেল এই পিকচার পারফেক্ট। এক্সপেরিমেন্ট ভালই চালানো হয়েছে, ২০০০ সালের পরবর্তী গ্রান্জ বা নিউমেটাল প্রভাবিত হার্ড রক না এই গানটা। গানটার বৈশিষ্ট্য হল আকর্ষণীয় এবং এগ্রেসিভ ভার্স। আর কোরাসের তো কথাই নেই, কখন হেড ব্যাং শুরু করছেন টেরও পাবেন না। লাস্টের কোরাসটা অনেক ওয়াইড এবং আমার কাছে খুব টাচি লেগেছে। বাইদ্যাওয়ে, লাস্ট ব্রিজের আগের সোলোটা আমার কাছে খুব আহামরি লাগেনি। সব কিছু মিলিয়ে চমৎকার। মিউজিক ভিডিওটার আগামাথা কিছুই বুঝিনি; খানিকক্ষণ চেষ্টার পর অফ গিয়েছিলাম।


ইউটিউব লিংক, বড় করে দেখতে, স্যরি লিরিকসটা পাইনি নেটে :|


এলবামের সবগুলো গান শোনা হয়নি, কিছু রিভিউ দেখে মনে হচ্ছে শোনা দরকার, বেশ কয়েকটা গান হার্ড রক। টুয়েলভ স্টোনস কখনও হতাশ করেনা, দীর্ঘদিন অপেক্ষায় রাখলেও :)



আর্বোভাইরাস - অমানুষ
আর্বোভাইরাস! আমার দেশের ব্যান্ড। আমার মাতৃভাষায় গান গায়। আমি যে ভাষার জন্য গর্বিত!

ব্লগে অনেক কমেন্টে উল্লেখ করেছি, আর্বোভাইরাস আমার পছন্দের ব্যান্ডগুলোর একটা। এই গানটার রচিয়তা কে জানি না বা ব্যাকগ্রাউন্ডের কারণ কিছুই জানিনা, কাজেই অন্য কিছু বলি। ২০০২ সালে আর্বোভাইরাস ফরমড হয়; ডেব্যু এলবাম ছিল ৬৪মিনিট ৫৩ সেকেন্ড, ২০০৬ সালে। ডেব্যু এলবামের রিলিজ প্রোগ্রামটা হয় ঢাকায়; কোথায় এখন মনে নেই। আমার কিছু হার্ডকোর মেটাল ফ্রেন্ড ছিল তখন, ওরাই জানিয়েছিল জোস একটা জিনিষ বের হয়েছে। সমস্যা হল কি ঐ বছরটা আমার জন্য ভয়ংকর একটা বছর ছিল বিভিন্ন কারণে; টাইম মেশিন এতদিনে আবিষ্কৃত হয়ে গেলে ২০০৬ এ ব্যাক করে কয়েকজনের পাছায় এমনভাবে লাথি মেরে আসতাম যেন বাকি জীবনে কমোডে ঠিকমত বসতে না পারে। এনিওয়ে, ঐ বছরের শেষ পর্যন্ত আর খবর নেয়া হয়নি। ২০০৬ এর শেষের দিকে বাসায় ব্রডব্যান্ড নেই এবং ২০০৭ এর শুরুর দিকে অমানুষ গানটা প্রথমবার শুনি মুর্ছনার কোন একটা থ্রেডের লিংক ফলো করে।


ইউটিউব লিংক, বড় করে দেখতে, সম্পূর্ণ লিরিকস কমেন্টগুলোতে পাবেন :)

আজ পর্যন্ত কত শতবার যে গানটা শুনেছি ইয়ত্তা নেই; শুরুর রিফটা এখনও রক্তে আগুন ধরিয়ে দেয়, নিজেকে কোন ভয়ংকর দানবকে ধ্বংস করার জন্য যোগ্য অপোনেন্ট মনে হয় ;) গানটার টেম্পো খানিকটা স্লো এলবামের বাকি গানগুলোর তুলনায়, আর্বোভাইরাসের প্রাইমারি গোল মনে হত নিউমেটালের দিকে ঝোঁক খানিকটা বেশি ওদের (মাই কাইন্ড অফ গাইস)। লিরিকটা একটা হার্ডরকের জন্য খুবই শক্তিশালী আর কোরাসের স্ট্রাকচারটা সুগঠিত একটা ইমোশোনাল আউটবাস্ট:

তোমার নিঃশ্বাসে (কিসের পাপ?)
তোমার বিশ্বাসে (অমানুষের জয়)
তোমার আকাশে (মৃত্যুর স্বাদ)
তোমার গভীরে (অশুভ কামনায়)

অরিজিনাল গানটা, অফিশিয়াল মিউজিক ভিডিওটা আর রিসেন্টলি পাওয়া রকনেশনের লাইভ ভার্সন তিনটার স্টার্টিংএ পার্থক্য আছে গীটার শুরুর আগের কয়েক সেকেন্ডে। লাইভ ভার্সনটাতে দেখলাম কিছু ইফেক্ট এড করা হয়েছে; একদিন ভাল লাগে তো দুইদিন ভাল লাগেনা। হার্ডরকে ডিজে টাইপের ক্যাচক্যাচানি গত দশকের কানটা মাঝে মাঝে মানতে চায় না। মেইন ভার্সনটা যখন রিলিজ করা হয়, সাউন্ড ইন্জিনিয়ারিং এর কারণে গীটারের আগুন ধরানো ভাবটা খানিকটা কম বোঝা যায়; এই জিনিষটা গত দশকের আরও অনেকগুলো অসাধারণ হার্ড রক এবং থ্রাশ মেটালের ধার গতানুগতিক করে ফেলেছে। আমি মনে করি মিউজিক ভিডিওটা আরও ভাল করা যেত, প্লট, ওভারঅল গেটআপ, সবকিছুই :| হেই, যারা লাইভ কনসার্টে যান তারা অবশ্যই আর্বোভাইরাস ট্রাই করবেন। বাংলাদেশের অন্য কোন মেইনস্ট্রিমের ব্যান্ড এত এনার্জেটিক লাইভ পারফরম্যান্স দেখায় না, আন্ডারগ্রাউন্ডের কথা আলাদা।



Shinedown - Bully
"আমরা কোন কন্ট্রোল ফ্রিকের বা কোন সিসটেমের কৃতদাস না। কারও, আই রিপিট, কারও অধিকার নেই একজন মানুষের আত্মসম্মানে ঘা দেয়ার। ছোট করে দেখার/দেখানোর অন্যের সামনে। ফিজিকালি বা মেন্টালি এসল্ট করার। যদি কেউ ভাবে এটা করা যায়, প্রত্যেক ভিক্টিমের মানবিক অধিকার এটাকে শক্তভাবে প্রতিহত করার। প্রয়োজনে ঠিক সেইম লেভেলে বা আরও নিচের লেভেলে নেমে।"

এক সাক্ষাতকারে মুটামুটি এই কথাগুলোই বলেন ব্রান্ট স্মিথ বুলি গানটার রচনা এবং কম্পোজিশনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে। ২০১২ সালের গান। গানটার রচয়িতা ভোকাল ব্রান্ট, গীটারিস্ট জ্যাক এবং প্রফেশনাল গান রচয়িতা ডেভ ব্যাসেট (নেহায়াত বাজারি গানের রচয়িতা ভদ্রলোক, কেমনে পারল এই জিনিষে কন্ট্রিবিউট করতে!)। এবং এই পোস্টের সবচেয়ে শক্তিশালী বক্তব্যের গান এটা। এমনিতে বুলি শব্দটা অনেক কিছুই মনে করে, উইকিতে পড়ে নিন ডিটেইলস জানার ইচ্ছা থাকলে। হার্ড রক হিসাবে দশে দশ পাওয়ার মত কোন দিলদরিয়া ক্রিটিকের কাছে, যেকোন অল্টারনেটিভ মেটাল বা থ্রাশ মেটাল ব্যান্ড খুশিতে বাকবাকুম করবে এই লিরিক দেখলে। ব্রান্টের বলিষ্ট ভোকাল, জ্যাকের সোলো, সব মিলিয়ে অসাধারণ একটা কম্পোজিশন এই বুলি। জ্যাকের কম্পোজিশন চমৎকার, গীটার সেন্স জটিল। ওভারঅল শাইনডাউন ২০০৮ থেকে স্ট্রিক্টলি হার্ড রক ব্যান্ড ছিল অনেকদিন, সে সময়কার জটিল এক সৃষ্টি বলা উচিত গানটাকে। এই লাইনআপে দুইজন ব্যাকাপ ভোকালের হারমোনাইজড ভয়েস মেইন ভোকালের প্যারালালে.... লাস্টের এক্সটেন্ডেড কোরাসটা অনেকক্ষণ সম্মোহিত করে রাখে শ্রোতাকে। ২০১২তে টানা তিনমাস বিলবোর্ডের এক নাম্বারে ছিল গানটা। বুঝতে পারছেন, হার্ড রক কতটা নাড়া দিতে অডিয়েন্সকে? পুরান ব্যান্ডগুলো কেন যে জিনিষটা মনে রাখতে পারেনা :|


ইউটিউব লিংক, বড় করে দেখতে
লিরিকস



Skillet - Savior
এই পোস্টের সবচেয়ে এগ্রেসিভ গান এটা, সেজন্যই সবার শেষে রাখা। আগেরগুলো ভাল না লাগলে এটা আপনার ভাল লাগার চান্স কম। অথচ গানটার নব্বইভাগেরও বেশি ক্লিন ভোকালে গাওয়া। স্ক্রিমস যেটুকু আছে তা কেবল মাত্র লাস্ট কোরাসের আগের ব্রিজটাতে, এবং সেটা গানটাকে আরও রিচ করেছে। তৎকালীন পোস্ট গ্রান্জের স্ট্রাকচার খুব সহজেই কানে আটকায় গানটায়। স্কিলেট অনেক পুরান ব্যান্ড, সেই নব্বইয়ের মাঝামাঝি থেকে এরা এক্টিভ। স্যাভিয়ার গানটা ওদের সিক্সথ স্টুডিও এলবাম কোলাইডের, ২০০৩ সালের। সে সময় অনেকেই স্কিলেটকে মার্ক করত ক্রিশ্চিয়ান রক ব্যান্ড হিসাবে। এই ক্রিশ্চিয়ান রক বা ক্রিশ্চিয়ান মেটাল জাঁনর দুইটা সবসময়ই ডিবেটের বিষয়; আমি পিওর ক্রিশ্চিয়ান রক আলাদা করতে পারি কিন্তু কিভাবে পারি আমি সেটা ব্যাখ্যা করতে পারিনা। এমন না সৃষ্টিকর্তার গুণগানের গান এই জাঁনর। কথাগুলো বলার কারণ, এই গানটা কোনভাবেই ক্রিশ্চিয়ান রক না; কিন্তু ক্রিটিকরা কখনও এটাকে ক্রিশ্চিয়ান রক, কখনও অল্টারনেটিভ মেটাল কখনও হার্ড রক বলছেন। আমি এটাকে মার্ক করেছি মেটালের টাচ সহ হার্ড রক হিসাবে; ভিন্নমত থাকলে অবশ্যই জানাবেন। এত বছর গেছে এখনও প্রায়ই আনমনে গেয়ে উঠি প্রি-কোরাসের অংশটুকু, লাইনগুলো আমার জন্য খুব ইনস্পায়ারিং:

There's nothing left to lose
There's nothing left to prove
Surrender your love
It's all you can do, yeah

খুবই সুন্দর এবং সফট গীটার ইন্ট্রো দিয়ে শুরু, ভার্সটাও সফট- প্রি-কোরাস পর্যন্ত। এই পোস্টের একমাত্র কিবোর্ড ইউজ করা গান এটা। জন কুপারের ভোকাল হার্ড রকের জন্য পারফেক্ট। পেছনে জনের বউ কোরে কুপার আর সাবেক গীটারিস্ট বেন ভাগ করে লীড সামলিয়েছে, জনের বউ ভার্সের সময় কিবোর্ডে চলে যায়। এরপরই বিস্ফোরণ! এই গানটার ড্রামসে থাকা লরি পিটারস অনেক বছর হয় রিটায়ার করেছেন, যাওয়ার আগে শিখিয়ে পড়িয়ে রেখে গেছেন অসংখ্য লুলের ক্রাশ জেন লেজারকে :P ইদানিং কনসার্টগুলোতে জেন লেজার যেভাবে স্যাভিয়ার বাজায়, কোন অংশে লরির চেয়ে কম না। প্লাস, জেন স্কিলেটের সব গানেই ক্লিন ভয়েসের পোর্শনগুলো চমৎকার সামলান এখন, যদিও আমার চোখে রিসেন্টলি স্কিলেটের ধার কমে গেছে আউল ফাউল জিনিষের ফিউশন এনে। ইউটিউবে কখনও স্যাভিয়ার গানটার লাইভ খুঁজলে ভায়োলিনের ইউজও পাবেন মনে হয় দুয়েকটা কনসার্টে। একটা হার্ডরক অডিয়েন্সকে ধুমসে হেড ব্যাং করাচ্ছে, হা হা, স্কিলেটের পক্ষে সম্ভব। মিউজিক ভিডিওটা দেখলে মনটা খারাপ হয়ে যায়। বাবার কাছে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের শিকার দুই শিশুর নিজের জগৎ খুঁজে নেয়াটাই প্লট। অনেক পুরান ভিডিও, কোয়ালিটি খুব ভাল না।


ইউটিউব লিংক, বড় করে দেখতে
লিরিকস


এমপিথ্রী ডাউনলোড লিংক: যতদূর জানি, ব্লগে এখন ডাউনলোড লিংক শেয়ার করা নিষেধ। ইউটিউব থেকে ভিডিও বা গান নামানোর অনেক তরিকা আছে, নেটে খুঁজলেই পাবেন ;)

লেখার সোর্স: কপিপেস্টারদের দৌড়াত্মে লেখার প্রয়োজন অনুভব করছি। এই রিভিউ একান্তই আমার; সাথে মেইনলি লাউডওয়ার ফলো করি আমি, সাথে সাথে ক্রিপ্টিকরক ঘাটিয়েছি অনেক। উইকিপিডিয়ার কথা বলা না বলা সমান, ওটা এখন লাইফের পার্ট।

কপিপেস্টারদের প্রতি: নিঃসংকোচে কপি পেস্ট করুন নিজের নামে তবে নিজ দায়িত্বে ;) ইচ্ছা করেই দুইটা ভুল ইনফো দেয়া আছে, এ অবস্হায় নিজের নামে চালালে বোদ্ধাদের কাছে সুকঠিন দৌড়ানি খাবেন :D এবং নেটে আমার লেখার ধরণ চেনে এরকম পাঠক এখনও অনেক, তাদের কাছে গণধোলাই খাওয়ার চান্স ভালই :P






সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:৩১
১৭০টি মন্তব্য ১৭১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×