আমার বন্ধুরা যারা আমাকে ছোটবেলা থেকে জানেন তারা বলেন সবকিছু চেপে যাওয়াটা আমার অভ্যাস। হ্যাঁ, এ কথা সত্যি যে জীবনের কঠিন বিষয়গুলো আমি কারো সাথেই শেয়ার করিনা। একাগ্রচিত্তে বিষয়গুলো নিয়ে শুধু নিজের সাথেই আলাপ করি। নিজেই উত্তরণের চেষ্টা করি। যদিও বেশিরভাগ সময়ই সমাধান পাইনা, ব্যর্থ হই।
আজ থেকে ঠিক এক বৎসর তিন মাস আগে ব্লগ লেখা শুরু করেছিলাম। চিরাচরিত সেই অভ্যাসের কারণে ব্লগের বিষয়গুলো শুধু নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। ব্যক্তিগত সম্পর্কগুলো সব সময়ই এড়িয়ে চলতাম। তবে এরই মাঝে সম্ভবত ব্লগার কৌশিক কিংবা উজ্জল ভাইয়ের একটা পোস্ট 'ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তিটি'-- এমন শিরোনামের একটা লেখা দেখে আক্রান্ত ব্যক্তিটির প্রতি সহানুভুতি জন্মে। স্বাভাবিক অর্থে আমি মোটেই সহানুভুতিশীল কিংবা সংবেদনশীল নই তবে মানবিক মূল্যবোধ কিছুটা অবশিষ্ট ছিল বলেই বোধ করি স্ব-উদ্যোগে ঐ ব্যক্তিটির ফোন নম্বর যোগার করে তার সাথে কথা বলি। বলাবাহুল্য, এটাই ছিল কোন ব্লগারের সাথে ব্যক্তি পর্যায়ে আমার প্রথম যোগাযোগ। এরপর প্রায়ই তার শরীরের খোঁজ নেয়ার জন্য ফোন করতাম। সম্পর্কটার এক পর্যায়ে স্ব-শরীরে তাকে দেখার জন্য আমি তার অফিসেও গিয়েছিলাম। এটা ছিল আমার জন্য একটা বিরাট বিষয়। কারণ আত্মীয় মহলে একজন অসামাজিক ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত এই আমি গত ০৫ বছরের কোন নিকট আত্মীয়ের বাসায়ও যাইনি।
যাক, তাকে দেখে আসার কিছুদিন পরেই সামান্য একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিনি ব্লগে এক বিশাল বিদায়ী পোস্ট ছাড়লেন। পোস্টের সারমর্ম হচ্ছে যে তিনি দেশের সেরা টেক্স পেয়ার, দুহাজার লোকের অন্নদাতা, কয়েকবারের নির্বাচীত সিআইপি এবং একটি এতিমাখানার মালিক (!)। ব্লগ লেখার কারণে তার জীবন হুমকির সম্মখীন তাই এখানে থেকে তিনি তার জীবনকে হুমকির মুখে ফেলতে চাননা এবং এই সূত্র ধরে এতিমদের ভাগ্যকে অন্ধকারে পতিত হতে দিতে চাননা। আমি প্রথমত পোস্টটা দেখে হতবাক হলাম। তারপরও আমার জন্য একটা অসুস্থ লোক ব্লগ ছেড়ে চলে যাবে বিষয়টা ভেবে আমি তাকে ফোন করলাম, সরি বললাম। কারো কাছে নত হওয়াটা আমার অভ্যাস নয়। তবু একজন ক্যান্সার রোগীর প্রতি সহানুভুতি দেখাতেই গিয়েই আমি তার কাছে নত হই। ব্লগে ফিরে আসার জন্য রিকোয়েস্ট করি। তিনি আমাকে বললেন, ' (তার নাম) যে থুথু একবার ফেলে দেয় তা আর কখনও মুখে নেয়না। এরপর তার সাথে রিলেশনটা কন্টিনিও করার আর কোন নৈতিক ভিত্তি ছিল মনে হয়না। আমি তা করিওনি। বরং মানুষের প্রতি আর কোনদিন সহানুভুতি দেখাবনা বলি প্রতিজ্ঞা করি।
অবশ্য তিনি তার ফেলে দেয়া থুথু ২৪ ঘন্টারও কম সময়ে পুনরায় মুখে নেন। এর কারণও ছিল। জনৈক কবি তাকে নিয়ে বিরহের কবিতা পোস্ট দেন। জনৈক মাঝাভাঙ্গা রেসিডেন্স ব্লগার, 'একজন .......... আমি চিনি বলে' হৃদয় বিদারক এক পোস্টের অবতারণা করেন। আমাদের নুশেরা আপু পুরো বিপ্লবী কমান্ড কাউন্সিল নিয়ে এসে তাকে ব্লগে ফিরানোর জন্য মাইনাস অভিযানে নামেন। এমন কি যে মাহবুব সুমন, যার লেখায় আমি কোনদিনও কমেন্ট করেছি বলে মনে হয়না (দুই একটা হলেও হতে পারে), যার সাথে আমার কোনদিনও কোন মনোমালিন্য হয়েছে বলেও মনে হয়না তিনি এসে আমাকে গালিগালাজ করেন। এমনটাও শুনেছি যে
ব্লগের মালিক জানা আপুও নাকি তাকে ফোন করে ব্লগে ফিরত আসতে বলেছিলেন।
পুরো সময়টাতে আমি নীরব ছিলাম। কিছু বলিনি। ইতোমধ্যেই যাদের সাথে পরিচয় হয়েছিল তাদের দু'একজন বলেছিল সবাই আপনাকে বিনা কারণে দোষী সাব্যস্ত করছে, আপনি কিছু বলছেন না কেন? আমি বলেছিলাম সত্যকে প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব সময়ের। সময়ই সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করবে। এখন আমি হাজার চিৎকার করলেও কেউ আমাকে বিশ্বাস করবেনা। কারণ মানুষ স্বভাবতই আবেগপ্রবণ এবং সেই সূত্রে অবিবেচক।
আমার মনে হয় আমিই ঠিক ছিলাম। সময় ঠিকই সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। মাহবুবু সুমন, নুশেরা, সুরভীছায়া, নাজনীন খলিল এবং অন্যরা যারা না বুঝে আমাকে দোষারূপ করেছিলেন এবং যারা এই ভয়ংকর বস্তুটিকে এতোদিন লালন করেছিলেন তারাই এখন এই বস্তুটির আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। সময় এখন আমাকে নীরবে হাসার সুযোগ করে দিয়েছে। আমি এখন হাসছি।